ঋগ্বেদ ০৮।০২৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২৪
ইন্দ্র দেবতা; শেষ তিনটি ঋকের সুষাম রাজার পুত্র বরুর দানের স্তুতি আছে, অতএব উহাই দেবতা। ব্যশ্বপুত্র বৈয়খ নামক ঋষি।
১। হে মিত্রভূত ঋত্বিকগণ! বজ্রহস্ত ইন্দ্রের উদ্দেশে এই স্তোত্র করিব। তোমাদের জন্য সৰ্ব্বাপেক্ষা নেতা সর্বাপেক্ষা শ্ত্রুধর্ষক ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তুতি করিব।
২। হে ইন্দ্র! তুমি বলদ্বারা বিখ্যাত, বৃত্রকে হনন করতঃ বৃত্রহা হইয়াছ, তুমি সূর, তুমি ধনদ্বারা ধনবান ব্যক্তিদিগেরও অধিক দান করিয়া থাক।
৩। হে ইন্দ্র! তুমি স্তূয়মান হইয়া নানাবিধ বিচিত্র অন্নবিশিষ্ট ধন আমাদিগকে প্রদান কর। হে অশ্ববিশিষ্ট ইন্দ্র! তুমি নির্গমন কালেই শত্রুগণের বাসপ্রদ হও।
৪। হে ইন্দ্র! তুমি আমাদের জন্য ধন প্রকাশ কর। হে শত্ৰুনাশক! তুমি স্তূয়মান হইয়া সাহঙ্কার মনে সেই ধন আমাদিগকে প্রদান কর।
৫। হে অশ্ববান ইন্দ্র! প্রতি, যোদ্ধাগণ গোসমূহের অন্বেষণ বিষয়ে তোমার দক্ষিণ হস্ত নিবারণ করে না, বাম হস্তও নিবারণকরে, প্রতিরোধকারিগণও করে না।
৬। হে বজ্রবান ইন্দ্র! স্তুতিবাক্য দ্বারা তোমাকে প্রাপ্ত হইব, এইরূপে লকে গোসমূহের সঙ্গে গোষ্ঠ প্ৰাপ্ত হয়। তুমি স্তোতার অভিলাষ পুৰ্ণ কর, তাহার মানসপুর্ণ কর।
৭। হে ইন্দ্র! তুমি সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক শত্ৰুনাশ করিয়াছ, হে উগ্র বাসপ্রদ ও ধনপ্রদ! বিশ্বমনা নামক ঋষির সমস্ত কৰ্ম্মে উপস্থিত হও।
৮। হে বৃত্রহা! হে শূর হে পুরূহূত ইন্দ্র! নূতন স্পৃহণীয়, গৃহপ্রদ, এই ধন আমরা লাভ করিব।
৯। হে সকলের নর্তয়িতা ইন্দ্র! তোমার বল শত্রুগণ অভিভব করিতে পারে না। হে পুরুহূত! তুমি হব্যদায়ীকে যে দান কর, তাহা কেহ হিংসা করিতে পারে না।
১০। হে অতিশয় পূজনীয়, শ্রেষ্ঠনেতা ইন্দ্র! মহাফসলাভার্থ উদর সিক্ত কর। হে মঘবা! তুমি দৃঢ় শত্রুপুর সকল ধন লাভার্থ নষ্ট কর।
১১। হে বজ্রবান মঘবা ইন্দ্র! আমরা পূর্বে তোমা ভিন্ন অন্য দেবগণের নিকট আশা করিয়াছিলাম। তোমার ধন ও রক্ষা আমাদিগকে প্রদান কর।
১২। হে নৰ্ত্তয়িতা, স্ততিভাক ইন্দ্র! অন্ন, দ্যুতিমান, যশ ও বললাভার্থ তোমা ভিন্ন আর কাহারও কাছে যাইব না।
১৩। তোমরা ইন্দ্রের উদ্দেশেই সোম সিঞ্চন কর, তিনি সোমময় মধুপান করেন, তিনি আপনার মহত্ব ও অন্নের সহিত ধনাদি প্রেরণ করেন।
১৪। হরিগণের অধিপতি ইন্দ্রের স্তব করি। তিনি আপনার বল অঙ্গকে প্রদান করেন, তুমি স্তোত্রকারী ব্যশ্ব ঋষির পুত্রের স্তুতি শ্রবণ কর।
১৫। হে ইন্দ্র! পূৰ্বকালে তোমা অপেক্ষা অধিক ধনবান, সামৰ্থ্যবান, আশ্রয়দাতা এবং স্তুতিবিশিষ্ট আর কেহ জন্মে নাই।
১৬। হে অধ্বর্য্যু! তুমি মদকরন্নের সর্বাপেক্ষা মদকর অংশ ইন্দ্রে জন্য সেক কর, এই বীর ও বর্ধনশীল ইন্দ্রকেই লোকে স্তব করে।
১৭। হে হরিগণের অধিষ্ঠাতা ইন্দ্র! তোমার পূর্বকালীন স্তুতি সকলকেই বলদ্বারা অথবা ধন আছে বলিয়া অতিক্রম করিতে পারে না।
১৮। আমরা অন্নাভিলাষী হইয়া যে সকল যজ্ঞের ঋত্বিকগণ প্রমাংরস্ত হয় না, সেই যজ্ঞের দ্বারা দর্শনীয় অন্নপতি ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি।
১৯। হে মিত্রভূত ঋত্বিকগণ! তোমরা শীঘ্র আগমন কর, স্তুতিযোগ্য নেতা ইন্দ্রকে স্তুতি করিব। এই ইন্দ্র একাকীই সমস্ত শক্রসেনা অভিভব করেন।
২০। হে ঋত্বিকগণ! যে ইন্দ্র স্তুতি রোধ করেন না, স্তোত্র অভিলাষ করেন, সেই দীপ্তিশালী ইন্দ্রের উদ্দেশে ঘৃত ও মধু অপেক্ষাও স্বাদু অত্যন্ত মিষ্ট বাক্য বল।
২১। যে ইন্দ্রের বীরকর্ম অপরিমিত, যাহার ধন শত্রুগণ পাইতে পারে না এবং যাহার দান জ্যোতির ন্যায় সমস্ত স্তোতাগণকে বযাপ্ত করে।
২২। সেই অহিংসনীয়, বলবান, স্তোতাগণকর্তৃক নিয়ন্ত্ৰিত ইন্দ্রকে ব্যশ্ব ঋষির ন্যায় স্তব কর। স্বামী ইন্দ্র হব্যদায়ীকে প্রশস্ত গৃহ বিতরণ করেন।
২৩। হে বৈয়শ্ব মনুষ্যগণের দশম (১), অতএব নুতন সুবিদ্বান, সর্বদা নমস্কারযোগ্য ইন্দ্রকে স্তুতি কর।
২৫। অতএব হে দর্শনীয় ইন্দ্র! কৰ্ম্মকারী যজমানের জন্য আমাদিগকে তোমার আশ্রয় দান কর। কুৎস নামক ঋষির জন্য দুই প্রকারে শত্ৰুগণকে বধ করিয়াছ। আমাদিগকে সেই রক্ষা প্রদান কর।
২৬। হে অতিশয় দর্শনীয় ইন্দ্র! তুমি স্তোতব্য, তোমারই নিকট গচ্ছিত রাখিবার জন্য ধন যাচঞা করিতেছি, তুমি আমাদের সমস্ত শত্রুসেনার অভিভবকারী হও।
২৭। যিনি রাক্ষসকৃত পাপ হইতে মুক্ত করেন, যিনি সপ্তনদীতে আর্য্যদিগকে প্রেরণ করেন, হে বহুধন! দাসের বধার্থ অস্ত্র অবনত কর (২)।
২৮। হে বরুরাজা! সুষমারাজার উদ্দেশে পূৰ্বকালে যেরূপ যাচকগণকে ধন দিয়াছিলে, সেইরূপ এক্ষণে ব্যশ্বকে প্রদান কর। হে সৌভাগ্যশালিনী অন্নবতী ঊষা! তুমিও ধন দান কর।
২৯। হে মনুষ্যগণের হিতকর সোমবান! যজমানের দক্ষিণা সোমবিশিষ্ট ব্যশ্বপুত্রের নিকট আগমন করুক। শতসহস্র সংখ্যাবিশিষ্ট স্থূল ধন আমাদের নিকট আগমন করুক।
৩০। হে ঊষাদেবি! যাহারা “কোথায়”এই কথা জিজ্ঞাসা করে, তাহারা তোমার অগ্রবৰ্ত্তী। তোমাকে যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে, “কোথায়”, তাহা হইলে সকলের আশ্বয়স্বরূপ, শত্রুনিবারক এই বরুরাজা গোমতীতীরে অবস্থান করিতেছে, এই কথা বলিও। (৩)
————
(১) মনুষ্যগণের দেহে নয়টি প্রাণ আছে, ইন্দ্র তাহাদের দশম প্রাণ। সায়ণ। এ ব্যাখ্যা সঙ্গত বোধ হয় না।
(২) এই ঋকে সপ্তনদীর উল্লেখ আছে। ১০।৭৫।৫ ঋকের টীকা দেখ। এবং দাস অর্থাৎ অনার্য্য বর্বরদিগের উল্লেখ আছে।
(৩) সুষাম রাজার পুত্র বরুরাজা গোমতী অর্থাৎ আধুনিক গমাল নদীতীরে বাস করিতেন।