ঋগ্বেদ ১০।০৯৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯৪
সমনিষ্পীড়ীত করিবার প্রস্তর দেবতা। অম্বুদ ঋষি।
১। এই সকল প্রস্তর কথা কহুক, অর্থাৎ শব্দ করুক; আমরাও কথা কহি, ইহারা কথা কহিতেছে, ইহাদের কথার কথা কও। যখন ক্ষিপ্রকারী ও দৃঢ়তর এই প্রস্তর গুলি একত্র হইয়া স্তব করিবার ভঙ্গিতে শব্দ করে, তখন হে সোম সম্পন্ন ব্যক্তিগণ! ইন্দ্রের জন্য সোমপাত্র পূর্ণ কর।
২। এই প্রস্তরগণ একশত ব্যক্তি, অথবা একসহ ব্যক্তির ন্যায় শব্দ করিতেছে, ইহারা হরিদ্বর্ণ মুখ দিয়া চীৎকার করিতেছে। যজ্ঞের সময় এই সকল পুণ্যবান্ প্রস্তর অগ্নির অগ্ৰেই হোমের দ্রব্য ভোজন করে।
৩। ইহারা শব্দ করিতেছে। ইহারা মুখে সোমস্বরূপ মধু ধারণ করিয়াছে। যেমন মাংসাশীরা মাংস পাক হইলে আহলাদসূচক রব করে, ইহারাও সেইরূপ রব করিতেছে। নবীন বৃক্ষের শাখা ভক্ষণ কালে সুন্দর রূপে ভক্ষণ করিতে করিতে বৃষগণ যেরূপ শব্দ করে, ইহারাও তদ্রুপ শব্দ করিতেছে।
৪। ইহারা মুখে ধারণপূর্বক মত্ততাজনক সোমরস প্রস্তুত করিয়া উচ্চৈঃস্বরে ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছে। সমনিষ্পীড়নকারী অঙ্গুলিদিগের সঙ্গে সংরম্ভ করিয়া ইহারা নৃত্য করিতেছে। ইহাদিগের শব্দে পৃথিবী প্রতিধ্বনিত হইতেছে ।
৫। ইহাদের শব্দ শুনিয়া জ্ঞান হয়, যেন পক্ষীরা আকাশে কলরব করিতেছে, যেন মৃগ বিচরণ স্থানে কৃষ্ণশার হরিণেরা চলাচল করিয়া নৃত্য করিতেছে। প্রস্তরের দ্বারা নিষ্পীড়িত রসকে ইহারা নিম্নে পাতিত করিতেছে, যেন সুৰ্য্যের ন্যায় শ্বেতবর্ণ বিস্তর শুক্র নির্গত করিল।
৬। যেমন বলবান্ ঘোটকগণ পরস্পর মিলিত হইয়া রথের ধুরা ধারণ পূৰ্ব্বক রথ বহন করে, প্রস্রাব ত্যাগ করে এবং শরীর আয়ত করে, তদ্রুপ এই প্রস্তরগুলিও আয়ত হইয়া সোমরস বর্ষণ করিতেছে। ইহারা সোম গ্রাস করিতে করিতে শ্বাসসহকারে শব্দ করিল, ঘোটকদিগের ন্যায় ইহাদের মুখনির্গত এই শব্দ আমি শ্রবণ করিতেছি।
৭। এই অবিনাশী প্রস্তরদিগের গুণকীৰ্ত্তন কর। দশ অঙ্গুলি যখন সোম রস নিষ্পীড়নকালে ইহাদিগকে স্পর্শ করে, সেই দশ অঙ্গুলিকে যেন প্রস্তরস্বরূপ ঘোটকদিগের দশটী বরত্রা বোধ হয়, অথবা দশটীঘোড়ার সাজ, অথবা দশটি রথে যুতিবার রঞ্জু, অথবা দশটী ঘোড়ার রাস বলিয়া জ্ঞান হয়। অথবা যেন দশটী রথধুরা একত্র হইয়া ইহারা বহন করিতেছে।
৮। সেই প্রস্তরগুলি দশটী অঙ্গুলিকে বন্ধন রজ্জুস্বরূপ পাইয়া শীঘ্র শীঘ্র কাৰ্য্য করিতেছে। তাহাদিগের উৎপাদিত সোমরস হরিদ্বর্ণ হইয়া আসিতেছে। সোমের অংশু নিষ্পীড়িত হইয়া অন্নরূপ ধারণপূর্বক অমৃত রস নির্গত করে, তাহার প্রথম যে অংশ ইহারাই পাইয়া থাকে।
৯। সেই প্রস্তরগণ সোম ভক্ষণপূর্বক ইন্দ্রের দুই ঘোটককে চুম্বন করিতেছে, অর্থাৎ ইন্দ্রের রথে উপনীত হইতেছে। অংশু ডাটা হইতে রস নির্গত করিয়া গোচর্মের উপর যাইতেছে। তাহারা সোমের যে মধু নির্গত করিয়া দেয়, তাহা পান করিয়া ইন্দ্র স্ফীত ও বিস্তারিত হইতেছেন এবং বৃষের ন্যায় বল প্রকাশ করিতেছেন।
১০। হে প্রস্তরগণ! সোমের অংশু তোমাদিগকে রস দান করিবে, তোমরা যেন ভগ্ন হইও না। তোমরা যাহার যজ্ঞে উপস্থিত থাক, তাহারা সর্বদাই অন্নবান ও কৃতভাজন হয়, তাহারা ধনবান্ লোকের ন্যায়উজ্জ্বল তেজোযুক্ত হয়।
১১। হে প্রস্তরগণ! তোমরা নিজে ভগ্ন না হইয়া অন্যকে ভগ্ন কর, তোমাদিগের পরিশ্রম নাই, শৈথিল্য নাই, মৃত্যু নাই, জরা নাই, রোগ নাই, তৃষ্ণা নাই, স্পৃহা নাই, তোমরা স্থূল, অথচ উৎক্ষেপণ ও অবক্ষেপণ প্রভৃতি ক্রিয়া বিষয়ে তোমাদের যথেষ্ট পটুতা আছে।
১২। তোমাদিগের পিতাস্বরূপ পর্বতগণ যুগ যুগান্তর ধরিয়া স্থির আছে, তাহারা পূর্ণাভিলাষ হইয়াছে, কোন কারণে নিজ স্থান ত্যাগ করে না। তাহারা জরারহিত, হরিদ্বর্ণ বৃক্ষবিশিষ্ট, হরিদ্বর্ণ সংযুক্ত হইয়াপক্ষীদিগের কলরব দ্বারা দ্যুলোক ও ভূলোক পূর্ণ করে।
১৩। যে রূপ রথারোহীগণ রথচৰ্য্যা ক্ষেত্রে রথ চালাইয়া শব্দ উত্থাপন করে, তদ্রুপ প্রস্তর সোমরস নির্গত করিবার সময় শব্দ করে। ধান্য বপন কারীরা বীজ যেমন বপন করে, তদ্রুপ ইহারা সোম বিকীর্ণ করিতেছে। ভক্ষণ করিয়া উহা নষ্ট করিতেছে না।
১৪। সোম নিষ্পীড়িত হইলে, প্রস্তরেরা শব্দ করিতেছে, যেন ক্রীড়াসক্ত শিশুরা ক্রীড়াস্থলে জননীকে আঘাত করিয়া ঠেলিয়া দিয়া শব্দ করিতেছে। যে প্রস্তর সোমরস নিষ্পীড়ন করিয়াছে, তাহাকে বস্তকর, প্রস্তরগণ সংবর্ধনা পাইয়া ঘূর্ণিত হইতে থাকুক।