ঋগ্বেদ ০৮।০৪১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৪১
বরুণ দেবতা। নাভাক ঋষি।
১। হে স্তোতা! প্রভূত ধনলাভার্থ এই বরুণের ও অতিশয় বিদ্বান মরুৎগণের উদ্দেশে স্তব কর। বরুণ কৰ্ম্মদ্বারা মনুষ্যগণের পশু সকলকে গোসমূহের ন্যায় রক্ষা করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করেন (১)।
২। আমি সেই বরুণকেই সমান স্তুতির দ্বারা স্তব করিতেছি, পিতৃগণের স্তোমদ্বারা স্তব করিতেছি, নাভাক ঋষির স্তুতিদ্বারা স্তব করি। তিনি নদীসমূহের নিকটে উদগত হন, তাঁহার সপ্তস্বসা, তিনি মধ্যম। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৩। সেই বরুণ রাত্রিকে আলিঙ্গন করেন, তিনি দর্শনীয়, তিনি ঊৰ্দ্ধে গমন করত মায়াদ্বারা সমস্ত জগৎ ধারণ করেন, তাঁহার কর্মাভিলাষী প্রজাগণ তিন ঊষা বর্দ্ধিত করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৪। যে বরুণ পৃথিবীর উপরে দিক সকল ধারণ করেন, তিনি দর্শনীয় নিৰ্ম্মাণকারী। প্ৰাচীন পদ (২) এবং যে পদে আমরা বিচরণ করি এ উভয়েই বরুণের। তিনিই ঈশ্বর হইয়া আমাদের গোসমূহ রক্ষা করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৫। যিনি ভুবনসমূহের ধারক, যিনি রশ্মিসমূহের অন্তর্হিত গুহ্য নাম জানেন, সেই বরুণ কবি হইয়া অনেক কবির কৰ্ম্মস্বরূপ দ্যুলোককে পোষণ করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৬। সমস্ত কবি কৰ্ম্মচক্রের নাভির ন্যায় যে বরুণকে আশ্রয় করিয়াছে, সেই স্থানত্রয়বিশিষ্ট বরুণের শীঘ্র পরিচর্যা কর। গোষ্ঠে যেরূপ গো গমন করে, সেইরূপ আমাদের পরিভবার্থ যুদ্ধের জন্য শত্রুগণ অশ্ব যাজনা করিতেছে। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৭। বরুণ এই দিকসমূহে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন তিনি শত্রুগণের সমস্ত ব্যাপ্তনগর বিনাশ করেন, তাহার রথের সন্মুখে সমস্ত দেবগণ কৰ্ম্মানুষ্ঠান করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৮। সেই সমুদ্রস্বরূপ বরুণ অন্তর্হিত হইয়া শীঘ্র আদিত্যের ন্যায় স্বৰ্গে আরোহণ করেন এবং এই দিকসমূহে প্রজাদিগকে দান প্রদান করেন। তিনি দ্যুতিমান পদদ্বারা মায়া নাশ করেন ও স্বর্গে গমন করেন। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
৯। অন্তরীক্ষ অধিবাসী যে বরুণের শ্বেতবর্ণ বিচক্ষণ তেজত্রয় তিন ভুবনে প্রথিত হয়, সেই বরুণের স্থান অচল, তিনি সপ্ত সিন্ধুর ঈশ্বর। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।
১০। যিনি নিজ রশ্মিসমূহকে শ্বেতবর্ণ করেন এবং কৃষ্ণবৰ্ণ করেন, তাহার কৰ্ম্মের উদ্দেশে দ্যুলোক ও অন্তরিক্ষলোক নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। আদিত্য যেরূপ দ্যুলোক ধারণ করেন, সেইরূপ তিনি অন্তরিক্ষ দ্বারা দ্যাৰা পৃথিবী ধারণ করিয়াছেন। তিনি সমস্ত শত্ৰু হিংসা করুন।
————
(১) ৩৯, ৪০ ও ৪১ সূক্তের প্রায় প্রত্যেক ঋকের শেষে “নভস্তাং অন্যকে সাম” শব্দগুলি আছে। ৪১ সূক্তেও সায়ণ ইন্দ্র ও অগ্নি সম্বন্ধে এই শব্দগুলির অর্থ করিয়াছেন। কিন্তু ৪১ সূক্তে অগ্নি বা ইন্দ্রের উল্লেখ আদৌ নাই।
(২) স্বর্গ। সায়ণ।