ঋগ্বেদ ০৯।০৮৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৮৫
পবমান সোম দেবতা। বেন ঋষি।
১। হে সোম! তোমাকে উত্তমরূপ প্রস্তুত করা হইয়াছে। তুমি ইন্দ্রের উদ্দেশে ক্ষরিত হও। রাক্ষস ও রোগ দূর হউক। যাহারা মুখে মনে ভিন্ন, তাহারা যেন তোমার রস আস্বাদনের আনন্দ অনুভব না করে। সোমরসগুলি যেন এই আমাদিগের যজ্ঞস্থানে ধনের সহিত উপস্থিত হয়।
২। যুদ্ধস্থলে আমাদিগকে প্রেরণ কর, তুমি অতি নিপুণ। তুমি দেবতাদিগের প্রিয় আনন্দ। আমরা চতুর্দিকে তোমার স্তব করিতেছি, শত্ৰুদিগকে নষ্ট কর। হে ইন্দ্র! আমাদিগকে রক্ষা কর, বিপক্ষদিগকে সংহার কর।
৩। হে সোম! তুমি বিনা বাধায় ক্ষরিত হইতেছ। তোমার তুল্য আনন্দ বিধাতা কেহ নাই। তুমিও যে, ইন্দ্রও সে। তোমার মত আহার আর নাই। বিস্তর বিদ্বান্ লোক তোমাকে স্তব করিতেছেন। তুমি এই ভুবনের রাজা। তোমার নিকটবর্তী তাহারা হইতেছেন।
৪। এই আশ্চর্য সোমরস সহস্রধারায়, শতধারায় ইন্দ্রের জন্য অতি চমৎকার মধু ক্ষরিত করিতেছেন। আমাদিগের জন্য ক্ষেত্র জয় করিয়া দাও, জল জয় করিয়া দাও। হে সোম! তুমি সেচনকর্তা (দ্রবাত্মক)। আমাদিগের পথ প্রশস্ত করিয়া দাও। আমরা যেন অবারিতগতি হই।
৫। কলদের মধ্যে শব্দ করিতে করিতে তুমি ক্ষীরের সহিত মিশ্রিত হইতেছ। মেষলোমময় পবিত্রের মধ্য দিয়া নানা গতিতে যাইতেছে। তোমাকে শোধন করা হইলে, তুমি উৎকৃষ্ট বিবিধ দ্ৰব্যবাহী ঘোটকের ন্যায় গমনপূর্বক ইলের উদরে যাইতেছ।
৬। তুমি মধুরভাবে তাবৎ দেবতার জন্য ক্ষরিত হও। তুমি ইন্দ্রের জন্য মিষ্ট হও, সেই ইন্দ্রের নামোচ্চারণে কল্যাণ হয়, তুমি মিত্র ও বরুণ ও বায়ু ও বৃহস্পতির জন্য মিষ্ট হও। তুমি মধুপূর্ণ, তোমার বিনাশ নাই।
৭। এই দ্রুতগতিশীল সোমরসকে দশ অঙ্গুলি মিলিত হইয়া শোধন করিতেছে। মেধাবী পুরুষদিগের স্তোত্রবাক্য ইহার প্রতি প্রযুক্ত হইতেছে, সোমরসেরা ক্ষরিত হইতে হইতে সেই চমৎকার স্তোত্রবাক্যের দিকে ধাবিত হইতেছে। এই সকল মাদকতাশক্তিধারী সোমরস ইন্দ্রের শরীরে প্রবেশ করিতেছে।
৮। হে সোম! ক্ষরিত হইতে হইতে তুমি আমাদিগের লোকবল করিয়া দাও, গব্যূতি পরিমাণ ভূমি করিয়া দাও, প্রশস্ত বাস্তবাটী করিয়া দাও। আমাদিগের যজ্ঞের বিঘ্নকর্তা যেন ক্ষমতাপন্ন না হয়, হে সোম! তোমার সাহায্যে আমরা যেন যেখানে যত ধন আছে, জয় করিতে পারি।
৯। এই বহুদশী সেচনকারী সোম আকাশে রহিলেন, এই কাৰ্যকুশল সোম অন্যান্য দীপ্তিশালী বস্তুদিগকে অধিক দীপ্তিযুক্ত করিয়া দিলেন, ইনি রাজা, পবিত্রের মধ্য দিয়া যাইতেছেন এবং মনুষ্যের হিতের জন্য সশব্দে স্বর্গের অমৃত ঢালিয়া দিতেছেন।
১০। বেন নামক ব্যক্তিগণ আকাশের উন্নতস্থানে এই উন্নতস্থানবর্তী সেচনকারী সোমকে সুমিষ্ট বচনে সম্ভাষণ করিতে করিতে এবং পরস্পর পৃথক ভাবে দোহন করিতেছেন। এই দ্রবময় সোমরস জলে মিশ্রিত হইতেছেন, ইনি মধুর রসরূপী হইয়া পবিত্রে এবং বৃহৎ কলসের মধ্যে সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় যাইতেছেন।
১১। এই সুপর্ণ সোম (১) আকাশে উড়িতে ছিলেন, বেন নামক ব্যক্তিরা সাধ্য সাধনা করিয়া আনিয়াছে। এই সেম শিশুর ন্যায় শব্দ করিতেছেন, ইহার প্রতি স্তোত্ৰবাক্য প্রেরিত হইতেছে। ইনি সুবর্ণের পক্ষী, পৃথিবীতে আসিয়া আছেন
১২। ইনি গন্ধৰ্ব্ব (২), আকাশের উৰ্দ্ধভাগে ছিলেন। ইনি সেই স্থান হইতে তাবৎ বস্তু নিরীক্ষণ করিতে ছিলেন, ইহার তেজঃ শুভ্রবর্ণ কিরণ বিস্তার পূৰ্ব্বক দীপ্তি পাইতেছিল, সেই শুভ্র আলোক জনক জননী তুল্য দ্যুলোক ও ভূলোককে জ্যোতির্ময় করিল।
————
(১) এখানে সোমকেই “সুপর্ণ” বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে।
(২) এখানেও গন্ধর্ব অর্থে সূর্য্য। সোমকে সূর্য্যরূপে স্তুতি করা হইতেছে।