এক আশ্চর্য ফেরিওয়ালা – ৩

॥ ৩॥

করিডোরে একটা মৃদু শিসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। একটা ইংরেজি গান, ‘স্যাড টু সে, আই অ্যাম অন মাই ওয়ে, ওন্ট বি ব্যাক ফর মেনি আ ডে…’ বয়স্কা নার্সটি একটু বিরক্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেলেন। ভিজ়িটিং আওয়ার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, কিছু ভিজিটর এখনও আছে। ছোকরাটিকে শনাক্ত করতে সময় লাগল না তাঁর। ভিজিটরদের জন্য পাতা বেঞ্চে বসে ছিল। পরনে ফেডেড জিন্‌স, গায়ে কালচে টি শার্ট, পায়ে স্নিকার।

নার্সটি ভদ্র গলাতেই বললেন, “এটা হাসপাতাল, শিস দেওয়ার জায়গা নয় কিন্তু।”

ছেলেটা লজ্জিত মুখে উঠে দাঁড়াল, বিনয়ের সঙ্গেই বলল, “সরি ম্যাডাম, ভুল হয়ে গেছে।”

নার্সটি দেখলেন, ছেলেটা বেশ লম্বা, স্পোর্টসম্যানের মতো চেহারা। মুখখানা করুণ।

নার্স জিজ্ঞেস করলেন, “কেউ ভর্তি আছে বুঝি?”

“বাবা। ব্রেন টিউমার।”

“ও,” বলেই নার্স একটু হেসে আবার বললেন, “আপনি শিস খুব ভাল দেন, কিন্তু এটা যে হাসপাতাল সেটা মনে রাখতে হবে তো!”

“আর হবে না ম্যাডাম।”

“ঠিক আছে, বসুন। আপনার বাবার নাম কী?”

“বিনয় সেনগুপ্ত, সার্জিক্যাল ওয়ার্ড।”

“ডক্টর পল্লব দাশগুপ্তর পেশেন্ট তো! জানি। আপনি বসুন, ডক্টর একটু পরেই এসে যাবেন।”

“ধন্যবাদ ম্যাডাম।”

বয়স্কা নার্সটির একটু ফিল গুড হচ্ছে। তাঁর ছেলে নেই, এরকম একটা ছেলে থাকলে বেশ হত। ধীরে-ধীরে হেঁটে তিনি নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন।

শ্যাডোকে তার বাবা এক বার জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে টাকাটা কোথায় পেল। তাদের পরিবারে একটা সততার অনুশীলন আছে। অনর্জিত আয়কে তারা ভাল চোখে দেখে না। ভয় পায়। সেটা হয়তো পাপের ভয়, নরকবাসের ভয়, কিংবা আত্মসম্মান। এ টাকা অবশ্য শ্যাডোর অনর্জিত আয় নয়। একটা কাজ করে দিতে হবে মাত্র। একটা খুন। সেটা ক্রাইম বটে, কিন্তু ডিজ়অনেস্টি নয়। এটা তো আর বাড়িতে বলা যায় না। মিথ্যে কথাটা তেমন পরিপাটি বলতেও পারে না সে। ঘুরিয়েফিরিয়ে বলেছিল, এক বন্ধু ধার দিয়েছে, ধীরে-ধীরে শোধ দিতে হবে। তার বাবা বিনয় সেনগুপ্ত আর কিছু জিজ্ঞেস করেননি। জিজ্ঞেস করার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না। ব্রেন টিউমারটা বাড়ছে, চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে এবং আরও নানা রকম কমপ্লিকেশন। ধারের কথা শুনে এ বিষয়ে তার মা বা দিদিও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। পৃথিবীতে মাত্র তিনটে লোক আছে শ্যাডোর, বাবা, মা আর দু’বছরের বড় দিদি। ব্যস, তার পৃথিবী শেষ। এর বাইরে আর কারও প্রতি তেমন কোনও দায়বদ্ধতা নেই তার। বাদবাকি লোক বাঁচল কী মরল তাতে কিছু যায় আসে না শ্যাডোর। বাবাকে সে প্রাণাধিক ভালবাসে। কর্পোরেশনের এই সামান্য কর্মচারীটি তাঁর ছেলেকে তেমন ভাল স্কুলে পড়াতে পারেননি, দামি জামাকাপড় বা মহার্য খেলনা কিনে দেননি, তেমন ভাল খাওয়াদাওয়াও জোটাতে পারেননি। তবে আকণ্ঠ ভালবাসা দিয়েছেন। কাঁধে করে রথের মেলায় নিয়ে গেছেন, অসুখ হলে রাত জেগে শিয়রে বসে থেকেছেন, মুখে-মুখে গল্পের ছলে পৃথিবীর ইতিহাস, রূপকথা, কাউন্ট অফ মন্টি ক্রিস্টো, হাঞ্চব্যাক অফ নোতরদাম, থ্রি মাস্কেটিয়ার্স, ব্ল্যাক অ্যারো, রামায়ণ, মহাভারত, পঞ্চতন্ত্র, বেতালপঞ্চবিংশতি, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, কত কী শুনিয়েছেন! এই মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্যাডো সব কিছু করতে পারে।

কাল অপারেশন হবে। সেই জন্য একটু টেনশন আছে তার। ডাক্তার দাশগুপ্ত অবশ্য বলেছেন, “কোনও ভয় নেই। টিউমারটা বিনাইন এবং অপারেশন তেমন জটিল নয়।”

দুঃখের বিষয়, অপারেশনের সময়ে সে থাকতে পারবে না। দিন চারেক আগে সেই চোয়াড়ে চেহারার লোকটা, যার নাম সে পরে জেনেছে, আবু, তার সঙ্গে সেই রেস্তরাঁয় দেখা করে বলেছিল, “আর সময় নেই। তুমি ফুল পেমেন্ট পেয়ে গেছ, নাউ ইট্স টাইম টু ডেলিভার।”

লোকটা তাকে একটা ট্রেনের এসি ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট ধরিয়ে দিল,

যেটা আজ রাতের ট্রেন। তার পর একটা খবরের কাগজে মোড়া প্যাকেট তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ইউ উইল নিড দিস।”

“ওটা কী?”

“আ গান, ম্যান!”

শ্যাডো জীবনে কখনও বন্দুক-পিস্তল হাতে নিয়ে দেখেনি। মাথা নেড়ে বলল, “ওটার দরকার হবে না। একটা মানুষকে মারতে বেশি কিছু লাগে না।”

আবু দ্বিধাগ্রস্ত মুখে তার দিকে চেয়ে থেকে বলল, “চালাতে জানো না বুঝি!”

“না। তা ছাড়া পিস্তল সঙ্গে রাখলে ঝুঁকি বাড়বে

“দেন হাউ উইল ইউ ডু ইট? বাই স্ট্র্যাংলিং?”

“সেটা পরে ঠিক করব।”

“লুক ইয়ংম্যান, এটা ছেলেখেলা নয়, ভাল করে ভেবে দেখো। পিস্তলে কাজ সবচেয়ে ভাল হয়। ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার। জাস্ট হিট অ্যান্ড রান।”

“মিস্টার আবু, জায়গা মতো একটা কারাটে কিক বা মাথায় একটা ঘুষিই অনেক সময়ে যথেষ্ট। কিংবা এক টুকরো দড়িই কাজটা করে দিতে পারে। তুমি ভেবো না, আই শ্যাল ডু ইট ইন মাই ওন ওয়ে।”

“আবার ভেবে দেখো। দরকার হলে বাড়ি গিয়ে ভাবো। মত বদলালে আমাকে ফোন কোরো। পিস্তল তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।”

শেষ পর্যন্ত পিস্তলটা নেয়নি শ্যাডো। তার একটা ভয় হল, বন্দুক পিস্তল সঙ্গে থাকলেই ভিতরে একটা হননেচ্ছা জাগতে পারে, তখন হয়তো সামান্য কারণেই গুলি চালিয়ে দিতে ইচ্ছে হবে। অস্ত্র সব সময়েই অন্যকে হত্যা করার প্ররোচনা দেয়। সে তো আর পেশাদার খুনি নয়, বাবার প্রাণরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে একটা কাজ করতে যাচ্ছে।

করিডোরের এক প্রান্তে ডাক্তার পল্লব দাশগুপ্তকে দেখা গেল। একটু মোটাসোটা মানুষ, আহ্লাদী এবং হাসি-খুশি, আমুদে চেহারা। সব সময় রোগীদের ভরসা দেন বলে রোগীরা তাঁকে পছন্দ করে। তার বাবাও বলেছেন, ডাক্তারবাবুটিকে তাঁর বেশ ভাল বলে মনে হয়েছে। ডাক্তারবাবু কাছে আসতেই উঠে দাঁড়াল শ্যাডো, “স্যর, আমার বাবা বিনয় সেনগুপ্তর অপারেশন আগামী কাল হবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু আমাকে আজকেই একটা জরুরি কাজে বাইরে যেতে হবে। অপারেশনের সময়ে আমি থাকতে পারব না।”

ডাক্তার পল্লব দাশগুপ্ত হাসিমুখেই বললেন, “জরুরি কাজ থাকলে যাবেন। আর আপনি এখানে থাকলেও তো কিছু করতে পারবেন না। আপনার বাবা হান্ড্রেড পার্সেন্ট মেডিক্যাল কেয়ারে থাকবেন। বরং কাজ সেরে ফিরে আসুন, বাই দি গ্রেস অফ গড উনি ততদিনে সুস্থ হয়ে উঠবেন, ফিরে এসে সুস্থ বাবাকে দেখতেই বরং ভাল লাগবে। কী বলেন? বাই দা বাই, আপনার বাড়ির অন্য লোকজন আছেন তো! কাউকে না-কাউকে তো অ্যাটেন্ড করতে হবে!”

“আমার মা আর দিদি আছেন স্যর, তাঁরা থাকবেন।” ”

“তা হলেই হবে।

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”

“ইউ আর ওয়েলকাম।”

ডাক্তার ওয়ার্ডের দিক চলে যাওয়ার পর শ্যাডো পাশে রাখা তার হ্যাভারস্যাকটা পিঠে তুলে নিল। বয়স্কা নার্সটি তাকে হয়তো লক্ষ করছিলেন, উঠে এসে স্নেহসিক্ত গলায় বললেন, “এ কী! চলে যাচ্ছেন যে! বাবার সঙ্গে এক বার দেখা করে যাবেন না?”

শ্যাডো খুব অপ্রস্তুত বোধ করল, কারণ সে এখন মোটেই বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না। এখন বাবার প্রিয় মুখখানা দেখলে তার মন দ্রব হয়ে যাবে। যে কাজ সে করতে যাচ্ছে তা ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। তার ভিতরকার যে খুনিটা আস্তে-আস্তে জেগে উঠছে সে আবার ঘুমিয়ে পড়বে হয়তো। তাই সে মাথা নেড়ে বলল, “না ম্যাডাম, এখন তো ভিজিটিং আওয়ার নয়, এখন দেখা করব না।”

নার্সটি স্নেহমিশ্রিত হাসি হেসে বলেন, “আরে তাতে কী হয়েছে! ভিজ়িটিং আওয়ার তো এই মাত্র শেষ হল! চলুন আমি আপনাকে আপনার বাবার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি বোধ হয় বাইরে কোথাও যাচ্ছেন, এক বার বাবার সঙ্গে দেখা করে যান!”

শ্যাডো এই গায়েপড়া প্রস্তাবটা পছন্দ করছিল না। বিরক্ত হলেও সে বিনয়ের ভাব বজায় রেখেই বলে, “ম্যাডাম, আমার বাবা এক জন হার্ডকোর মরালিস্ট। কোনও রকম আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নেওয়া একদম পছন্দ করেন না। এই অসময়ে আমি ওঁর কাছে গেলে উনি খুব অসন্তুষ্ট হবেন।”

“ওমা! তাই বুঝি! তা হলে থাক,” নার্সটি দুঃখী মুখে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন।

শ্যাডো নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে এল। এখন সন্ধে সাড়ে সাতটাও বাজেনি। তার ট্রেন পৌনে দশটায়। কাছাকাছি একটা ধাবায় বসে তন্দুরি রুটি আর মুরগির রোস্ট খেয়ে নিল সে। খেতে-খেতে তার হঠাৎ মনে হচ্ছিল, তার উপর কেউ নজর রাখছে না তো! কেমন একটু সন্দেহ হওয়ায় সে চার দিকটা চেয়ে দেখল। কিন্তু মুশকিল হল ধাবায় এই সন্ধেবেলায় প্রচণ্ড ভিড়। এই ভিড়ের ভিতর কে কার উপর নজর রাখছে তা বোঝে কার সাধ্য! নজর রাখলেও তার কিছু করার নেই। ‘যা হওয়ার হবে’ এই নীতিতে সে গভীর ভাবে বিশ্বাসী।

আবুর বসের নাম হরিশ। আবু বলে হরিশজি। আবু বা তার বস কী করে বা কোথায় থাকে তা জানার চেষ্টাও করেনি শ্যাডো। হয় বলবে না, নয়তো ভুল ইনফরমেশন দেবে। তাই ওদের আসল পরিচয় জানার চেষ্টাই করেনি সে। এমনকি, আবু বা হরিশও হয়তো ওদের আসল নাম নয়।

রিস্কের কথাটাও ভাবে শ্যাডো। এতগুলো টাকা তো ঝুঁকি ছাড়া রোজগার করা সম্ভব নয়। হয়তো বাকি জীবন তাকে জেলে পচতে হবে। কিংবা ডেথ সেনটেন্সও হতে পারে। তাতে তার তেমন কোনও সমস্যা নেই। যা হওয়ার হবে। তার চাকরি নেই, চাকরি পাওয়ার আশাও নেই, এই পরিস্থিতিতে দৈবের উপর ভরসা করে তো বসে থাকা যায় না। দৈব সে মানেও না। জনসংখ্যাবহুল এই পৃথিবী থেকে একটা লোককে সরিয়ে দেওয়া এমন কী ব্যাপার! বিশেষ করে যদি তাতে তার নিজের বাবা বেঁচে যায়! আর লোকটা তো মরবেই, শ্যাডো যদি না-ও মারে তবু আবু বা হরিশ অন্য সুপারি কিলার লাগিয়ে ঠিকই মেরে দেবে। তা হলে সে মারলে ক্ষতি কী? যুদ্ধেও তো এক জন সৈন্য বিপক্ষের সৈন্যকে মারে। পাপ-পুণ্যে সে বিশ্বাসী নয়, তার পরকালের ভয় নেই, ভগবান বলেও কাউকে মানে না। এক প্রাকৃতিক নিয়মে তার জন্ম, কালের নিয়মে সে এক দিন মারাও যাবে, এই তো ব্যাপার! তা হলে অকারণে কর্মফল নিয়ে ভাবতে যাবে কেন সে?

আগে তার একটা সস্তা ফিচার ফোন ছিল, হরিশ তাকে একটা ভাল জাতের স্মার্ট ফোন দিয়েছে। তাতে একটা রহস্যজনক নম্বর সেভ করা আছে। প্রয়োজনে সে যোগাযোগ করতে পারে। তবে সে যদি ধরা পড়ে এবং কেস গুবলেট হয়ে যায় তা হলে এই নম্বরটা যে পুলিশ ট্রেস করতে পারবে না, তা-ও শ্যাডো অনুমান করতে পারে। এরা পাকা লোক, কোথাও কোনও সূত্র রেখে যাবে না। সব দায় শ্যাডোকেই বহন করতে হবে। কিছু যায় আসে না তাতে। সে সব পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত।

নতুন ফোনটা থেকে সে মা আর দিদির সঙ্গে একটু কথা বলল। কথা বলার মতো বেশি লোক নেই তার। তার এখন একটাই টেনশন, কাল সকালে তার বাবার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার। এবং তখন সে কলকাতায় থাকবে না। এক অচেনা জায়গায়, এক অচেনা পরিবেশে একটা অচেনা কাজ জীবনে প্রথম বার করতে হবে তাকে। সে কি শেষ পর্যন্ত সুপারি কিলার হয়ে দাঁড়াবে! প্রফেশনাল হিটম্যান? বাবা জানতে পারলে বোধ হয় আত্মহত্যা করবেন। কিন্তু বিকল্পই বা কী আছে শ্যাডোর হাতে?

জীবনে কখনও এসি ফার্স্ট ক্লাসে চড়েনি সে। আজ চড়ে দেখল, ঘ্যামা ব্যাপারস্যাপার। চার জনের কিউবিকূল। তার বার্থ ডান দিকের আপার। ওঠার জন্য চমৎকার একটা মই আছে। সেকেন্ড ক্লাসের মতো হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করে উঠতে হবে না। বাকি তিন জনের এক জন বয়স্ক মানুষ, ফরসা, অভিজাত চেহারা, সঙ্গে অনেক জিনিসপত্র। বাকি দু’জনের এক জন বছর তিরিশের, রোগা, নিরীহ চেহারার মানুষ, তার সঙ্গেও গোটা দুই সুটকেস। চতুর্থ জন বছর পঁয়ত্রিশ বা চল্লিশের এক জন হাট্টাগাট্টা, বেঁটে চেহারার লোক। এই লোকটার বেশি লাগেজ নেই, কেবল একটা ব্যাগ। চেহারা দেখে কে কী রকম তা অনুমান করা মুশকিল। তবে শ্যাডোর কেন যেন মনে হচ্ছে, এই যাত্রায় সে একা নয়, কেউ সম্ভবত তার ছায়া হয়ে যাচ্ছে। যেতেই পারে। হরিশ হয়তো এক জন অবজ়ার্ভারকেও লেলিয়ে দিয়েছে। এবং সেই লোকটা সম্ভবত বেঁটে জন। কারণ তারই লাগেজ সবচেয়ে কম। শ্যাডোর শ্যাডো। তাতে অবশ্য শ্যাডোর কিছুই যায় আসে না। তার মনে ভয়ের লেশমাত্র নেই। একটু যা টেনশন আছে তা বাবার জন্য। বাবার কাল সকালে অপারেশন। ব্রেন অপারেশন সব সময়েই ক্রিটিকাল। তার ডাকার মতো কোনও ভগবান নেই, নির্ভর করার মতো কোনও দৈব নেই, সাহস দেওয়ার মতো কোনও মিরাকল নেই।

গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর সে, তার সহযাত্রীদের কারও সঙ্গে একটিও কথা না-বলে, তার বার্থে উঠে গেল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল।