ঋগ্বেদ ১০।০২২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ২২
ইন্দ্র দেবতা। বিমদ ঋষি।
১। আজি ইন্দ্র কোথায় আছেন, শুনা গেল? আজি তিনি কোন ব্যক্তির নিকট বন্ধুর ন্যায় হইয়াছেন, শুনা গেল? তিনি কি ঋষিদিগের ভবনে, অথবা কোন নিভৃতস্থানে স্তবের দ্বারা আকৃষ্ট হইয়াছেন?
২। ইন্দ্র অদ্য এই স্থানে আসিতেছেন, শুনা যাইতেছে। সেই বজ্রধারী স্তবযোগ্য ইন্দ্রকে আমি স্তব করিতেছি। তিনি ভক্তদিগের বন্ধুর ন্যায় অসাধারণ অর্থাৎ প্রচুর অন্ন আহরণ করিয়া দেন।
৩। সেই ইন্দ্র অতুল বলের অধিকারী; তাঁহার তুলনা নাই; তিনি প্রচুর ধন দিয়া থাকেন। পিতা যেরূপ পুত্রকে রক্ষা করেন, তদ্রূপ আমাদিগকে রক্ষা করিবার নিমিত্ত তিনি দুর্ধর্ষ বজ্র ধারণ করেন।
৪। হে বজ্রধারী দেব! বায়ু অপেক্ষা দ্রুতগামী দুই অশ্ব রথে যোজনা করিয়া উজ্জ্বলপথে সেই দুই ঘোটককে প্রেরণ করিতে থাক, যুদ্ধের পথ তুমিই সৃষ্টি কর, অর্থাৎ দেখাইয়া দাও। তখন তোমাকে স্তব করা হয়।
৫। সেই দুই অশ্বের চালনা করিতে পটু, এমন কোন দেবতা, বা মনুষ্য নাই। তুমি নিজেই সেই বায়ুতুল্য বেগশালী দুই ঘোটককে চালাইয়া দিয়া আমাদিগের নিকট আসিয়া থাক।
৬। হে ইন্দ্র ও অগ্নি! তোমরা এখন বিদায় লইতেছ, উশনা তোমাদিগকে বিদায়ের সম্ভাষণ করিতেছেন। তোমর সেই দূরস্থিত স্বর্গধাম হইতে মনুষ্যের নিকট আসিয়াছ এবং আসবার সময় পৃথিবীর কত অংশ অতিক্রম করিয়াছ, তাহাতে তোমাদিগের নিজের কি বা প্রয়োজন সিদ্ধ হইয়াছে, কেবল আমাদিগের অনুগ্রহের জন্যই আসিয়াছ।
৭। হে ইন্দ্ৰ! আমরা এই যজ্ঞের সামগ্রী প্রস্তুত করিয়াছি, যতক্ষণ না তৃপ্তি হয়, ভক্ষণ কর। আমরা তোমার নিকট অন্ন প্রার্থনা করি এবং এতদৃশ বল প্রার্থনা করি, যাহাদ্বারা অমানুষ অর্থাৎ রাক্ষস প্রভৃতিকে নিধন করিতে পারি।
৮। আমাদিগের চতুর্দিকে দস্যু জাতি আছে, তাহারা যজ্ঞকৰ্ম্ম করে না, তাহারা কিছু মানেনা, তাহাদিগের ক্রিয়া স্বতন্ত্র, তাহারা মনুষ্যের মধ্যেই নয়। হে শত্ৰু সংহারকারী! তাহাদিগকে নিধন কর। সেই দাসজাতিকে হিংসা কর (১)।
৯। হে শূর ইন্দ্র! তুমি শূরদিগের সঙ্গে আমাদিগকে রক্ষা কর। তোমার। নিকট রক্ষা প্রাপ্ত হইয়া আমরা যেন বিপক্ষ সংহার করি, যেরূপ সেবকেরা প্রভুকে বেষ্টন করে, তদ্রুপ তোমার প্রদত্ত প্রচুর বস্তুদ্বারা আমরা যেন বেষ্টিত হই।
১০। হে বজ্রধারী! যখন কবিগণ বুদ্ধিবলে নক্ষত্রলোকবাসী দেবতা দিগের উদ্দেশে স্তব রচনা করেন, তখন তুমি বৃত্রকে বধ করিবার জন্য তরবারি দ্বারা যুদ্ধ করিতে, সেই সকল ব্যক্তিকে প্রেরণ করিয়াছিলে।
১১। হে বজ্রধারী ইন্দ্র! দান করাই তোমার কর্ম । যুদ্ধস্থলে অতিশীঘ্র শীঘ্রই তুমি তোমার কৰ্ম্ম সম্পন্ন কর। তুমি সহগামী লোকদিগের সঙ্গে শুষ্ণের বংশ সকল ধ্বংস করিয়াছ।
১২। হে শূর ইন্দ্র! আমাদিগের এই সমস্ত মহতী বাসনা যেন বৃথা না হয়। হে বজ্রবীর! আমাদিগের পক্ষে সেই সকল বাসনা যেন ফলবতী হইয়া সুখকারী হয়।
১৩। তোমার অনুগ্রহ যেন আমাদিগের পক্ষে সফল হয়, যেন আমা দিগের হিংসা না হয়, যেরূপ গাভীর দুগ্ধাদি লোকে ভোগ করে, তদ্রুপ আমরা যেন তোমার অনুগ্রহের ফল ভোগ করি।
১৪। দেবতাদিগের ক্রিয়াদ্বারা এই পৃথিবী হস্ত পদ বিহীন হইয়া চতুর্দিকে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছে। সেই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করিয়া চতুর্দিকে গমন করিয়া তুমি শুষ্ণ নামক অসুরকে হিংসা করিয়াছ।
১৫। হে শূর ইন্দ্ৰ! সোমরস পান কর, পান কর। তুমি ধনবান্, তুমি ধনস্বরূপ, তুমি আমাদিগকে হিংসা করিও না। যজ্ঞকর্তা, স্তবকর্তা ব্যক্তি দিগকে রক্ষা কর। আমাদিগকে প্রচুর ধনে ধনী কর।
————
(১) অনার্য্য বর্বর জাতিদিগের স্পষ্ট উল্লেখ। তাহাদিগকে “অকর্মা অমতঃ অন্য ব্রতঃ অমানুষঃ” বলা হইয়াছে।