উপসংহার

উপসংহার

 কর্নেলের ভাড়া করা নৌকোর মাঝিরা অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছিল। সাড়ে বারোটা বাজে প্রায়। কিছুদূর উজিয়ে গিয়ে নৌকো ভাটির মুখে কোনাকুনি ভেসে চলল। কর্নেল ছইয়ে উঠে পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। সৌম্যের ব্রিফকেসটা ছইয়ের ওপর রাখলে হালের মাঝি হুঁশিয়ারি দিল, গির যায়েগা সাব! হোশিয়ারি সে রাখিয়ে।

ব্যস, অমনি ছই গড়িয়ে ভারি ব্রিফকেসটা মাঝগঙ্গায় পড়ে তলিয়ে গেল। কর্নেল বললেন, ওই যাঃ!

মাঝিরা হইচই করে উঠলো। হালের মাঝি বলল, হাম বোলা গির যায়ে গা! হায় রামজি! রুপেয়া-উপেয়া কেত্তা তা সাব?

কর্নেল নির্লিপ্তমুখে বললেন, কুছ নেহি! কাপড়া-উপড়া থা কুছ! ছোড়ো!

মনে মনে হাসছিলেন। ইচ্ছে করেই ফেলে দিয়েছেন। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। কোথায় পেলেন, পুলিশকে বলা যাবে না। কাজেই বিসর্জন দেওয়ার দরকার ছিল।

হোটেল পারিজাতে ফিরতে একটা বাজলো। লবিতে সুরেশ চতুর্বেদী অপেক্ষা করছিলেন। মুখটা গম্ভীর। কর্নেলকে দেখে উঠে এলেন। কর্নেল বললেন, ভেরি সরি মিঃ চতুর্বেদী! ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ওপারে নান্নিমাইজির আশ্রমে চলে গিয়েছিলুম।

চতুর্বেদী ঘড়ি দেখে বললেন, আমিও খুব দুঃখিত, কর্নেল। কোনো পাত্তা করতে পারিনি। লোক্যাল পুলিশ, আই বি–কেউ কিছু বলতে পারলো না। দেড়টা নাগাদ একটা ট্রেন আছে। আমাকে যেতে হবে।

ঠিক আছে। আসুন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

 চতুর্বেদী ধন্যবাদের অপেক্ষা করলেন না। দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।

স্নান এবাং খাওয়ার পর কর্নেল কিছুক্ষণ পুবের ব্যালকনিতে চুপ-চাপ বসে চুরুট টানতে টানতে গায়ে রোদ্দুর নেবার চেষ্টা করছিলেন। রোদ্দুরটা দ্রুত সরে গেল অন্য ব্যালকনিতে। তখন ঘরে ঢুকে দরজা এঁটে চিত হয়ে শুয়ে পড়লেন। যাবেন ব্রতীন দাশ ওরফে ভগবানদাস শেঠের আনন্দভিলায়? যাওয়াটা কি নিরাপদ হবে? পুরস্কৃত হওয়ার নানারকম অর্থ করা যায়। ‘মৃত্যু’ও পুরস্কার হয়ে উঠতে পারে। যতটুকু বুঝেছেন, অতি জটিল ও কুটিল চরিত্রের লোক ব্রতীন দাশ। এক সময় সে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে পারতো। গোপনে ধর্মকর্ম করে। কিন্তু বাইরে মার্কসবাদী। হুঁ, মনে-মনে ভেঙে না পড়লে এমনটা কেউ করে না। তার চেয়ে বড় কথা, সে একজন ক্ষমতালোভী মানুষ। এ ধরনের মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। কর্নেলকে নিজের ডেরায় পেয়ে যদি সুশোভনের মতোই খতম করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়, কেউ টের পাবে না। সুশোভনের বেলায় সাক্ষী ছিল! এখানে সাক্ষী থাকবে না।

নাঃ, যাওয়া উচিত হবে না। কর্নেল পুবের জানলার ধারে গেলেন। চোখে বাইনোকুলার রেখে দুরে গঙ্গার একটা চরের পাশে হাঁস দেখতে থাকলেন। এ বেলা আর হোটেল থেকে বেরুচ্ছেন না। অনেক কিছু ভাবতে হবে। কেয়ার মুখটা বারবার মনে ভেসে আসছে। কিন্তু কী ভাবে তার ঘর বাঁধার সাধ মেটাতে সাহায্য করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। সৌম্য বিমলকুমারকে খুন করেননি বলেছেন। করেছেন শ্যামলকান্তি। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শ্যামলকান্তি শাস্তি পেলে কর্নেল বরং খুশিই হবেন। সুভদ্র বিহারের ছেলে। তার বাবা বড়লোক জমিদার। তাকে বাঁচাতে পারবেন তিনি। বিহারের প্রশাসন তো…। শুধু সৌম্য চৌধুরীকে বাঁচানো সমস্যা! একজন মন্ত্রী তার শত্রু। সৌম্য রক্ষা পেলে কেয়া তাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে! ‘তপেশ বসাকে’র রাখা টাকা ব্যাংক কেয়াকে দিতে আইনত বাধ্য। সে টাকায় পাপ কিসের? তার দাদার জীবনের মূল্য পরিশোধ করেছে ব্রতীন।…

পাঁচটাতেই সন্ধ্যা এসে গেল। গঙ্গার ওপর তখন ঘন কুয়াশা। আজ ঠাণ্ডাটা বেড়েছে। ঘরে বসে কফি খাচ্ছিলেন কর্নেল। দরজা বন্ধ। রিভলবার হাতের কাছে রেডি! দেখা করতে যাননি বলে ব্রতীন একজন আততায়ীকেও পাঠাতেও। পারে সতর্ক থাকা দরকার।

কলিং বেল বাজল। কর্নেল বললেন, কে?

 আমি কেয়া।

রিভলবার হাতেই দরজা খুললেন কর্নেল। কেয়া ও সৌম্য দাঁড়িয়ে আছেন। কর্নেল একটু হেসে বললেন, ভেতরে এসো। না–এটা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভগবানদাস শেঠের পাঠানো কিলারদের ফেস করার জন্য আমি তৈরি।

দরজা বন্ধ করে দেখলেন সৌম্য হাসছেন। কেয়ার মুখেও ক্ষীণ হাসি।

কর্নেল মুখোমুখি বসে বললেন, না ডার্লিং! হাসির কথা নয়। হি ইজ আ ডেঞ্জারাস ম্যান।

সৌম্যের হাতে একটা ভাঁজকরা খবরের কাগজ। এগিয়ে দিয়ে বললেন, ফার্স্ট পেজ নিউজ! এখানে কলকাতার কাগজ পৌঁছয় চারটের ট্রেনে। পড়ে দেখুন। তাহলে বুঝবেন, কেন হাসছি।

কর্নেল কাগজটা নিলেন। দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকা। প্রথম পাতায় সেকেন্ড লিড খবর।  

ব্রতীন দাশ বরখাস্ত, দল থেকে বহিষ্কৃত
স্টাফ রিপোর্টার : মুখ্যমন্ত্রী সরিশেখর বসু মন্ত্রিপরিষদ থেকে সড়ক ও পরিবহন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রতীন দাশকে বরখাস্ত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বহুদিন থেকে বহু দুর্নীতি এবং অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। দলের এবং মন্ত্রিপরিষদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে মুখ্যমন্ত্রী এই ব্যবস্থা নিয়েছেন। ব্রতীনবাবুর প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য তাঁর বাসভবনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি বর্তমানে নাকি কলকাতার বাইরে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত রাত্রে তড়িঘড়ি ডাকা মন্ত্রিসভার এক গোপন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে সাংবাদিকদের জানান। এর আগেই পার্টি থেকে তাঁকে দশ বছরের জন্য বহিষ্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে তা কার্যকর করা হয়নি। তাঁর নামে ৫২ লক্ষ টাকা নয়ছয় করার একটি অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত হয়েছিল। সম্প্রতি তদন্ত কমিশনের সেই রিপোর্টটি পেশ করার পর পার্টির ভেতর প্রবল দাবি ওঠে, ব্রতীনবাবুকে বরখাস্ত করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী অবশেষে এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাইটার্স বিল্ডিংস এবং পুলিশ মহলের একাংশও খুশি।

সৌম্য চৌধুরি হাসতে হাসতে বললেন, বেলুন ফেঁসে গেছে। এখন আমার ধারণা, এমন একটা কিছু আঁচ করেই ব্রতীন নান্নিমাইজির কাছে পুজো দিতে এসেছিল।

 কর্নেল কাগজটা রেখে চুরুট ধরালেন। তারপর বললেন, হুঁ, বেলুন ফেঁসে যাওয়াই বটে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গদি জিনিসটেই এমন। যতক্ষণ ওতে কেউ চেপে আছে, সে যা খুশি করতে পারে। ব্যুরোক্রাট এবং পুলিশকর্তাদের নানা বখশিসের লোভ দেখিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যে-মুহূর্তে সে গদিচ্যুত, সেই মুহূর্ত থেকে সে নিতান্ত সাধারণ মানুষ। মাথা ভেঙেও সে ওঁদের সাহায্য পাবে না। আধুনিক গণতন্ত্রের এ একটা সাধারণ নিয়ম বলা যায়। এক্ষেত্রে ব্রতীনবাবু দল থেকেও বহিস্কৃত। এখন পাল্টা দল গড়ার চেষ্টা করতে পারেন। তবে ব্যাপারটা খুর সোজা হবে না। কাগজগুলো এমন কেচ্ছা শুরু করে দেবে, দেখবেন তখন। অতএব এখন ওঁর ভরসা কিছু মস্তান দুবৃত্ত। কিন্তু তা দিয়ে নতুন ইমেজ তৈরি করা অসম্ভব। আমরা জনগণকে যত বোকা ভাবি, তত বোকা নয় তারা। এর প্রমাণ বারবার পাওয়া গেছে।

সৌম্য বললেন, কে যেন বলেছিলেন, ক্ষমতায় ওঠা মানে বাঘের পিঠে চাপা! কোনো কৌশলে চাপা যদি বা যায়, নামলেই বিপদ। বাঘটা খেয়ে ফেলবে। ব্রতীনের দশা দেখতে পাচ্ছি। আই ফিল পিটি ফর হিম।

কর্নেল হোটেলের ইন্টারকম সিস্টেমের ফোনে কফি আর গরম পকৌড়ার অর্ডার দিলেন। তারপর বললেন, বাই দা বাই, ব্রতীনবাবু মোতিগঞ্জে আসছেন, কিভাবে খবর পেলেন আপনারা?

 সৌম্য চৌধুরী বললেন, আনন্দভিলার মালী-কাম-কেয়ারটেকার রাঘবের সঙ্গে আমাদের গোপন ব্যবস্থা ছিল। সে হাথিয়াগড়ে সংকেতে খবর পাঠাত সুভদ্রের কাছে। সুভদ্র ট্রাংককলে খবর দিত কলকাতা। শ্যামলদা এই অ্যারেঞ্জমেন্ট চালু করেছিল। রাঘব মাসে-মাসে টাকা পেত সুভদ্রের মারফত। সুভদ্র আমাকে পরশু ট্রাংককলে জানিয়েছিল–

সুভদ্র এখন কোথায়?

হাথিয়াগড়ে নিজেদের বাড়িতেই আছে। তার গয়ে হাত দেয় কে? বিহার মুল্লুক বলে কথা।

কর্নেল চুরুটের ধোঁয়ার রিং ছেড়ে সেদিকে তাকিয়ে বললেন, একটা পয়েন্ট এখনও আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। রঞ্জন হাথিয়াগড় গিয়েছিল কেন? আমার থিওরি ছিল, সে ওখানে আরও কাউকে হয়তো সুভদ্রকেই ব্ল্যাকমেইল করতে যেত। পরে জানলুম, সুভদ্রও অন্যতম ব্ল্যাকমেইলার। ব্রতীনকে সেও ব্ল্যাকমেইল করে।

করে এসেছে। সুভদ্র একজন কন্ট্রাক্টার। পশ্চিমবঙ্গ-বিহার সীমানা এলাকায় রোড়স্ ডিপার্টের একচ্ছত্র কন্ট্রাক্ট সেই পেয়ে এসেছে এতদিন। ব্রতীন মুখ নিচু করে তার টেন্ডার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।

কিন্তু রঞ্জন ১৫ জানুয়ারি হাথিয়াগড়ে গেল কেন?

সৌম্য চৌধুরি সিগারেট জ্বেলে বললেন, বরাবরই তো যেত। আফটার অল উই ওয়্যার ফ্রেন্ডস্। আমি যতবার মোতিগঞ্জ এসেছি, অবশ্য একা আমার সাহস ছিল না–শ্যামলদার সঙ্গেই এসেছি। আনন্দভিলায় ব্রতীনের কাছে চা খেয়েছি। কাজ আদায় করে হাথিয়াগড়ে গেছি। তবে রঞ্জন ছিল ডেয়ার ডেভিল। ওর কথা আলাদা। একা চলে আসত। হাথিয়াগড়েও যেত। এবার অবশ্য সে শ্যামলদার সঙ্গে এসেছিল। একসঙ্গে হাথিয়াগড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু সে হোটেলে উঠেছিল কেন?

হ্যাঁ, রঞ্জন খুব সাবধানীও ছিল। আমাদের টেক্কা দিয়ে ব্রতীনের কাছে লায়নস শেয়ার সে আদায় করেছে। তাই আমাদের সম্পর্কে তার সাবধান থাকা স্বাভাবিক। আমরাও যথেষ্ট ঈর্ষা করতুম তাকে। সেও স্বাভাবিক। বাট উই ওয়্যার ফ্রেন্ডস্। আমাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া ছিল।

কেয়া চুপচাপ বসে আঙুল খুঁটছিল। মুখ তুলে আস্তে বলল, রঞ্জনের ব্যাংক ডিপজিটের টাকা আমি কি পাব না কর্নেল?

কর্নেল হাসলেন।…আর বাধা দেবার কেউ নেই। প্রণবের-বাবা এবং প্রণব সাক্ষী দেবে, তাদের ভাড়াটের নাম ছিল তপেশ বসাক। একই নামে দুজন লোক থাকতে পারে বৈকি। তোমার বিয়ের ডকুমেন্ট তো রয়েইছে।

সৌম্য বললেন, ব্যাংক ডিপজিটের কাগজপত্রে আমানতকারীর বাবার নাম লিখতে হয় না। কিন্তু সিগনেচার? পারিজাত ট্রান্সপোর্টের ক্লার্ক তপেশের সিগনেচার ওঁদের কাগজপত্র থেকে উদ্ধার করে দেব। ডোন্ট ওরি! টাকা তুমিই পাবে।

দরজায় টোকার শব্দ। কর্নেল প্যন্টের পকেটের ভেতর রিভলবারে হাত রেখে দরজা খুললেন। হোটেলের পরিচারক কফি-পকৌড়া এনেছে। নিজের সতর্কতায় নিজেই হেসে ফেললেন। বেলুন চুপসে গেছে! ব্রতীন দাশ এখন হয়তো কলকাতার পথে। কাগজের খবর দেখেই ছুটে গেছেন। করুণ অবস্থা!

কফি খেতে খেতে সৌম্য একটু সংকোচের সঙ্গে বললেন, সুভদ্রকে ব্রিফকেসটা ফেরত দিতে হবে। নৈলে আমি রেসপন্সিল্ থেকে যাবে।

কর্নেল চোখ বুজে অভ্যাসমতো দুলতে দুলতে বললেন, আপনারা কলকাতা ফিরছেন কবে?

কালই ফিরতে চাই। কিন্তু সুভদ্রের জিনিসটা

 জিনিসটা বেআইনি। কাজেই গঙ্গায় ফেলে দিয়েছি।

 সর্বনাশ! সৌম্য চৌধুরি নড়ে বসলেন। সুভদ্র ফেরত চাইলে কী বললো?

 সত্যি যা ঘটেছে, বলবেন। বলবেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার কেড়ে নিয়েছেন।

সুভদ্র যদি বিশ্বাস না করে?

 ঠিক আছে। আমিই ওকে ট্রাংককল করে জানিয়ে দেবো। আশা করি, সুভদ্র আমাকে চিনেছে। যদি না চিনে থাকে, চিনিয়ে দিতেও পিছপা নই। কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের জীবনে অনেক সুভদ্র এসেছে মিঃ চৌধুরি!

কেয়া পাংশু মুখে বলল, শোনো। আমরা রাতের ট্রেনেই ফিরে যাই। রাত দশটায় একটা ট্রেন আছে। সকালে পৌঁছে যাবো। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না।

সৌম্য গম্ভীরমুখে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, চলি কর্নেল! দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ ঘুরলেন। আস্তে বললেন ফের, আমি আর যাই হই, খুনী নই। জীবনে কখনও মানুষের গায়ে হাত তুলিনি। হাবিপ্লবী দলের অ্যাকশান স্কোয়াডে ছিলুম। কিন্তু নিজের হাতে কিছু করিনি। এতকাল পরে মানুষ খুন করতে হাত তুলেছিলুম। আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন সেই পাপ থেকে। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। নমস্কার! ওরা বেরিয়ে গেলে কর্নেল দরজা বন্ধ করে দিলেন। ইজিচেয়ারে বসে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলেন। আবার খুঁটিয়ে খবরটা পড়লেন। তারপর হেলান দিয়ে চুরুট টানতে থাকলেন। চোখ বন্ধ। গোপন সত্যে পৌঁছুতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সত্য জিনিসটাই এমন, কিছুতেই তাকে গোপন রাখা যায় না। সত্য নিজের জোরেই বেরিয়ে আসে। ইতিহাসের এই এক নিয়ম। হয়তো সময় লাগে, তবু সে শেষ পর্যন্ত আত্মপ্রকাশ করে। তাকে কিছুতেই চাপা দিয়ে রাখা যায় না।…