রাত্তির এগারোটায় টেলিফোন বাজে ভুলে করে,
আমাকে ঘুমের গুহা থেকে টেনে আনে তড়িঘড়ি
লেখার টেবিলে, রিসিভার তুলে কাঁপা স্বরে ‘হ্যালো’
বলতেই অন্য প্রান্ত থেকে নারীকণ্ঠ ভেসে আসে-
‘ঘুম ভাঙালাম না কি? কী আশ্চর্য, এরই মধ্যে ঘুম
আপনাকে করেছে দখল! মাফ করবেন; যদি
এত তাড়াতাড়ি বিছানায় ঘুমে ঢলে পড়েন তাহলে কবি
আপনি লেখেন কবে? মধ্যরাতে যে-মায়াবী গাছ
ডালপালাসহ জাগে মাটি ফুঁড়ে, তার পল্লাবের
আড়ালে কবিতা মিশে থাকে, জানা নেই আপনার?
স্তম্ভিত, বিব্রত আমি খানিক নিশ্চুপ থেকে বলি,
‘কে আপনি? এত রাতে অকস্মাৎ কী এমন কথা
বলুন আমার সঙ্গে বলবার প্রয়োজন বোধ
করলেন?’ ‘কেন, আপনার ভেতরে হঠাৎ কোনো
কবিতা লেখার ইচ্ছা লাফিয়ে ওঠে না ধলেশ্বরী
নদীর মাছের মতো?’ কণ্ঠস্বর তার আমাকে আদর করে,
যেন জ্যোৎস্না চুমো খায় গাছের শরীরে। কিছুক্ষণ
নীরবতা জমে থাকে অন্ধকার ঘরে, নিজেকেই
কেমন অচেনা লাগে। আমি কি সত্তায় আদিমতা
নিয়ে একা দাঁড়িয়ে রয়েছি, দ্বিধা দ্বন্দ্বে কম্পমান?
হৃদয় ধোঁয়াচ্ছে খুব, আবার ওপার থেকে তার
কণ্ঠস্বর জেগে ওঠে, ‘আপনার সঙ্গে ঝগড়া আছে,
অনেক কিছুই আমি স্বীকার করি না। আর সব
কৌতূহল থেকে যবনিকা সরে যাবে, এরকম
আশা না করাই ভালো। আরো কিছু খুঁটিনাটি কথা
আমাকে জিগ্যেস করে শুভরাত্রি বলে যোগাযোগ
দিলেন বিচ্ছিন্ন করে। আমি কি স্বপ্নের ঘোরে আছি?
না কি এই মধ্যরাতে বাগ্ধেবী আমাকে জাগালেন?
স্তব্ধতায়, মনে হলো, কেউ কিছু ফুল কবরের
শিয়রে গচ্ছিত রেখে চুপিসারে বিদায় নিয়েছে।
সে রাতে এল না ঘুম আর কিছুতেই। সারাক্ষণ
ছটফট করতে করতে দেখি ভোর ঘরটির
চেনা সাজ ক্রমশ ফিরিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন নানা
খুচরো কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখে গত রাত্তিরের
কথা ভুলে যেতে চেষ্টা করি, অথচ কিছুতে আমি
তার সেই কণ্ঠস্বর ভুলতে পারি না। দিন যায়,
রাত আসে, প্রতীক্ষায় জেগে থাকি, যদি তার ফের
ইচ্ছে হয় টেলিফোনে কথা বলবার? যদি সাড়া
না পেয়ে কখনো রেগে আমার উদ্দেশে ডিজিটের
খেলা বন্ধ করে দেয়? একেই কি বলবো অনুরাগ?