ঋগ্বেদ ১০।০১৬
ঋগ্বেদ সংহিতা।। ১০ম মণ্ডল।। সূক্ত ১৬ (১)
অগ্নি দেবতা। দমন ঋষি।
১। হে অগ্নি! এই মৃতব্যক্তিকে একেবারে ভস্ম করিও না (২), ইহাকে ক্লেশ দিও না; ইহার চর্ম বা ইহার শরীর ছিন্ন ভিন্ন করিও না। হে জাতবেদা! যখন ইহার শরীর তোমার তাপে উত্তমরূপে প হয়, তখনই ইহাকে পিতৃলোকদিগের নিকট পাঠাইয়া দেও।
২। হে অগ্নি! যখন ইহার শরীর উত্তমরূপে পক করিবে, তখনই পিতৃলোকদিগের নিকট ইহাকে দিবে। যখন ইনি পুনর্বার সজীবত্ব প্রাপ্ত হইবেন, তখন দেবতাদিগের বশতাপন্ন হইবেন।
৩। হে মৃত! তোমার চক্ষু সূৰ্যে গমন করুক, তোমার খাস বায়ুতে যাউক। তুমি তোমার পুণ্যফলে আকাশে ও পৃথিবীতে যাও। অথবা যদি জলে যাইলে তোমার হিত হয়, তবে জলে যাও। তোমার শরীরের অবয়বগুলি উদ্ভিজ্জবর্গের মধ্যে যাইয়া অবস্থিতি করুক।
৪। এই মৃতব্যক্তির যে অংশ অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, চিরকালই আছে, হে অগ্নি! তুমি সেই অংশকে তোমার তাপদ্বারা উত্তপ্ত কর, তোমার ঔজ্জ্বল্য, তোমার শিখা, সেই অংশকে উত্তপ্ত করুক। হে জাতবেদা বহ্নি! তোমার যে সকল মঙ্গলময়ী মূর্তি আছে, তাঁহাদিগের দ্বারা এই মৃতব্যক্তিকে পুণ্যবান লোকদিগের ভুবনে বহন করিয়া লইয়া যাও (৩)।
৫। হে অগ্নি! যে তোমার আহুতিস্বরূপ হইয়া যজ্ঞের দ্রব্য ভোজন করিয়া আসিতেছে, সেই মৃতকে পিতৃপোকদিগের নিকট প্রেরণ কর। ইহার যাহা অবশিষ্ট আছে, তাহা জীবনপ্রাপ্ত হইয়া উত্থিত হউক। হে জাবেদা! সে পুনৰ্ব্বার শরীর লাভ করুক।
৬। হে মৃত! কৃষ্ণবর্ণ পক্ষী অর্থাৎ কাক, তোমার শরীরের যে অংশে ব্যথা দিয়াছে, কিংবা পিপীলিকা, বা সর্প, বা হিংস্র জন্তু যে অংশে ব্যথা দিয়াছে, এই সর্বভক্ষণকারী অগ্নি তাহা নীরোগ করুন, আর সোম, যিনি স্তোতাদিগের শরীরে প্রবেশ করিয়াছেন, তিনিও তাহা নীরোগ করুন।
৭। হে মৃত! তুমি গোচৰ্ম্মের সহিত অগ্নি শিখাস্বরূপ কবচ ধারণ কর, তোমার প্রচুর মেদের দ্বারা তুমি আচ্ছাদিত হও, তাহা হইলে এই যে দুর্ধর্ষ অগ্নি, যিনি বলপূর্বক ও অহঙ্কারের সহিত তোমাকে দগ্ধ করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তিনি একেবারে তোমার সর্বাংশে ব্যাপ্ত হইতে পারিবেন না।
৮। হে অগ্নি! এই চমসকে বিচলিত করিও না, ইহা সোমপানকারী দেবতাদিগের প্রীতি উৎপাদন করে। এই যে দেবতাদিগের পান করিবার জন্য চমস রহিয়াছে, ইহা দর্শন করিয়া মৃত্যুরহিত দেবতাগণ অ হলাদিত হয়েন।
৯। মাংস ভোজনকারী এই অগ্নিকে আমি দূরে অপসারিত করি। ইহা অশুদ্ধবস্তু বহন করিতেছে, যম যাহাদিগের রাজা, এই অগ্নি তাঁহাদিগের নিকট গমন করুক। আর এই স্থানেই আর এক অগ্নি রহিয়াছেন, ইনিই বিবেচনাপূৰ্ব্বক দেবতাদিগের নিকট হোমের দ্রব্য বহন করুন।
১০। এই যে মাংস ভোজনকারী অগ্নি, অর্থাৎ চিতার অগ্নি, তোমাদিগের গৃহে প্রবেশ করিয়াছে, তাহাকে আমি অপসারিত করি। আর এই দ্বিতীয় জাতবেদা অগ্নিকে আমি পিতৃলোকের উদ্দেশে যজ্ঞ দিবার জন্য গ্রহণ করিতেছি। ইনিই পরমধামে যজ্ঞ লইয়া গমন করুন।
১১। যে অগ্নি শ্রাদ্ধের দ্রব্য বহন করেন এবং যজ্ঞের উন্নতি সাধন করেন, তিনি দেবতাদিগকে এবং পিতৃলোকদিগকে আরাধনা করেন, তিনি দেবতাদিগের ও পিতৃলোকদিগের নিকট হোমের দ্রব্য নিবেদন করিয়া দেন।
১২। হে অগ্নি! যত্নপূৰ্ব্বক তোমাকে সংস্থাপন করিতেছি, যত্ন পূৰ্ব্বক তোমাকে প্রজ্বলিত করিতেছি। যজ্ঞকর্তামনাকারী দেবতবর্গ ও পিতৃলোকদিগের নিকট তুমি যত্নপূর্বক হোমের দ্রব্য তাহার ভোজন করিবেন বলিয়া বহন কর।
১৩। হে অগ্নি! তুমি যাহাকে দাহ করিলে, পুনৰ্ব্বার তাহাকে নির্বাপিত কর। কিঞ্চং জল এই স্থানে উপস্থিত হউক এবং শাখাপ্রশাখাযুক্ত পরিণত দূর্বা এই স্থানে উৎপন্ন হউক।
১৪। হে পৃথিবি! তুমি শীতল, তোমাতে অনেক শীতল উদ্ভিজ্জ আছে। তুমি আহ্লাদকারিণী, তোমাতে অনেক আহ্লাদকারী উদ্ভজ আছে। ভেকী যাহাতে সন্তুষ্ট হয়, সেই বৃষ্টি আনয়ন কর, আর এই অগ্নিকে সন্তুষ্ট কর।
———-
(১) এ সূক্তটীও অতিশয় জ্ঞাতব্য।
মৃত্যুর পর পরলোকে গমনের কথা ইহাতে আছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় এই সুক্তেরও কয়েকটি ঋক উচ্চাৰ্য্য।
(২) অগ্নিদাহপ্রথা প্রচলিত ছিল, তাহা এতদ্বারা প্রকাশিত হইতেছে।
৩) মৃত্যুর পর চক্ষু, নিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন অবয়বগুলি সূৰ্য্য, বা বায়ু, বা মৃত্তিকা, বা জল, বা উদ্ভিজ্জে যায়; কিন্তু মনুষ্যের জন্মরহিত অংশ অগ্নির প্রসাদে পুণ্যস্থানে গমন করে, এইরূপ বিশ্বাস ৩ ও ৪ ঋক হইতে প্রতীয়মান হইতেছে।