ঋগ্বেদ ০৬।৫২

ঋগ্বেদ ০৬। ৫২
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ৫২
নানা দেবতা। ঋজিশ্বা ঋষি।

১। আমি ইহা স্বৰ্গীয় বা পার্থিব দেবগণের উপযুক্ত বোধ করি না। অথব ইহা যে মদ মুষ্ঠিত ঘজ্ঞের কিং বা অন্যদ্বারা সম্পাদিত নদীয় যাগের সমতুল্য হইবে এরূপ ও বিবেচনা করি না। অতএব সুমহান পৰ্ব্বত সকল তাঁহার পীড়া বিধান করুক; অতিষাজের ঋত্মিক ও নিরতিশয় হীনতা প্রাপ্ত হউক (১)।

২। হে মরুৎগণ! যে ব্যক্তি আপনাকে আমাদিগের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বোধ করে এবং অস্মংকৃত স্তোত্রের নিন্দা করিতে ইচ্ছা করে, শক্তি সকল তদীয় অনিষ্টকারক হউক এবং স্বর্গ সেই স্তোত্রদ্বেষ্টকে দগ্ধ করুক (২)।

৩। হে সোম! লোকে কি জন্য তোমাকে মন্ত্ররক্ষক বলে? কি জন্যই বা তোমাকে নিন্দা হইতে আমাদিগের উদ্ধার কৰ্ত্তী বলিয়া থাকে? কেনই বা আমরা শত্রুগণ কর্তৃক নিন্দিত হইলে তুমি নিরপেক্ষভাবে দশন করিতেছ? তুমি স্তোত্র বিদ্বেষীর প্রতি নিজ পীড়াদায়ক আয়ুধ ক্ষেপণ কর।

৪। আবির্ভূত উষা সকল আমাকে রক্ষা করুন। স্ফীত নদী সকল আমাকে রক্ষা করুক। নিশচল পৰ্ব্বতগণ আমাকে রক্ষা করুন। দেবযজন সময়ে যজ্ঞে উপস্থিত পিতৃদেবগণ আমাকে রক্ষা করুন।

৫। আমরা যেন সৰ্ব্বদা স্বচ্ছন্দচিত্ত হই। আমরা যেন সৰ্ব্বদা উদয়োন্মুথ সূর্যকে দশন করি। দেবগণের নিকট অন্মদায় হব বহনকারী, যজ্ঞে অধিষ্ঠানকারী, মহৈশ্বৰ্য্যসম্পন্ন অগ্নি ধেন আমাদিগকে সেইরূপ করেন।

৬। ইন্দ্র এবং বারিরাশিদ্বার স্ফীত সরস্বতী নদী যেন রক্ষাসহকারে আমাদিগের সন্নিহিত হয়েন। ওষধিগণের সহিত পর্জন্য ধেন আমাদিগের সুখদাতা হয়েন। অগ্নি যেন পিতার ন্যায় অনায়াসে স্তুত্য ও আহ্বানযোগ্য হয়েন।

৭। হে বিশ্বদেবগণ! তোমর আগমন কর, আমার এই আহ্বান শ্রবণ কর, এবং এই আস্তীর্ণ কুশোপার উপবেশন কর।

৮। হে দেবগণ! যে ব্যক্তি ঘৃতাক্ত হব্যদ্বারা তোমাদিগের পরিচর্য্যা করে, তোমরা সকলে তাহার নিকট আগমন কর।

৯। যাহারা অমরের পুত্র, সেই বিশ্বদেবগণ আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করুন ও অমাদিগকে সুখ প্রদান করুন।

১০। হে যজ্ঞের সমৃদ্ধিবিধায়ক যথা সময়ে স্তোত্র শ্রবণ কারী বিশ্বদেবগণ! তোমাদিগের সমুচিত দুগ্ধ গ্রহণ কর।

১১। মরুৎগণের সহিত ইন্দ্র, ত্বষ্টার সহিত মিত্র এবং অর্য্যমা আমাদিগের স্তোত্র ও এই সমস্ত হব্য গ্রহণ করন।

১২। হে দেবগণের আহ্বানকারী অগ্নি! দেবগণের মধ্যে যাঁহারা যার্গাহ তাহা অবগত হইয়া তুমি তাহাদিগের মর্যাদানুসারে আমাদিগের এই যাগ ক্রিয়া সম্পাদন কর।

১৩। হে বিশ্বদেবগণ! তোমরা অন্তরিক্ষে, ভূলোকে বা স্বর্গে অবস্থান কর, আমাদিগের আই আহ্বান শেবণ কর। তোমরা অগ্নিরূপ জিহ্বাদ্বারাই হউক বা অন্য প্রকারেই হউক যাগ গ্রহণ কর। সক্লে আমাদিগের এই আস্তীর্ণ কুশোপরি উপবেশনপূর্বক সোমরস পান কবিসু। উল্লাসিত হও।

১৪। যজ্ঞার্হ বিশ্বদেবগণ, স্বর্গ ও পৃথিবী উভয়ে এবং বারিরাশির পৌত্রভূত অগ্নি আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করুন। হে দেবগণ! আমি যেন এরূপ স্তোত্র উচ্চারণ না করি, যাহা তোমাদিগের অগ্রাহ্য। আমরা যেন তোমাদিগের নিকটবর্তী হইয়া সুখলাভ লাভ করিয়া উল্লাসিত হই।

১৫। পৃথিবী, স্বৰ্গ বা অন্তরিক্ষে প্রাচুভূতি, মহান ও সংহারকশক্তি সম্পন্ন দেবগণ ধেন দিবারাত্রি আমাদিগকে ও অন্মদীয় সস্তুতিগণকে অন্ন প্রদান করেন।

১৬। হে অগ্নি ও পর্জন্য! তোমরা মদীয় যাগকাৰ্য্য রক্ষা কর। তোমরা অনায়াসে আহ্বানযোগ্য, অতএব এই যজ্ঞে আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ কর। তোমাদিগের মধ্যে এক ব্যক্তি ইলা অন্ন উৎপাদন করেন ও অন্য ব্যক্তি গর্ভোৎপাদন করেন। অতএব তোমরা আমাদিগকে সন্ততি সহকারে অন্ন প্রদান কর।

১৭। হে পূজনীয় বিশ্বদেবগণ! অদ্য আমাদিগের এই বজ্ঞে কুশ আস্তীর্ণ হইলে, অগ্নি প্রজ্বালিত হইলে এবং আমি স্তোত্রোচ্চারণ ও নমস্কার পুরঃসর তোমাদিগের পরিচর্য্যা করিলে পর, তোমরা হব্যদ্বারা তৃপ্তি লাভ কর।

—————

(১) অভিষাজ নামক কোন ঋষি ঋজিশ্বা অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট যজ্ঞ করিতে চেষ্টা করায় ঋজিশ্বা তাহাকে অভিশাপ করিতেছেন। সায়ণ। ভিন্ন ভিন্ন ঋষি ও ঋত্বিগণের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা ও শত্রুতা ছিল তাহা প্রকা হইয়াছে।
(২) এই সূক্তে “ব্রহ্ম” শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হইয়াছে, সায়ণ একবার “স্তোত্রা” ও আর একবার “ব্রাহ্মণ” অর্থ করিয়াছেন। ইহার পরের সূক্তে ও এই শব্দের এইরূপ অর্থ করিয়াছেন। বলা বাহুল্য যে “স্তোত্র” অর্থই প্রকৃত এবং সেই অর্থই আমি গ্রহণ করিয়াছি।