ঋগ্বেদ ১০।০৩৯

ঋগ্বেদ ১০।০৩৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩৯
অশ্বিদ্বয় দেবতা। ঘোষানাম্নীনারী ঋষি।

১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদিগের যে সৰ্বত্ৰবিহারী সুগঠন রথ আছে, যে রথকে উদ্দেশপূর্বক আহ্বান করা যজমান ব্যক্তির পক্ষে রাত্রি দিন কর্তব্য। আমরা ক্রমাগত সেই রথেরই নাম করিতেছি,যেমন পিতার নাম করিতে আনন্দ হয়, তদ্রুপ উহার নামে আনন্দ হয়।

২। আমাদিগকে মধুর বাক্য উচ্চারণ করিতে প্রবৃত্ত কর, আমাদিগের কৰ্ম্ম সম্পন্ন কর, বিবিধ বুদ্ধির উদয় করিয়া দাও, তাহা আমরা কামনা করি। হে অশ্বিদ্বয়! অতি প্রশংসিত ধনের ভাগ আমাদিগকে দাও। যেরূপসোমরস প্রীতিপ্রদ হয়, আমাদিগকে যজমানদিগের নিকট তদ্রূপ প্রীতি ভাজন করিয়া দাও।

৩। পিতৃভবনে একটী স্ত্রীলোক বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হইতেছিল, তোমরা তাহার সৌভাগ্যস্বরূপ তাহার বর আনয়ন করিয়া দিলে। যাহার চলৎশক্তি নাই, অথবা যে অতি নীচ, তোমরা তাহারও আশ্রয়স্বরূপ, তোমাদিগকেই অন্ধের ও দুৰ্ব্বলের ও রোগের জ্বালায় রোরুদ্যমান ব্যক্তির চিকিৎসক বলিয়া লোকে উল্লেখ করে।

৪। যেমন পুরাতন রথকে কেহ নূতন করিয়া নির্মাণপুৰ্ব্বক তদ্বারা গতিবিধি করে, তদ্রূপ তোমরা জরাজীর্ণ চ্যবন ঋষিকে পুনর্বার যুবা করিয়া দিয়াছিলে। তোমরাই তুগ্ৰপুত্রকে জলের উপর নিরুপদ্রবে বহন করিয়াতীরে উত্তীর্ণ করিয়া দিয়াছিলে। যজ্ঞের সময় তোমাদিগের দুজনের সেই সমস্ত কাৰ্য্য বিশেষরুপে বর্ণনা করিবার যোগ্য।

৫। তোমাদিগের সেই সমস্ত পূর্বতন বীরত্বের কাৰ্য আমি লোকের নিকট বর্ণনা করিতেছি। তদ্ব্যতীত, তোমরা দুজনেই অতি নিপুণ চিকিৎসক, সেই নিমিত্ত তোমাদিগের আশ্রয় পাইবার আশায় তোমাদিগকে স্তব করিতেছি। হে নাসত্যদ্বয়। আমি এইরূপে স্তব করিতেছি, যে যজমান তাহাতে অবশ্যই বিশ্বাস করিবে।

৬। হে অশ্বিদ্বয়! এই আমি তোমাদিগের দুজনকে ডাকিতেছি, শ্রবণ কর। যেরূপ পিতা পুত্রকে শিক্ষা দেয়, তদ্রুপ আমাকে শিক্ষা দাও, আমার কেহ আপ্তবন্ধু নাই, আমি অজ্ঞান, আমার জাতিকুটুম্ব নাই, বুদ্ধি নাই। আমার কোন দুর্গতি উপস্থিত হইবার অগ্রেই দুর্গতি দূর কর।

৭। শুন্ধ্যুব নামে পুরুমিত্র রাজার যে কন্যা ছিল, তোমরা রথে করিয়া তাহাকে লইয়া বিমদের সহিত বিবাহ দিয়াছিলে। বধ্রিমতী যখন তোমাদিগকে ডাকিলেন, তাহা তোমরা শুনিয়াছিলে। তোমরা সেই নারীর প্রসব বেদনা দূর করিয়া সুখে প্রসব করাইয়াছিলে।

৮। কলি নামক যে স্তোতা জরাজীর্ণ হইয়াছিল, তোমরা তাহাকে পুনর্বার যৌবনসম্পন্ন করিয়াছিলে। তোমরাই বন্দন নামক ব্যক্তিকে কুপের মধ্য হইতে উদ্ধার করিয়াছিলে। তোমরাই চিন্নপদা বিষ্পলাকে লৌহের চরণ দিয়া তৎক্ষণাৎ চলৎশক্তিবিশিষ্টা করিয়াছিলে।

৯। হে অভিলষিত বস্তুবর্ষণকারী অশ্বিদ্বয়! রেত নামক ব্যক্তিকে যখন শত্রুগণ মৃত প্রায় করিয়া গুহার মধ্যে রাখিয়া দিয়াছিল, তোমরাই তাহাকে সংকট হইতে উদ্ধার করিয়াছিলে। অত্রি ঋষি যখন সপ্ত বন্ধনে বদ্ধ হইয়া জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিলেন, তখন তোমরাই সেই অগ্নিকুণ্ড তাঁহার নিরুপদ্রবস্থানতুল্য করিয়া দিয়াছিলে।

১০। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরাই পেদৃ নামক রাজাকে অপর নবনবতি ঘোটকের সহিত একটি চমৎকার শূভ্রবর্ণ ঘোটক দিয়াছিলে। ঐ ঘোটক বিলক্ষণ তেজস্বী, উহাকে দেখিলে শত্রুসৈন্য পলায়ন করে, উহা মনুষ্যদিগের নিকট বহুমুল্য ধনস্বরূপ, উহার নামে আনন্দ হয়, উহাকে দেখিলে মনে সুখ জন্মে।

১১। হে ক্ষয়রহিত রাজদ্বয়! তোমাদিগের দুজনের নাম কীৰ্ত্তনে আনন্দ হয়, তোমরা পথে যাইবার সময় তোমাদিগকে চতুর্দিক হইতে সকলে স্তব করে, তোমরা যদি পত্নীসমেত কোন ব্যক্তিকে তোমাদিগের রথের অগ্রভাগে সংস্থাপনপূর্বক আশ্রয় দান কর, তাহাকে কোন পাপ, কোন দুর্গতি, বা কোন বিপদ স্পর্শ করিতে পারে না।

১২। হে অশ্বিদ্বয়! ঋভু নামক দেবতারা তোমাদিগের যে রথ প্রস্তুত করিয়া দিয়াছেন, যে রথের উদয় হইলে আকাশের কন্যা ঊষা আবির্ভূত হয়েন এবং সূৰ্য্য হইতে অতি সুন্দর দিন ও রাত্রি জন্মগ্রহণ করে, মন অপেক্ষাও সমধিক বেগশালী সেই রথে আরোহণপূর্বক তোমরা আগমন কর।

১৩। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা সেই রথে আরোহণপুর্বক পর্বতে যাইবার পথে গমন কর। শযু নামক ব্যক্তির বৃদ্ধ গাভিকে পুনর্বার দুগ্ধবতী করিয়া দাও। তোমাদিগের এ প্রকার ক্ষমতা যে, যে বর্তিকা বৃকের গ্রাসে পতিত হইয়াছিল, তোমরা সে বর্তিকাকে উহার মুখগহ্বর হইতে উদ্ধার করিয়াছিলে।

১৪। যেরূপ ভৃগুসন্তানগণ রথ প্রস্তুত করে (১), তদ্রুপ হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদিগের জন্য এই স্তব প্রস্তুত করিলাম। যেরূপ জামাতাকে কন্যা দিবার সময় তাহাকে বসন ভূষণে অলঙ্কৃত করিয়া সম্প্রদান করে (২), তদ্রুপ এই স্তবকে আমি অলঙ্কৃত করিয়াছি। যেন নিত্যকাল আমাদিগের পুত্রপৌত্র প্রতিষ্ঠিত থাকে।

————

(১) ভৃগুসন্তানগণ রথ নির্মাণ করিত, তাহার উল্লেখ পূর্বেই পাইয়াছি।

(২) কন্যাকে বিবাহের সময় অলঙ্কৃতা করিয়া অর্পণ করা যায়।