ঋগ্বেদ ০৬। ৪৯
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ৪৯
বিশ্বদেবগণ দেবতা। ভরদ্বাজের অপত্য ঋজিশ্বা ঋষি।
১। আমি নবীনতর স্তোত্রদ্বারা দেবসমূহ ও স্তোতৃবর্গের মুখাভিলাষী মিত্র ও বরুণের স্তব করিতেছি। নিরতিশয় বলশালী মিত্র, বরুণ ও অগ্নি যেন এই যজ্ঞে আগমন করেন এবং আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করেন।
২। যে অগ্নি প্রত্যেক ব্যক্তির পূজার্হ; যিনি কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিয়া দৰ্প করেন না; যিনি (স্বর্গ ও পৃথিবী রূপ) দুই যুবতী কন্যার স্বামী; যিনি স্তবকারীর পুত্রভূত, শক্তিপুত্র ও যজ্ঞের প্রদীপ্ত কেতুস্বরূপ, আমি সেই অগ্নির যাগ করিবার নিমিত্ত (যজমানকে উত্তেজিত করিতেছি)।
৩। দীপ্তিমান সূর্য্যের বিভিন্নরূপ দুইটী কন্যা (দিবা ও রাত্রি)। তন্মধ্যে একটা নক্ষত্রসমূহ ও অন্যটা সূর্য্যদ্বারা সমুজ্জল। পরস্পর বিরোধী, পৃথকভাবে সঞ্চরণশীল, পবিত্রতাবিধায়ক ও আমাদিগের স্বতিভাজন এই উভয়েই যেন আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করিয়া প্রসন্ন হন।
৪। আমাদিগের মহতী স্তুতি যেন মহা ধনসম্পন্ন, অখিল লোকের বদনীয়, রথ পূরণকারী বায়ুর অভিমুখে উপস্থিত হয়। হে সম্যক যাগার্হ সমুজ্জ্বল রথে আরূঢ়, নিযুত অশ্বের অধিপতি, দূরদর্শী বায়ু! তুমি মেধাবী স্তবকারীকে ধনদ্বারা সংবৰ্দ্ধনা কর।
৫। যে রথ চিন্তামাত্রে অশ্বদ্বারা যোজিত হয়, অশ্বিদ্বয়ের সেই সমুজ্জল রখ যেন দীপ্তিদ্বারা মদীয় দেহ আচ্ছন্ন করে। হে নেতা নাসত্যদ্বয়! তুমি যেন রথদ্বারা স্তবকারীর সন্ততি ও তাহার নিজের মনোরথ পূর্ণ করিবার নিমিত্ত ত্বদীয় গৃহে গমন করিও।
৬। হে বর্ষণকারী পর্জন্য ও বাত! তোমরা অন্তরিক্ষ হইতে প্রাপ্য জল প্রেরণ কর। হে জ্ঞানসম্পন্ন, স্তোত্র শ্রবণকারী, জগৎ সংস্থাপক মরুৎগণ! তোমরা যাহার স্তোত্রদ্বারা প্রসন্ন হও তাহার সমস্ত প্রাণিজাত সমৃদ্ধ কর।।
৭। পবিত্রতা বিধায়িনী, মনোজ্ঞ, বিচিত্রগমন, বীরপত্নী সরস্বতী যেন আমাদিগের যাগাদি কার্য্য নিৰ্ব্বাহ করেন। তিনি যেন দেবপত্নীগণের সহিত প্রীত হইয়া স্তবকারীকে অচ্ছিদ্র গৃহ ও সুথ প্রদান করেন।
৮। স্তবকারী যেন বাঞ্ছিত ফলের বশবৰ্ত্তী হইয়া সমস্ত পথের অধিপতি পূজনীয় পূষার সমীপে স্তোত্র সহকারে উপস্থিত হয়। তিনি যেন মামাদিগকে স্বর্ণগৃঙ্গ ধেনুসকল প্রদান করেন। পুষ যেন আমাদিগের সমস্ত কাৰ্য্য সম্পূর্ণ করেন।
৯। দেবগণের আহ্বানকারী, দীপ্তিমান অগ্নি যেন ত্বষ্টার যাগ করেন; ত্বষ্টারূপ সকলের আদিবিভাগ কৰ্ত্তা, প্রসিদ্ধ, অন্নদাতা, শোভনপাণি, দানশীল, মহান গৃহস্থগণের যজনীয় এবং অনায়াসে আহ্বান যোগ্য।
১০। হে স্তবকারী! তুমি দিবাভাগে এই সমস্ত স্তোত্রদ্বারা ভুবন পালক রুদ্রকে বর্দ্ধিত কর, তুমি রাত্রিকালে রুদ্রের সম্বৰ্দ্ধন কর। আমরা দূরদর্শী রুদ্র কর্তৃক প্রেরিত হইয়া মহান, মনোজ্ঞ, জরারহিত মুখসম্পন্ন ও সমৃদ্ধিমূলক সেই রুদ্রকে মাহবান করিতেছি।
১১। হে নিততরুণ, জ্ঞানসম্পন্ন ও পূজনীয় মরুৎগণ! তোমরা যজমানের স্তোত্রাভিমুখে আগমন কর। হে নেতৃগণ! তোমরা এইরূপে সমৃদ্ধ, হইয়া, এবং সঞ্চরমান রশ্মি সকলের ন্যায় ব্যাপ্ত হইয়া, বৃষ্টিদ্বারা বিরল পাদপ বনসমূহের তৃপ্তিসাধন কর।
১২। পশুপালক যেরূপ গোযুগকে (শীঘ্র পরিচালিত করে), তদ্রূপ পরাক্রান্ত, বলশালী ও দ্রুতগামী মরুৎগণের নিকট শীঘ্ৰ স্তোত্র প্রেরণ কর। অন্তরিক্ষ বেরূপ নক্ষত্র মণ্ডলদ্বার। সংশ্লিষ্ট হয়, তদ্রূপ সেই মরুৎগণ মেধাবী স্তোতার স্বশ্ৰাব্য স্তোত্রদ্বারা নিজ দেহাবচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট ইউন।
১৩। যে বিষ্ণু উপদ্রুত মনুর নিমিত্ত ত্রিপাদ বিক্রমদ্বারা পার্থিব লোক পরিমাণ করিয়াছিলেন, সেই তোমাকর্তৃক প্রদত্ত গৃহে অবস্থানপূর্বক আমরা যেন ধন, দেহ ও পুত্রদ্বারা আনন্দ অনুভব করি।
১৪। আমাদিগের মন্ত্রদ্বারা স্তূয়মান অহির্বুধ্ন্য (১), পৰ্ব্বত ও সবিতা যেন আমাদিগকে বারিসহকারে অন্ন প্রদান করেন। দানশীল বিশ্বদেবগণ যেন আমাদিগকে ওষধীসহকারে সেই অন্ন প্রদান করেন। সুবুদ্ধি দেব ভগ যেন ধনার্থ আমাদিগকে প্রেরণ করেন।
১৫। হে বিশ্বদেবগণ! তোমরা আনদিগকে রথযুক্ত, অসংখ্য অনুচরসমেত বহুপুত্র সমন্বিত যজ্ঞের সাধন ভূত ধন ও অক্ষয় গুহ প্রদান কর, যদ্দ্বারা আমরা স্পর্দ্ধা করিয়া শত্রুগণ ও অদেব সৈন্যদিগকে পরাজিত করিব এবং দেবভক্ত লোকদিগকে আশ্রয় প্রদান কবিতে সমর্থ হইব।
—————
(১) অহির্বুধ্ন্য সম্বন্ধে ২/৩১/৬ ঋকের টীকা দেখ। পর্ব্বত সম্বন্ধে ১/১২২/৩ ঋকের টীকা দেখ।