ঋগ্বেদ ০৮।০১৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ১৯
ষড়বিংশ ও সপ্তবিংশের ত্রসদস্যু রাজার দান দেবতা; ৩৪ ও ৩৫ ঋকের আদিত্য দেবতা; অবশিষ্টের অগ্নি দেবতা। কণ্বগোত্রীয় সোভরি ঋষি।
১। হে স্তোতা! প্রসিদ্ধ অগ্নির স্তব কর, তিনি হব্য স্বৰ্গে লইয়া যান; ঋত্বিকগণ স্বামী অগ্নিদেবের নিকট গমন করেন এবং দেবগণকে হব্য প্রদান করেন।
২। হে মেধাবী সোভরি! বিভূত দানবিশিষ্ট, বিচিত্র দীপ্তিমান সোমসাধ্য এই যজ্ঞের নিয়ন্তা এই পুরাতন অগ্নিকে যাগ করিবার জন্য স্তুতি কর।
৩। হে অগ্নি! তুমি যাজ্ঞিক শ্রেষ্ঠ, দেবগণের মধ্যে দেব, হোতা, অমর এবং এই যজ্ঞের সুকর্তা; আমরা তোমার ভজনা করি।
৪। অন্নের প্রদানকারী, সুভগ, সুদীপ্তিকারী, উৎকৃষ্ট জ্বালাযুক্ত অগ্নিকে স্তব করি। তিনি আমাদের জন্য দ্যুলোকে মিত্র ও বরুণের সুখ লক্ষ্য করিয়া এবং জলদেবতাগণের সুখার্থ যজ্ঞ করুন।
৫। যে মনুষ্য সমিধ দ্বারা অগ্নির পরিচর্য্যা করে, যে আহুতিদ্বারা ও বেদদ্বারা পরিচর্য্যা করে, যে সুন্দর যজ্ঞবিশিষ্ট হইয়া নমস্কার দ্বারা পরিচর্য্যা করে।
৬। তাহারই ব্যপ্তিশীল অশ্বগণ বেগবান হয়, তাহারই যশঃ সৰ্ব্বাপেক্ষা দীপ্ত হয়, দেবকৃত ও মর্ত্যকৃত পাপ তাহার নিকট যাইতে পারে না।
৭। হে বলের পুত্র! হে অন্নপতি! ভোমার অঙ্গভূত অগ্নি সমূহের দ্বারা উত্তমাগ্নিযুক্ত হইব। তুমি সুবীর, তুমি আমাদিগকে কামনা করা।
৮। প্রশংসাকারী অতিথির ন্যায় অগ্নি স্তোতাগণের হিতকর, রথের ন্যায় ফলপ্রাপক। হে অগ্নি! তোমাতে উৎকৃষ্ট ক্ষেমসমূহ আছে, তুমি ধনের রাজা।
৯। হে সুভগ অগ্নি! যে মনুষ্য যজ্ঞ করে, সে সত্যফল প্ৰাপ্ত হউক, সে প্রশংসনীয় হউক, সে স্তোত্রদ্বারা ভজনাশীল হউক।
১০। হে অগ্নি! যাহার যজ্ঞের জন্য তুমি উৰ্দ্ধ হইয়া থাক, সে নিবাসশীল বীরযুক্ত হইয়া সিদ্ধি প্ৰাপ্ত হয়, সে অশ্বের দ্বারা জয় ভোগ করে, সে প্রশংসনীয় হউক, সে মেধাবী ও বীরগণের সহিত মিলিত হয়।
১১। বিশ্বের বরণীয়, রূপবান অগ্নি যাহার গৃহে স্তোত্র এবং অন্ন ধারণ করেন, তাহার হব্য দেবগণে ব্যাপ্ত হয়।
১২। হে বলের পুত্র বসু অগ্নি! মেধাবী অথবা স্তোতার হব্য দানে ত্বরাবান অভিজ্ঞ ব্যক্তির বাক্য দেবগণের নিয়ে এবং মর্ত্যগণের উপরি ব্যাপ্ত কর।
১৩। যে হব্য দান ও নমস্কারের দ্বারা শোভন বলযুক্ত অগ্নির পরিচর্য্যা করে, অথবা স্তুতিদ্বারা ক্ষিপ্রগামী তেজোবিশিষ্ট অগ্নির পরিচর্য্যা করে, সে সমৃদ্ধ হয়।
১৪। যে মনুষ্য এই অগ্নির অবয়বের সহিত অখণ্ডনীয় অগ্নিকে সমিধের দ্বারা পরিচর্য্যা করে, সে কৰ্ম্মের দ্বারা সৌভাগ্যবান হইয়া দ্যোতমান অন্নদ্বারা জলের ন্যায় সমস্ত লোককে অতিক্রম করে।
১৫। হে অগ্নি! যে ধন গৃহে রাক্ষসদিগকে অভিভূত করে এবং পাপবুদ্ধি ব্যক্তির ক্ৰোধ অভিভূত করে, সেই ধন আহরণ কর।
১৬। যে অগ্নির তেজের দ্বারা বরুণ, মিত্র ও অর্য্যমা আলোক দান করেন, নাসত্যদ্বয় এবং ভগ যাঁহার দ্বারা আলোক দান করেন, আমরা বলের দ্বারা সর্বাপেক্ষা অধিক স্তোত্রজ্ঞ হইয়া এবং ইন্দ্রকর্তৃক রক্ষিত হইয়া, হে অগ্নি! তোমার সেই তেজের পরিচর্য্যা করি।
১৭। হে মেধাবী দ্যুতিমান অগ্নি! যে মেধাবিগণ মনুষ্যদিগের সাক্ষিস্বরূপ সুন্দরকৰ্ম্মযুক্ত অগ্নিকে ধারণ করে, তাহারাই উৎকৃষ্ট ধ্যানযুক্ত হয়।
১৮। হে সুভগ! তাহারাই তোমার জন্য বেদী প্রস্তুত করে, আহুতি প্রদান করে দ্যুতিমান দিনে অভিষবার্থ উদ্যোগ করে, তাহারাই বলের দ্বারা প্রভূত ধন লাভ করে,তাহারাই তোমাতে অভিলাষ প্ৰাপ্ত হয়।
১৯। আহূত অগ্নি আমাদের কল্যাণকর হউন। হে সুভগ অগ্নি! তোমার দান কল্যাণকর হউক। যজ্ঞে কল্যাণকর হউক, স্তুতি কল্যাণকর
২০। হে অগ্নি! সংগ্রামে মন কল্যাণকর কর, তুমি এই মনের দ্বারা সংগ্রামে শত্রুগণকে পরাজিত কর, অভিভবকারী শত্রুদিগের প্রভূত ও স্থির বল পরাজিত কর, আমরা অভিগমনসাধন হব্যের দ্বারা তোমার ভজনা করিব।
২১। আমরা স্তুতিদ্বারা মনুকর্তৃক আহিত অগ্নিকে পূজা করি, তিনি সর্বাপেক্ষা যজ্ঞকারী, হব্যবাহন, ঈশ্বর ও দূতরূপে দেবগণকর্তৃক প্রেরিত হন।
২২। তীক্ষ্ণ জ্বালাবিশিষ্ট, নিত্যতরুণ, শোভমান অগ্নির উদ্দেশে, হে স্তোতা! অন্নবিষয়ে গান কর। অগ্নি সুনৃত বাক্যদ্বারা স্তুত ও ঘৃতদ্বারা আহুত হইয়া স্তোতাকে শোভন বীৰ্য্যদান করে।
২৩। ঘৃতের দ্বারা আহুত অগ্নি যখন ঊৰ্দ্ধে এবং নিম্নে শব্দ সম্পাদন করেন, তখন অসুর(১) সূৰ্য্যের ন্যায় আপনার রূপ প্রকাশ করেন।
২৪। যে মনুকর্তৃক আহিত দ্যোতমান অগ্নি সুগন্ধি মুখের দ্বারা হব্য প্রেরণ করেন, সুন্দর যজ্ঞবিশিষ্ট, দেবহোতা, দীপ্তিমান, মরণরহিত সেই অগ্নি ধনের পরিচর্য্যা করেন।
২৫। হে বলের পুত্র আহূত, অনুকুলদীপ্তিবিশিষ্ট অগ্নি! আমি (২) মৰ্ত্ত, আমি যেন তুমি হইতে পারি।
২৬। হে বসু! তোমাকে মিথ্যাপবাদের জন্য তিরস্কার করিব না, হে সত্য! তোমায় পাপের জন্য তিরস্কার করিব না। আমার স্তোতা অনভিমত বচন দ্বারা তোমার প্রতি আক্রোশ করিবে না। দুর্বুদ্ধিশত্রু যেন আমাদের না হয়, সে যেন পাপ বুদ্ধিদ্বারা আমাদের বাধা দিতে না পারে।
২৭। পুত্র পিতার উদ্দেশ্যে যেরূপ করে, আমাদের পোষক অগ্নি যজ্ঞগৃহে দেবগণের উদ্দেশ্যে সেইরূপ আমাদের হব্য প্রেরন করেন।
২৮। হে বসু! তোমায় নিকটবর্তী রক্ষাদ্বারা, আমি মর্ত্য, আমি যেন সর্বদা প্রীতি সেবা করিতে পারি।
২৯। হে অগ্নি! তোমায় পরিচর্য্যা দ্বারা তোমার ভজনা করিব, তোমায় হব্যদান দ্বারা ও তোমার প্রশংসাদ্বারা তোমার ভজনা করিব, হে বসু! তুমি প্রকৃষ্টবুদ্ধি, তোমাকেই আমার রক্ষক বলিয়া বলে। হে অগ্নি! দানার্থ হৃষ্ট হও।
৩০। হে অগ্নি! তুমি যাঁহার সখ্য গ্রহণ কর, তোমার বীরযুক্ত এবং অন্নপূর্ণ রক্ষাদ্বারা সে প্রবৰ্দ্ধিত হয়।
৩১। হে সোমসিক্ত, দ্রবণবান, নীড়বান, কমনীয়, ঋতুজাত দীপ্ত অগ্নি! তোমার জন্য সোম গৃহীত হইতেছে; তুমি মহতী ঊষাসমূহের প্রিয়, রাত্রিকালের বস্তুতে প্রকাশিত হও।
৩২। সোভরিগণ রক্ষার্থ অগ্নির নিকট গমন করিতেছে, তিনি সহস্র তেজোবিশিষ্ট, সম্রাট এবং ত্রসদস্যুর স্তুত ও সুন্দররূপে আগমন করেন।
৩৩। হে অগ্নি! অন্য অগ্নি সকল তোমার শাখাসদৃশ নিকটে থাকে মনুষ্যগণের মধ্যে আমি তোমার বল স্তুতিদ্বারা বর্ধিত করতঃ অন্য স্তোতার ন্যায় দ্যোতমান অন্ন প্রাপ্ত হইব।
৩৪। হে দ্রোহরহিত, উত্তম দানবিশিষ্ট আদিত্যগণ! সমস্ত হবিষ্মানগণের মধ্যে যাহাকে পারে লইয়া যাও সেই ফল লাভ করে।
৩৫। হে শোভমান, শত্রুগণের অভিভবিতা আদিত্যগণ! তোমরা মনুষ্যদিগের বিনাশকর শত্রুবর্গকে অভিভূত কর। হে বরুণ! হে মিত্র! হে অৰ্য্যমা! সেই আমরা তোমাদের সম্বন্ধীয় যজ্ঞের নেতা হইব।
৩৬। পুরুকুৎসের পুত্র ত্রসদস্যু আমাকে ৫০ জন বন্ধু প্রদান করিয়াছেন; তিনি দাতাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, আৰ্য্য এবং সৎপতি।
৩৭। সুনিবাসবিশিষ্ট নদীর ঘাটে, শ্যামবর্ণদিগের নেতা, পূজনীয় ধনদানার্হ ২১০ সংখ্যক দোসমূহের পতি ত্রসদস্যু, অন্ন ও ধন দান করিয়াছিলেন (৩)।
————
(১) অষ্টম মন্ডলে অসুর শব্দ আট বার ব্যবহৃত হইয়াছে যথা—
১৯ সূক্তের ২৩ ঋকে সূর্য্য সম্বন্ধে।
২০ ,, ১৭ ,, মেঘ বা বলবান ,,
২৫ ,, ৪ ,, মিত্র ও বরুণ ,,
২৭ ,, ২০ ,, দেবগণ ,,
৪২ ,, ১ ,, বরুণ ,,
৯০ ,, ৬ ,, ইন্দ্র ,,
৯৬ ,, ৯ ,, বলবান শত্রু ,,
৯৭ ,, ১ ,, ,, ,,
অতএব শেষের দুইটি স্থান ভিন্ন আর সকল স্থানেই অসুর শব্দ দেবগণের সম্বন্ধে ব্যবহৃত হইয়াছে।
(২) মূলে “যৎ অগ্নে মর্ত্যঃ ত্বং স্যাং অহং” আছে। মর্ত্য মনুষ্য অমর অগ্নির ন্যায় হইবার অভিলাষ করিতেছেন। ২১ ও ২৪ ঋক হইতে প্রকাশ হইতেছে, যে মনু অগ্নিপূজার একজন অনুষ্ঠান কর্তা।
(৩) পুরুকুৎসের পুত্র ত্রসদস্যূরাজা শ্যামবর্ণ লোকের নেতা। এ শ্যামবর্ণ লোক কাহারা?