ঋগ্বেদ ০৭।১০৩

ঋগ্বেদ ০৭।১০৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল  সূক্ত ১০৩
মন্ডূক দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

বৃষ্টিকাম ব্যক্তি এইসূক্ত জপ করেন। নিরুক্তকার বলেন যে বসিষ্ঠ বৃষ্টিকাম হইয়া পর্জ্জন্যকে স্তব করেন। মন্ডূক সকল তাঁহার অনুমোদন করে। তজ্জন্য তিনি মন্ডূকগণকে স্তুতি করিয়াছিলেন।

১। সংবৎসর ব্রতচারী স্তোতাদিগের ন্যায়(১) সংবৎসর শয়ান থাকিয়া মন্ডূকগণ পর্জ্জন্যের প্রীতিকর বাক্য উচ্চারণ করিতেছেন।

২। শুষ্কচৰ্ম্মের ন্যায়, সরোবরে শয়ান মন্ডূকগণের নিকট স্বৰ্গীয় জল যখন আগমন করে, তখন বৎসযুক্ত ধেনুর শব্দের ন্যায়(২) মন্ডূকগণের শব্দঃসঙ্গত হয়।

৩। বর্ষাকাল আগত হইলে পর্জ্জন্য যখন কামনাবান ও তৃষ্ণাৰ্ত্ত মন্ডূকগণকে জলদ্বারা সিক্ত করেন, তখন পুত্র যেমন অখখল শব্দ করতঃ পিতার নিকট গমন করে, সেইরূপ এক মন্ডূক অন্যের নিকট গমন করে।

৪। জল পড়িলে পর যখন মন্ডূকদ্বয় হৃষ্ট হয়; যখন পর্জ্জন্য কর্তৃক সিক্ত হইয়া অত্যন্ত লম্ফ প্রদান করত ধূম্রবৰ্ণ মন্ডূক হরিদ্বর্ণ মন্ডূকের সহিত একত্রে শব্দ করে, তখন এক মন্ডূক অন্যকে অনুগ্রহ করে।

৫। শিষ্য গুরুর ন্যায় যখন এই মন্ডূক সকলের মধ্যে একটী অন্যের বাক্য অনুকরণ করে; যখন হে মন্ডূকগণ! তোমরা সুন্দর শব্দবিশিষ্ট হইয়া জলের উপর লম্ফ প্রদান করত শব্দ কর, তখন তোমাদের সমস্ত পৰ্ব্বযুক্ত শরীর সমৃদ্ধ হয়।

৬। ইহাদের একের শব্দ গোরুর ন্যায়, অপরের শব্দ ছাগলের ন্যায়, একটা ধূম্রবর্ণ, অপরটা হরিদ্বর্ণ। সকলেরই এক নাম অথচ রূপ বিবিধ প্রকার, ইহারা নানাদেশে শব্দ করতঃ প্রাদুর্ভূত হয়।

৭। হে মন্ডূকগণ! অতিরাত্রনামক সোমযাগে স্তোতাগণের ন্যায় সম্প্রতি তোমরা পূর্ণ সরোবরে চতুর্দিকে শব্দ করতঃ যে দিন প্রাবৃট সঞ্চার হইল, সেই দিন চতুর্দিকে অবস্থিতি কর।

৮। সোমযুক্ত সাংবাৎসরিক স্তুতিকারী স্তোতাগণের ন্যায়(৩) এই মন্ডূকগণ শব্দ করিতেছে; প্রবর্গচারী অধ্বর্য্যুগণের ন্যায় ঘৰ্ম্মাক্ত কলেবর, লুক্কায়িত কোন কোন মন্ডূক সম্প্রতি বৃষ্টিতে আবির্ভূত হইতেছে।

৯। নেতা মন্ডূকগণ দেবকৃত বিধান রক্ষা করে, ইহারা দ্বাদশ মাসের ঋতুগণকে হিংসা করে না। সংবৎসর পূর্ণ হইয়া বর্ষা আগত হইলে, গ্রীষ্মস্থ তাপপীড়িত মন্ডূকগণ গৰ্ত্ত হইতে বিমুক্তি লাভ করে।

১০। ধেনুবৎ শব্দবিশিষ্ট মন্ডূক আমাদিগকে ধন দান করুক, অজবৎ শব্দবিশিষ্ট মন্ডূক আমাদিগকে ধন দান করুক, ধূম্রবর্ণ মন্ডূক আমাদিগকে ধন দান করুক, হরিদ্বর্ণ মন্ডূক আমাদিগকে ধন দান করুক। সহস্র ওষধি প্রসবকারী বর্ষা ঋতুতে মন্ডূকগণ অপরিমিত গোপ্রদান করতঃ আমাদিগের আয়ু বৰ্দ্ধিত করুন।

————
(১) “মূলে ব্রাহ্মণাঃ” আছে। অর্থ “ব্রহ্ম” বা স্তোত্র উচ্চারণকারী। তাহাদিগের স্তোত্র উচ্চারণের সহিত ভেকদিগের রবের তুলনা হইতেছে।

(২) বৎস পাইলে ধেনুগণ যে রব করে, বৃষ্টি আগমনে ভেকদিগের রব তাহার সহিত তুলনা করা হইতেছে। ইহার পরের ঋকগুলিতেও ভেকদিগের শব্দ সম্বন্ধে অন্যান্য উপমা আছে।

(৩) মূলে “ব্রহ্ম কৃণ্বন্ত ব্রাহ্মণাসঃ” আছে। অর্থ “স্তুতিকারী স্তোতাগণ”। ব্রাহ্মণ নামে একটি ভিন্ন “জাতি” তখন সৃষ্ট হয় নাই। ১।১০।১ ঋকের টীকা দেখ।