ঋগ্বেদ ১০।০৪২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪২
ইন্দ্র দেবতা। কৃষ্ণাখ্য ঋষি।
১। যেমন ধনুর্ধারী বাণক্ষেপকারী ব্যক্তি অতি সুন্দর বাণ ক্ষেপণ করে, তদ্রুপ তুমি ইন্দ্রের উদ্দেশে ক্রমাগত স্তব প্রয়োগ করতে থাক, অতি পরিষ্কার ও অলঙ্কৃত করিয়া স্তব প্রয়োগ কর। হে বুদ্ধিমানগণ! তোমার সহিত যে স্পর্ধা করে, এমনি স্তুতিবাক্য প্রয়োগ করিবে, যে সে পরাজিত হয়। হে স্তুতিকারী! ইন্দ্রকে সোমের দিকে আকর্ষণ কর।
২। হে স্তুতিকারী! যেমন দোহন করিয়া গাভীর নিকট হইতে লোকে নিজ প্রয়োজন সাধন করে, তদ্রুপ বন্ধুস্বরূপ ইন্দ্রদ্বারা নিজ প্রয়োজন সিদ্ধ করিয়া লও। স্তুতিযোগ্য ইন্দ্রকে জাগরিত কর। যেমন ধনপূর্ণ পাত্রকে লোকে নিম্ন মুখ করিয়া তদন্তৰ্গত ধন ঢালিয়া লয়, তদ্রূপ বীর ইন্দ্রকে কামনা সিদ্ধির জন্য অনুকুল করিয়া লও।
৩। হে ইন্দ্র! তোমাকে কেন “ভোজ” এই নাম দেয়? অর্থাৎ তুমি দাতা বলিয়াই তোমাকে ঐ নাম দেয়। আমি শুনি, যে তুমি লোককে তীক্ষ্ণ অর্থাৎ তেজস্বী করিয়া দাও, অতএব আমাকে তীক্ষ্ণ কর। হে ইন্দ্র! আমার বুদ্ধি যেন কৰ্ম্মকাৰ্য্য বিষয়ে নিপুণ হয়। যাহাতে ধন উপার্জন করা ভাগ্যে ঘটে, আমার এই প্রকার শুভদৃষ্ট করিয়া দাও।
৪। হে ইন্দ্র! লোকে যখন যুদ্ধস্থলবর্তী হয়, তখন যুদ্ধক্ষেত্রে তোমার নাম লয়। যে যজ্ঞকারী ইন্দ্র তাহার সহযোগী হয়েন। আর যে তাহার জন্য সোম প্রস্তুত না করে, তিনি উহার সহিত বন্ধুত্ব করতে বাঞ্ছা করেন না।
৫। যে অন্নসম্পন্নব্যক্তি ইন্দ্রের নিমিত্ত প্রখর সোমরস প্রস্তুত করে এবং যেমন ধনাঢ্য লোকে গো, অশ্ব প্রভৃতি পশু ধন বিতরণ করে, তদ্রুপ যে তাহাকে অকাতরে সোমরস দেয়, ইন্দ্র তাহার সহায় হয়েন এবং তাহার শত্রুগণ বলিষ্ঠ ও বহুসৈন্য পরিবৃত হইলেও তিনি উহাদিগকে শীঘ্র শীঘ্র পৃথক্ করিয়া দেন এবং তিনি বৃত্রকে বধ করেন।
৬। যে ইন্দ্রকে আমরা স্তব করিলাম, যিনি ধনসম্পন্ন এবং আমাদিগের কামনা পূর্ণ করিয়াছেন। শত্রু ইহার নিকট হইতে দূরে পলায়ন করুক, শত্রুর দেশের তাবৎ সম্পত্তি ইহার করতলগত হউক।
৭। হে ইন্দ্র! বিস্তর লোকেই তোমাকে ডাকে। তোমার যে ভয়ানক বজ্র আছে, তার নিকটের শত্রুকে দূর করিয়া দাও। হে ইন্দ্র! আমাকে যব পূর্ণ গাভীযুক্ত সম্পত্তি বিতরণ কর, যে তোমার স্তব করে তাহার স্তুতিকে রত্ন ও অন্নপ্রসবিনী কর।
৮। প্রখর সোমরসগুলি বহুল ধারাতে মধুর রস বর্ষণ করিতে করিতে যখন ইন্দ্রের দেহ মধ্যে প্রবেশ করে, তখন ইন্দ্র সোমরসদাতাকে কখনই বারণ করেন না, কখনই বলেন না, যে (আর না) বরং সোমরস প্রস্তুতকারীব্যক্তিকে বিস্তর অভিলষিত বস্তু প্রদান করেন।
৯। যেমন দ্যূতক্রীড়ানিরতব্যক্তি যাহার নিকট হারিয়াছে, তাহাকেই ক্রীড়া কালে অন্বেষণপূর্বক হারাইয়া দেয়, তদ্রুপ যে অনিষ্ট করে, ইন্দ্র সেই শত্রুকেই পরাস্ত করেন। যে দেবভক্তব্যক্তি দেবপূজাতে ধন ব্যয় করিতে কৃপণতা না করেন, ধনবান্ ইন্দ্র তাহাকেই ধনী করেন।
১০। আমরা যেন গাভীদিগের দ্বারা কষ্টকর দারিদ্র্যদুঃখ হইতে উত্তীর্ণ হই। হে পুরুহৃত! আমরা যেন যবের দ্বারা ক্ষুধা নিবৃত্তি করিতে পাই। আমরা যেন রাজাদিগের সঙ্গে অগ্রসর হইয়া নিজ বলপ্রভাবে বিস্তর সম্পত্তি জয়করিতে পারি।
১১। বৃহস্পতি আমাদিগকে পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে পাপাত্মা শত্রুর হস্ত হইতে রক্ষা করুন। ইন্দ্র পূর্ব দিকে এবং মধ্যভাগে আমাদিগকে রক্ষা করুন। তিনি আমাদিগের সখা, আমরা তাহার সখা; তিনি আমাদিগের অভিলাষ সিদ্ধ করুন।