উপন্যাস
বড় গল্প
সংকলন
রচনা

এক । শৈশব ও কৈশোর

এক । শৈশব ও কৈশোর

মহাভারতের কবি বলেন, অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিলেন মাতৃজঠরে।

একালের কবি আর-একটি ছেলের সম্বন্ধেও ও-কথা বলেননি বটে, কিন্তু তারও পিতা ছিলেন বীরপুরুষ ও মাতা ছিলেন বীরনারী এবং তিনিও যখন মাতৃগর্ভে বাস করতেন তখন তাঁর মাতা বিচরণ করতেন রণক্ষেত্রে—পাশে নিয়ে অস্ত্রধারী স্বামীকে।

শত্রু আক্রমণ করেছে তাঁদের স্বদেশকে এবং শত্রু হয়েছে বিজয়ী। গভীর অরণ্যের অন্ধকার ভেদ করে, নদী, প্রান্তর, পর্বত, উপত্যকা, অধিত্যকা, অতিক্রম করে হাজার হাজার পলাতকের সঙ্গে তাঁরাও চলেছেন শ্রান্তপদে কিন্তু দৃপ্তমনে দূরে—দূরে—আরও দূরে—বহু দূরে! পিছন থেকে ভেসে আসছে গুরু গুরু মেঘগর্জনের মতন ঘনঘন কামান-তর্জন—মাঝে মাঝে কানের পাশ দিয়ে সশব্দে বাতাস কেটে ছুটে ছুটে যাচ্ছে বন্দুকের প্রতপ্ত গুলি।

১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ। ফরাসিরা কর্সিকা-দ্বীপ দখল করলে জুলাই মাসে। পরাজিত কর্সিকাবাসীদের দুঃখের সীমা নেই।

কিন্তু ঠিক পরের মাসেই—১৫ আগস্ট তারিখে কর্সিকার বীরনারী লেটিজিয়ার গর্ভ থেকে যে পুত্র ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীর আলোকে প্রথম চোখ মেললে, পিতা-মাতার পরাজয়-বেদনার প্রতিশোধ নেওয়ার ভার পড়ল তারই উপরে। আজ যারা জয় করে প্রভু হতে এসেছে, তাদেরই জয় করে সর্বশক্তিমান প্রভু হবে এই পুত্র।

ছেলের নাম হল নেপোলিয়ন। আজ তিরিশলক্ষ ফরাসি সৈনিকের ঘৃণ্য তরবারির রক্তধারার তলায় অজানা গৃহকোণে যার জন্ম, কয়েক বৎসর পরে দেখা গেল—সমগ্র ফরাসি দেশ তারই পদতলে নিশ্চেষ্টভাবে নতশির।

নেপোলিয়ন হচ্ছে ইতালিয় নাম। ইতালির ইতিহাসে এই নামের প্রথম অধিকারী বহু শতাব্দী পূর্বেই বিখ্যাত হয়েছিলেন। ষোলো শতাব্দীতে তাঁর বংশধররা উঠে আসেন কর্সিকায়। এবং তাদের বংশ পরিচিত হয় ‘বোনাপার্ট’ নামে।

নেপোলিয়নের বাবার নাম কার্লো বোনাপার্ট ও মায়ের নাম লেটিজিয়া র‍্যামোলিনো। সম্ভ্রান্ত বংশে জন্ম বলে কার্লো যখন ইতালিতে লেখাপড়া শিখতে গিয়েছিলেন, লোকে তখন তাকে কাউন্ট বোনাপার্ট বলে ডাকত। কিন্তু তিনি ছিলেন ভারি বেপরোয়া খরুচে—একবার একটি মাত্র ভোজ দিয়েই তিনি তাঁর দুই বছরের আয় খরচ করে ফেলতে কুণ্ঠিত হননি! সুতরাং এমন লোকের দ্বারা ভালোভাবে সংসার-চালনা করা সম্ভব নয়।

কার্লোর পেশা ছিল ওকালতি, কিন্তু তাঁর বাড়িতে মক্কেলদের দেখা খুব বেশি পাওয়া যেত না। তিনি সাহিত্যিকও ছিলেন—যদিও বিখ্যাত হতে পারেননি। নেপোলিয়নও প্রথম বয়সে বাপের শেষ-গুণের অধিকারী হয়ে কিছু কিছু লেখনীচালনা করেছিলেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। একখানি নভেলেও তিনি হাত দিয়েছিলেন।

কার্লো বোনাপার্টের পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে। জোসেফ (জন্ম ১৭৬৮), নেপোলিয়ন (১৭৬৯), লুসিয়েন (১৭৭৫), লুইস (১৭৭৮), জেরোম (১৭৮৪) এবং ক্যারোলিন, এলাইজ ও পলিন।

অতএব বোঝাই যাচ্ছে, সংসারটি বড় সামান্য নয়। বেহিসেবি কর্তার উপরে নির্ভর করলে এ সংসার হত একেবারেই অচল। কিন্তু নেপোলিয়নের এক খুড়ো ছিলেন, তিনি ধর্মযাজক। সংসারের কতক কতক ব্যয়ভার বহন করতেন তিনিও।

নেপোলিয়নের মা লেটিজিয়া কেবল যে বুদ্ধিমতী ছিলেন, তা নয়; যথাসম্ভব অল্প ব্যয়ে চারিদিক গুছিয়ে গাছিয়ে সংসার চালাবার ক্ষমতাও ছিল তাঁর যথেষ্ট। এবং মেজো নেপোলিয়ন ও সবচেয়ে ছোট মেয়ে পলিনকে তিনি অন্য সব ছেলেমেয়ের চেয়ে ভালোবাসতেন বেশি।

শিশু-বয়স থেকেই নেপোলিয়ন ছিলেন অত্যন্ত একগুঁয়ে বা একরোখা ছেলে। কিছুতেই ভয় পেতেন না, কারুকেই ভয় করতেন না। বড় কম ঝগড়াটেও ছিলেন না। কারুকে ঘুসি মারতেন, কারুকে দিতেন আঁচড়ে বা কামড়ে। তাঁর হাতে পড়ে দাদা জোসেফকেই হতে হত সবচেয়ে বেশি নাকাল। দাদাকে একচোট মেরে-ধরে তিনিই আবার আগে মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে করতেন দাদার নামে নালিশ; ফলে জোসেফ বেচারাকে মায়ের হাতেও আর একদফা লাভ করতে হত উত্তম-মধ্যম।

কিন্তু নেপোলিয়নের প্রকৃতি বন্য হলেও তিনি তাঁর মায়ের একান্ত বশীভূত ছিলেন। এবং সেই ছেলেবয়সে দৃঢ়চরিত্র মায়ের কাছ থেকে যে-সব সৎশিক্ষা পেয়েছিলেন তাই-ই যে তাঁর বিচিত্র ও অভাবিত ভবিষ্যৎ-জীবনকে গঠন করে তুলেছিল, এ-কথা তিনি নিজেই স্বীকার করে গেছেন।

প্রথম থেকেই এই ছোট্ট ছেলেটিকে কর্সিকার সকলেই অসাধারণ বলে মনে করত। তুঙ্গ গিরিশিখর, সুগভীর পার্বত্য খাত বা নির্জন গহন অরণ্য দেখে তিনি একটুও শঙ্কিত হতেন না। দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য পর্যন্ত ছিল তাঁর নখদর্পণে।

এবং নিজের জন্মভূমিকে তিনি প্রাণের চেয়ে ভালোবাসতেন। বহুকাল পরে ফ্রান্সের সম্রাট ও ইউরোপের সর্বেসর্বা হয়েও তিনি আত্মচরিতে লিখেছিলেন : ‘পৃথিবীর সকল জায়গার চেয়ে কর্সিকার যা কিছু সব ভালো—এমনকী তার মাটির গন্ধটুকু পর্যন্ত। আজও চোখ মুদে সে গন্ধ আমি পাই—এমন গন্ধ আর কোথাও নেই। আজও আমি কল্পনায় নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাই সেই সুমধুর শৈশব-দিবসে—সেই খাড়া পর্বতমালার মধ্যে, সেই তুঙ্গ শিখরশ্রেণির উপরে, সেই গভীরতম খাতের অতলে!’

সৈনিক জীবনের দিকে তাঁর প্রাণের টান ছিল এতটুকু বয়স থেকেই। বাড়ির কাছ দিয়ে যখন ফৌজের সৈনিকরা আসা-যাওয়া করত, তিনি বিপুল আগ্রহে ছুটে তাদের দেখতে যেতেন। তাঁর সবচেয়ে শখের খেলা ছিল পুতুল-সেপাইদের নিয়ে। তিনি যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুরাগী হবেন, সেটাও তাঁর শিশু-বয়স থেকেই বোঝা গিয়েছিল। তাঁর আর সব ভাইবোনরা যখন তুচ্ছ খেলাধুলো নিয়ে মেতে থাকত, তখন তিনি একলা বসে ঘরের দেওয়ালে করতেন অঙ্কের রেখাপাত।

নেপোলিয়নের দুষ্টুমির আর একটি গল্প শোনো।

তাঁর বুড়ি ঠাকুমা যখন বয়সের ভারে ভেঙে দুমড়ে পড়েছেন, তখন নেপোলিয়ন ও তাঁর ছোট বোন পলিন ঠাকুমাকে ঠাট্টা করে তাঁর চলা-ফেরার অনুকরণ করতেন। একদিন ঠাকুমা হঠাৎ নাতি-নাতনির কীর্তি দেখে ফেলে তাঁদের মায়ের কাছে নালিশ করে বললেন, ‘বউমা, তুমি ছেলে-মেয়েদের মানুষ করতে জানো না, তাদের অসভ্য করে তুলছ! ওরা গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখাতে শেখেনি।’

মা লেটিজিয়া তাঁর এই ডানপিটে ছেলেমেয়ে দুটিকে যতই ভালোবাসুন, তাদের কোনও অন্যায়কেই ক্ষমা করবার পাত্রী ছিলেন না। পলিনের পিঠে তখনই পড়ল চটাপট চড়-চাপড়! কিন্তু চালাক নেপোলিয়ন দূরে দূরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন, মা কিছুতেই তাঁকে হাতের কাছে পেলেন না। দু-চার দিন গেল। নেপোলিয়ন ভাবলেন, মা ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছেন।

তারপর একদিন মা বললেন, ‘নেপোলিয়ন, আজ লাটের বাড়িতে তোমার নিমন্ত্রণ। যাও, পোশাক পরে এসো।’

নেপোলিয়ন খুব খুশি হয়ে পোশাক পরবার জন্যে ঘরের ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন। খানিক পরেই দেখা গেল, মা সেই ঘরের ভিতর এসে দাঁড়িয়েছেন দরজায় পিঠ রেখে। মায়ের গম্ভীর মুখ দেখেই নেপোলিয়ন বুঝলেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন—পালাবার পথ বন্ধ! তারপর তাঁর যথাস্থানে পড়ল সপাসপ বেতের ঘা! মা কিছুই ভোলেননি—মনের রাগ মনের মধ্যেই পুষে রেখে দিয়েছিলেন।

কার্লো দেখলেন, তাঁর ছেলে নেপোলিয়নের সৈনিক-জীবনের দিকেই বেশি ঝোঁক। তিনি স্থির করলেন এ ছেলেটিকে সামরিক বিদ্যালয়েই ভরতি করে দেওয়া উচিত। বড় ছেলে জোসেফ নির্বিরোধী ভালোমানুষ, অতএব তাকে পুরুতের কাজেই মানাবে ভালো।

ছেলেদুটিকে নিয়ে কার্লো প্যারি শহরে গিয়ে রাজা লুইয়ের কাছে নিজের আবেদন জানালেন এবং তাঁর আবেদন মঞ্জুরও হল। এই হল নেপোলিয়নের ভবিষ্যৎ-জীবনের ভিত্তি। পিতার তীক্ষ্ণবুদ্ধিই করলে এই ভিত্তিপ্রতিষ্ঠা।

সম্ভ্রান্তবংশজাত বলে নেপোলিয়ন ফরাসিদেশের সম্ভ্রান্তদের ইস্কুলে ঠাঁই পেলেন। কিন্তু তিনি ফরাসি ভাষা জানতেন না। তাই আগে তঁকে ফরাসি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হল। তাঁর বয়স তখন এগারোর বেশি নয় (১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ)।

স্বভাবত মৌন ও নির্জনতাপ্রিয় নেপোলিয়ন ইস্কুল-সংলগ্ন বাগানের একটি প্রান্ত বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়ে সেইখানে বসেই নিজের মনে লেখাপড়া করেন। যে-জমিটুকু তিনি ঘিরে নিয়েছিলেন, তার সবটাই তাঁর নিজের নয়। কিন্তু আর কেউ সেই বেড়ার ভিতরে ঢুকলেই আর রক্ষা নেই—নেপোলিয়নের হাতে বেদম মার খেয়ে পালিয়ে আসা ছাড়া তার আর কোনও উপায় ছিল না।

শিক্ষকরা শাস্তির ব্যবস্থা করেও এ-বিষয়ে নেপোলিয়নকে রাজি করাতে পারলেন না। ‘শিক্ষক হোক, সহপাঠী হোক—আমার বেড়ার ভিতরে সকলেরই প্রবেশ নিষেধ!’

একজন শিক্ষক বললেন, ‘ছেলেটি দেখছি গ্রানাইট পাথরে গড়া। এর ভিতরে আছে আগ্নেয়গিরি।’

সে-ইস্কুলে পড়ত ফ্রান্সের যত সব উপাধিধারী বড় ঘরের ছেলে। তারা গা-টেপাটেপি করে বলাবলি করত—’এ কোথাকার বিদেশি পাড়াগেঁয়ে ভূত রে! ও কী অদ্ভুত বেঁটে আর ওর নামটাও কী বেয়াড়া! ওর জামাটা কী-রকম লম্বা ঝলঝলে দেখেছিস? ছোকরা হাত-খরচাও পায় না—অথচ বলতে চায় ও নাকি বনেদি বংশের ছেলে। খুদে দ্বীপ কর্সিকার বনেদি বংশ! ওরে ভাই, বন-গাঁয়ের শেয়াল-রাজা!’

কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করত, ‘তোমাদের কর্সিকার লোকরা যদি এতই বীর, তাহলে তারা আমাদের ফরাসি সৈন্যদের মারের চোটে নাকাল হয়ে হার মানলে কেন?’

ক্রুদ্ধ নেপোলিয়ন জবাব দিতেন, ‘দশজনের বিরুদ্ধে একজন কতদিন দাঁড়াতে পারে? সবুর কর, আমি বড় হই, তারপর ফরাসিদের দর্পচূর্ণ করব।’

বালক নেপোলিয়ন দেশে পিতাকে চিঠি লিখে জানালেন, ‘আমার দারিদ্র্যের জন্যে জবাবদিহি করতে করতে আমি শ্রান্ত হয়ে পড়েছি। এইসব বিদেশি ছোকরার ঠাট্টা-বিদ্রুপ আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে দিন-রাত। এদের একমাত্র শ্রেষ্ঠতা হচ্ছে টাকার দেমাকের জন্যে; মনের আভিজাত্যে এরা আমার চেয়ে ঢের নীচে। এই স্বর্ণবাহী গর্দভদের সামনে আর কতকাল আপনি আমাকে মাথা হেঁট করে থাকতে বলেন?’

বালকের মুখে প্রৌঢ়ের উক্তি শুনে পিতা হয়তো বিস্মিত হলেন। কিন্তু উত্তরে লিখেলেন : ‘আমাদের টাকা নেই, আমরা গরিব। তোমাকে ওখানেই থাকতে হবে।’

নেপোলিয়নকে পাঁচটি বছর ওখানেই থাকতে হল।

কিন্তু তাঁকে নিয়ে তাঁর সহপাঠীরা যতই রঙ্গব্যঙ্গ ও ঘৃণা জাহির করুক, তাঁর সুদৃঢ় চরিত্র ও মানসিক শক্তির প্রভাবে তারা সকলেই অভিভূত না হয়ে পারলে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নেপোলিয়ন হতেন দলের সরদার এবং তারা করত তাঁর হুকুম তামিল। এমনকী, শিক্ষকরা পর্যন্ত তাঁকে বশ মানাতে পারতেন না।

একবার সামান্য কী-একটা দোষের জন্যে জনৈক শিক্ষক বললেন, ‘বোনাপার্ট, নতজানু হয়ে বোসো। নতজানু হয়েই আজ তোমাকে ‘ডিনার’ খেতে হবে।’

নেপোলিয়ন উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, ‘মাস্টারমশাই, যদি দরকার হয় আমি এখানে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়েই ‘ডিনার’ খাব। কিন্তু আমি নতজানু হব না! কারণ আমাদের পরিবারের কেউ ঈশ্বর ছাড়া আর কারুর সামনে নতজানু হয় না।’

শিক্ষক গায়ের জোরে তাঁকে নতজানু করতে গেলেন। বিষম ক্রোধে নেপোলিয়ন চিৎকার করে উঠলেন, তারপর অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়লেন মাটির উপরে। বলা বাহুল্য, এর পরে আর কেউ তাঁকে নতজানু করবার চেষ্টা করলেন না।

নেপোলিয়নের প্রথম যুদ্ধে হাতেখড়ি হয় এইখানেই। যদিও এ যুদ্ধ আসল নয়, নকল। একবার শীতকালে বরফে চারিদিক আচ্ছন্ন। ইস্কুলের ছেলেরা স্থির করলে, বরফ দিয়ে কেল্লা ও গড়খাই প্রভৃতি গড়ে কৃত্রিম যুদ্ধের অনুষ্ঠান করতে হবে। এক পক্ষ করবে কেল্লা রক্ষা, আর এক পক্ষ করবে আক্রমণ। নেপোলিয়ন কখনও এ-দলের, কখনও ও-দলের হয়ে লড়তেন; বলা বাহুল্য, নেতা রূপেই। এবং যে-দলে তিনি থাকতেন, বরাবরই জয়ী হত সেই দল। কিন্তু এ যুদ্ধক্রীড়া বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ছেলেরা প্রথম-প্রথম বরফের নরম গোলা ছুড়েই খুশি হত, তারপর বরফের গোলার ভিতরে পাথর ভরে দিতে শুরু করলে। মিথ্যা যুদ্ধে ছেলেরা যখন সত্য-সত্যই আহত হতে লাগল, বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তখন এই বিপদজ্জনক খেলা বন্ধ করে দিলেন।

একবার মা লেটিজিয়া নেপোলিয়নকে দেখতে এসে চিনতে পারলেন না। ভাবলেন, ভুল করে তাঁর ছেলে বলে অন্য কারুকে ডেকে আনা হয়েছে। কেবল নির্দিষ্ট পাঠের সময়ে নয়, ছুটির সময়েও নেপোলিয়ন লেখাপড়া নিয়ে এমন ভাবে নিযুক্ত হয়ে থাকতেন যে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে একেবারেই নজর দিতে পারতেন না। দিনে যা পড়তেন, সারারাত জেগে তাই নিয়ে চিন্তা করতেন। ফলে ক্লাসে সর্বদাই তিনি প্রথম হতেন বটে, কিন্তু তাঁর চেহারা হয়ে গিয়েছিল একেবারে শীর্ণ-বিশীর্ণ।