ঋগ্বেদ ১০।০৯৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯৮
নানা দেবতা। দেবাপি ঋষি।
১। হে বৃহস্পতি! তুমি আমার জন্য প্রত্যেক দেবতার নিকটে গমন কর। তুমি মিত্র, বা বরুণ, বা পূষাই হও, অথবা আদিত্যগণ ও বসুগণসমেত ইন্দ্রই বা হও, তুমি শন্তনু রাজার জন্য (১) মেঘকে বারিবর্ষণ করাও।
২। হে দেবাপি! কোন এক বিজ্ঞ শীঘ্রগামী দেব তোমার নিকট হইতে দূতরূপ হইয়া আমার নিকট আগমন করুক। হে বৃহস্পতি! আমাদিগের প্রতি অভিমুখ হইয়া আগমন কর। তমার জন্য উজ্জল স্তব মুখে ধারণ করিয়াছি।
৩। হে বৃহস্পতি! আমাদিগের মুখে এমন একটা উজ্জ্বল স্তব তুলিয়া দাও, যাহা অস্পষ্টতা দোষে দূষিত না হয়, এবং উত্তমরূপে স্ফুরিত হয়। তারা আমরা শন্তনুর জন্য বৃষ্টি উপস্থিত করি। মধুযুক্ত রস আকাশ হইতে আগমন করুক।
৪। মধুযুক্ত রসগুলি অর্থাৎ বৃষ্টিবারি আমাদিগের নিমিত্ত আগমন করুক। হে ইন্দ্র! রথের উপর সংস্থাপনপূর্বক বিস্তর ধন দান কর। হে দেবাপি! এই হোমকাৰ্য্যে আসিয়া উপবেশন কর, কালে কালে দেবতাদিগকে পূজা কর, হোমের দ্রব্য দিয়া সন্তুষ্ট কর ।
৫। ঋষ্টিসেনের পুত্র দেবাপি ঋষি দেবতাদিগের জন্য উৎকৃষ্ট স্তব স্থির করিয়া হোম করিতে বসিলেন। তখন তিনি উপরের সমুদ্র হইতে স্বর্গের বৃষ্টিবার নীচের সমুদ্রে আনয়ন করিলেন।
৬। এই উপরের সমুদ্র(২), আর্থাং আকাশনধ্যে দেবতার জল আচ্ছাদন করিয়া রাখিয়াছিলেন। ঋষ্টিসেনের পুত্র দেবাপি সেই জল সঞ্চালিত করিলেন, তখন জলগুলি সুপরিষ্কৃত ক্ষেত্রভূমির উপর ধাবমান হইল।
৭। যখন শন্তনুর পুরোহিত দেবাপি হোম করিবার জন্য উদ্যোগী হইয়া বৃষ্টি উৎপাদনকারী দেবস্তব ধ্যানদ্বারা নিরূপিৎ করলেন, তখন বৃহস্পতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহার মনে সেই স্তুতিবাক্যের উদয় করিয়াদিয়াছিলেন।
৮। হে অগ্নি! ঋষ্টিসেনের পুত্র মনুষ্য জাতীয় দেবাপি উজ্জ্বল হইয়া তোমাকে প্রজ্জ্বলিত করিয়াছে। তাবৎ দেবতার সহকারিতা প্রাপ্ত হইয়া তুমি বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘকে প্রবর্তিত কর।
৯। তোমাকে বিস্তর লোকে আহ্বান করে। যাবতীয় প্রাচীন ঋষি যজ্ঞের সময় স্তুতিবাক্য দ্বারা তোমার সেবা করিয়াছিলেন। হে রোহিতনামক অশ্ববিশিষ্ট অগ্নি! আমাদিগের যজ্ঞের দিকে সহস্রসংখ্যক সম্পত্তি রথে বহন পূর্বক লইয়া আইস।
১০। হে অগ্নি! এই দেখ নবনবতিসহস্র রথবাহিত সম্পত্তি তোমাকে আহুতি দেওয়া হইল। হে বীর! তাহার দ্বারা তোমার প্রাচীন শরীর সকল বৃদ্ধিযুক্ত কর। আমাদিগের প্রার্থনা শুনিয়া আকাশ হইতে বৃষ্টি আনয়ন কর।
১১। হে অগ্নি! এই নবতিসহস্র আহুতি; বৃষ্টিকারী ইন্দ্রকে ইহার ভাগ দাও। কালে কালে দেবতাদিগের নিকট যাইবার জন্য যে পথ বিদ্যমান আছে, তাহা তুমি জান, অতএব উলাল নামক ব্যক্তিকে দেবলোকে দেবতাদিগের নিকট সংস্থাপন কর।
১২। হে অগ্নি! শত্রুদিগের দুর্গম পুরী সকল ধ্বংস কর। রোগ দূর কর, রাক্ষসদিগকে তাড়াইয়া দেও। প্রকান্ড আকাশে যে এই সমুদ্র বিদ্যমান আছে, তথা হইতে অপরিসীম জল এই স্থানে আনিয়া দাও।
————
(১) শন্তনু রাজার অনুষ্ঠিত যজ্ঞে বোধ হয়, এই সূক্ত রচিত, বা উচ্চারিত হইয়াছিল।
(২) ঋগ্বেদের অনেক স্থলে আকাশকে সমুদ্র বলা হইয়াছে। আকাশ জলীয় বলিয়া অনুভব ছিল। ১২ ঋক দেখ।