ঋগ্বেদ ১০।০৯১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯১
অগ্নি দেবতা। অরুণ ঋষি।
১। সতর্ক সাবধান স্তবকারীগণ অগ্নিকে স্তব করিতেছেন, বদান্য অগ্নি বেদির উপর উপবেশনপূর্বক অন্ন লাভের জন্য প্রজ্বলিত হইতেছেন, তিনি তাবৎ যজ্ঞ সামগ্রির হোমকর্তা, তিনি শ্রেষ্ঠ দীপ্তিশালী; তাহার সহিত যে বন্ধুত্ব করে, তিনি তাহার প্রতি বন্ধুতাচরণ করেন।
২। তিনি সুশ্রী প্রত্যেক গৃহের অতিথিস্বরূপ, তিনি গমনকারী ব্যক্তির ন্যায় প্রত্যেক বন আশ্রয় করিতেছেন। তিনি লোকের হিতকারী কোন ব্যক্তিকে অগ্রাহ্য করেন না, তিনি প্রজাবর্গের হিতকারী, প্রত্যেক প্রজার ভবনে গমন করেন।
৩। হে অগ্নি! তুমি নানা বলে বলী, তোমার কাৰ্য্য অতি সুন্দর, তুমি ক্রিয়া কৌশলবান্ ধনস্বরূপ সকল বস্তুই লাভ কর, দ্যুলোক ও ভূলোক যে সমস্ত ধন ধারণ করে, তুমি সেই সকল ধনের প্রভু।
৪। যজ্ঞবেদির উপর যথাকালে ঘৃতযুক্ত উপবেশনস্থান প্রস্তুত করা হয়, হে অগ্নি! তাহা কোন স্থান? তুমি নিজে তোমার জন্য চিনিয়া লও এবং বিবেচনাপূর্বক তাহাতে উপবেশন কর। তোমার শিখা সমস্ত প্রভাতের আভার ন্যায় অথবা সূর্যের কিরণের ন্যায় নিৰ্ম্মল হইয়া দৃষ্ট হইতে থাকে।
৫। তোমার বিচিত্র শোভাগুলি জলবর্ষণকারী মেঘ হইতে উদ্দত বিদ্যু তের ন্যায়, অথবা প্রভাতের আগমনসূচক আতাসমূহের স্থায় দুষ্ট হইতে থাকে, তুমি তখন যেন বন্ধন হইতে মুক্তি পাইয়া ওষধি অর্থাৎ শস্যাদি এবং বন অর্থাৎ কাষ্ঠ, ইত্যাদি অন্বেষণ করিতে থাক, উহারা তোমার মুখে অন্নস্বরূপ হয়।
৬। ওষধিগণ সেই অগ্নিকে যথাকালে গর্ভস্বরূপ ধারণ করে, জলগণ জননীর ন্যায় তাহাকে জন্মদান করে। বনস্থিত লতাগণ গর্ভবতী হইয়া দিন দিন একভাবে তাহাকে প্রসব করে।
৭। হে অগ্নি! তুমি বায়ুদ্বারা কম্পিত হইয়া সঞ্চালিত হও এবং চমৎকার অন্ন সমস্তের মধ্যে প্রবেশপূৰ্ব্বক অবস্থিত কর। হে অগ্নি! যখন তুমি দগ্ধ করিতে উদ্যত হও, তোমার প্রবল ও অক্ষয় শিখাগণ রথারূঢ় যোদ্ধাদিগের ন্যায় পৃথক পৃথক হইয়া বল প্রকাশ করে।
৮। অগ্নি লোককে মেধাযুক্ত করেন, তিনি যজ্ঞের সিদ্ধি বিধাতা, তিনি হোমকর্তা, অতি মহৎ ও জ্ঞানবান, অল্প হোমের দ্রব্যই দেওয়া হউক, আর অধিক পরিমাণেই বা দেওয়া হউক, অগ্নিকেই সকল সময়েবরণ করা হয়; আর কাহাকেও নহে।
৯। হে অগ্নি! যজমানগণ যজ্ঞের সময় তোমাকে পাইবার অভিলাষী হইয়া তোমাকেই হোতারূপে বরণ করে। তৎকালে দেবভক্ত মনুষ্যগণ হোম, দ্রব্য আহরণ ও কুশসমূহ ছেদন পূর্বক তোমার নিমিত্ত অম্ব সমস্ত স্থান করিয়া থাকেন।
১০। হে অগ্নি। তোমাকেই হোতা ও যথা সময়ে পোতার কাৰ্য্য করিতে হয় । যজ্ঞকারীব্যক্তির জন্য তুমিই নেষ্টা ও অগ্নি। তুমি প্রশাস্তা ও অধর্য্যু ও ব্ৰহ্মার কাৰ্য্য সম্পাদন কর। তুমিই আমাদিগের গৃহে গৃহপতি স্বরূপ।
১১। হে অগ্নি! যে মনুষ্য তোমাকে অমর জানিয়া যজ্ঞ কাষ্ঠ দান করে এবং হোম দ্রব্য অর্পণ করে, তুমি তাহার হোতা হও, দেবতাদিগের নিকট তাহার জন্য দূতের কার্য্য কর, দেবতাদিগকে নিমন্ত্রণ কর যজ্ঞ অনুষ্ঠান কর এবং অধ্বর্য্যুর কাৰ্য্য কর।
১২। অগ্নির উদ্দেশে এই সমস্ত ধ্যান, বেদবাক্য এবং স্তব করা হইতেছে । জাতবেদা অগ্নি নিজ অর্থস্বরূপ, এই স্তব সকল অর্থের কামনাতে তাহাতে যাইয়া মিলিত হইতেছেন। শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদনকারী অগ্নি এই সকল স্তব বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলে সন্তুষ্ট হয়েন।
১৩। স্তবের কামনাকারী সেই প্রাচীন অগ্নির উদ্দেশে আমি অতি নুতন এই চমৎকার স্তব উচ্চারণ করিব, তিনি শ্রবণ করুন। যেরূপ নারী প্রণয় পরবশ হইয়া উত্তম পরিচ্ছদ ধারণপূর্বক পতির বক্ষঃস্থলে নিজদেহ মিলিত করে, তদ্রুপ আমি যেন এই অগ্নির হৃদয়ের মধ্যে স্থান স্পর্শ করি।
১৪। যে অগ্নির উপরও বিস্তর ঘোটক, বলবান্ বৃষ, পুরুষত্ব বিহীন মেষ আহুতিরূপে অর্পণ করা হইয়াছে(১), যিনি জলের পালনকর্তা, যাহার পৃষ্ঠে সোমরস, যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা, সেই অগ্নির উদ্দেশে মনে মনে চিন্তা করিয়া এই সুন্দর স্তব রচনা করিয়াছি।
১৫। যেমন স্রুক নামক পাত্রে ঘৃত স্থাপন করা হয়, যেমন চমু নামক পানপাত্রে সোমরস রক্ষা করা হয়, তদ্রুপ হে অগ্নি! তোমার মুখে হোমের দ্রব্য হোম করা হইয়াছে। তুমি অন্ন ও অর্থ ও উৎকৃষ্টপুত্রপৌত্রাদি এবং বিপুল যশ দান কর।
————
(১) এখানে ঘোটক, বৃষ ও মেষ আহুতি দিবার উল্লেখ পাওয়া যায়।