॥৭॥
বিনয় সেনগুপ্তর অপারেশন ঠিকঠাক হয়ে গেছে। তিনি বিপন্মুক্ত। খবরটা দু’জনের কাছ থেকে পেল শ্যাডো। মা এবং ডাক্তার। পল্লব দাশগুপ্ত বললেন, “হি উইল লিভ অ্যানাদার ফিফটি ইয়ার্স। কাল আমরা ওকে হাঁটাব। হি ইজ্ অ্যাজ় ফাইন অ্যাজ আ হুইস্ল।”
বুক থেকে একটা ভার নেমে গেল শ্যাডোর। বাবা বেঁচে থাকবে, এর চেয়ে ভাল ‘ব্যাপার আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে আর এক জনের প্রাণ যে তাকে নিতেই হবে! এখন ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখছে সে যে, এই বিনিময়টা বিনয় সেনগুপ্তর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না। জানা কথাই যে, বিনয় সেনগুপ্ত খবরটা শুনলে মূর্ছা যাবেন। এবং বেঁচে থাকার উপর তাঁর আর কোনও আকর্ষণই থাকবে না। উপরন্তু ছেলের এ হেন কাজে তাঁর মাথা হেঁট হয়ে যাবে। বেঁচে থাকাটাই হবে বিড়ম্বনা। শ্যাডোর দিক থেকে ঘটনাটা এক রকম, কিন্তু বিনয় সেনগুপ্তর দিক থেকে সম্পূর্ণ অন্য রকম। ধরা পড়লে শ্যাডোর ফাঁসি বা যাবজ্জীবন হবে। তার তাতে কোনও পরোয়া নেই বটে, কিন্তু তার পরিবারটির সম্মান থাকবে না। সে তো আর শহিদ নয়, এক জন খুনি।
কিন্তু এ সব ভাবাবেগের চিন্তা করে এখন লাভ নেই। দ্য ডাই ইজ কাস্ট। এখন আর ফেরার উপায় নেই। লোকটাকে মরতেই হবে।
দুপুরে হোটেলের রেস্তরাঁয় লাঞ্চ করছিল সে। এদের খাবার খুব একটা ভাল কিছু নয়। তবে মোটামুটি খাওয়া যায়। ফ্রায়েড রাইস আর কথা মাংস, সঙ্গে স্যালাড। হাবিজাবি সে পছন্দ করে না। খাওয়ার একদম শেষ দিকটায় ফোনটা এল। সেই প্রাইভেট নম্বর।
“হাই মিস্টার শ্যাডো, এনজয়িং দ্য লাঞ্চ?”
শ্যাডো ভ্রু কোঁচকাল। লোকটা কি তাকে লক্ষ করছে? সে চট করে তার চার দিকটা দেখে নিল। আরও জনা আট-দশ পুরুষ ও মহিলা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে লাঞ্চ করছে বটে, কিন্তু তাদের মধ্যে এই লোকটা আছে কি না বোঝা গেল না। কারও কানেই তো মোবাইল নেই!
সে ঠান্ডা গলাতেই বলল, “মোর অর লেস। কিছু বলবেন?” “আপনি কি লোকটাকে স্পর্ট করতে পেরেছেন?”
“না, এখনও নয়।”
“এনি হিন্ট?”
“মনে হচ্ছে না।”
“এনিওয়ে, ইউ উইল গেট হিম। সময় আছে। অ্যান্ড আই ক্যান লেন্ড ইউ আ গান, ইফ নিডেড। গুড লাক,” বলেই কেটে দিল। শ্যাডো ধীরে-সুস্থে খাওয়া শেষ করে উঠল। ফলওয়ালা ছেলেটাকে একশো টাকা দিয়েছে সে। কথা আছে আজ বিকেলের মধ্যে কালুদাদার খবর এনে দেবে। সুতরাং হাতে একটু সময় আছে। সমস্যা হল, শ্যাডো এই সব কাজে দড় নয়। সে নিজের এসকেপ রুট ভেবে রাখেনি। পেশাদার খুনিরা পালানোর পথ আগে থেকেই ঠিক করে রাখে। কিন্তু সেই কাজে শ্যাডো আনাড়ি। তাই সে সম্ভবত ধরা পড়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে কোর্টকাছারির ঝামেলা, পাবলিসিটি এবং পরিবারের অসম্মান এড়ানোর জন্য সে ইচ্ছে করলে আত্মহত্যা করতে পারে। আর সেটা করতে হলে তার একটা পিস্তল বা রিভলভার দরকার। সে ভেবে রাখল, ওই রহস্যময় লোকটা এর পরের বার ফোন করলে সে পিস্তলটা চেয়ে নেবে।
দুপুরে নিজের ঘরে একটু আধশোয়া হয়ে এক মনে ভাবছিল সে। কী ভাবে এক জন লোককে খুন করা যায়! কাজটা যত সহজ বলে ভেবেছিল সে, এখন আর তত সহজ বলে মনে হচ্ছে না। ভিতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে সে। কেউ যেন বলছে, ‘সে তোমার কোনও ক্ষতি করেনি, তাকে তুমি চেনোও না, তার উপর তোমার কোনও রাগ নেই, প্রতিশোধ নেওয়ার নেই। তা হলে তাকে মারার লজিক কী?’
ফালতু ভাবনা। মারার লজিক নেই কেন? আছে তো! পাঁচ লাখ টাকা! এর চেয়ে বড় মোটিভ আর কী হতে পারে!
ভরা পেটে একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল তার। হঠাৎ দরজায় নক। ধড়মড় করে উঠে পড়ল সে। দরজা খুলে দেখল হোটেলেরই এক জন বেয়ারা। হাতে একটা ট্রে, তার উপর একটা কাগজে জড়ানো প্যাকেট।
“কী এটা?”
“ঠিক জানি না স্যর। রিসেপশন থেকে পাঠিয়ে দিল
প্যাকেটটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সে। প্যাকেটটা চৌকো এবং ভারী। ভিতরে কী আছে তা অনুমান করতে বিশেষ মাথা ঘামাতে হল না তাকে। লোকটা তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই বোধ হয় পিস্তলটা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ ভাবে কেউ পিস্তল পাঠায়? লোকটা কি পাগল?
প্যাকেটটা খোলার আগে সে দরজা লক করে নিল। তার পর কাগজের মোড়ক খুলে চৌকো পিচবোর্ডের বাক্সটা খুলে দেখল, পিস্তলই বটে। এই বস্তু সে বিশেষ দেখেনি, সিনেমাটিনেমায় ছাড়া। সঙ্গে একটা কম্পিউটার প্রিন্ট আউট। কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, তার সংক্ষিপ্ত নির্দেশ।
শ্যাডো পিস্তলটা হাতে নিল। বাথরুমে গিয়ে আয়নায় দেখল, তাকে পিস্তল হাতে কিছু খারাপ দেখাচ্ছে না। প্রিন্ট আউটে বলা হয়েছে, মোট এগারোটা কার্তুজের একটা ক্লিপ ভরা আছে পিস্তলটায়, এবং ব্যবহার খুব সোজা। ঘরে এসে সে পিস্তলটা বালিশের তলায় লুকিয়ে ফেলল, ওটাই সবচেয়ে সহজ জায়গা বলে। কিন্তু তার অস্বস্তি হচ্ছে। পিস্তলে শব্দ হয়, এবং পিস্তল নিজেই একটা এভিডেন্স। প্রিন্ট আউটটা বার কয়েক পড়ে সে সেটাকে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল। প্রিন্ট আউট না-থাকলেই বা কী, ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পিস্তল চালানোর কৌশল শিখিয়ে দেবে। বাক্সটা অবশ্য সাদামাটা একটা বাক্স, পিস্তলের বাক্স নয়, বোধ হয় মোজা বা রুমালের বাক্স। তাই সেটা আপাতত ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলল।
ফলওয়ালা ছেলেটার নাম রতন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ছেলেটা এল। ভালমানুষের মতো মুখ, সরল-সোজা। বলল, “স্যর, কালুদাদা থাকে নদীর ধারের একটা ঝুপড়িতে। আমি গিয়ে অবশ্য কালুদাদাকে পাইনি। শুনলাম তাকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে। শুধু কুকুরটা আছে।”
শ্যাডো অবাক হয়ে বলে, “পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে কেন?”
“পুলিশ তো ওই রকমই স্যর, ফালতু ঝামেলা পাকায়। কালুদাদা ভাল লোক স্যর, ঝুট-ঝামেলায় নেই। পুরনো মাল বিক্রি করে, কিন্তু স্মাগলার নয়।”
“কুকুরের কথা কী বলছিলে?”
রতন এক গাল হাসল, “বলল, কালুদাদার একটা কুকুর আছে স্যর, খুব ডেঞ্জারাস কুকুর। তবে শিস দিলে চুপ করে যায়।”
“শিস দিলে চুপ করে যায় কেন?”
“ঠিক জানি না। ও রকম ট্রেনিং দেওয়া আছে বলে মনে হয়। কালুদাদাই এক বার বলেছিল যে, ওর একটা কুকুর আছে, খুব রাগী। তবে শিস শুনলে কিছু করে না, শান্ত হয়ে যায়। আপনি হোটেল থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেলে বিনোদিনী হাই স্কুল দেখতে পাবেন, স্কুল বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে বাঁ-দিকের রাস্তা ধরে খানিকটা এগোলে শাল-জঙ্গল। ভিতরে পায়ে হাঁটা রাস্তা আছে। ওটা ধরে এগোলেই নদী। নদীর চরে কালুদাদার ঠেক। প্লাস্টিকের ঘর, দেখলেই চিনতে পারবেন। আমি যাই স্যর, আমাকে দোকান খুলতে হবে।”
“ঠিক আছে রতন। থ্যাঙ্ক ইউ।”
রতন চলে গেল। শ্যাডো একটু ভ্রু কুঁচকে রইল। বাঁচা গেল, সে অন্তত শিস দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা আরও আছে। সেটা হল রতন। এই এক জন সাক্ষী অন্তত থাকছে যে শপথ করে বলতে পারবে, শ্যাডো কালুদাদার আস্তানার খোঁজ করেছিল। কী আর করা যাবে, কিছু রিস্ক না-নিলেও তো হবে না!
একা ঘরে সে কিছু ক্ষণ শিস দিয়ে ‘কে স্যারা স্যারা’ বাজাল। যা হওয়ার তা হবে। ‘দি ফিউচার ইজ নট আওয়ার্স টু সি’। শিস দিলে তার মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। বন্ধুরা বলে সে নাকি চমৎকার শিস দেয়। শ্যাডো নিজে অবশ্য বোঝে না তার শিস কতটা ভাল। তবে বাবার হাসপাতালের এক জন মাঝ-বয়সি নার্স, সে যখন শিস দিচ্ছিল তখন তাকে বারণ করতে এসে বলেছিলেন, “আপনি অবশ্য শিস ভালই দেন।”
হয়তো সত্যিই তার এই একটা প্রতিভা আছে। কিন্তু শিস দিয়ে কে কবে রাজা হয়েছে?
শীতকাল। তাই বেলা বড্ড তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। পাঁচটা বাজতে না-বাজতেই বাইরে অন্ধকার নেমে এল। কুয়াশা ঘনিয়ে উঠছে। পিস্তলটা ঘরে রেখে যেতে সাহস হল না তার। হোটেলের ঘরের কোনও নিরাপত্তা নেই, কে জানে রুম সার্ভিস এসে হাজির হবে কি না। সুতরাং সে ভারী পিস্তলটা প্যান্টের ডান দিকের পকেটে ঢোকাল। তাতে প্যান্টটা বেশ আঁটসাঁট হল এবং পকেটটা বেজায় ফুলে রইল। সেটা ম্যানেজ করতে পুলওভারটা টেনে নামাতে হল খানিকটা। এক রকম ঢাকাচাপা দেওয়া হল বটে, কিন্তু তাতে মনের খচখচানিটা গেল না। সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে কখনও চলাফেরা তো করেনি সে।
রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। কারণ আজ শীতটা খুব জেঁকে পড়েছে। একটু কোলকুঁজো হয়ে সে দ্রুত বেগে হাঁটছিল। জোরে না-হাঁটলে গা গরম হবে না। বিনোদিনী স্কুল পেরিয়ে বাঁ-দিকের রাস্তা ধরল সে। এই রাস্তাটা বেশ অবহেলিত, স্ট্রিটলাইট নেই। খানিক দূর অন্ধকারেই হাঁটল সে, তার পর দু’-এক বার হোঁচট খেয়ে মোবাইলের টর্চটা অন করে নিল। রাস্তা বড় কম নয়। লোকালয় পার হয়ে তার পর শাল-জঙ্গল। এবং শাল-জঙ্গলটাও বেশ অনেকটা গভীর। মাঝে-মাঝে আলো জ্বেলে প্রায় এক কিলোমিটার জংলা রাস্তা পেরিয়ে তার পর নদী। সেখানেও অন্ধকার, তবে তত ঘন নয়। কুয়াশায় কিছুই তেমন দেখা যাচ্ছে না। চুপচাপ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সে। তার পর হঠাৎ একটা কুকুরের ডাক শুনতে পেল শ্যাডো। ডাকটা বেশ ব্যারিটোন গোছের। অর্থাৎ খানদানি কুকুর। দিশি কুকুরের মতো খেঁকি ঘ্যান্যানে ডাক নয়। শ্যাডোর কান চমৎকার। সে কুকুরের ডাকটাকে লক্ষ করে হাঁটতে লাগল। শিস দিল না, কারণ শিস শুনলে কুকুরটা হয়তো ডাক বন্ধ করে দেবে। সে বোকা নয়। অন্তত একশো কদম হাঁটার পর তার চোখের সামনে একটা আবছা ইগলু গোছের স্ট্রাকচার দেখা গেল। কুকুরের ডাক এখন খুব কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। সে জায়গা মতো এসে পড়েছে। সে মৃদু লয়ে শিস দিয়ে, ‘কান্ট্রিরোডস, টেক মি হোম’ বাজাতে লাগল। আশ্চর্যের বিষয়, গানটা বেজে উঠতেই কুকুরটা একদম চুপ করে গেল।
কাছে গিয়ে শ্যাডো দেখল, কালুদাদা নামক লোকটি একটি অতিশয় দীন-দরিদ্র প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকে। তা হলে লোকটা এমন পেডিগ্রির একটা কুকুর পোষে কেমন করে? এটা তো লোকটার স্টেটাসের সঙ্গে মানাচ্ছে না! সে কিছু ক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার পর ভাবল, আমি তো কোনও রহস্য উন্মোচন করতে আসিনি! আমার কাজ একটা লোককে খুন করা। তার পর আমার ছুটি। মুক্তি। তারও পর কী হবে না হবে তা জানা নেই। মোবাইলের আলোয় সে ঘরে ঢোকার যে ফোকরটা খুঁজে পেল তা দিয়ে তার মতো এক জন বড়সড় লোকের পক্ষে ভিতরে প্রবেশ আয়াসসাধ্য। কিন্তু কী আর করা যাবে, কষ্ট করেই ভিতরে ঢুকল সে। কালুদাদাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে, সুতরাং লোকটার আরও একটু আয়ু আছে। ঘরে থাকলে আজই কাজটা সেরে ফেলা যেত!
কালুদাদার ইগলুতে ঢুকে চার দিকে মোবাইলের আলো ফেলে ঝুম হয়ে গেল শ্যাডো। এত বিকট দারিদ্রের চিহ্ন চার দিকে যে, বিশ্বাস হয় না এত গরিবও কেউ হয়। এক ধারে ইট সাজিয়ে একটুখানি কাঠের উনুন, একটা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, একটা কানাউঁচু অ্যালুমিনিয়ামেরই থালা, গোটা চারেক কাগজের ঠোঙায় চাল, ডাল, নুনের মতো কিছু আছে বোধ হয়। আর অন্য ধারটায় মাটির উপর পাতা একটা প্লাস্টিকের শিট, তার উপর একটা ময়লা চাদর আর বালিশের বদলে একটা ন্যাকড়ার পুঁটুলি গোছের। কোনও কম্বল বা কাঁথা নেই। তৈজসপত্র বলতে এই যা। এই হাড়ভাঙা শীতে লোকটা এখানে থাকে কী করে?
মোবাইলের চার্জ কমে আসছে। সে আলোটা ঘুরিয়ে ফেলে দেখল, আর একটা প্লাস্টিক শিটের উপর কিছু পুরনো জিনিসপত্র পড়ে আছে। ভাঙা ডলপুতুল, সাঁড়াশি, প্লাস, আড়বাঁশি, মাউথ অর্গান, ফিচার ফোন, এক্সটেনশন কর্ড, বাতিল হওয়া ভিডিয়ো প্লেয়ার ইত্যাদি। এ সবের কোনও সেকেন্ড হ্যান্ড বাজারও নেই। সে মোটেই ভাবাবেগওয়ালা মানুষ নয়। তবু লোকটার দারিদ্রের বহর দেখে তার চোখ ছলছল করতে লাগল। এ কাকে মারতে এসেছে সে? এত খরচ করে, পাঁচ লাখ টাকা সুপারি ফি নিয়ে, শেষ পর্যন্ত একটা ভিখিরি-প্রায় মানুষকে মারতে হবে? আর এই লোকটাকে ওরাই বা মারতে চায় কেন?
শুধু একটা জিনিসই মিলছে না। কালুদাদার কুকুরটা। এই জাতের কুকুর পুষতে পারে বড়লোকেরা। কারণ পেডিগ্রি কুকুর পোষার অনেক খরচ। কালুদাদা তো আর কুকুরটাকে শাকপাতা খাইয়ে রাখে না! কিন্তু আসল কথা হল, এ সব রহস্য ভেদ করা তার কাজ নয়। কালুদাদা তার কুকুরকে হাওয়া খাইয়ে রাখুক, তাতে তার কী আসে যায়! অপ্রাসঙ্গিক জিনিস নিয়ে ভাবতে গেলে ফোকাস নষ্ট হয়ে যাবে।
বাইরে একটা খুব মৃদু পায়ের শব্দ গোছের শোনা গেল কি? শ্যাডো কান পেতে রইল। আর কিছু শোনা না-গেলেও শ্যাডো টের পেল, সে একা নয়। আরও কেউ কাছাকাছি আছে। তা হলে কুকুরটা ডাকল না কেন? তবে কি কালুদাদাই ফিরে এসেছে পুলিশের হাত ছাড়িয়ে?
শ্যাডো নিঃশব্দে বাইরে বেরিয়ে এল। চার দিকে চেয়ে কাউকে দেখতে পেল না। হঠাৎ কুকুরটা তাকে দেখে ‘ঘ্রাউ’ করে বিকট একটা ডাক ছাড়তেই সে শিস দিয়ে উঠল, ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে।’ কুকুরটা চুপ হয়ে ফের বসে পড়ল। তাতে একটু সাহস হল শ্যাডোর। সে কুকুরপ্রেমী নয়, তবে প্রাণীটিকে তার খারাপ লাগে না। সে ধীর পায়ে কুকুরটার কাছে এগিয়ে গেল। বিশাল কুকুর, যে কোনও মানুষকে অনায়াসে পেড়ে ফেলতে পারবে। শিস দিতে-দিতেই কুকুরটার পাশে উবু হয়ে বসল সে। তার পর আরও একটু সাহস সঞ্চয় করে সে কুকুরটার মাথায় আস্তে করে হাত রাখল। ‘কুঁই’ করে একটা শব্দ করল কুকুরটা। আহ্লাদের শব্দ। বেশ কিছু ক্ষণ কুকুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে একটু মায়া হল তার। জীবনে কখনও কোনও কুকুরকে আদর করেনি সে। এই প্রথম।
কিন্তু রাত হয়ে আসছে। তার ফেরা উচিত বলে সে উঠে পড়ল। তার পর চরের বালিয়াড়ি ভেঙে ডাঙা-জমিতে পা রাখল। শাল-জঙ্গল ভেদ করে হাঁটতে লাগল গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে। ক্ষুরধার কোনও চিন্তা নয়, এলোমেলো চিন্তা। সবচেয়ে অস্বস্তিকর চিন্তা হল, এক জনকে তার খুন করতেই হবে।
হোটেলে ফিরেই ফোনটাকে চার্জে বসাল সে। ব্যাটারি একদম শেষ। কিছু ক্ষণ চার্জ হওয়ার পর মাকে ফোন করল।
মা বলল, “জ্ঞান ফিরেছে, তবে এখনও কারও সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। কাল বিকেলে নাকি দেবে। তোর কাজ হলে তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।”
“যাব মা। আর একটু কাজ বাকি আছে।”
মায়ের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলার পর ফোনটাকে ফের চার্জে বসিয়ে খানিক ক্ষণ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় করে নিল শ্যাডো। হাঁটাহাঁটি এবং এক্সারসাইজ়ের ফলে তার খিদে পাচ্ছে। কিন্তু রাত মোটে আটটা বাজে। এত তাড়াতাড়ি ডিনার করার মানেই হয় না। সে ফোনে অমলেটের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। পিস্তলটা বালিশের তলায় রেখেছে। বেয়ারাটা আবার কিছু সন্দেহ করবে না তো! না, বালিশটা তেমন ফুলে নেই!
সেই প্রাইভেট নম্বর থেকে ফোনটা এল রাত সাড়ে দশটায়, যখন সে রুটি আর মুরগির মাংস দিয়ে ডিনার সেরে সবে ঘরে ঢুকেছে।
“হাই শ্যাডো, আপনি তো দারুণ শিস দিতে পারেন! আ মাস্টার হুইসলার!”
শ্যাডো ভ্রু কোঁচকাল। লোকটা তার শিস শুনল কোথায়? তা হলে কি তাকে ফলো করে কালুদাদার ঠেক পর্যন্ত গিয়েছিল লোকটা! শ্যাডো কি ওরই পায়ের শব্দ শুনেছিল?
শ্যাডো নিরাসক্ত গলায় বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ। একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”
“অফ কোর্স। এনিথিং।”
“ও ভাবে পিস্তলটা পাঠালেন কেন? ইট ওয়াজ রিস্কি।”
“ডোন্ট ওরি। একটু-আধটু ছোটখাটো রিস্ক নিতেই হয়। ইট ইজ অল ইন দ্য গেম।”
“আমি তো পিস্তল চাইনি!”
“জানি। আপনি নভিস, তাই চাননি।”
“আর একটা কথা।”
“গো অ্যাহেড মিস্টার শ্যাডো।”
“এ রকম গরিব এক জন হ্যাভ-নটকে মারতে চান কেন আপনারা? লোকটার তো কিছুই নেই! অলমোস্ট আ বেগার।”
“ওটা ক্যামোফ্লাজ, মাই ডিয়ার শ্যাডো। লোকটা আসলে ধুরন্ধর। কতটা ধুরন্ধর তা আন্দাজ করা মুশকিল। আমরা ওর সঙ্গে একটা ডিল করতে চেয়েছিলাম। ও তাতে রাজি নয়। কয়েক কোটি টাকার অফার ও রিফিউজ় করেছে।”
“কিসের ডিল জানতে পারি?”
“আমি সেটা ঠিক জানি না। আমি একজন সামান্য অপারেটর, সব কিছু আমার জানতে নেই। তবে আন্দাজ করছি, ওর কাছে খুব ভ্যালুয়েবল কিছু আছে, যা সাদা চোখে দেখা যায় না।”
“আমি ওর ঘরটা সার্চ করেছি, সেখানে এ রকম কিছুই নেই যাকে ভ্যালুয়েবল বলা যায়।”
“আমি অত কিছু জানি না। আমাকে যা করতে বলা হয়েছে আমার শুধু সেটুকুই করার কথা, বেশি কৌতূহল উনি পছন্দ করেন না।”
“কে? কার কথা বলছেন?’
“দ্য বস।”
“হরিশ?”
“মে বি। কে যে কী, তা বলা ডিফিকাল্ট মিস্টার শ্যাডো। দাবা খেলা জানেন তো! আমরা হচ্ছি বোড়ে। আমাদের খুব বেশি কিছু জানার নেই, বোঝার নেই, করারও নেই। আন্ডারস্টুড?”
“হ্যাঁ। আর একটা কথা। আপনি কি আমাকে নদীর চর অবধি ফলো করেছিলেন?”
“না মিস্টার শ্যাডো, আমার অন্য কাজ ছিল।”
“তা হলে আমার শিস দেওয়ার ব্যাপারটা আপনি জানলেন কী করে?”
“আপনার বায়োডেটায় লেখা আছে।”
“আপনি কে?”
“নোবডি মিস্টার শ্যাডো। গুড নাইট।”
ফোনটা কেটে গেল। শ্যাডো নিশ্চিত যে, লোকটা তাকে ফলো করেছিল, কিংবা আগেভাগে গিয়ে অকুস্থলে হাজির হয়েছিল। প্যাটার্নটা বুঝতে পারছে না সে। অনেক ধন্দ রয়েছে। নিজেদের অপারেটর বা ভাড়াটে খুনিরা থাকতে এক জন মানুষকে মারার জন্য তার মতো আনাড়িকে ভাড়া করার মানে কী? এবং এত টাকা দিয়ে! কোথায় যেন একটা খটকা রয়ে যাচ্ছে!
তার ঘুম গাঢ় এবং প্রায় স্বপ্নহীন। প্রচণ্ড শীতে কম্বল চাপা দিয়ে আরামে ঘুমোচ্ছিল সে। ঘুমটা আচমকা ভাঙল ফোনের রিং শুনে।
“মিস্টার শ্যাডো, সরি টু ডিস্টার্ব। একটা ইম্পর্ট্যান্ট খবর আছে। রাত দশটায় কালীচরণকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। ইট ইজ দ্য টাইম ফর ইউ টু ডেলিভার। প্লিজ গেট রেডি।”
ঘুমে ভোম্বল হয়ে আছে মাথা। তাই কথাগুলো মাথায় ঢুকতে এবং বুঝে উঠতে অনেকটা সময় লাগল শ্যাডোর। সে অবাক হয়ে বলল, “এখনই?”
“মনে রাখবেন মিস্টার শ্যাডো, আগামী কাল রাতের ট্রেনেই আপনার ফেরার টিকিট কনফার্ম আছে। ইউ ডোন্ট হ্যাভ ইটারনিটি ইন ইয়োর হ্যান্ড। ডু ইট নাউ। গেট আপ ম্যান, অ্যান্ড গেট রেডি।”
শ্যাডো কম্বল ছেড়ে উঠে বসল। এবং কিছু ক্ষণ বসে রইল। একটু পরেই এক জন লোককে খুন করতে হবে। যে লোকটার সঙ্গে তার কোনও খাড়াখাড়ি নেই, যাকে সে চেনেও না, যাকে মারার কোনও কারণই নেই, এক মুঠো টাকা ছাড়া!
সে উঠল। নিঃশব্দে পোশাক পরল। পিস্তলটা পকেটে পুরল। হোটেল থেকে গোপনে বেরোনোর কোনও উপায় নেই। রিসেপশন দেখবে, নাইটগার্ড বা গেটকিপার দেখবে। অনেক সাক্ষী থাকছে। কিন্তু কী আর করা! যা হওয়ার তা হবে।
মধ্য রাত্রিতে রিসেপশনে কেউ ছিল না। তবে মেন গেটের কাছে এক জন টুল পেতে বসা ঘুমন্ত লোক ছিল। তাকে ডাকতে হল গেট খোলার জন্য। লোকটা একটু বিস্ময়ের সঙ্গে তার দিকে চেয়ে থেকে অবশেষে গেট খুলে দিল।
বাইরে বেরোতেই শীত যেন বাঘের মতো আঁচড়ে-কামড়ে দিতে লাগল। দুটো হাতের পাঞ্জা আর মুখ যেন ঠান্ডায় অবশ, অসাড়। দ্রুত হাঁটলে গা একটু গরম হয়, সেটাই যা বাঁচোয়া। সে যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগল। রাস্তা জনহীন। তবে নেড়ি কুকুররা ঘেউঘেউ করে তেড়ে আসছিল। এত রাতে অচেনা লোক তারা পছন্দ করে না। এই নিয়ম সর্বত্র। বিনোদিনী স্কুল পেরিয়ে বাঁ-দিকের কাঁচা রাস্তা ধরে ফেলল শ্যাডো। অন্ধকার। সে আলো জ্বালার চেষ্টাই করল না। মনটা ভাল নেই। মন ভাল লাগছে না। আলোর চেয়ে অন্ধকারই ভাল। জীবনে বোধ হয় প্রথম নিজের হার্টের ডুগডুগি শুনতে পাচ্ছিল সে। তার হৃৎপিণ্ড জানান দিচ্ছে যে, সে বেঁচে আছে।
শাল-জঙ্গলে ঢুকতেই পায়ের নীচে মর্মরধ্বনি, শুকনো শালপাতা ভাঙছে। আবার উপর থেকে টুপটাপ শিশির পড়ছে। অন্ধকারেই দীর্ঘ রাস্তাটা পেরিয়ে এল সে। টাইম টু ডেলিভার। ঋণ শোধ করতে হবে। তার বাবা এখন প্রাণ ফিরে পেয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। সেই প্রাণের দাম শ্যাডোকে এই মধ্য রাতে মেটাতে হচ্ছে।
শাল-জঙ্গলের শেষে এসে নদীর গন্ধ পেল শ্যাডো। আর কালুদাদার কুকুরটা বোধ হয় পেল তার গন্ধ। আচমকা তার গম্ভীর ব্যারিটোন গলায় চার দিক প্রকম্পিত করে ডাকল, ‘ঘ্রাউ ঘ্রাউ…
শ্যাডো মৃদু শিসে গাইতে লাগল ‘মায়াবনবিহারিনী হরিণী’। কুকুরটা চুপ। চার দিক নিস্তব্ধ। শুধু শ্যাডোর শিসের মৃদু ও মধুর শব্দ চার দিকে নেচে বেড়াতে লাগল, ‘থাক থাক নিজমনে দূরেতে, আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে…
খুব ধীরে ধীরে হেঁটে বালিয়াড়ি পেরিয়ে কালুদাদার দীন-দরিদ্র ইগলুটার সামনে এসে দাঁড়াল সে। লোকটা কি জেগে আছে? জেগে থাকার কথা নয়। কুকুরটাকে বাইরে দেখতে পেল না সে। সম্ভবত ভিতরেই আছে। তাই সে শিস দেওয়া বন্ধ করল না। পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে হাতে নিল, লকটা খুলল। তার পর প্লাস্টিকের ঢাকনাটা সরিয়ে ভিতরে ঢুকল।
অন্ধকারেই আচমকা হঠাৎ বিশাল একটা ছায়া ঢেউয়ের মতো এসে পড়ল তার উপর। কুকুরটা! হ্যা হ্যা করে হাঁপ-ধরা একটা শব্দের সঙ্গেসঙ্গে শ্যাডোকে জিভ দিয়ে চেটে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছিল সে। শ্যাডো বিশাল কুকুরটার ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গিয়ে কনুইয়ে ভর দিয়ে আছে কোনও ক্রমে। অপ্রস্তুত অবস্থা। হাতে ধরা তার অসহায় পিস্তল।
ফস করে একটা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বলে উঠল। তাতে অনেকটা আলো হল যেন। আধশোয়া অবস্থা থেকেই প্লাস্টিক শিটের বিছানায় রোগা চেহারার লোকটাকে দেখতে পেল শ্যাডো। উঠে বসে অবাক চোখে দেখছে তাকে। ঝাকড়মাকড় চুল, একটু কোমল দাড়ি আর গোঁফ, চোখ দুটো ভারী মায়াবী। বিস্ময়ের সঙ্গে নরম গলায় বলল, “আপনি কে বাবু?”
কুকুরটা তাকে ছেড়ে মালিকের কাছে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ল। আধশোয়া অবস্থা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসল শ্যাডো। তার পর বলল, “আমার নাম শ্যাডো সেনগুপ্ত।”
“আপনি খুব সুন্দর শিস দেন। কোথায় শিখলেন বাবু?”
শ্যাডো মাথা নেড়ে বলে, “কোথাও শিখিনি। আপনা থেকেই শেখা।”
লোকটা একটা মোমবাতি জ্বেলে একটা পুরনো চেহারার মোমদানিতে রেখে বলে, “অমন উঁচু পর্দায় এত নিখুঁত শিস বড় একটা শোনা যায় না। ও রকম শিস না-দিলে আজ গোলো আপনাকে ছিঁড়ে ফেলত। কী ভাগ্যি যে আপনি ও রকম শিস দিতে পারেন! আমাকে কি কিছু বলবেন বাবু? আপনার হাতে একটা পিস্তল দেখছি যেন!”
শ্যাডো কিছু ক্ষণ মাথা নিচু করে বসে রইল। তার পর মুখ তুলে বলল, “আমি আপনাকে মারতে এসেছি।”
কালুদাদা হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে বলে, “তাই তো বাবু, বড় মুশকিলে ফেললেন!”
শ্যাডো বিষণ্ণ গলায় বলে, “আমার উপায় নেই। আমি এই কাজটা করার জন্য কিছু টাকা পেয়েছি। আমার খুব দরকার। টাকাটা তো অন্য ভাবে শোধ দিতে পারব না! আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।”
কালুদাদা বিষণ্ণ চোখে তার দিকে চেয়ে ছিল। হতাশ ভাবে মাথাটা নেড়ে স্বগতোক্তির মতো করে বলল, “আমাকে মারতে এই তো সে দিন আরও এক জন এসেছিল, তারও আগে আরও এক জন এসেছিল, আমি কী করব বলুন, গোলো তাদের গলার নলি কেটে ছিঁড়ে ফেলেছে। ও রকমই প্রোগ্রাম করে দেওয়া হয়েছে গোলোকে! আমার কিছু করার ছিল না বাবু! তাদের লাশ ওই বালিয়াড়িতে পোঁতা আছে। শুধু আপনিই এত দূর আসতে পেরেছেন, অমন অদ্ভুত শিস দিতে পারেন বলে।”
শ্যাডো বিস্ফারিত চোখে কিছু ক্ষণ লোকটার দিকে চেয়ে রইল, তার পর বলল, “তা হলে আমি না-জেনে একটা অন্যায় সুযোগ নিয়েছি কালুদাদা! আমি আপনাকে মারতে চাই না, আমি কাউকেই মারতে চাই না। কিন্তু আমার বাবার অসুখের জন্য আমাকে এই সুপারিটা নিতে হয়েছে।”
কী চমৎকার সাদা আর ঝকঝকে দাঁত কালুদাদার! যখন হাসল তখন ঘরখানা যেন আরও আলো হয়ে গেল, মৃদু স্বরে বলল, “তাই তো! বাবার অসুখের তো চিকিৎসা দরকার, তার জন্য টাকাও তো লাগবে বাবু! তা হলে এক কাজ করেন, দেরি করে লাভ কী? পিস্তলটা তুলে গুলি চালিয়ে দেন আমার বুকে। এই তো আপনার সামনেই বসে আছি, চালিয়ে দিন!”
শ্যাডো পিস্তলটা তুলল। ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যৎ ত্যক্তোত্তিষ্ঠ পরন্তপঃ। পর পর দু’বার ট্রিগার টিপল শ্যাডো।