কোনো কোনো মধ্যরাতে কিছু ঘাস, কিছু কালো মাটি
কারুর জীবন্ত অবয়ব হয়ে আমাকে জড়ায়,
মুঠোয় সজোরে ধরে চুল, গালে গাল ঘষে, আমার পাহাড়ে
অরণ্যে উপত্যকায় ঘোরে মাতাল বেঘোর।
একমাত্র মেয়ে
করছে স্বামীর ঘর, ছেলেটা কখন আসে, আবার কখন
ফেরে ঘরে টের পাওয়া দায়। কাছে ধারে কেউ নেই। ‘ওগো’ বলে
ডাকে না এখন কেউ আর। যার সঙ্গে সহবাসে
ছিলাম একান্ত ডুবে বিশটি বছর, হাড় তার
এখন মাটির নিচে ভয়ানক ধবধবে হয়ে গেছে বুঝি
আমার শাড়ির মতো। হায়, যদি পারতাম হতে
লাশবাহী ভেলার বেহুলা!
শয্যায় লাগে না পিঠ কোনো কোনো রাতে,
কখনো বুলোই চোখ বইয়ের পাতায়, জানালার বাইরে তাকাই,
কখনো ফ্লাওয়ার-ভাসে রাখি গাল, কখনো মরুর
মতো সরু বারান্দায় করি পায়চারি, অঙ্গে অঙ্গে
জ্বলে যে অঙ্গার তার দাহ নিরীহ করার ছলে
নির্জন স্নানের ঘরে যাই বার বার। দেয়ালের
ছবিটার দিকে রাখি উষ্ণ দৃষ্টি, আমার স্বামীর
ফটোগ্রাফ কী শীতল, কী সুদূর; এইমাত্র সবুজ পোকার
লোভে বালিরঙ টিকটিক ওঁর প্রজাপতি-গোঁফ ছুঁয়ে গেল।
এ নীরন্ধ্র ঘরে আমি উঠি বসি বসি উঠি, কখনো দাঁড়াই,
কখনো এলিয়ে পড়ি কৌচে, বয়সকে বড় বেশি ঘেন্না করি,
যেমন বিক্ষুব্ধ চাঁদ সদাগর মনসাকে। এ ঘরের অন্ধকার
অথবা বাল্বের অত্যধিক আঁচ-দেয়া দুধের মতন আলো
পারে না কি হতে মানবিক?
সে কেন আমার পুত্র আসে না আমার কাছে, কেন
রাখে না সবল হাত, মুখ তার আমার যুগল থরোথরো
ঊরুর সোফায়? কেন উদ্বেল আমার স্তন তার
মুঠোয় দেয় না ঢেকে, ঢাকত যেমন
শৈশবে আমার পাশে শুয়ে, আমি গাঢ় ঘুমোতাম!