ঋগ্বেদ ০৮।০৯৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৯৭
ইন্দ্র দেবতা। রেভ ঋষি।
১। হে ইন্দ্র! তুমি সুখবান। তুমি অসুরগণের নিকট হইতে(১) যে ভোক্তব্য ধন আহরণ করিয়াছ, হে ধনবান্! তাহার দ্বারা স্তোত্রকারীকে বর্ধিত কর, উহারা বর্হিআস্তীর্ণ করিয়াছে।
২। হে ইন্দ্র! তুমি যে গো, যে অশ্ব এবং যে অবিনশ্বর ধন ধারণ কর, যজমান দক্ষিণাযুক্ত হইয়া সোমাভিষব করিলে তাহাকেই সেই ধনপ্রদান কর। যজ্ঞবিহীনকে প্রদান করিও না।
৩। অদেবাভিলাষী, ব্ৰতরহিত যে ব্যক্তি স্বপ্নাচ্ছন্ন হইয়া নিদ্রা যায়, সে আপনার গতিদ্বারাই পোষণীয় ধনবিনাশ করুক, তুমি তাহাকে কৰ্ম্মরহিত প্রদেশে স্থাপন কর।
৪। হে শক্র! হে বৃত্রহা! তুমি যে দূরদেশে থাক, বা যে নিকট দেশেই থাক, তথা হইতে, এই ভূলোক হইতে স্বর্গাভিমুখে কেশরবিশিষ্ট অশ্বের ন্যায়, এই স্তুতিদ্বারা অভিযুত সোমবান যজমান যজ্ঞে আনয়ন করিতেছে।
৫। হে ইন্দ্র! যদি স্বর্গের দীপ্ত স্থানে থাক, যদি সমুদ্রের মধ্যে কোন স্থানে থাক, হে বৃত্রহা! যদিবা পৃথিবীর কোন স্থানে থাক, অথবা অন্তরিক্ষে থাক, আগমন কর।
৬। হে সোমপা, বলপতি ইন্দ্র! সোম অভিযুত হইলে সুবাক্যযুক্ত, বহুপরিমিত ধনের দ্বারা ও বলসাধন অন্নের দ্বারা আমাদিগকে আনন্দিত কর।
৭। হে ইন্দ্র! আমাদিগকে পরিত্যাগ করিও না, আমাদের সহিত একত্র সোম পানে প্রমত্ত হও, তুমি আমাদিগকে রক্ষায় স্থাপন কর, তুমিই আমাদিগের বন্ধু। হেইন্দ্র! তুমি আমাদিগকে পরিত্যাগ করিও না।
৮। হে ইন্দ্র! আমাদের সহিত অভিযুত সোম মধুপানার্থ উপবেশন কর। হে মঘবা! স্তোতাকে মহারক্ষা প্রদান কর, অভিযুত সোমে আমাদের সহিত উপবেশন কর।
৯। হে বজ্রবান ইন্দ্র! দেবগণ তোমাকে ব্যাপ্ত করিতে পারে না, মর্ত্যগণও পারে না। তুমি বলদ্বারা সমস্ত ভূতজাতকে অভিভূত কর, দেবগণ তোমায় ব্যাপ্ত করিতে পারে না।
১০। সমস্ত সেনা পরস্পর মিলিত হইয়া শত্ৰু পরাজয় কর, নেতাকে তীক্ষ্ণ করিতেছে এবং অত্যন্ত প্রকাশার্থ সূৰ্য্যাত্মক ইন্দ্রকে সৃষ্টি করিতেছে, কৰ্ম্মদ্বারা বলিষ্ঠ ও শত্ৰুদিগের সম্মুখ বিনাশকারী, উগ্র, ওজস্বী, প্রবৃদ্ধ ও বেগবান ইন্দ্রকে বরণীয় ধনের জন্য স্তব করিতেছে।
১১। রেভগণ এই ইন্দ্রকে সোমপানাৰ্থ সম্যকরূপে স্তুতি করিয়াছিল। স্বর্গের পালক ইন্দ্রকে বর্ধনার্থ যখন স্তুতি করে, তখন কর্মধারী ইন্দ্র বলের দ্বারা এবং পালনের দ্বারা মিলিত হন।
১২। রেভগণ নেমির ন্যায় ইন্দ্রকে দর্শনমাত্রেই নমস্কার করে। মেধাবিগণ সেই মেষকে(২) স্তোত্রদ্বারা নমস্কার করে, তোমরা সুন্দর দীপ্তিযুক্ত, অদ্রোহী তোমরা ত্বরাযুক্ত হইয়া ইন্দ্রের কর্ণে অর্চনা মন্ত্রদ্বারা স্তব কর।
১৩। সেই মঘবান, উগ্র যথার্থ বলধারী, অপ্রতিরোনীয়, ইন্দ্রকে বারংবার আহ্বান করি। পূজ্যতম, যাগযোগ্য ইন্দ্র, আমাদের স্তুতিদ্বারা আবর্তিত হউন। বজ্রী ধনের জন্য সমস্তই আমাদের সুপথ করুন।
১৪। হে সৰ্ব্বাপেক্ষা বলবান্! হে শক্র! হে ইন্দ্র! তুমি এই সকল পুরী বলের দ্বারা বিনাশ করিবার জন্য অবগত হও। হে বজ্রী! সমস্ত ভূতজাত তোমার ভয়ে কম্পিত হয়, দ্যাবাপৃথিবীও কম্পিত হয়।
১৫। হে শূর! হে চিত্র ইন্দ্র! তোমার প্রশস্ত সত্য আমাকে রক্ষা করুক, হে বজবান ইন্দ্র! জলের ন্যায় বহুপাপ হইতে আমাদিগকে পার কর। হে রাজা ইন্দ্র! বহুরূপ এবং স্পৃহণীয় ধন আমাদের অভিমুখে কবে প্রদান করিবে।
————
(১) এখানেও বোধহয় অসুর অর্থে বলবান অনার্য্যগণ। অনার্য্যগণের নিকট হইতে ধন কাড়িয়া লইয়া তোমার উপাসক আর্য্যগণকে দাও, এই বোধহয় ঋকের মর্ম। নীচের ঋকে দুইটি যজ্ঞবিহীন এ দেববিহীন লোকের উল্লেখ দেখ।
(২) ইন্দ্র মেষ হইয়া মেধাতিথি ঋষিকে স্বর্গে লইয়া গিয়াছিলেন। সায়ণ গল্পটি বোধহয় ঋগ্বেদ রচনার পরে কল্পিত; ঋগ্বেদের কবি বোধহয় কেবল ইন্দ্রের যুদ্ধপ্রিয়তা, বা নরহিতকারিতা দেখিয়া মেষের সহিত তুলনা করিয়াছেন।