ঋগ্বেদ ০৬।০১

ঋগ্বেদ সংহিতা – ষষ্ঠ মণ্ডল
১ সূক্ত।

অগ্নি দেবতা। বৃহস্পতির অপত্য ভরদ্বাজ ঋষি।

১. হে অগ্নি! তুমি দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ; দেবগণের চিত্ত তোমাকে সম্বন্ধ; হে মনোজ্ঞ মূর্ত্তি! তুমিই এই যজ্ঞে দেবগণের আহ্বানকারী। হে অভীষ্টবর্ষী! সমস্ত বলশালী (শত্রুর) পরাভবের নিমিত্ত আমাদিগকে অনিবার্য্য বল প্রদান কর।

২. হে অগ্নি! তুমি সমধিক যজ্ঞকারী ও হোম নিষ্পাদক, তুমি হব্যগ্রহণপূর্ব্বক স্তুতিভাজন হইয়া সম্প্রতি (বেদি) ভূমির উপরে উপবেশন কর। ধর্ম্মানুষ্ঠানকারী ঋত্বিকগ্‌গণের বিপুল ধন প্রত্যাশায় দেবগণের মধ্যে অগ্রে তোমাকে অনুসরণ করেন।

৩. হে অগ্নি! তুমি দীপ্তমান্‌, দর্শনীয়, মহান্‌, হব্যভোজী ও সর্ব্বসময়ে প্রদীপ্ত। তুমি বসুগণের (অন্তরীক্ষ) পথে গমন করিতেছ, ধনাভিলাষী (যজমানগণ) তোমার অনুসরণ করিতেছে।

৪. যজমানগণ অন্নলিপ্সু হইয়া দীপ্তমান্‌ অগ্নিত আহবনীয় স্থানে গমনপূর্ব্বক অপ্রতিহত ভাবে প্রচুর অন্নলাভ করে এবং যৎকালে তোমার শুভ সন্দর্শনে আনন্দিত হয় তৎকালে তোমার যজ্ঞার্হ নাম সকল কীর্ত্তন করে।

৫. হে অগ্নি! পৃথিবীতে মনুষ্যগণ তোমাকে বর্দ্ধিত করে। তুমি (পশু ও অপশু রূপ যে) উভয় বিধ ধন মনুষ্যগণকে প্রদান কর, তজ্জন্য তাহারা তোমাকে বর্দ্ধিত করে। হে দুঃখবিমোচনকারী অগ্নি! তুমি স্তুতিভাজন হইয়া মানবগণের রক্ষক ও পিতৃমাতৃ স্থানীয় হও।

৬. পূজনীয় অভীষ্টবর্ষী মনুষ্যগণের মধ্যে হোমনিষ্পাদক, প্রীতিপ্রদ, নিরতিশয়, যাগকারী, অগ্নি (বেদির উপর) উপবিষ্ট হইয়াছেন। হে অগ্নি! তুমি গৃহে প্রজ্জ্বালিত হইয়াছ, আমরা অবনত জানু হইয়া (১) স্তোত্র সহকারে তোমার নিকট উপস্থিত হই।

৭. আমরা সুবুদ্ধি, সুখাভিলাষী ও ধর্ম্মনিষ্ঠ; হে স্তবার্হ! আমরা তোমার স্তব করিতেছি। হে অগ্নি! তুমি সমধিক দীপ্তিসম্পন্ন, তুমি মনুষগণকে স্বর্গে লইয়া যাও (২)।

৮. চিরস্থায়ী মনুষ্যবর্গের অধিপতি, জ্ঞানী, শত্রুসংহারক, অভীষ্টবর্ষী, স্তোতৃবর্গের অধিগম্য, অন্নদাতা, পবিত্রতাবিধায়ী, ধনলাভার্থ যষ্টব্য ও দীপ্তমান্‌ অগ্নিকে আমরা স্তব করিতেছি।

৯. হে অগ্নি! যে মানব তোমার যজ্ঞ করে ও স্তব করে, যে ব্যক্তি প্রজ্বলিত ইন্ধনের সহিত তোমাকে হব্য প্রদান করে, যে ব্যক্তি স্তুতিসহকারে তোমাকে আহুতি প্রদান করে, সেই ব্যক্তি তোমা কর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়া সমস্ত বাঞ্ছিত ধন লাভ করে।

১০. হে শক্তিসম্পন্ন অগ্নি! এই আমরা নমস্কার, ইন্ধন ও হব্য সহকারে তোমার পূজা করিতেছি। হে শক্তিপুত্র! আমরা স্তোত্র ও শাস্ত্রসহকারে বেদির উপর (তোমার পূজা করিতেছি)। আমরা যেন তোমার কল্যাণকর অনুগ্রহ লাভার্থ চেষ্টা করিয়া কৃতকার্য্য হই।

১১. হে অগ্নি! তুমি দীপ্তদ্বারা স্বর্গ ও পৃথিবীকে বিস্তৃত করিয়াছ, তুমি (মনুষ্যের) পরিত্রাণকারী ও স্তুতিদ্বারা পূজনীয়; তুমি প্রচুর অন্ন ও বিশিষ্টরূপ ধনের সহিত আমাদিগের নিকট সম্যকরূপে দীপ্ত হও।

১২. হে ধনাধিপতি! তুমি সর্ব্বদা আমাদিগকে পরিজনবর্গের সহিত ধন প্রদান কর এবং আমাদিগের পুত্রপৌত্রদিগকে প্রভূত পশু প্রদান কর। আমাদিগের যেন পর্যাপ্ত ইচ্ছানুরূপ অনিন্দ্য অন্ন এবং শুভ ও প্রশস্ত (জীবনোপায়) বিহিত হয়।

১৩. হে দীপ্তমান্‌ অগ্নি! আমি যেন তোমার নিকট হইতে বিবিধ ধনলাভ করিয়া ঐশ্বর্য্যসমন্ন হই; হে বহুলোকের বরণীয় অগ্নি! তুমি দীপ্তিশালী, তোমাতে প্রভূত ধন নিহিত আছে।

—————–
(১) মূলে “জ্ঞ বাধঃ” আছে। “জানুনি বাধযন্তঃ অবনত জানবঃ।” সায়ণ। “On bended knees.”–Wilson.
(২) মূলে “ত্বং বিশ্বঃ অনবঃ দিবঃ” আছে। মনুষ্যের স্বর্গলাভের স্পষ্ট উল্লেখ।