ঋগ্বেদ ০৯।০৬৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৭
পবমান সোম দেবতা। ভরদ্বাজ, কশ্যপ, গোতম, অত্রি, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ ও পবিত্র এই কয়েকজন ঋষি।
১। হে ক্ষরণশীল সোমরস! তুমি আনন্দ দান কর, তুমি অতিশয় বলশালী, তুমি ধন বিতরণ করিতে করিতে এই যজ্ঞে ধারারূপে ক্ষরিত হও।
২। হে সোম! তুমি নিষ্পীড়িত হইয়া মনুষ্যদিগকে আনন্দিত ও উন্মত্ত কর, তুমি পণ্ডিত ও ধনদান কৰ্ত্তা, তুমি ইন্দ্রের আহার স্বরূপ হইয়া তাহাকে যারপর নাই আহলাদিত কর।
৩। তুমি প্রস্তরের দ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া অতি উত্তম জাজ্বল্যমান তেজ ধারণ কর।
৪। হরিতবর্ণ সোমরস প্রস্তরদ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া মেষলোমর মধ্য দিয়া নির্গত হইতেছে এবং অন্ন অন্ন এরূপ শব্দ করিতেছে।
৫। হে সোমরস! তুমি যদি মেষলোমের মধ্য দিয়া নির্গত হও, তাহা হইলে নানাবিধ সম্পত্তি, নানা প্রকার খাদ্যদ্রব্য এবং বলবীৰ্য্য এবং গোধন লাভ হইয়া থাকে।
৬। হে সোমরস! আমাদিগকে শতশত গোধন এবং সহস্র ঘোটক এবং নানাপ্রকার সম্পত্তি আনয়ন করিয়া দাও।
৭। এই সকল সোমরস মেষলোমের মধ্যদিয়া শীঘ্র শীঘ্র নির্গত হইয়া মুহুর্মুহু ইন্দ্রের শরীরে প্রবেশপূর্বক তাহার সর্ব শরীরে ব্যাপী হইল।
৮। সোমের রস সর্বশ্রেষ্ঠ পদার্থ। সোমরস ইন্দ্রের নিমিত্ত আমাদিগের পূৰ্বপুরুষকর্তৃক নিষ্পীড়িত হইয়াছিল। সে নিজে ক্রিয়াতৎপর, যে ব্যক্তি ক্রিয়াতৎপর, তাহারই জন্য সে ক্ষরিত হয়।
৯। এই যে সোম, যিনি সকলকে কর্মতৎপর করেন এবং ক্ষরিত হইয়া অতি মধুর রস প্রদান করেন, তিনি অঙ্গুলিদ্বারা চালিত হইতেছেন, এবং বচন রচনাদ্বারা তাঁহার গুণগান হইতেছে।
১০। পূষা নামক যে দেবতা, যিনি ছাগ বাহনে গমন করেন, তিনি যেন যখন যখন আমরা যাত্রা করি, তখনই আমাদিগকে রক্ষা করেন। তাঁহার প্রসাদে যেন আমরা সুশ্রী নারী প্রাপ্ত হই।
১১। কপর্দী নামক যে দেবতা, তাহার উদ্দেশে এই সোমরস ঘৃতের ন্যায়, মধুর ন্যায়, ক্ষরিত হইতেছে। আমরা যেন অনেক সংখ্যক সুশ্রী নারী লাভ করি।
১২। হে তেজঃপুঞ্জ! তোমার নিমিত্ত নিষ্পীড়িত হইয়া ধৃতের ন্যায় নিৰ্ম্মলভাবে এই সোমরস ক্ষরিত হইতেছে। আমরা যেন বহুসংখ্যক সুশ্রী নারী প্রাপ্ত হই।
১৩। হে সোম! তুমি কবিদিগের রচনাকে উত্তেজিত কয়। প্রার্থনা করি, তুমি ধারারূপে ক্ষৱিত হও। তুমি দেবতাদিগের জন্য রত্ন স্থাপন করিয়া থাক।
১৪। যেরূপ শ্যেনপক্ষী সুন্দর কুলায়ে প্রবেশ করে, তদ্রূপ এই সোময়স শব্দ করিতে করিতে কলসের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে(১)।
১৫। হে সোম! তোমার যে নিষ্পীড়িত রস, তাহা চতুর্দিকে কলসের মধ্যে সংস্থাপিত হইয়াছে, তাহা শ্যেনপক্ষীর ন্যায় সর্বত্র যাতায়াত করিতেছে।
১৬। হে সোম! তোমার তুল্য মধুর বস্তু কিছুই নাই। তুমি ইন্দ্রের আনন্দ বিধানের জন্য ক্ষরিত হও।
১৭। এই সকল সোমরস দেবতাদিগের উদ্দেশে প্রস্তুত হইয়াছে। ইহার। রথের ন্যায় বিপক্ষদিগের নিকট হইতে সম্পত্তি হরণ করিয়া আনিয়া দেয়।
১৮। সেই সমস্ত নিষ্পীড়িত সোমরস, যাহাদিগের তুল্য আনন্দকর পদার্থ আর কিছুই নাই, তাহার প্রস্তুত হইবার সময়ে শব্দ করিতে লাগিল।
১৯। এই সোমরস প্রস্তরদ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়াছে, ইহার গুণ গান করা হইয়াছে, ইহা পবিত্রের উপর যাইতেছে। যে তোমাকে স্তব করে, তাহাকে তুমি বীৰ্য্যবান কর।
২০। এই যে সোম, ইনি নিষ্পীড়িত হইয়াছেন, ইহার গুণ গান করা হইয়াছে, ইনি রাক্ষসদিগকে হনন করেন, এক্ষণে পৰিত্ৰকে অতিক্রমপূর্বক ইনি মেষলোমে যাইতেছেন।
২১। যে ক্ষরণশীল সোম! কি নিকটে, কি দূরে, যেখানে যত ভয় আমার উপস্থিত হয়, সে সমস্ত নষ্ট কর।
২২। সেই বিশ্বনিরীক্ষণকারী সোমরস পবিত্রের মধ্য দিয়া ক্ষরিত হইয়া আমাদিগকে পবিত্র করুন, কারণ পবিত্র করাই তার স্বভাব।
২৩। হে অগ্নি! তোমার শিখা মধ্যে যে পবিত্র গুণ বিস্তারিত আছে, তারা আমাদিগের দেহ পবিত্র কর।
২৪। হে অগ্নি! তোমার শিখা মধ্যে যে পবিত্র গুণ আছে, তা দ্বারা আমাদিগকে পবিত্র কর। সোমরস নিষ্পীড়নের দ্বারা আমাদিগকে পবিত্র কর।
২৫। হে দেব সবিতা । পৰিত্ৰদ্বারা এবং সোম নিষ্পীড়ন দ্বারা এই উভয়ের কান্না আমার সর্ব ভাগ শোধন কর।
২৬। হে সোম! তুমিই সবিতা, তুমিই অগ্নি। তোমার এই তিন বিপুল ও কার্যক্ষম মূর্তি, এই তিন মূর্তি দ্বারা আমাদিগকে পবিত্র কর।
২৭। দেবতারা আমাকে পবিত্র করুন। বসুগণ তাঁহাদিগের নিজ কার্য দ্বারা পবিত্র করুন। হে অশেষ দেবতা! আমাকে পবিত্র কর। হে অগ্নি! আমাকে শোধন কর।
২৮। হে সোম! তোমার তাবৎ ধারা সহকারে বিশেষরূপে প্রবাহমান হও, আমাদিগকে বিশেষরূপে আপ্যায়িত কর, তুমি দেবতাদিগের সর্বশ্রেষ্ঠ আহার।
২৯। সেই যে সোমরস, যিনি সকলের প্রীতিপাত্র, যিনি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া শব্দ করিতে থাকেন, যাহাকে আহুতিদ্বারা বর্ধিত করিতে হয়, আমরা নমস্কার করিতে করিতে তাহার নিকট আসিতেছি।
৩০। সর্বস্থান আক্রমণকারী সেই বিপক্ষে কুঠার যাহাতে নষ্ট হইয়া যায়, হে দেব সোম! তুমি সেইরূপে করিত হও, তুমি সেই পীড়াদায়ক শত্রুকেই সংহার কর।
৩১। যে ব্যক্তি পবমান সোমবিষয়ক এই সমস্ত শ্লোকগুলি অধ্যয়ন করে যাহার রসশালিনী রচনা ঋষিগণ করিয়া গিয়াছেন, তিনিই সেই সমস্ত সর্ব প্রকার পবিত্র খাদ্য আহার করেন, যাহা বায়ু আহার করিয়াছেন।
৩২। যিনি ঋষিদিগের রসময়ী রচনা, পবমান সোম বিষয়ক এই সমস্ত শ্লোক অধ্যয়ন করেন, তাহাকে সরস্বতী ঘৃত, দুগ্ধ ও সুমধুর জল দোহন করিয়া দেন।
————
(১) ১৪ ও ১৫ ঋকে শ্যেনপক্ষীর সহিত সোমের তুলনা।