১ প্রভুর কথাগুলি আমার কাছে এল। এটা ছিল নির্বাসনে থাকার নবম বছরের দশম মাসের দশম দিন। তিনি বললেন,
২ “মনুষ্যসন্তান, আজকের দিনের তারিখ ও এই কথাগুলি লেখ: ‘এই দিনে বাবিলের রাজার সৈন্যরা জেরুশালেম ঘিরে ফেলেছিল।’
৩ এই ঘটনা সেই পরিবারকে বল যারা বাধ্য হতে অস্বীকার করে। তাদের এই বিষয়গুলি বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু একথা বলেন:“‘হাঁড়িটা আগুনে বসাও, হাঁড়িটা বসাও। আর তাতে জল ঢালো।
৪ মাংসের টুকরোগুলো তার মধ্যে দাও। প্রত্যেকটা ভাল টুকরো তার মধ্যে দাও, উরু ও ঘাড়ের মাংসের টুকরোগুলি। সব চেয়ে ভাল হাড়ের টুকরো দিয়ে হাঁড়িটি ভর্তি কর।
৫ পালের সেরা পশুগুলো নাও। হাঁড়ির নীচে কাঠগুলো জড়ো কর। মাংস সেদ্ধ কর, এমন ভাবে সেদ্ধ কর যেন হাড়গুলোও পরিপক্ক হয়!’
৬ “প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “জেরুশালেমের পক্ষে এটা প্রাণনাশক হবে। নিধন শহরের পক্ষে এটা হবে অমঙ্গলজনক। জেরুশালেম মরচে পড়া হাঁড়ির মত। মরচের ঐ দাগগুলি মোছা যাবে না! সেই পাত্র পরিষ্কার নয়। তাই তুমি অবশ্যই হাঁড়ির ভেতরের প্রত্যেকটা মাংসের টুকরো বের করে নেবে! ঐ মাংস খেও না! আর যাজকদেরও সেই মন্দ মাংস বাছতে দিও না।
৭ জেরুশালেম মরচে পড়া হাঁড়ির মত। কারণ হত্যাকারীদের হত্যার রক্ত এখনও সেখানে রয়েছে। সে ঐ রক্তখোলা পাথরের উপর রেখেছে, মাটিতে ঢেলে তা মাটি চাপা দেয়নি!
৮ আমি তার সেই রক্তখোলা পাথরের ওপরে রেখেছি যেন তা ঢাকা না হয়। আমি এমনটা করেছি যেন লোকে রুদ্ধ হয়ে নির্দোষ লোককে হত্যা করার শাস্তি তাকে দেয়।”
৯ “তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন: ‘হত্যাকারীদের শহরের পক্ষে এ হবে অমঙ্গলজনক! আমি আগুনের জন্য প্রচুর কাঠ জড়ো করব।
১০ পাত্রের তলায় কাঠ বোঝাই করে রাখব। আগুন জ্বালাও, ভালো করে মাংস রান্না কর! মশলা মেশাও এমনকি হাঁড়িগুলোও পুড়ে যাক।
১১ তারপর খালি পাত্রটিকে কযলার ওপর রাখ। ওটাকে এমন এমন ভাবে উত্তপ্ত হতে দাও যাতে তার দাগগুলোতেও আগুন ধরে যায়। ঐ দাগগুলো গলে যাবে ও মরচে পড়ে ধ্বংস হবে।
১২ “ঐ দাগগুলো ধুয়ে ফেলতে জেরুশালেমকে প্রচুর খাটতে হবে। কিন্তু সেই মরচে যাবে না! কেবল আগুনই (শাস্তি) সেই মরচে দূর করতে সক্ষম হবে।
১৩ “তুমি আমার বিরুদ্ধে পাপ করে পাপের দাগে দাগযুক্ত হয়েছিলে। আমি তোমায় পরিষ্কার করার জন্য ধুতে চাইলাম। কিন্তু সেই দাগ উঠল না। আমি আর ধোবার চেষ্টা করব না, যতক্ষণ না আমার প্রচণ্ড এোধ তোমার উপরে শেষ না করি!
১৪ “‘আমিই প্রভু, আমিই বলেছিলাম তোমার শাস্তি আসবে আর আমিই তা ঘটাব। আমি শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত হব না। তোমার জন্য অনুশোচনাও বোধ করব না। তোমার মন্দ কাজের জন্য আমি তোমায় শাস্তি দেব।’ প্রভু আমার সদাপ্রভুই এই কথাগুলি বলেছেন।”
১৫ তারপর প্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল, তিনি বললেন,
১৬ “মনুষ্যসন্তান, তুমি তোমার স্ত্রীকে খুবই ভালবাস, কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে তাকে নিয়ে নেব। তোমার স্ত্রী হঠাত্ মারা যাবে কিন্তু তুমি তোমার দুঃখ প্রকাশ করবে না, জোরে জোরে কেঁদো না।
১৭ চোখের জল ফেলো কিন্তু নিঃশব্দে। মৃত স্ত্রীর জন্য উচ্চস্বরে কেঁদো না। সাধারণতঃ যে কাপড় পরে থাক তাই পর। তোমার পাগড়ী বাঁধ, জুতো পর। শোক প্রকাশ করতে তোমার গোঁফ ঢেকে রেখো না আর মানুষ মারা গেলে লোকে সাধারণতঃ যা খায় তাও খেযো না।”
১৮ পরের দিন সকালে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা আমি লোকদের বললাম। সেই বিকেলে আমার স্ত্রী মারা গেল। পরের দিন সকালে ঈশ্বর যা আদেশ করেছিলেন আমি সেই অনুসারে কাজ করলাম।
১৯ তখন লোকে আমায় জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন এসব করছ? এসবের অর্থ কি?”
২০ তখন আমি তাদের বললাম, “প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল;
২১ ইস্রায়েলের পরিবারগুলিকে এই কথা বলো। প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন: ‘দেখ, আমি আমার পবিত্র স্থান ধ্বংস করব। তুমি এই স্থান সম্বন্ধে গর্বিত ও এর সম্বন্ধে প্রশস্তি গীত গেযে থাক। তোমরা সেই স্থান দেখতে ভালবাস ও সত্যই তাকে ভালোবাস। কিন্তু আমি সেই স্থান ধ্বংস করব আর যুদ্ধে যে শিশুদের তোমরা ছেড়ে এসেছিলে, তারা হত হবে।
২২ কিন্তু তোমরা সেই একই কাজ করবে যেমনটি আমি আমার মৃত স্ত্রীর বিষয়ে করেছি। তোমরা তোমাদের শোক প্রকাশ করতে গোঁফ ঢাকবে না। মানুষ মারা গেলে লোকে সাধারণত যা খায় তা খাবে না।
২৩ তোমরা তোমাদের পাগড়ী বাঁধবে, জুতো পরবে কিন্তু শোক প্রকাশ করবার জন্য কেঁদো না। তোমরা তোমাদের পাপের কারণে ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়বে। একে অন্যের কাছে গভীরভাবে আর্তনাদ করবে।
২৪ যিহিষ্কেল তোমাদের কাছে একটি চিহ্নস্বরূপ। সে যা যা করেছে তোমরাও তাই করবে। শাস্তির সেই সময় যখন আসবে তখন তোমরা জানবে যে আমিই প্রভু।”‘
২৫ “মনুষ্যসন্তান, আমি লোকদের কাছ থেকে সেই নিরাপদ স্থান (জেরুশালেম) ছিনিয়ে নেব। সেই সুন্দর স্থান তাদের আনন্দ দেয়, তারা তা দেখতে চায় ও তাকে প্রকৃতই ভালবাসে। কিন্তু সেই সময়ে আমি ঐ লোকদের কাছ থেকে এই শহর ও তাদের সন্তানসন্ততি ছিনিয়ে নেব। জেরুশালেমের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে অবশিষ্ট কেউ এক জন তোমাদের কাছে আসবে।
২৬
২৭ সেই সময়, তোমরা ঐ লোকটির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হবে এবং চুপ করে থাকবে না। এই ভাবে, তুমি তাদের কাছে একটি চিহ্নস্বরূপ হবে। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”