ঋগ্বেদ ০৭।০৩৩

ঋগ্বেদ ০৭।০৩৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল  সূক্ত ০৩৩

প্রথম ১ ঋকে বসিষ্ঠ ঋষি। বসিষ্ঠপুত্রগণ দেবতা। পরবর্তী ঋকের বসিষ্ঠপুত্রগণ ঋষি। বসিষ্ঠ দেবতা।

 ১। শ্বেতবর্ণ কৰ্ম্মপুরক দক্ষিণ ভাগে চূড়াধারীগণ (১) আমাকে হৰ্ষিত করিতেছেন। আমি বর্হি হইতে উঠিবার সময়ে লোক সকলকে বলি যে, বসিষ্ঠগণ আমার নিকট হইতে যেন দূরে না যান।

২। বসিষ্ঠপুত্রগণ পাশদ্যুম্নকে তিরস্কার করতঃ চমসস্থিত সোমপায়ী উগ্র ইন্দ্রকে দূর হইতে সোমদ্বারা আনয়ন করিয়াছিলেন। ইন্দ্র ও পাশদ্যুম্নকে অতিক্রম করিয়া সোমাভিষব প্রযুক্ত বসিষ্ঠগণকে বরণ করিয়াছিলেন (২)

৩। এইরূপেই ইহাঁরা সুখে নদীপার হইয়াছিলেন। এইরূপেই ইহাঁরা ভেদকে বিনাশ করিয়াছিলেন। হে বাসিষ্ঠগণ! এইরূপেই দশজন রাজার সহিত যুদ্ধে তোমাদের মন্ত্রবলে ইন্দ্র সুদাসরাজকে রক্ষা করিয়াছিলেন (৩)।

৪। হে মনুষ্যগণ! তোমাদের স্তোত্রদ্বারা পিতৃগণের তৃপ্তি সাধন কর। তোমাদের রথের অক্ষ যেন ক্ষীণ না হয়। হে বসিষ্ঠগণ! তোমরা শক্করী ঋক ও শ্রেষ্ঠ শব্দদ্বারা ইন্দ্রের বল সম্পাদন করিয়াছিলে।

৫। জাততৃষ্ণ রাজগণ কর্তৃক পরিবৃত বাসিষ্ঠগণ দশরাজার সহিত সংগ্রামে ইন্দ্রকে আদিত্যের ন্যায় ঊৰ্দ্ধে উত্থাপিত করিয়াছিলেন। ইন্দ্র স্তুতিকারী বসিষ্ঠের স্তোত্র শ্রবণ করিয়াছিলেন এবং বিস্তীর্ণ লোক প্রদান করিয়াছিলেন।

৬। গোপ্রেরক দন্ডের ন্যায় ভরতগণ পরিচ্ছিন্ন ও অল্প সংখ্যাক হইল। বসিষ্ঠ পুরোহিত হইলে তৃৎসুদিগের প্রজাবৃদ্ধি হইতে লাগিল।

৭। অগ্নি, বায়ু ও সুৰ্য্য এই তিন জনেই ভুবনে জল উৎপন্ন করেন। তাহাদিগেরই জ্যোতিঃ পূর্ণ তিন আর্য্য প্রজা আছে। দীপ্তিমান তিন জনই ঊষাকে বয়ন করেন। বসিষ্ঠগণ তাঁহাদের সকলকেই জানেন।

৮। হে বাসিষ্ঠগণ! তোমাদিগের স্তোম সুর্য্যের জ্যোতির ন্যায় প্রকাশিত হয়। তোমাদের মহিমা সমুদ্রের ন্যায় গভীর। তোমাদের স্তোম বায়ুবেগের ন্যায় অন্যের অনুগমনের অশক্য।

৯। সেই বসিষ্ঠগণ হৃদয়ের জ্ঞানদ্বারা তিরোহিত সহস্রশাখ সংসারে বিচরণ করেন। তাঁহারা যমকর্তৃক বিস্তৃত বস্ত্র করতঃ অপ্সরগণের নিকট গমন করিয়াছিলেন (৪)।

১০। হে বসিষ্ঠ! বিদ্যুতের ন্যায় স্বীয় জ্যোতিঃ পরিত্যাগ কালে মিত্র ও বরুণ তোমায় দেখিয়াছিলেন। তখন তোমার এক জন্ম হয়। আরও যখন অগস্ত্য বাসস্থান হইতে তোমায় আহরণ করিয়াছিলেন।

১১। আরও হে বসিষ্ঠ! তুমি মিত্র ও বরুণের পুত্র। হে ব্রহ্মণ! উর্বশীর মন হইতে তুমি জাত। তখন মিত্র ও বরুণের তেজ নিৰ্গত হইয়াছিল, বিশ্বদেবগণ দৈব্য স্তোত্রদ্বারা পুস্করমধ্যে তোমায় ধারণ করিয়াছিলেন।

১২। প্রকৃষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন বসিষ্ঠ উভয় লোক অবগত হইয়া সহস্র দান বা সর্বদানবিশিষ্ট হইয়াছিলেন। যমকর্তৃক বিস্তীর্ণ বস্ত্র বয়ন করণেচ্ছায় বসিষ্ঠ উর্বশী হইতে জন্মিয়াছিলেন।

১৩। যজ্ঞে উৎপন্ন মিত্র ও বরুণ স্তুতিদ্বারা প্ৰাৰ্থিত হইয়া, কুম্ভ মধ্যে নিজ তেজ স্থাপন করিয়াছিলেন। অনন্তর মধ্য হইতে মান (৫) প্রাদুর্ভূত হইলেন। ঋষিও তাহা হইতেই জন্মিয়াছিলেন। লোকে ইহা বলে।

১৪। হে প্রতৃদগণ (৬)! বসিষ্ঠ তোমাদের নিকট আগমন করিতেছেন। তোমরা প্রসন্নমনে ইহার পূজা কর। ইনি অগ্রবর্তী, উকথধারী, সামধারী ও প্রস্তরাভিষবনকারী এবং বক্তব্য বাক্য বলেন।

———

(১) বসিষ্ঠপুত্রগণ মস্তকের দক্ষিণ ভাগে চূড়া ধারণ করিত।

(২) পূর্বকালে যখন বসিষ্ঠপুত্রগণ সুদাসরাজার যপজ্ঞে ব্যাপৃত ছিলেন, তখন বয়তের পুত্র পাশদ্যুম্ন নামক রাজা যজ্ঞ করেন, ইন্দ্র যখন উক্ত রাজার যজ্ঞে সোম পান করিতেছিলেন, সেই সময়ে বসিষ্ঠগণ মন্ত্রবলে তাহাকে উঠাউয়া আনিয়া সুদাসের যজ্ঞে উপস্থিত করিয়াছিলেন। সায়ণ।

(৩) এই স্থান হইতে চারিটী ঋকে সুদাসরাজার সহিত অন্য দশরাজার যুদ্ধের উল্লেখ আছে। ৭।৮৩।৭ ঋকের টীকা দেখ।

(৪) ৯ হইতে ১৩ ঋকে বসিষ্ঠের জন্ম সম্বন্ধে একটি বৈদিক আখ্যানের উল্লেখ আছে। বসিষ্ঠ মিত্র ও বরুণের পুত্র; বসিষ্ঠ উর্বশী হইতে জাত। এই আখ্যানের প্রাকৃতিক অর্থ কি?

বশিষ্ঠ শব্দের আদি অৰ্থ বসুতম, অৰ্থাৎ উজ্জ্বলতম, অর্থাৎ সূৰ্য্য। মিত্র ও বরুণ অর্থে দিবা ও রাত্রি, উর্বশীর আদি অর্থ ঊষা। অতএব বসিষ্ঠ মিত্র ও বরুণের পুত্র এবং উর্বশী হইতে জাত। এই আখ্যানের প্রাকৃতিক অর্থ।

পরে বসিষ্ঠনামীয় এক বংশীয় ঋষিগণ ঋগ্বেদের অনেক সূক্ত রচনা করিয়া খ্যাতি লাভ করেন। তখন সেই ঋষি বসিষ্ঠের সহিত সুর্য্য বসিষ্ঠের সহিত একটা সম্বন্ধ স্থাপন করা হইল। (See Max Mullor’s Selected Essays (r88r, vol 1, p. 406.))

(৫) অগস্ত্য। সায়ণ।

(৬) অর্থাৎ তৃৎসুগণ।