ঋগ্বেদ ০৯।০৬৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৪
পবমান সোম দেবতা। মরীচিপুত্র কশ্যপ ঋষি।
১। হে সোম! তুমি দীপ্তিমান্ বর্ষণকর্তা। হে দেব! বর্ষণ করাই তোমার একমাত্র কাৰ্য। বর্ষণ করতঃ তুমি ধৰ্ম্ম সমস্ত ধারণ কর।
২। বর্ষণই তোমার ধর্ম। বর্ষণের জন্যই তোমার বল বীৰ্য্য, বর্ষণের জন্যই তোমার বিভাগ এবং বর্ষণের জন্যই তোমার রস। হে বর্ষণকারী! তুমিই যথার্থ বর্ষণকর্তা।
৩। তুমি ঘোটকের ন্যায় শব্দ করিতে করিতে বর্ষণ কর। আমাদিগকে গোধন ও বেগবান অনেক অশ্ব বিতরণ কর। আমাদিগের ধনাগমের পথ পরিষ্কার করিয়া দাও।
৪। গো, অশ্ব প্রভৃতি কামনাপূর্বক এবং লোকবল বাঞ্ছা করিয়া ঋত্বিকেরা বেগযুক্ত উজ্জল শুভ্রবর্ণ সতেজ সোমরস সকল সৃষ্টি করিলেন।
৫। যজ্ঞকর্তারা সোমকে সুশোভিত করিতেছেন, দুই হস্তে শোধন করিতেছেন। সেই সোম মেষলোমে ক্ষরিত হইতেছেন।
৬। যিনি দাতা, তাহার জন্য সোমরসেরা যেন কি নরলোক হইতে, কি দেবলোক হইতে, কি আকাশ হইতে সর্বস্থান হইতে ধন আহরণ করিয়া দেন।
৭। হে সোম! যখন তুমি ক্ষরিত হও, তখন তোমার দ্বারা সমস্ত যেন কিরণ শ্রেণীর ন্যায় বাহির হইতে থাকে।
৮। হে সোম! তুমি সঙ্কেত করিয়া আকাশের উপর হইতে আগমন কর এবং অশেষ রসের আধার হইয়া আমাদিগকে ধন দান কর।
৯। হে সোম! যখন তোমার রস সূৰ্যদেবের ন্যায় পবিত্রের উপর আরোহণ করে, তখন তুমি সেই পথে প্রেরিত হইয়া শব্দ করিতে থাক।
১০। যেরূপ রথী অশ্ব চালনা করে, তদ্রূপ সোম স্তবকৰ্ত্তাদিগের স্মৃতিবাক্য শ্রবণমাত্র চলিত হইলেন, যেহেতু তিনি চৈতন্যবিশিষ্ট এবং সকলের প্রীতিকর।
১১। তোমার সেই যে তরঙ্গ, যাহা দেবতাদিগের দিকেই ধাবিত হয় এবং যজ্ঞ মধ্যে স্থান গ্রহণ করে, তাহা পবিত্রের উপর ক্ষরিত হইল।
১২। হে সোম! যে তুমি দেবতাদিগের নিকট যাইবার জন্য নিতান্ত ব্যস্ত এবং আনন্দের বিধাতা, সেই তুমি ইন্দ্রের পানের জন্য আমাদিগের পবিত্রের উপর ক্ষরিত হও।
১৩। হে সোম! ঋত্বিকেরা তোমাকে শোধন করিতেছেন, অতএব তোমার ক্ষরণ হউক, তাহা হইলেই আমাদের অন্ন লাভ হইবে। তুমি তেজঃপুঞ্জ মূর্তিতে গোধনের দিকে গমন কর।
১৪। হে হরিতবর্ণ সোম! স্তুতি বাক্য তোমাকেই অর্শে। তোমাকে ক্ষীরের সহিত মিশ্রিত করা হইতেছে। এক্ষণে তুমি লোকে যাহা প্রার্থনা করে, এরূপ ধন ও অন্ন বিতরণ কর।
১৫। হে সোম! তোমার মূর্তি দীপ্তিশীল। বলশালী যজ্ঞকর্তা ব্যক্তিগণ তোমাকে সংগ্রহ করিয়াছেন, যজ্ঞের জন্য তোমার শোধন হইতেছে, তুমি এক্ষণে ইন্দ্রের নিকটে যাও।
১৬। সোমরসগুলি আকাশের দিকে প্রেরিত হইতেছে, অঙ্গুলি সহযোগে তাহাদিগকে উত্তোলন করা হইতেছে, তাহারা শীঘ্র শীঘ্র উৎপাদিত হইতেছে।
১৭। সোমগুলিকে শোধন করা হইতেছে। তাহাদিগের স্বভাবই গতি। তাহারা অক্লেশে আকাশের দিকে যাইতেছে। তাহারা জলপাত্রে যাইতেছে।
১৮। হে সোম! আমাদিগকে তুমি স্নেহ কর, আমাদিগের তাবৎ ধন সম্পত্তি নিজ বলে রক্ষা কর এবং আমাদিগকে লোকবল দাও এবং বাসের জন্য গৃহ দাও।
১৯। হে সোম! তুমি যেন একটা সুচারু গতিশীল ঘোটক। ঋত্বিকেরা তোমাকে যোজনা করিলে, তুমি পরিমাণপুৰ্ব্বক পাদন্যাস করিতে থাক, এইরূপে তুমি জলপাত্রে যাইয়া স্থিতি কর।
২০। দ্রুতগামী সোম যখন সুবর্ণময় যজ্ঞস্থলে উপবেশন করেন, তখন নির্বোধ লোকদিগের সহিত তাঁহার সম্পর্ক উঠিয়া যায়।
২১। সুশ্রী পুরুষেরা স্তব করিলেন। সুবোধ লোকে যজ্ঞের দিকে মন দেন, নির্বোধ লোকে তলাইয়া যায়।
২২। হে সোম! ইন্দ্রের পানের জন্য এবং তাহার সহচর মরুৎগণের পানের জন্য, তুমি অতি চমৎকার আস্বাদন ধারণপূর্বক ক্ষরিত হও, যজ্ঞের স্থানে উপবেশন কর।
২৩। হে সোম! যখন তুমি ক্ষরিত হও, তখন বচন রচনাকুশল ব্যক্তিগণ তোমাকে সুশোভিত করে। অন্যান্য লোকে তোমাকে শোধন করে।
২৪। হে কাৰ্যকুশল সোম! যখন তুমি ক্ষরিত হও, তখন মিত্ৰ, অর্য্যমা ও বরুণ ও আর আর তাবৎ দেবতা তোমার রস পান করেন।
২৫। হে সোম! শোধন কালে তুমিই স্তবকারীদিগকে এরূপ স্তুতিবাক্য উচ্চারণ করিতে প্রবৃত্ত কর, যাহা বুদ্ধিমত্তাসূচক এবং নানা প্রকার বাক্যালঙ্কারে সুশোভিত।
২৬। হে সোম! শোধন কালে তুমি আমাদিগের মুখে এরূপ বাক্য আনয়ন করিয়া দাও, যাহার রচনা অতি সুন্দর এবং যাহার উচ্চারণ করিয়া আমরা তোমার নিকট ধনের কামনা করিতে পারি।
২৭। হে সোম! বিস্তর লোকে তোমাকে ডাকিয়া থাকে। এই যজ্ঞে তুমি গোধন প্রাপ্ত হইয়া এই সকল ব্যক্তির প্রীতি উৎপাদন করিতে করিতে কলসের মধ্যে প্রবিষ্ট হও।
২৮। শুক্লবর্ণ সোমরসগুলি অত্যন্ত দীপ্তিশালী রূপধারণপূর্বক এবং ধারাসহযোগে শব্দ করিতে করিতে ক্ষীরের সহিত যাইয়া মিশ্রিত হইতেছে।
২৯। যেমন যোদ্ধারা বিপক্ষদিগের দর্শন পরিহারের জন্য বসিতে বসিতে গুড়ি মারিয়া গিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করে, তদ্রুপ দ্রুতগামী সোমরস সতর্কভাবে যজ্ঞে প্রবেশ করিলেন, কারণ যাহারা তাঁহাকে প্রস্তুত করেন, তাঁহারা তাহাকে চালাইয়া দিলেন।
৩০। হে সোমরস! তুমি কর্মকুশল, তুমি দীপ্তিমান ও বলশালী, তুমি দর্শন দাও, তুমি উপস্থিত হইয়া আমাদিগের মঙ্গল কর।