ঋগ্বেদ ০৮।০৪৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৪৮
সৌম দেবতা। কণ্বপুত্র প্রগাথ ঋষি।
১। আমি সুন্দর প্রজ্ঞাযুক্ত, সুন্দর অধ্যয়নবিশিষ্ট ও সুন্দর কৰ্ম্মবিশিষ্ট। আমি যেন অত্যন্ত পূজিত স্বাদু অন্নের আস্বাদন গ্রহণ করিতে পারি। বিশ্বদেবগণ ও মৰ্ত্ত্যগণ এই অন্ন মনোহর বলিয়া ইহাদিগের নিকটে উপস্থিত হন।
২। হে সোম! তুমি হৃদয় মধ্যে গমন কর, তুমি অদিতি, তুমি দেবগণের ক্ৰোধ পৃথক কর। হে ইন্দ্র! তুমি ইন্দ্রের সখ্যলাভ করিয়া শীঘ্র অশ্ব যেরূপ ভার বহন করে, সেইরূপ আমাদের ধন বহন কর।
৩। হে অমৃত সোম! আমরা তোমাকে পান করিব ও অমর হইব, পরে দ্যুতিমান স্বৰ্গে গমন করিব ও দেবগণকে অবগত হইব (১)। শত্রু আমাদের কি করিবে? আমি মনুষ্য, হিংসাকারী আমার কি করিবে?
৪। হে সোম! পিতা যেমন পুত্রের সখা, সেইরূপ আমরা তোমায় পান করিলে তুমি হৃদয়ের সুখকর হও। হে অনেকের প্রশংসিত সোম! তুমি বুদ্ধিমান, তুমি আমাদের জীবনাৰ্থ আয়ু প্রবৰ্দ্ধিত কর।
৫। এই যশস্কর, রক্ষাকরণাভিলাষী সোম পীত হইয়া গোসমূহকে যেরূপ পর্বে পর্বে রথ যোজনা করে, সেইরূপ পর্বে পর্বে আমাকে কৰ্ম্মে যোজিত করুক। আরও চরিত্রস্খলন হইতে আমাকে রক্ষা করুক এবং আমাকে ব্যাধি হইতে পৃথক করুক।
৬। হে সোম! তুমি পীত হইয়া, মথিত অগ্নির ন্যায় আমাকে দীপ্ত কর, আমাদিগকে বিশেষরূপে দর্শন কর, আমাদিগকে অতিশয় ধনবান কর। হে সোম! এক্ষণে তোমাকে আনন্দার্থ স্তব করিতেছি, অতএব তুমি ধন্যবান হইয়া পুষ্টি প্রাপ্ত হও।
৭। আমরা অভিলাষযুক্ত মনে পৈতৃক ধনের ন্যায় অভিযুত সোম পান করিব, হে রাজা সোম! তুমি আমাদের আয়ু বর্ধিত কর। সূর্য এইরূপে দিবস সকলকে বর্ধিত করেন।
৮। হে রাজা সোম! আমাদিগকে স্বস্তির জন্য সুখী কর, আমরা ব্রতযুক্ত, আমরা তোমারই হইব। তুমি আমাদিগকে অবগত হও। হে ইন্দ্র! আমাদের শত্রু প্রবৃদ্ধ হইয়া গমন করিতেছে, ক্রোধও গমন করিতেছে। এই উভয় শত্রুরই দণ্ড হইতে আমাদিগকে উদ্ধার কর।
৯। হে সোম! তুমি আমাদিগের শরীরের রক্ষক, তুমি কর্মনেতা, অতএব তুমি গাত্রে গাত্রে নিষন্ন হও। আমরা যদিও তোমার ব্রতের বিঘ্ন করি, তথাপি হে দেব! তুমি উৎকৃষ্ট অন্নযুক্ত ও উত্তম সখা হইয়া আমাদিগকে সুখী কর।
১০। হে সোম! তুমি উদরের পীড়া জন্মাইও না, তুমি সখা, আমি তোমার সহিত মিলিত হইব। সোম পীত হইয়া আমাকে হিংসা করিবেন না। হে হরিনামক অশ্বযুক্ত ইন্দ্র! এই যে সোম আমাতে নিহিত হইয়াছে, ইহারই জন্য চিরকাল জঠরে অবস্থান প্রার্থনা করিতেছি।
১১। সেই সকল চিকিৎসার অসাধ্য কঠিন পীড়া অপগত হউক, এই সকল পীড়া বলবান হইয়া আমাদিগকে একান্ত কম্পিত করিতেছে। মহান সোম আমাদিগকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, ইহা পান করিলে আয়ু বর্ধিত হয়, আমরা মনুষ্য, আমরা ইহার নিকট গমন করিব।
১২। হে পিতৃগণ! যে সোম পীত হইলে মরণরহিত হইয়া, আমরা মর্ত্য, আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে, হব্যদ্বারা সেই সোমের পরিচর্য্যা করিব, অতএব উহার অনুগ্রহ বুদ্ধিতে অনুগ্রহ লাভ করিয়া সুখী হইব।
১৩। হে সোম! তুমি পিতৃগণের সহিত মিলিত হইয়া দ্যাবাপৃথিবীকে বিস্তীৰ্ণ করিয়াছ, আমরা হব্যদ্বারা এই সোমের পরিচর্য্যা করিব, আমরা ধনের পতি হইব।
১৪। হে ত্ৰাণকর্তা দেবগণ! আমাদিগকে মিষ্টবাক্য বল, স্বপ্ন আমাদের যেন বশীভূত না করে, নিন্দকগণ যেন আমাদের নিন্দা না করে, আমরা যেন সৰ্ব্বদা সোমের প্রিয় হই, যেন সুন্দর স্তোত্ৰযুক্ত হইয়া স্তোত্র উচ্চারণ করিতে পারি।
১৫। হে সোম! তুমি সকল দিক হইতে আমাদের অন্নদাতা, তুমি স্বর্গদাতা ও সর্বদর্শী, তুমি প্রবেশ কর। হে ইন্দ্র! তুমি একত্রে প্রীতিযুক্ত হইয়া রক্ষার সহিত পশ্চাতভাগে ও সন্মুখভাগে আমাদিগকে রক্ষা কর।
————
(১) মূলে এইরূপ আছে, “অপাম সোমং অমৃতাঃ অভূম অগম্য জ্যোতিঃ অবিদাম দেবান।“ সোম পান করিয়া জ্যোতিঃ স্বর্গে গমন করিবার কথা এখানে আছে।