ঋগ্বেদ ১০।০৯২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯২
নানা দেবতা। শম্পতি ঋষি।
১। যিনি যজ্ঞের রথী, অর্থাৎ প্রধান স্বরূপ, যিনি সকল প্রজার অধিপতি, যিনি হোতা, রাত্রিকালের অতিথি এবং প্রভাতে সমৃদ্ধ হয়েন, তাহাকে স্তব কর। তিনি শুষ্ককাষ্ঠে প্রজ্বলিত হয়েন, অশুষ্ককাষ্ঠে চুরচুর শব্দ করেন ও অভিলাষ সিদ্ধ করেন, যজ্ঞের পতাকাস্বরূপ আকাশে অবগাহন করেন।
২। দেবগণ ও মনুষ্যগণ ইহারা উভয়ে এই অগ্নিকে শীঘ্র প্রস্তুত করিলেন, ধারণকর্তা ও যজ্ঞের সম্পাদনকর্তা। ইনি মহৎ, ইনি পুরোহিত এবং উজ্জ্বলের বংশধর। উষাদেবীগণ ইহাকে সূর্যের ন্যায় চুম্বন করিতেছে।
৩। স্তবযোগ্য এই অগ্নি যে পথ দেখাইয়া দেন, তাহাই প্রকৃত পথ, আমরা যাহা হোম করিতেছি, তাহা তিনি ভোজন করুন। যখন তাহার প্রবল শিখাগণ অক্ষয়, অর্থাৎ দীপ্তিশীল হইল, তখন দেবতাদিগের জন্য বিক্ষিপ্ত হইতে লাগিল।
৪। যজ্ঞকাষ্ঠের আশ্রয়ভূতা অদিতি, বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষ এবং স্তবযোগ্য অসীম পৃথিবী, অগ্নিকে নমস্কার করেন। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, ভগ ও সবিতা, পবিত্র বলধারী এই সকল দেবতা আবির্ভূত হয়েন।
৫। বেগবান্ মরুৎগণের সহায়তা পাইয়া নদীরা বহমান হয় এবং অসীম ভূমি আচ্ছাদন করে। সৰ্বত্রবিচরণকারী ইন্দ্ৰ সৰ্বত্ৰগমন করিয়া ঐ মরুৎগণের সাহায্যে আকাশে গর্জন করেন এবং মহাবেগে জগতে জল সেচন করেন।
৬। মরুৎগণ যখন কার্য্য আরম্ভ করেন, তখন জগৎকে যেন কৰ্ষণ করিয়া ফেলেন, তাহারা যেন আকাশের শ্যেনপক্ষী, তাহারা মেঘের আশ্রয়। বরুণ, মিত্র, অৰ্য্যমা এবং অশ্বারূঢ় ইন্দ্র, অশ্বারূঢ় সেই মরুৎ দেবতাদিগের সহিত ঐ সমস্ত ব্যাপার দেখিতে থাকেন।
৭। স্তবকারিগণ ইন্দ্রের নিকট রক্ষা প্রাপ্ত হল, সূর্যের নিকট দৃষ্টিশক্তি এবং বর্ষণকারী ইন্দ্রের নিকট পুরুষত্ব প্রাপ্ত হইল। যাহারা উৎকৃষ্টরূপে ইন্দ্রের পূজা প্রস্তুত করিয়াছিল, তাহারা যজ্ঞকালে ইন্দ্রের বজ্রকে সহায়স্বরূপ প্রাপ্ত হইল।
৮। সূৰ্যও আপন অশ্বদিগকে ইন্দ্রের ভয়ে চালাইয়া থাকেন এবং পথে গমন কালে সকলকে প্রীত করেন। সেই অতি মহান্ ইন্দ্রকে কে না ভয় করে? তিনি ভয়ানক এবং বৃষ্টিবর্ষণকারী, আকাশে শব্দ করতে থাকেন, বিপক্ষ পরাভবকারী বজ্রধ্বনি তাহারই ভয়ে প্রতিদিন আবির্ভূত হয়।
৯। অদ্য সেই কর্মক্ষম রুদ্রকে নমস্কার ও অনেক স্তব অর্পণ কর। তিনি শত্ৰুদিগকে ক্ষয় করেন। তিনি অশ্বারূঢ় উৎসাহবান মরুৎগণকে আপনার সহায় পাইয়া আকাশ হইতে জল সেচন করিয়া মঙ্গলকর হয়েন এবং আপন যশ বিস্তার করেন।
১০। বৃহস্পতি এবং সোমাভিলাষী অন্যান্য দেবতা প্ৰজাদিগের জন্য অন্ন সঞ্চিত করিলেন। অথর্বা নামে ঋষি সর্বপ্রথমে যজ্ঞদ্বারা দেবতাদিগকে তুষ্ট করিলেন। দেবতারা এবং ভৃগুবংশীয়েরা বল প্ৰকাশপূৰ্ব্বক গমন করিয়া সেই যজ্ঞ অবগত হইলেন।
১১। নরাশংস নামক সেই যজ্ঞে চারি অগ্নি স্থাপিত হইয়াছিল, বহুবৃষ্টি বর্ষণকারী দ্যাবাপৃথিবী, যম, অদিত, ধনদানকারী পৃষ্টাদেব, ঋভূগণ, রুদ্রের পত্নী, মরুৎগণ ও বিষ্ণু, ইহারা সেই যজ্ঞে স্তব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।
১২। অভিলাষী হইয়া আমরা যে সকল বৃহৎ বৃহৎ স্তব করিতেছি, আকাশ বাসী অহির্বুধ্ন্য যজ্ঞের সময় তাহা শ্রবণ করুন। হে আকাশে পরিভ্রমণকারী সূর্য ও চন্দ্র! তোমরা আকাশে বাস কর, তোমরা মনে মনে ইহার স্তব অবগত হও।
১৩। সকল দেবতার হিতকারী ও জলের বংশধর পুষাদেব আমাদিগের পশু, ইত্যাদিকে রক্ষা করুন। বায়ু ও যজ্ঞের জন্য রক্ষা করুন। ধনের জন্য আত্মস্বরূপ বায়ুকে তোমরা স্তব কর। হে অশ্বিদ্বয়!তোমাদিগকে আহ্বান করিলে কল্যাণ হয়। তোমরা পথে গমন কালে সেই স্তব শ্রবণ কর।
১৪। এই সমস্ত প্রজাকে যিনি অভয় দিবার প্রভু, যিনি আপনার কীর্তি আপনি উপার্জন করেন, তাহাকে স্তবের দ্বারা স্তব করি। তাবৎ দেবনারী দিগের সহিত অবিচলিত অদিতিকে এবং রাত্রির স্বামী চন্দ্রকে স্তব করি। তিনি মনুষ্যদিগের প্রতি মনোযোগ প্রদান করেন।
১৫। বয়োজ্যেষ্ঠ অঙ্গিরা এই যজ্ঞে বাক্য উচ্চারণ করিলেন। প্রস্তরগুলি উর্ধ হইয়া যজ্ঞীয় সোম প্রস্তুত করিল। তাহা পান করিয়া বুদ্ধিমান্ ইন্দ্র স্থূলকায় হইলেন, তাহার অস্ত্র উৎকৃষ্ট বৃষ্টি বারি সৃষ্টি করিল।