ঋগ্বেদ ০৮।০২৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২৩
অগ্নি দেবতা। বাশ্বের পুত্র বিশ্বমনা ঋষি।
১। অগ্নি শত্রুর বিরুদ্ধে গমন করেন, সেই অগ্নিকে স্তুতি কর। যাহার দীপ্তি কেহ গ্রহণ করিতে পারে না; যাহার ধূম সৰ্ব্বতঃ সঞ্চারিত হয়, সেই অগ্নির পূজা কর।
২। হে সৰ্ব্বাৰ্থদৰ্শী বিশ্বমনা ঋষি! মাৎসৰ্য্যশূন্য যজমানের জন্য রথাদিদাতা অগ্নিকে বাক্যদ্বারা স্তব কর।
৩। শত্রুদিগের বাধাপ্রদ এবং ঋকসমূহের দ্বারা অৰ্চনীয় অগ্নি যাহাদিগের অন্ন ও সোম রস জ্ঞানপূর্বক গ্রহণ করেন, তাহারা ধন লাভ করে।
৪। অত্যন্ত দীপ্তিমান, সন্তাপপ্রদ, দণ্ডবিশিষ্ট, সুন্দর দীপ্তিশালী ও যজমানগণের আশ্ৰিত অগ্নির জরারহিত নুতন তেজ উদগত হইল।
৫। হে সুন্দর যজ্ঞবিশিষ্ট অগ্নি! সম্মুখভাগে বৃহৎ দীপ্তিদ্বারা সুশোভিত হইয়া এবং স্তূয়মান হইয়া, তুমি দ্যুতিমতী শিখার সহিত উদগত হও।
৬! হে অগ্নি! দেবগণকে হব্যের পর হবা প্রদান করতঃ সুন্দর স্তোত্রের সহিত গমন কর। যেহেতু তুমি হব্যবাহী দূত।
৭। মনুষ্যদিগের হোমনিষ্পাদক পুরাতন অগ্নিকে আহ্বান করিতেছি, তাঁহাকে এই বাক্যদ্বারা প্রশংসা করিতেছি। তোমাদের জন্যই তাহাকে স্তব করিতেছি।
৮। অদ্ভুত প্রজাবিশিষ্ট, বন্ধুবিশিষ্ট এবং তৃপ্তিযুক্ত অগ্নির প্রসাদে যজ্ঞ এবং সামর্থ্যপ্রযুক্ত দক্ষবিশিষ্ট যজমানের মনকামনা পূর্ণ হয়।
৯। হে যজ্ঞাভিলাষিগণ! এই যজ্ঞের সাধন যজ্ঞাবান অগ্নিকে হব্যযুক্ত যজ্ঞে স্তুতিবাক্য দ্বারা সেবা কর।
১০। আমাদের সুনিয়মবদ্ধ যজ্ঞ সকল অঙ্গীরা অগ্নির অভিমুখে গমন করুক। ইনি মনুষ্যগণের মধ্যে হোমনিষ্পাদক ও অত্যন্ত যশস্বী!
১১। হে জরারহিত অগ্নি! তোমার দীপ্যমান বৃহৎ রশ্মি সকল অভীষ্টবর্ষী হইয়া অশ্বের ন্যায় বল প্রকাশ করিতেছে।
১২। হে বলপতি! তুমি আমাদের উদ্দেশ্যে উত্তম বীর্য্যযুক্ত ধন দান কর। আমাদের পুত্র পৌত্রে যে ধন আছে তাহা যুদ্ধ কালে রক্ষা কর।
১৩। মনুষ্যগণের পালক তীক্ষ্ণ অগ্নি প্ৰীত হইয়া যখনই মানুষ্যের গৃহে অবস্থিত হন, তখনই তিনি সমস্ত রাক্ষসকে বিনাশ করেন।
১৪। হে বীর লোকপতি অগ্নি! আমার নূতন স্তোত্র শ্রবণ করিয়া মায়াবী রাক্ষসগণকে তাপপ্রদ তেজোদ্বারা দগ্ধ কর।
১৫। যে হব্যদায়ী ঋত্বিকগণের দ্বারা অগ্নিকে হব্য প্রদান করে, মনুষ্যশত্রু তাহাদ্বারাও তাঁহাকে বশ করিতে পারে না।
১৬। আপনাকে ধনবর্ষী করিতে ইচ্ছা করিয়া ব্যশ্ব নামক ঋষি তোমাকে প্রীত করিয়াছিলেন। যেহেতু তুমি ধনপ্রদ। আমরাও প্রচুর ধনলাভের জন্য তাঁহাকে সন্দীপিত করি।
১৭। তুমি যজ্ঞশীল, কবিপুত্র, জাতবেদা, মনুর গৃহে উশনা তোমাকে হোতারূপে উপবেশন করাইয়া ছিলেন(১)।
১৮। হে অগ্নি! বিশ্বদেবগণ মিলিত হইয়া তোমাকেই দূত করিয়াছিলেন। হে দেব অগ্নি! তুমি প্রধান, তুমি তৎক্ষণাৎ যজ্ঞার্হ হইয়াছিলে।
১৯। অমর ও পাবক ও কৃষ্ণবর্ষ্মা ও তেজোবিশিষ্ট এই অগ্নিকে বীরমনুষ্য দূত করিয়াছে।
২০। আমরা স্রকৃ গ্রহণ করত সুন্দর দীপ্তিযুক্ত, শুভ্রবর্ণ, তেজোবিশিষ্ট মনুষ্যগণের স্তুতিযোগ্য ও জরারহিত অগ্নিকে আহ্বান করিতেছি।
২১। যে মনুষ্য হব্যদায়িগণের দ্বারা অগ্নিকে আহুতি প্রদান করে, সে প্রচুর পুষ্টিকর বীব্রবিশিষ্ট অন্নলাভ করে।
২২। দেবগণের প্রথম ও জাতবেদা ও পুরাতন অগ্নির নিকট হব্যযুক্ত শ্রুক নমস্কারপূর্বক আগমন করিতেছে।
২৩। আমি বিশ্বমনা ব্যশ্বের ন্যায় স্তুতিদ্বারা প্রশস্যতম, পূজ্যতম ও শুভ্রদীপ্তিযুক্ত অগ্নির পরিচর্য্যা করিতেছি।
২৪। হে ব্যশ্বপুত্র ঋষ! তুমি স্থূল যুপের ন্যায় গৃহভব, মহান অগ্নিকে স্তোত্রদ্বারা অৰ্চনা কর।
২৫। মেধাবিগণ মনুষ্যগণের অতিথি ও বনস্পতিগণের পুত্র, পুরাতন অগ্নিকে রক্ষার্থ স্তব করিতেছে।
২৬। হে অগ্নি! সমস্ত প্রধান স্তোতাগণের সম্মুখে তুমি কুশোপরি উপবিষ্ট হও। তুমি স্তুতিযোগ্য, তুমি মনুয্যপ্রদত্ত হব্য স্বীকার কর।
২৭। হে অগ্নি! বরণীয় বহু ধন আমাদিগকে প্রদান কর। বহুলোকের স্পৃহণীয়, সুন্দর বীৰ্য্যবিশিষ্ট পুত্র পৌত্ৰাদি সহিত কীৰ্ত্তিযুক্ত ধন আমাদিগকে দান কর।
২৮। তুমি বরণীয়, বাসপ্রদ ও যুবা। যাহারা সুন্দর সাম গান করে, তাহাদের উদ্দেশে সৰ্ব্বদা ধনাদি প্রেরণ কর।
২৯। হে অগ্নি! তুমি অত্যন্ত দাতা, তুমি পশুযুক্ত অন্ন, মহাধন ও মহাভোগ আমাদিগকে প্রদান কর।
৩০। হে অগ্নি! তুমি যশস্বী, তুমি সত্যবান, সম্যক শোভমান ও পবিত্র বলযুক্ত মিত্র ও বরুণকে আনয়ন কর।
————
(১) সায়ণ উশনাকে ঋষি ও মনুকে রাজা বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন।