আসল-নকল – ৭

সাত

লোকগুলো কাছিয়ে এলে, পিছাতে লাগল কিশোর। শেষমেশ আর পিছানোর সুযোগ রইল না। মহাকাশযানের এক পাশে পিঠ ঠেকে গেছে ওর।

‘না, প্লিজ…’ শ্বাসের ফাঁকে বলল। ‘আমার কথা একটু শুনুন…‘ গ্যাটাকরা তাদের অস্ত্র তাক করল।

চোখ বুজল কিশোর, মহাকাশযানের সঙ্গে শরীর মিলিয়ে দিল-এবং হঠাৎই, অলৌকিকভাবে ওটা খুলে গেল ওর পিছনে, এবং ও বিশালদেহী, মোটা, কুৎসিত এবং পরিপাটী সাজে সজ্জিত এক লোকের গায়ে ঢলে পড়ল।

গ্যাগারিন ওকে ঠেলে সরিয়ে দিল। পটোম্যাকের দিকে চাইল সে।

‘এটা কে?’

পটোম্যাক শ্রাগ করল।

‘গুপ্তচরগিরি করার সময় ধরেছি।’

‘ও এডেনের ছেলে নয়।’ কিশোরের দিকে ঘুরে তাকাল সে। ‘কোত্থেকে এসেছ?’

‘বললে বুঝবেন না।’

গ্যাগারিন দু’হাতে ওর কলার চেপে ধরে নিজের মুখের কাছে কিশোরের মুখ তুলে আনল।

‘ট্রাই মি!’ বাতলে দিল।

কিশোর পা ছুঁড়ে দস্তুরমত যুঝতে লাগল।

‘আমাকে ছেড়ে দিলে বলব।’

গ্যাগারিন কলার ছেড়ে দিতেই ধপ করে পড়ল কিশোর।

‘ধন্যবাদ,’ সম্মানের সঙ্গে বলল কিশোর। ‘শুনতেই যদি হয় তো শুনুন। আমার শিপ ভুলে এখানে ল্যাণ্ড করে। আমরা ক্র্যাশ করেছি।’

গ্যাগারিনকে চিন্তামগ্ন দেখাল। বিধ্বস্ত স্পেসশিপের একটাই অর্থ তার কাছে— লুটপাটের সুযোগ।

পটোম্যাক জানে তার নেতা কী ভাবছে।

‘একে মেরে ফেলি আসুন,’ তাগিদ দিল ও। ‘আমাদের জড়িয়ে যাওয়াটা ডিলাক পছন্দ করবে না।’

ডিলাকের কথা উল্লেখ করাতে কিশোরের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো।

‘এই অভিযান আমি পরিচালনা করছি,’ ঘাউ করে উঠল গ্যাগারিন। ‘ডিলাক নয়।’ কিশোরের দিকে ঘুরে চাইল সে। ‘কী ধরনের শিপ? কোথায় ওটা?’

‘আমি আপনাকে দেখিয়ে দেব,’ বলল কিশোর। ‘যদি খুঁজে পাই।’

ব্লাস্টার দিয়ে ওকে আলতো গুঁতো দিল গ্যাগারিন।

‘চলো!’

.

হ্যান্সি শূন্য ভিত্তিমূলটার দিকে চেয়ে রয়েছেন একদৃষ্টে, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ডোডেকাহেড্রন নেই।

ক্যারি তার গল্পটা আবারও বলছে।

‘আমরা ডক্টরকে বেরোতে দেখলাম-এবং এখানে ঢুকে দেখি, ডোডেকাহেড্রন উধাও!’

‘সে এখানে কতক্ষণ ছিল?’

‘অল্প কয়েক মিনিট মাত্র।’ মাথা নাড়লেন হ্যান্সি।

‘ওটা বয়ে নেয়া সম্ভব নয়। ডোডেকাহেড্রনের মত একটা জিনিস কেউ বইতে পারবে না। একা হাতে তো নয়ই।’

‘কিন্তু ডোডেকাহেড্রন আসলে কী ছিল?’ প্রশ্ন করল ক্যারি। ‘আমরা ওটার আকার, আকৃতি আর রং জানি, ওটা যখন এখানে ছিল আমরা ওটার এনার্জি আউটপুট মনিটর করতে পারতাম। কিন্তু আমরা ওটা সম্পর্কে আসলে কতটা জানতাম?’

শ্রাগ করলেন হ্যান্সি।

‘খুবই সামান্য। বছরের পর বছর ধরে আমরা থিয়োরি বানিয়েছি…’

‘আমাদের এনার্জির উৎস,’ তেতো স্বরে বলল ক্যারি। ‘আমাদের সভ্যতার প্রাণ, এমন এক যন্ত্র যার উপরে আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি-অথচ আমাদের আছে স্রেফ কিছু আবছা ধারণা।’

পাওয়ার রূমে একদল ডিয়ন সন্ন্যাসিনী প্রবেশ করেছে, এবং ফাঁকা ভিত্তিমূলটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। তাদের দেবতা তাদেরকে ত্যাগ করেছে।

হ্যান্সি ওদের উদ্দেশে মাথা ঝাঁকালেন।

‘হ্যাঁ-এবং সবকিছু হয়েছে ডিয়নদের জন্যে।’

পাওয়ার রূম অ্যানেক্স থেকে ওরা সবাই লাউডস্পিকারের শব্দ পেল।

‘সেন্ট্রাল কন্ট্রোল থেকে হ্যান্সিকে বলা হচ্ছে। সেন্ট্রাল কন্ট্রোল থেকে হ্যান্সিকে বলা হচ্ছে। পাওয়ার ড্রেইন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌছে গেছে।

‘গোটা শহর বরবাদ হয়ে যাবে,’ ফিসফিস করে বলল ক্যারি। ‘চেম্বারকে কতবার সাবধান করেছি…

দরজার দিকে শশব্যস্তে এগোল ওরা।

‘জানি, জানি’, সায় জানালেন হ্যান্সি। ‘আমাদের সবার মাটির ওপরে যাওয়া উচিত।’ এসো, তোমাকে আমার কন্ট্রোলে দরকার হবে।’

মুহূর্তের জন্য মনে হলো ক্রুদ্ধ, নীরব ডিয়নরা হয়তো ওঁদের পথরোধ করবে। ওঁরা দু’জনেই জানেন ডিয়নরা ডোডেকাহেড্রন খোয়া যাওয়ায় সাভাণ্টদের দুষবে। ক্যারি আর হ্যান্সি ….অবিচলিত পায়ে সামনে এগিয়ে গেলেন।

উত্তেজনাকর একটি মুহূর্ত পরে ডিয়নরা সরে দাঁড়িয়ে ওঁদের পথ করে দিল।

কৃতজ্ঞচিত্তে ওঁরা হনহন করে পা চালালেন।

.

কিশোর লতা-পাতা ভেদ করে বেরিয়ে-থাকা চকচকে ধাতবের দিকে আঙুল নির্দেশ করল।

‘ওই যে ওটা!’

সাগ্রহে গ্যাটাকরা ওকে সামনে এগোতে তাড়া দিল।

গ্যাগারিন হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। পাঁই করে ঘুরল সে, মুখের চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে।

‘এটা স্পেসক্র্যাফট, ঠিক আছে! আমাদের স্পেসক্র্যাফটের অন্য দিক। তুমি আমাদেরকে গোল করে ঘুরাচ্ছে।’

‘সরি,’ উজ্জ্বল কণ্ঠে বলল কিশোর। ‘আবার চেষ্টা করি আসুন।’

.

‘শুধু অতি প্রয়োজনীয় সার্ভিস,’ আদেশ করলেন হ্যান্সি। ‘অন্যান্য সেকশনগুলো বন্ধ করে দিন। আমি লাইটিং কমাচ্ছি, থার্মোস্ট্যাট টেম্পারেচার মিনিমামে নামিয়ে আনছি।’

সেন্ট্রাল কন্ট্রোলে ইতোমধ্যে ঠাণ্ডা আর অন্ধকার নেমে এসেছে। আসন্ন বিপর্যয়ের লক্ষণ ফুটে উঠেছে।

‘এতে কতক্ষণ সময় পাচ্ছি?’ প্রশ্ন করল ক্যারি।

‘প্রায় দু’ঘণ্টা। তুমি বরং জলদি করো, আর ওই সাব-কন্ট্রোল সেকশনগুলো চেক করো। অনেক কিছু ড্যামেজ হয়ে গেছে।’

ক্যারি চলে গেল এবং হ্যান্সি তাঁর পিছনে জড় হওয়া দলটার দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। ইসাস আর গ্রেবা হিরু চাচাকে জেরা করছেন, সে তার কথিত অপরাধের কাহিনি শুনছে।

‘একেবারে উধাও হয়ে গেছে!’ বিস্মিত হিরু চাচা প্রশ্ন করল। ‘স্রেফ উবে গেল? আমার যদ্দূর মনে পড়ে ডোডেকাহেড্রন এতবড় যে সরানো অসম্ভব, আমাকে সেরকমই বলা হয়েছিল। আপনারা আমাকে ওটা দেখতে দেননি।’

‘ডক্টর, প্লিজ,’ অনুনয় করে বললেন ইসাস। ‘আপনি আমাদের শহরটাকে পঙ্গু করে দিয়েছেন।’

‘ডোডেকাহেড্রনের কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করলেন গ্রেবা। ‘জবাব দিন, ডক্টর।’

‘আমি বারবার বলছি, আমি একটু আগে এসেছি। কী হয়েছে আমার জানা নেই। ‘

‘আপনি পাওয়ার রূমে ঢুকেছিলেন। আমি দেখেছি,’ চেঁচিয়ে উঠলেন গ্রেবা।

হ্যান্সি ওঁদের দিকে এগিয়ে এলেন।

‘ডক্টর, একাজ করার পিছনে আপনার যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, মোদ্দা কথা হচ্ছে ডোডেকাহেড্রনের এনার্জি ছাড়া এ শহর আর দু’ঘণ্টার মধ্যে মৃতনগরী হয়ে যাবে।’

হিরু চাচা অবাক চোখে গ্রেবার দিকে চেয়ে রইল।

‘আপনি আমাকে পাওয়ার রূমে ঢুকতে দেখেছেন? সত্যিই দেখেছেন?’

.

আবারও কিশোরের পিঠ ঠেকে গেল গ্যাযটাকদের স্পেসশিপের এক পাশে। এবার গ্যাগারিনের ব্লাস্টার হুমকি দিল ওকে।

‘কারণ দেখাও, কেন আমি তোমাকে খুন করব না,’ গজগজ করে বলল লোকটা।

‘অ্যান্টি-ক্লকওয়াইয রোটেশন,’ চট করে বলল কিশোর।

‘কী?’

‘ভুলে গেছিলাম গ্রহটা ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘোরে।’

‘কী বলছে ও?’ বিড়বিড় করে বলল পটোম্যাক। ‘ওকে খুন করে ফেলুন!’

গ্যাগারিন নিজের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দেখানোর সুযোগটা নিল। ‘এটা রিলেটিভ র‍্যাশনাল ডিরেকশনের প্রশ্ন। তুমি বুঝবে না। ‘তাতে কী যায় আসে?’

গ্যাগারিন কিশোরের দিকে চাইতেই ও হড়হড় করে বলল, ‘দেখতে পাচ্ছেন না? আমরা উল্টোদিক দিয়ে গেলে এখানে ফিরে আসতাম না!’ মাথার উপরে বাতাসে রহস্যময় চক্র কেটে ফালতু ব্যাপারটা এঁকে বোঝানোর চেষ্টা করল কিশোর।

কিশোরের ভাগ্য ভাল, গ্যাটাকরা হিংস্র হলেও বুদ্ধিতে মোটা। ‘ঠিক,’ ভারী কণ্ঠে বলল গ্যাগারিন। ‘আমি তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দেব। এবার যেন আর ভুল না হয়।’

আবারও রওনা হলো ওরা।

.

গোপন জায়গা থেকে উঁকি মেরে মুহূর্তের জন্য ডিলাক দেখল করিডর ফাঁকা।

করিডরে বেরিয়ে আসতে যাবে, এসময় নিজের ভিতর থেকে প্রচণ্ড এক চাপ অনুভব করল ও। সেই পৃথিবীবাসীটির ব্যক্তিত্ব নিজের অস্তিত্ব জাহিরের জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে। মুহূর্তের জন্য হিরু চাচার চেহারা ঝাপসা হয়ে এল এবং পৃথিবীবাসীটির চেহারা তার জায়গা নিল।

‘ওহ, না,’ খেঁকিয়ে উঠল ডিলাক। ‘তোমাকে আমার দরকার, আর্থলিং।

আসলে মগজের মধ্যে কোনওখানে পৃথিবীবাসীটির কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে ডিলাক।

‘আমাকে যেতে দাও,’ ক্ষীণ স্বরে বলছে ওটা। ‘আমাকে যেতে দাও, তোমার কোন অধিকার নেই…’

‘মোটেই নেই, আর্থলিং-কিন্তু প্রশ্নটা অ্যাকাডেমিক!’ প্রচণ্ড চেষ্টার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল ডিলাক। পৃথিবীবাসীর চেহারা ঝাপসা হয়ে গেল। এবং হিরু চাচার রূপ ফুটে উঠল, তবে সবুজ রঙ আর ক্যাকটাসের কাঁটা রয়ে গেল।

লড়াইটা দুর্বল করে দিয়েছে ডিলাককে। ফলে, আপাতত পালানোর চিন্তা বাদ দিয়ে গোপন জায়গায় আবার গা ঢাকা দিল।

.

হিরু চাচা তখনও নিজের নির্দোষিতার কথা বলে যাচ্ছে।

‘আপনারা কিশোরকে খুঁজে আনছেন না কেন? ও বলবে আমি সত্যি বলছি কিনা।’

গ্রেবার কণ্ঠে তাচ্ছিল্য।

‘এই ছেলেটা যদি সত্যি থেকেও থাকে, ওর গল্প কোন কিছুই প্রমাণ করবে না…’

হিরু চাচার চোখে ব্যথিত চোখে চাইলেন ইসাস।

‘আপনি যে ডিয়ন শপথ নিয়েছিলেন সেটাও কি স্বীকার করবেন না? এবং পাওয়ার রূমে যে ঢুকেছিলেন?’

ভ্রূ কুঁচকে গেল হিরু চাচার।

‘সমস্যাটা মনে হয় ধরতে পারছি।’

হ্যান্সি ঘুরে দাঁড়ালেন।

‘শহরটা বন্ধ করে দেব। তারপর প্রতিটা ইঞ্চি তন্নতন্ন করে খুঁজব।’

‘না, দাঁড়ান,’ জরুরি কণ্ঠে বলে উঠল হিরু চাচা। ‘তিনটে সম্ভাবনা আছে। এক, ক্রনিক হিস্টেরেসিস। আমি এর আগে ওর মধ্যে আর পড়িনি। এবং ওটা মনে হয় আমার একটা টাইম ইমেজ প্রজেক্ট করেছে। এটা থিয়োরিটিক্যালি সম্ভব-আমার ধারণা।’

‘এবং আমার ধারণা আপনি একটা ঠগ এবং মিথ্যুক,’ বললেন গ্ৰেবা।

‘সেটা দ্বিতীয় সম্ভাবনা, তবে এরকম মনে করার কোন কারণ নেই!’

‘কেন?’

‘কারণ আমি ও ধরনের লোক নই!’

‘আর তৃতীয় সম্ভাবনা?’ ইসাসের প্রশ্ন।

‘এখানে আমার নকল কেউ এসেছিল!’

.

গুহার কাছে ডিলাক যেখানে ঘাপটি মেরে আছে, সেখানে পাথুরে দেয়ালে একটা সাব-কন্ট্রোল বক্স সেট করা। ক্যারি যে সাব- ইউনিটগুলো পরীক্ষা করতে এসেছিল, এটা তারই একটা। সঙ্গী টেকনিশিয়ানের দিকে ঘুরে চাইল ও।

‘আমি এটা দেখছি। আপনি সেকশন ফোরের ফুড বে-তে গিয়ে রে-ল্যাম্পগুলো বন্ধ করুন।’

করিডর ধরে পা চালাল সহকারী।

ক্যারি কন্ট্রোল বক্স খুলে এনার্জি সেটিংগুলো বন্ধ করতে লাগল। হঠাৎই একটা কাঁটাযুক্ত হাত বেরিয়ে এসে ওর মুখ চেপে ধরল, এবং ওকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল হাইড্রোপনিক্স কামরার শীতল, সবুজ অন্ধকারে।

.

সেন্ট্রাল কন্ট্রোলে এখন ক্রমেই ঠাণ্ডা বাড়ছে, এবং বাতিগুলো নিভু নিভু হয়ে আসছে। হ্যান্সি বললেন, কয়েকটা সাব-করিডরে বরফ জমাট বাঁধছে। আর বেশিক্ষণ এসেনশিয়াল সার্ভিসগুলো চালু রাখতে পারব না। আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।’

‘এক সেকেণ্ড,’ বললেন ইসাস। হিরু চাচার দিকে ফিরে চাইলেন। ‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই, ডক্টর, কিন্তু নিজের চোখকে অবিশ্বাস করা কঠিন।’

‘আসল-নকলদের নিয়ে এই-ই সমস্যা। আপনি বুঝবেন না কোন্‌টা কে? তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত থাকুন, শহর যেহেতু সিল করে দেয়া হয়েছে, ডোডেকাহেড্রন এখানেই কোথাও আছে।’

গ্রেবার দিকে চাইলেন ইসাস। মাথা নাড়লেন তিনি।

‘একে বন্দি করুন। একে আর পাওয়ার রূমে ঢুকতে দেয়া যাবে না।’

একবারের জন্য হলেও ইসাস একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন।

‘না, গ্রেবা, মনে হচ্ছে এটাই একমাত্র পথ। ডক্টর, আমরা একসঙ্গে পাওয়ার রূমে যাব।’

‘বেশ তো,’ বলল হিরু চাচা।

ইসাস আর হিরু চাচা কন্ট্রোল রূম ত্যাগ করল।

গ্রেবা স্থিরদৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে রইলেন, রাগে মুখ আঁধার হয়ে গেছে।

‘না, ইসাস,’ আপনমনে ফিসফিস করে বললেন, ‘আরেকটা পথ আছে!’

.

ক্যারি তার আটককারী অদ্ভুত জীবটির দিকে মুখ তুলে চাইল। এমুহূর্তে সবুজ রং নেই, কাঁটা উধাও, এডেনে খানিক আগে আসা সেই ডক্টরকে দেখা যাচ্ছে।

‘ডক্টর, আপনি কেন চাইছেন আপনাকে আমি শহর ছাড়তে সাহায্য করি?’

‘কারণ আমি ডক্টর হিরন পাশা নই!’

‘তা হলে কে আপনি?’

‘আমি ডিলাক—শেষ আলফা-তুরান।’ ওর কণ্ঠে প্রচণ্ড অহঙ্কার ফুটে উঠল, এবং মুহূর্তে নবুজ রং আর ক্যাকটাসের কাঁটা উদয় হলো। এবার আবার মিরে গেল সেগুলো।

‘আলফা-তুরা, সেই মৃত গ্রহ?’

‘হ্যাঁ!’

‘কিন্তু সেজন্য আমি আপনার কথা শুনতে যাব কেন? আপনি এখানে কেন এসেছেন?’

‘এটার জন্যে!’ ডিলাক একটা হাত বাড়িয়ে দিল।

ওর হাতে ধরা জিনিসটার দিকে আতঙ্ক আর অবিশ্বাস নিয়ে চেয়ে রইল ক্যারি।

‘কিন্তু এটা তো অসম্ভব!’

‘হ্যাঁ,’ সগর্বে বলল ডিলাক। ‘একেবারেই অসম্ভব!’