এই ঘরের শব্দ আর নৈঃশব্দকে সাক্ষী রেখে,
সাক্ষী রেখে আস্তাবলের গন্ধ, দক্ষিণের তাকে রাখা
শূন্য কফির কৌটো, বারান্দায় শুকোতে দেয়া হাওয়ায়
দবলে ওঠা সাদা শার্ট, যে শার্টের কলার একবার
কোনো বেজায় সাংস্কৃতিক মহিলার লিপস্টিক ভূষণে
সজ্জিত হয়েছিল, উজাড় মানি-ব্যাগ
আর দর্পণের সুহৃদকে সাক্ষী রেখে লিখি কবিতা।
নিপুণ গার্ডের মতো হুইসিল বাজাতে বাজাতে সবুজ ফ্ল্যাগ
ওড়াতে ওড়াতে একটি কবিতার শাঁ শাঁ ট্রেনকে
অন্তিম স্টেশনে পৌঁছে দিতে না দিতেই
কিছু পঙ্ক্তি পেয়ে বসে আমাকে আবার। দুর্দান্ত
এক পাল জেব্রার মতো ওরা আমার বুকে ধুলো উড়িয়ে বারংবার
ছুটে যায়, ফিরে আসে।
ক্ষমা করুন রবীন্দ্রনাথ, আপনার মহান মায়াবী শৈলাবাস থেকে,
ভুল বুঝবেন না নজরুল, আপনার হারমোনিয়ামের আওয়াজে
মধুর মজলিশ আর হাসির হুল্লোড় থেকে,
কিছু মনে করবেন না জীবনানন্দ, আপনার সুররিয়ালিস্ট হরিণেরা
যেখানে দৌড়ে যায়, সেখান থেকে,
মাফ করবেন বিষ্ণু দে, আপনার স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ থেকে
অনেক দূরে যেতে চায় সেই দামাল জেব্রাগুলো।
আমি একলা প্রান্তরের মতো প’ড়ে থাকি। জেব্রাগুলো তুমুল
উদ্দামতায় মেতে ওঠে, তাদের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে
আমাদের হৃদয়ের অন্তর্লীন তৃণরাজি শিখার উজ্জ্বলতা পায় কখনো,
ফিরে আসে না আর। আমি একলা প্রান্তরে ডাকতে ডাকতে
ক্লান্ত হয়ে পড়ি, ওরা ফিরে আসে না তবু। প’ড়ে থাকি
অসহায়, ব্যর্থ। তখন দুক্ষোভে নিজেরই হাত
কামড়ে ধরতে ইচ্ছে হয়, আমার প্রিয়তম স্বপ্নগুলোর
চোখে কালো কাপড় বেঁধে গুলি চালাই ওদের হৃৎপিণ্ড লক্ষ্য করে।
নিপুণ গার্ডের মতো হুইসিল বাজাতে বাজাতে, সবুজ ফ্ল্যাগ
ওড়াতে ওড়াতে একটি কবিতার শাঁ শাঁ ট্রেনকে
অন্তিম স্টেশনে পৌঁছে দিতে না দিতেই আবার এক পাল জেব্রা
তুমুল ছুটোছুটি করে বাতাস চিরে রৌদ্র ফুঁড়ে আমার বুকের আফ্রিকায়।