ঋগ্বেদ ১০।০৩৫

ঋগ্বেদ ১০।০৩৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩৫
বিশ্বদেবগণ দেবতা। লুশ ঋষি।

১। সেই সকল অগ্নি জাগরিত হইলেন, তাহাদিগের সঙ্গে ইন্দ্র আছেন; প্রভাত যখন অন্ধকারকে বিদেশে প্রেরণ করে, তখন সেই সমস্ত অগ্নি আলোক ধারণপূর্বক প্রজ্বলিত হইল। বিপুলমূর্তি দ্যুলোক ও ভূলোক চৈতন্যযুক্ত হউক। দেবতারা অদ্য যেন আমাদিগকে রক্ষা করেন, এই প্রার্থনা করি।

২। আমরা প্রার্থনা করি যে, দ্যাবাপৃথিবী যেন রক্ষা করে, যেন জননীতুল্য নদীগণ এবং নির্ঝরধারী পর্বতগণ(১) আমাদিগকে রক্ষা করেন। সূর্য ও উষা দেবীর নিকট এই প্রার্থনা, যেন আমরা অপরাধী না হই। যেসোমকে প্রস্তুত করা যাইতেছে, তিনি যেন আমাদিগের মঙ্গল করেন।

৩। দ্যাবা ও পৃথিবী আমাদিগের মাতৃতুল্য, আমরা যেন সেই দুই মহতী দেবতার নিকট নিরপরাধী থাকি, যেন তারা আমাদিগের সুখ বিধান করেন। ঊষাদেবী যেন আমাদিগের পাপ মুছিয়া লয়েন এবং পাপ নষ্ট করেন। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৪। এই যে উষা দেবী, যিনি ধনদানকারিণী এবং যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ গাভীর ন্যায়, তিনি আমাদিগকে উত্তম ধন বিতরণ করুন, আমরা তাহা ভাগ করিয়া লই। আমরা যেন দুষ্টলোকের কোপ হইতে দূরবর্তী থাকি। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৫। যে সকল ঊষা সূৰ্যকিরণের সহিত মিলিত হইয়া আলোক ধারণপূর্বক অন্ধকারকে অপসারিত করেন, তাহারা অদ্য আমাদিগকে অন্ন দান করুন। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৬। ঊষা যেন আমাদিগের আরোগ্যসম্পন্ন হইয়া উপস্থিত হন, বিপুল জ্যোতিসহকারে অগ্নিগণ উদয় হউন। অশ্বিদ্বয় শীঘ্রগামী রথ যোজনা করিয়াছেন। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৭। হে সূর্য্যদেব! অতি চমৎকার ধন ভাগ অদ্য আমাদিগকে বিতরণ কর, কারণ তুমিই কামনা পূর্ণ করিবার কর্তা। যাহাতে ধন জন্মাতে পারে, এপ্রকার স্তুতি পাঠ করিতেছি। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৮। মনুষ্যগণ দেবতাদিগের উদ্দেশে যে যজ্ঞকাৰ্য্য সংকল্প করে, সেই যজ্ঞানুষ্ঠান আমার শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদন করুক। প্রতি প্রভাতে সূৰ্য্যদেব সকল বস্তু স্পষ্ট করিয়া দিয়া উদয় হয়েন। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

৯। যজ্ঞের নিমিত্ত অদ্য এই যে কুশ বিস্তার হইতেছে, সোম প্রস্তুত করিবার জন্য দুই প্রস্তর সংযোজিত হইতেছে, এই সময়ে আমাদিগের অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য দ্বেষরহিত দেবতাদিগের শরণাপন্ন হওয়া যাউক। হে যজমান! তুমি সকল অনুষ্ঠান করিয়া থাক; অতএব আদিত্যগণ যেন তোমাকে সুখী করেন। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

১০। হে অগ্নি! আমাদিগের এই যে যজ্ঞ অনুষ্ঠান হইতেছে, যাহাতে দেবতাগণ একত্র হইয়া আমোদ আহলাদ করেন, এই যজ্ঞে প্রকাণ্ড দ্যুলোকবর্তী দেবতাদিগকে আনয়ন কর, সাতজন হোতাকে আনয়ন কর, ইন্দ্র ও মিত্র ও বরুণ ও ভগকে আনয়ন কর; আমি ধনলাভের জন্য সকলকে স্তব করি। প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

১১। হে প্রসিদ্ধ আদিত্যগণ! তোমরা আইস, তাহাতেই সকল বিষয়ে শ্রীবৃদ্ধি হইবে । আমাদিগের শ্রীবৃদ্ধির জন্য সকল একত্র হইয়া যজ্ঞকে রক্ষা করুন। বৃহস্পতি ও পূষা ও অশ্বিদ্বয় ও ভগ ও প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট আমরা কল্যাণ ভিক্ষা করি।

১২। হে দেবগণ! অতএব তোমাদের যজ্ঞের সাফল্য আজ্ঞা কর। হে আদিত্যগণ! ধন পরিপূর্ণ রাজযোগ্য গৃহ দান কর। আমাদিগের পশু ও পুত্র পৌত্র ও পরমায়ুঃ সকল বিষয়ে আমরা প্রজ্বলিত অগ্নির নিকট কল্যাণ কামনা করি।

১৩। সকল মরুৎ আমাদিগকে সৰ্ব্বাবিধায় রক্ষা করুন। যাবতীয় অগ্নি প্রজ্বলিত হউন। যাবতীয় দেবতা আমাদিগকে রক্ষা করিবার জন্য আগমন করুন। সর্বপ্রকার অন্ন ও সম্পত্তি আমাদিগের লাভ হউক।

১৪। হে দেবগণ! যাহাকে তোমরা অন্ন দানপূর্বক রক্ষা কর, যাহাকে ত্রাণ কর, যাহাকে পাপমুক্ত করিয়া শ্রীবৃদ্ধিসম্পন্ন কর, যে তোমাদিগের আশ্রয়ে থাকিয়া ভয় কাহাকে বলে জানে না, আমরা যেন দেবকার্যের জন্য ব্যগ্র হইয়া তাদৃশ ব্যক্তি হই ।

————

(১) মূলে “পর্বতান শৰ্য্যনাবতঃ” আছে। কুরুক্ষেত্রের নিকটস্থ পর্বত এরূপ অর্থও হইতে পারে। সায়ণ অন্য স্থানে কুরুক্ষেত্রের নিকটে একটা সরোবরের নাম শৰ্য্যনাবৎ বলিয়াছেন।