কোনো জাঁকজমক পূর্ণ ভোজসভায় রকমারি
সুস্বাদু খাবার
কাবার করতে চাই না। রাস্তার ধারে ধুলোমাখা
যে শিশুটি একটু আগে
আকাশের গলায় ঝুলে-থাকা
মাদুলির মতো আধখানা চাঁদ ছিঁড়ে এনে
খেলনা বানাতে চেয়েছিল,
এখন সে খিদেয় কাঁদছে, আমি
তার জন্যে এক সান্কি গরম ভাত চাই।
আমি ওয়ার্ডরোবে থরে থরে সাজানো
পোশাক চাই না। যে যুবতী তার একমাত্র
আবরণ অন্ধকারে মেলে দিয়ে
পানির ঝাপটা লাগা পাখির চোখের মতো
কাঁপছে নগ্নতায়, তার আব্রুকে মুকুট পরাবো বলে
আপাতত একটি শাড়ি চাই।
সর্বদা খর পাহারায় থাকা
কোনো রক্তপিপাসু একনায়কের
করমর্দন করতে আগ্রহী নই। ঐ যে স্বৈরাচার-বিরোধী
শ্লোগানের তরঙ্গের পর তরঙ্গ তুলে
সাহসী মানুষগুলো এগিয়ে চলেছে জনপথে
মানুষের অপমান চিরদিনের জন্যে
মুছে ফেলবে বলে, আমি তাদের
মিছিলে সামিল হতে চাই।
প্রিয়তমা, এই বন্ধ্যা সময় আমার স্বীকৃতি
পাবার যোগ্য নয়। বরং চুমোয় চুমোয়
আর আলিঙ্গনে আর প্রাক-প্রভাতের সঙ্গমে তোমাকে
করে তুলবো সন্তান সম্ভবা। ফুটফুটে নবজাতক
দুলবে দোলনায় নিটোল শান্তিতে, তুমি দেখবে
সন্ত্রাসমুক্ত দৃষ্টিতে। একদিন সে কৈশোরে
ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্রের ছায়া মেখে
দৃপ্তপদক্ষেপে প্রবেশ করবে
একবিংশ শতাব্দীতে, তুমি দেখবে মুখাবেশে,
তোমার ঠোঁট থেকে হাসির কুঁড়ি
ঝরতে থাকবে ক্রমাগত
লালকমলের বিজয়ে।
কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেলে, এক ঝটকায়
লোপাট করে মুক্তি দেবো
স্বৈরাচার-পীড়িত
রাজনৈতিক বন্দিদের; কেননা, কোনো
দেশভক্ত জেলে পচতে থাকুক,
এ আমার কাম্য নয়।
যারা অমরতার বাদ্যরব শুনতে চায়
দিনভর, রাতভর, তাঁদের তালিকায় আমার নাম
খুঁজে পাবে না কেউ। প্রিয়তমা, যে কবিতায়
তোমার নিঃশ্বাসের সুগন্ধ
আর পুরুষ্ট, সতেজ ফলের মতো স্তনাভা থাকবে,
শিশুর সদ্য-দুধ-খাওয়া মুখের ঘ্রাণ
আর কোকিলের ডাকের মতো ব্যাকুলতা
আর মেঘনা নদীর মাঝির
গোধূলিবেলার হাঁক থাকবে, থাকবে
আগামীর অগণিত মানুষের
স্বপ্নের মতো পদধ্বনি,
তেমন কবিতা আমি লিখতে চাই
ধ্যানে নিমগ্ন,
একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।