হে রাব্বুল আলামীন,
হে লৌকিক, পারলৌকিক আর অলৌকিকের রাজাধিরাজ,
আমার একটি সামান্য ইচ্ছেপূরণের আশায়
আজ আমি আপনার জ্বলজ্বলে পুণ্য আরশ লক্ষ্য ক’রে
সেজদা দিয়েছি। আশৈশব শুনে আসছি,
এই জগৎ সংসারে, সৌরলোকে, আমাদের অজ্ঞাতলোকে
এমন কিছুই ঘটে না, হে রামহানুর রাহিম,
যাতে আপনার সায় নেই। কুল মখলুকাতে
হাওয়া বয় না, নদীতে ঢেউ জাগে না, মাটি ফুঁড়ে
উদ্ভাসিত সুর মঞ্জরিত হয় না,
গান গায় না পাখি,
মায় একটি গাছের পাতাও নড়ে না
আপনার হুকুম ছাড়া।
হে দ্বীন ও দুনিয়ার মালিক, চোখের পলকে,
সে সর্বশক্তিমান, আপনি আমাকে
এমন তৌফিক দিন যাতে আমি
আপাদমস্তক মনেপ্রাণে একজন খাস রাজাকার
হয়ে যেতে পারি রাতারাতি। তাহলেই আমি সাত তাড়াতাড়ি
মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে যাবো, এই চর্মচক্ষে
দেখে নেবো হাতিশালে হাতি আর
ঘোড়াশালে ঘোড়া আর আমার হাতে আমলকির মতো
এসে যাবে সব পেয়েছির দেশের সওগাত।
তবে সে-জন্যে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হবে, হাত
কচলাতে হবে অষ্টপ্রহর আর জহরতের মতো
পায়ের চকচকে জুতোয় চুমো খেতে হবে নানা ছুতোয় সকাল-সন্ধ্যা
এবং মাঝে মাঝে শিন্নি দিতে হবে পীরের দরগায়।
না, না, এতে জিল্লতি নেই একরত্তি, বরং চোখ-ঝলসানো
জেল্লা আছে এই জীবনে। হে আলেমূল গায়েব, হে গাফফার,
আপনি আমাকে এক্ষুনি
একজন চৌকশ রাজাকার ক’রে দিন। তাহ’লেই আমি
চটজলদি গুছিয়ে নেবো আখের।
আপনার চেয়ে বেশি আর কে জানে যে, আমি
জেনাসের মতোই যুগল মুখ নিয়ে
বেঁচে বর্তে আছি। আমার একটি মুখ তেজারতির দিকে
এবং অন্যটি ওজারতির দিকে ফেরানো
যদি ওজারতির তাজ আমার মাথায় আজ
শোভা না পায়, ক্ষতি নেই। সবুরে মেওয়া ফলে,
এই সুবচন জানা আছে আমারও। একদিন না একদিন
আপনার রহমতে আমার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বেই।
আপাতত ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার ওভারড্রাফট পেয়ে যাবো
তদ্বিরবিহীন, আমার বাণিজ্যতরী ভাসবে
সপ্ত সিন্ধুতে আর দশ দিগন্তে দেখা যাবে
আমার সাফল্যের মাস্তুল।
হে পাক পারওয়ার দিগার, হে বিশ্বপালক,
আপনি আমাকে লহমায়
একজন তুখোড় রাজাকার ক’রে দিন। তা’হলেই আমি
দ্বীনের নামে দিনের পর দিন তেলা মাথায়
তেল ঢালতে পারবো অবিরল,
গরিবের গরিবী কায়েম রাখবো চিরদিন আর
মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ের চামড়া দিয়ে
ডুগডুগি বানিয়ে নেচে বেড়াবো দিগ্ধিদিক আর সবার নাকের তলায়
একনিষ্ঠ ঘুণপোকার মতো অহর্নিশ
কুরে কুরে খাবো রাষ্ট্রের কাঠামো, অবকাঠামো।