৭
—‘তুই নাকি আবার কবিতা লিখছিস?’
ঘুঁটু চায়ের কাপে আলতো চুমুক দেয়৷ তার বহরের জন্য সে সবসময়ই ঘামে৷ তার কপালে ঘাম জমছিল৷ গহন সেটা লক্ষ করেই এ. সি. চালিয়ে দেন৷
—‘কবিতা লিখছি কিনা জানি না—কিন্তু কিছু একটা লিখছি৷’
—আমাকে ‘স্বদেশ’-এর সম্পাদক বললেন তুই ওঁদের স্পেশ্যল ইস্যুতে কবিতা দিবি বলেছিস৷’
—‘ঠিকই শুনেছিস৷’ গহন শান্ত স্বরে বললেন—‘তবে কবিতা লিখব বলিনি৷ বলেছি কিছু একটা লিখব৷’
—‘তুই কবিতা ছাড়া আর কী লিখবি!’ ঘুঁটু অবাক৷
তিনি স্মিত হাসলেন—‘এর আগেও কি আদৌ কবিতা লিখছিলাম! যাইহোক, এবার অন্তত কিছু লেখার চেষ্টা করব৷’
—‘তাহলে আমাদের ম্যাগাজিনে একটা কবিতা দে গহন৷ অনেকদিন তোর লেখা পড়িনি৷’
ঘুঁটুর চোখ আমেজে বুজে আসে—‘আহা, কী জলতরঙ্গের মতো শব্দ, কী রোম্যান্টিসিজম, কী অদ্ভুত ছন্দ!…ভীষণ মিস করি তোর লেখা৷’
গহন তার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন৷
—‘ঘুঁটু, তুই কি সত্যিই আমার লেখা চাস? না ফরমায়েশি লেখা চাইছিস?’
—‘ফরমায়েশি লেখা কখন চাইলাম!’ ঘুঁটু আকাশ থেকে পড়ে৷
—‘এই যে বললি জলতরঙ্গের মতো শব্দ, রোম্যান্টিসিজম, ছন্দ—এটসেট্রা, এগুলো যদি বাদ দিয়ে দিই—তবেও কি আমার কবিতা চাইবি?’
সে অবাক হয়ে গহনের দিকে তাকিয়ে আছে৷ গহন আপনমনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন৷ এরা তাঁকে রোম্যান্টিক কবির ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে৷ এ ট্যাগ ভেঙে বেরোতেই হবে তাঁকে৷ তিনি প্রসঙ্গ পালটালেন—‘অসিতদা কেমন আছেন?’ ঘুঁটুর মুখে হতাশার ছাপ পড়ল—‘আছেন একরকম৷ কথাবার্তা বলেন না৷ ঠিকমতো চিনতেও পারেন না৷ হাতটা হয়তো ফিজিয়োথেরাপিতে খানিকটা ঠিক হবে৷ কিন্তু মানসিক অবস্থা খুব খারাপ৷ ডাক্তার বলছে— ডিপ্রেশন৷’
গহনের মনে পড়ল অসিতদার বলা কথাগুলো৷ কথা নয়, যেন হাহাকার! তবে কি তাঁর মনের অবচেতনে কোথাও অন্য কোনো সুপ্ত বাসনা ছিল? আদর্শের জন্য তাকে অবহেলা করেছেন? আর তাই হয়তো এই শেষ বেলায় অবহেলিত ইচ্ছেগুলো তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে অবচেতনে৷ ঘিরে ফেলেছে নিরন্তর হতাশায়৷
—‘এখন আর কবিতা লেখেন না?’
—‘ওটাই শুধু আছে৷’ ঘুঁটু বলে—‘হাতের কাছে কাউকে পেলেই তাকে ইশারায় খাতা-পেন আনতে বলেন৷ তারপর লাইন-বাই-লাইন বলে যান৷ কবিতা শেষ হয়ে গেলে ফের কী চিন্তায় যেন ডুবে যান৷ আর কিছু বলেন না৷ এই তো কালই এই কবিতাটা আমি কপি করেছি৷’
সে ব্যাগ থেকে একটা নোটবুক বের করে আনে৷ গহন কবিতাটা পড়লেন—
আমাকে দিয়েছ তুমি বুদ্ধি, মন, ইন্দ্রিয়নিচয়;
শ্রেষ্ঠত্বের যত পরিচয়—
বিবেকের কশাঘাত, বুদ্ধির আলো
মনুষ্যত্ব বিকাশের সুবর্ণসুযোগ—
শব্দে শব্দে সন্ধির যোগ!
মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়নি আমার
জীবনের গুরুভার বইতে পারিনি আর
আশ্চর্য ভাতের গন্ধে ভরেছিল আকাশ
তখন বসন্ত মাস৷
অহো! কী অবর্ণনীয় শোভা!
ভাতের চেয়েও কি সে বেশি মনোলোভা!
যে বালক উঠোনে বাঘবন্দি খেলত
বসন্ত তার জীবনে এসেছে কখনও….
কবিতা-আজ তুমি শোনো—
মনুষ্যত্ব ছিল আমার,
সুযোগ ছিল, ইন্দ্রিয় ছিল,
ছিল বিবেক, বুদ্ধিও ছিল
শুধু বিষ…বিষে ভরেছি অণু-পরমাণু
আমি অমানুষ
তিনি কবিতা পড়া শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন৷ নোটবইটা ঘুঁটুকে ফেরত দিয়ে বলেন—‘তুই আমার কবিতা চাইছিলি না? তার জায়গায় এই কবিতাটা ছেপে দে৷’
—‘খেপেছিস!’ ঘুঁটু প্রায় লাফিয়ে ওঠে—‘অসিতদা চিরকাল প্রতিষ্ঠানবিরোধী! আমি যদি পত্রিকায় এই কবিতা ছাপাই তাহলে উনি আত্মহত্যা করবেন!’ এমনিতেই মানুষটা আধমরা হয়ে আছে৷ তুই কি ওঁকে পুরোপুরি মারতে চাস গহন?’
গহন স্মিত হাসলেন৷ ঘুঁটুর কাঁধে হাত রেখে বলেন—‘আমি আমার কথা বললাম৷ তুই ভেবে দেখ৷ তবে আমার মনে হয় না অসিতদা আত্মহত্যা করবেন!
ঘুঁটু আরও কিছুক্ষণ থেকে, কিছু চানাচুর আর কুকি ধ্বংস করে অবশেষে উঠে পড়ল৷ তাকে ফের অফিসে ফিরে যেতে হবে৷
ঘুঁটুকে বিদায় দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলেন গহন৷ টেবিলের ওপরে বইপত্র অগোছালো ভাবে পড়েছিল৷ শুঁটকির কাছ থেকে বেশ কিছু বই নিয়ে এসেছিলেন৷ সেগুলোকে সকাল থেকে পড়ছেন৷ কিন্তু নিরুপদ্রবে পড়তে পারছেন না৷ কী করে যেন চতুর্দিকে রাষ্ট্র হয়ে গেছে যে, কবি গহন দত্তগুপ্ত ফের লেখালেখি শুরু করেছেন৷
ব্যস, তারপর থেকেই একের-পর-এক ফোন৷ একের-পর-এক আবদার৷ কারুর পাঁচটি প্রেমের কবিতা চাই, কারুর নিশিগন্ধা সিরিজের নতুন কবিতা লাগবে, কারুর-বা আবার বক্তব্য—‘দাদা, প্লিজ একটা কবিতা দিন৷ আপনার নামে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছি৷ এখন কবিতা না পেলে নাক কাটা যাবে!’
কতজনের নাক রক্ষা করবেন গহন? মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন৷ আশ্চর্য আক্কেল এদের! বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে একবার জিজ্ঞাসা করে নেয় না কেন? অনুমতি ছাড়াই তাঁর নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে বসে আছে! যেন ওদের নিজের ওপর নিঃশর্ত জোতদারি দিয়ে দিয়েছেন তিনি!
আলগোছে বইগুলো টেবিলের ওপর থেকে শোকেসে তুলে রাখছিলেন গহন৷ শুঁটকির বই বলে কথা! একটা আঁচড় লাগলেও সে গহনের মুন্ডু চিবোবে৷
কণা তখন বেডরুমে বসে টি.ভি দেখছিলেন৷ রোজ বিকেলে খবরটা দেখা তাঁর প্রাত্যহিক অভ্যাস৷ কোথায় কী হচ্ছে তা না দেখলে রাতের খাবার হজম হবে না তাঁর৷
আজও চ্যানেল বদলে বদলে প্রাত্যহিক খবর দেখছিলেন তিনি৷ ফিলমের গসিপ, নায়ক-নায়িকার ইন্টুপিন্টু রসিয়ে রসিয়ে পরিবেশন করছে উপস্থাপিকা৷ তিনি চ্যানেল বদলালেন৷ এসব চটুল খবর শুনতে ভালো লাগে না৷
পরের চ্যানেলে যেতেই টিভিতে ভেসে উঠল চতুষ্কোণ পর্দায় মারপিটের দৃশ্য৷ প্রতিবাদ মিছিলের ওপর অন্যায়ভাবে পুলিশের লাঠিচার্জ! পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে যে, প্রতিবাদ মিছিল সহিংস হয়ে উঠেছিল৷ তারা গাড়ি ভেঙেছে, বাস জ্বালিয়েছে, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে পরিচিত মানুষদের মেরেছে৷ অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্যই পুলিশের এই পদক্ষেপ৷
পুলিশের দাবি, তারা ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করেছে৷ সরাসরি গুলি চালায়নি৷ অথচ সাংবাদিকের ক্যামেরায় বুলেটের আঘাতে নিহত যুবকের দেহ! কণা দেখলেন রাস্তার ওপরে রক্তাক্ত দেহের ভিড়! অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে তাদের৷
দেখতে দেখতেই তাঁর চোখ বিস্ফারিত! এ কী দেখছেন! হঠাৎ যেন শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করল৷ সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন—‘গহন…’
তাঁর আর্ত চিৎকার শুনেই গহনের হাত থেকে বইগুলো পড়ে গেছে৷ তিনি প্রায় দৌড়ে এসেছেন৷ কণার মুখ উত্তেজনায় লাল! দমকে দমকে উঠে আসছে কাশি৷ কিছু বলার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু পারছেন না৷
—‘কণা…৷’ গহন ব্যাকুলভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরে মাথায়, গায়ে হাত বুলিয়ে শান্ত…করার চেষ্টা করছেন৷ কণা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে এরকম শ্বাসকষ্ট আর কাশি হতে থাকে৷ তিনি তাঁকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন—‘কণা…কণা কী হয়েছে? জল খাবে?’
কণা জোরে জোরে শ্বাস টানছেন৷ কোনোমতে আঙুল তুলে নির্দেশ করলেন টি.ভি-র দিকে৷
‘—জল খাও৷’
বিছানার পাশেই জলের গ্লাস ছিল৷ সেটা কণার হাতে ধরিয়ে টি.ভি.-র দিকে তাকালেন তিনি৷ কী দেখে কণা এত উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন সেটাই দ্রষ্টব্য বিষয়৷
কিন্তু যা দেখলেন তাতে তাঁরও চেতনা যেন কয়েকমুহূর্তের জন্য বিলুপ্ত হল! কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় অনেকের মধ্যেই পড়ে আছে একটা পরিচিত মানুষের নিথর দেহ৷ তখনও বুকের মধ্যে বাচ্চাটা সুরক্ষিত! চোখ দুটো স্থির!
তিনি ধপ করে বসে পড়লেন বিছানার ওপর৷ চোখে জল এল না৷ মনে হল চতুর্দিকের আলো নিভে গেছে৷ পায়ের তলায় মাটি কাঁপছে৷ অনাবিল অন্ধকার…! এখন শুধু অন্ধকার…! কোনো শব্দ নেই….শব্দ নেই…!
.
বৃষ্টির ফোঁটা হতে চেয়েছিল, ভাসানে বৃষ্টি নয়
দু-এক পশলা ইলশেগুঁড়িতে একমুঠো পরিচয়৷
যেমন বর্ষা ফিরে ফিরে আসে, শ্রাবণ আকাশ জানে
মন কেমনের মেঘ জমে ওঠে বাউলের গানে গানে
তেমনই মেঘে সে বুকে ধরেছিল—অলীক রূপান্তর!
বৃষ্টি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে আমার বারিশকর৷
লোকে বলে ‘খ্যাপা’ বৃষ্টি কি আসে নাগরিক চিন্তনে?
পাগলটা তবু জল ছুঁয়ে যায় বর্ষার ইন্ধনে৷
ছাতের উপরে মই লাগিয়েছে, মেঘ থেকে জল পাড়ে৷
কখনো-সখনো গান গেয়ে ওঠে আবিষ্ট মল্লারে৷
চালচুলো নেই, নেই কোনো দাবি; হতভাগা এমনে
কখন শিরায় মেঘ নেমে আসে, শুধু সে প্রহর গোনে৷
ছেড়ে যায় সুখ, কুয়াশায় ঢাকা নিভৃত বন্দর;
দুঃখের সাথে কানামাছি খেলে আমার বারিশকর৷
আমরা দালাল—হিরের মূল্যে বৃষ্টির কণা বেচি,
কত হাঁকেডাকে শূন্য কুম্ভ, কত ভাঁটে চেঁচ্যামেচি!
ঝরিয়ে, ডুবিয়ে, ভাসিয়ে দেওয়ার নানাবিধ কারিকুরি
আসলে সবাই বৃষ্টির নামে জলের আত্মা খুঁড়ি৷
আমরা দেশের কৃতীসন্তান, অনোখা যুগন্ধর!
ভিড় থেকে দূরে একা একা হাসে আমার বারিশকর৷
যে লোকটা মারে তার রং লাল—যে লোকটা মরে নীল৷
এ শালার দেশ শুধু রং চায়, রঙিন মুখ মিছিল!
লাল, নীল, কালো কমলা হলুদ—পরিচয় রঙে বাঁধা!
বারিশকরের কোনো রং নেই—আসলে সে এক ধাঁধা৷
নয় সে মানুষ, নয় সে ক্যাডার৷ দেবতা কদাপি নয়—
নেই তার গুলি মারার সাহস, নেই মৃত্যুর ভয়৷
কী জাতীয় লোক? মুখোশের ভিড়ে মুখ হয়ে কেন আসে?
এত কিছু ছেড়ে মানুষটা কেন বৃষ্টিকে ভালোবাসে!
সত্যি পাগল? অথবা কি কোনো হারামি ধুরন্ধর?
পরিচয় শুধু একটাই তার, আমার বারিশকর!
অস্ত্রকে যারা বাগিয়ে ধরেছে ঢ্যামনা সাপের রাগে
নিজের পাছায় চালালে হত না, ধান্দাবাজির আগে?
আপনাদের লাঠি চেনে না মানুষ, শোনে না কান্না হাসি—
দমনকারীর হাতে ফণা তোলে বিমূঢ় খুনপিয়াসী—
বারিশকরের গ্রহে লাঠি নেই, আছে নির্জরা ফুল
লাঠির প্রহারে হেসে উঠেছিল, আঘাতের এ কী ভুল!
ফেটে গেল তার বুকের ধমনি ফেটে গেল হূদশিরা!
বুক ভাঙা শ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে জলের বিষম ব্রীড়া!
লোহিত গন্ধী প্রতিঘাতে তার বৃষ্টির ছল ছল
রক্ত কোথায়! মানুষ কোথায়! এ যেন গভীর জল!
হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বড়োই স্বার্থপর
বর্ষায় আজ দু-চোখে নেমেছে আমার বারিশকর!
রামহনু মন্তব্য করল—‘এ কী লিখেছেন দাদা! কম্পিউটার স্ক্রিন ঝাপসা দেখছি! হ্যাটস অফ! টুপি বিয়োজন!’
কুবলাশ্ব লিখেছে—‘অসম্ভব মর্মস্পর্শী৷ ভীষণ মানবিক৷ অপূর্ব কবিতা৷ স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলাম৷’
মুমতাজ জানাল—‘এটা বোধহয় এই সাইটে আমার পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা৷ কুডোস৷’
.
মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে চোখ সজল হয়ে উঠছিল গহনের৷ বুকের মধ্যে অদ্ভুত অপরাধবোধের ওঠাপড়া৷ ঘন অন্ধকার ঢেকে রেখেছে তাঁর অবয়ব৷ গভীর রাতের নৈঃশব্দ্যে নিজের হূদস্পন্দনের আওয়াজও পাচ্ছিলেন তিনি৷
একটু দূরেই সোফার ওপরে ঘুমিয়ে আছে গোপাল৷ গত তিন দিন ধরে সে একটা কথাও বলেনি৷ শুঁটকির মুখাগ্নি ওই বাচ্চা ছেলেটাই করেছে৷ ইলেকট্রিক চুল্লি যখন ওর দেহটা গিলে নিল, তখনও গহন একদৃষ্টে তাকিয়েছিলেন সেইদিকে৷ ভাবছিলেন, তাঁর জীবনসঙ্গী আজ তাঁকে ছেড়ে চলে গেল৷
শুঁটকির চশমার শোরুম আপাতত বন্ধ৷ ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে এসেছেন গহন নিজেই৷ তার জিনিসপত্র কিছুই নাড়াচাড়া করেননি৷ শুধু গোপালকে সঙ্গে এনেছেন৷ ছেলেটা শুঁটকির মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি৷ কেমন যেন হতভম্বের মতো ‘থ’ হয়ে বসেছিল৷ মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে একফোঁটা চোখের জলও ফেলেনি সে৷ সকালে যে মানুষটা হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, রাত্রে সে এমন নিথর হয়ে ফিরল কেন—এই জিজ্ঞাসা তার মনের মধ্যে নিরন্তর ঘুরে বেড়াচ্ছিল৷
এই প্রশ্নের উত্তর বোঝার বয়েস ওর এখনও হয়নি৷ গহন তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাও করেননি৷ শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পর চুপচাপ তার হাত ধরে এনে তুলেছিল নিজের বাড়িতে৷ কণা তাকে এ ক-দিন বুক দিয়ে আগলিয়েছেন৷ গোপাল নীরবে নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষদের সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছে৷ কিন্তু একটা কথাও বলেনি৷ যেন সে বোবা হয়ে গেছে!
কণা তার এই নীরবতায় শঙ্কিত—‘ও কাঁদছে না কেন গহন? কথা বলছে না কেন?’
গহন নিজেও আশঙ্কিত হচ্ছিলেন৷ ওইটুকু ছেলের মনের ভেতরে কী হচ্ছে কে জানে! শোকের এ প্রকাশ বড়োই গভীর৷ আশঙ্কাজনকও বটে৷
তিনি কম্পিউটার শাট ডাউন করে গোপালের পাশে গিয়ে বসলেন৷ ছেলেটা শরীরটাকে কুঁকড়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে৷ কী মনে করে তার মাথায় হাত রেখেছেন৷ স্নিগ্ধস্বরে ডাকলেন—‘গোপাল৷’
গোপাল আধো তন্দ্রায় একবার নড়ে ওঠে৷ কিন্তু চোখ মেলে তাকাল না৷
—‘গোপাল৷’
এবার সে মিটমিট করে তাকায়৷ গহন তাকে হাত ধরে টেনে তোলেন৷
—‘আয়৷ তোকে একটা জিনিস দেখাই৷’
নীরবে তাঁর হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল বাচ্চা ছেলেটা৷ গহন কোনো কথা না বলে ওকে ছাতে নিয়ে এলেন৷ চতুর্দিক এখন নিস্তব্ধ৷ একটা জোলো হাওয়া শিরশির করে বয়ে যাচ্ছিল দুজনকে ছুঁয়ে৷ আকাশে আজ মেঘ নেই৷ তারাগুলো ঘুম ঘুম চোখে সবিস্ময়ে তাকিয়ে আছে৷
—‘ওই দেখ৷’ গহন আঙুল দিয়ে একটি বিশেষ নক্ষত্রকে নির্দেশ করলেন৷ নক্ষত্রটা কৃশ৷ তার চোখ ধাঁধানো জ্বলজ্বলে দ্যুতি নেই৷ কিন্তু অদ্ভুত এক নীলাভ আভায় উজ্জ্বল করে রেখেছে চতুর্দিক৷ সেই তারাটাকে দেখিয়ে বললেন—‘ওই দেখ, তোর বাবা৷’
গোপাল অবাক হয়ে গহনের দিকে তাকায়৷ তারপর নক্ষত্রটার দিকে৷ নক্ষত্রটা তখনও মায়াময় প্রভা ছড়িয়ে স্নিগ্ধ হাসছে৷ ঠিক যেন গোপালের দিকেই তাকিয়ে সকৌতুকে চোখ পিটপিট করছে৷ অবিকল শুঁটকির মতন!
এই প্রথম তার অধর স্ফুরিত হল৷ তারাটার দিকে তাকিয়ে অভিমানে গাঢ় হয়ে এল দৃষ্টি! একটা অস্ফুট ফোঁপানির শব্দ পেলেন গহন৷ কয়েক মুহূর্ত পরেই বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ল গোপাল৷ গহনকে জড়িয়ে ধরে সে কাঁদছে৷ অন্তর থেকে একটা ভীষণ আন্দোলন নিয়ে উঠে আসছে যন্ত্রণাকাতর গোঙানি!
গহন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন৷ তাঁর চোখ বেয়েও অশ্রু টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে৷ মনে হল, কে যেন কানে ফিসফিস করে বলল—‘দেখলি শালা! আমায় নিয়ে সেই কবিতা লিখতেই বসলি৷’
তিনি নক্ষত্রটার দিকে তাকিয়েছেন৷ মনে মনে বললেন—‘আমায় ক্ষমা করে দিস, শুঁটকি৷ আমি কবিতা না লিখে পারলাম না!’
.
‘একা মেঘ ও বারিশকর!’
বইটার নাম দেখেই চমকে উঠল মন্দার৷ কবির নাম গহন দত্তগুপ্ত! লোকমুখে আগেই শুনেছিল যে তিনি আবার লিখতে শুরু করেছেন৷ কিন্তু দু-মাসের মধ্যেই যে তাঁর নতুন বই রিলিজ করবে তা জানা ছিল না৷
চমকটা সেখানে নয়! ‘একা মেঘ’ এবং ‘বারিশকর’ দুটো শব্দই তার ভীষণ পরিচিত৷ ঠিক দু-মাস আগেই কবিতা ডট কম-এ ‘একা মেঘ’ ‘বারিশকর’ নামের একটা কবিতা পোস্ট করেছিল!
সে বইটা আগাপাশতলা পড়ে ফেলল৷ পড়তে পড়তে তার বিস্ময় ক্রমাগতই বাড়তে থাকে৷ এই বইটার অন্তত চারটে কবিতা ডট কম-এ ‘একা মেঘ’ পোস্ট করেছিল! ‘মধ্য ভগবান’ ‘চারাগাছ’ ‘ফিনিক্সের জন্ম’ এবং ‘বারিশকর!’
মন্দার স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে৷ তার মাথায় সব তালগোল পাকাতে শুরু করেছে৷ ‘একা মেঘ’ তবে….!
সে মোবাইল ফোনের ফোনবুক থেকে গহন দত্তগুপ্ত-র ল্যান্ডলাইন নম্বর বের করে ডায়াল করল৷ কিছুক্ষণ একঘেয়ে রিংটোন৷ তারপরই একটা মোলায়েম শান্ত পুরুষ কণ্ঠস্বর—‘হ্যালো৷’
মন্দারের বুক ঢিপঢিপ করে৷ এ কণ্ঠস্বর তার পরিচিত৷ গহন দত্তগুপ্ত’র বাড়ির জমায়েতে আগে শুনেছে৷ তবু সংকোচে জানতে চায়—
—‘কবি গহন দত্তগুপ্ত…?’
—‘বলছি৷’
তার গলাটা একটু কেঁপে যায়—‘আপনার নতুন বইটা পড়লাম৷ একটা প্রশ্ন করতে পারি?’
—‘বলুন৷’
—‘আপনি কি কখনও ‘কবিতা ডট কম-এ’ কবিতা লিখতেন? মানে আপনিই কি…‘একা মেঘ?’
ও-প্রান্তে হাসির শব্দ৷ গহন দত্তগুপ্ত হাসছেন৷ হাসতে হাসতেই বললেন— ‘হ্যাঁ, আমিই৷ আপনি?’
—‘আমি…মানে!’ মন্দারের তখনও বিশ্বাস হয় না৷ সে তখন নিজেকে রীতিমতো চিমটি কাটছে—‘আমি রামহনু!’
গহন ফের হেসে ফেললেন—‘হ্যাঁ, রামহনু৷ বলুন৷’
—‘আমায় আবার বলুন কেন দাদা? তুমি করেই তো ডাকতেন৷’
—‘বেশ৷ বলো৷’
—‘ইয়ে…মানে৷’ সে জিভ কেটে বলল—‘আপনার সঙ্গে বড্ড অন্যায় করেছি৷ অনেক উলটো-পালটা কথা বলেছি…৷’
—‘উপকার করেছ ভাই৷’ মোলায়েম স্বরে উত্তর এল— এর আগে আমার ‘ঝুলস্য ঝুল’ কবিতাগুলোকে কেউ এভাবে মুখের ওপর ‘ঝুলস্য ঝুল’ বলতে পারেনি৷ তুমি পেরেছ৷ থ্যাঙ্কস টু ইউ৷’
মনে মনে আর-একবার জিভ কাটে মন্দার—‘আমি কি একবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারি? জাস্ট একবার ‘সরি’ বলার জন্য৷’
—‘সরি বলার জন্য এসো না৷ বরং এক কাপ চা খেতে আসতেই পারো৷’
—‘তাহলে কবে আসব? আজ কি আপনার সময় হবে…?’
—‘নিশ্চয়ই৷’ এককথায় রাজি হয়ে গেলেন গহন—‘এখনই চলে এসো৷ আমিও দেখি ‘রামহনু’ কীদৃশ জীব!’
মন্দারও এবার হাসল৷’—‘ইয়ে…আর একটা রিকোয়েস্ট ছিল৷’
—‘বলো৷’
—‘আপনার ডিডাকশনটা একদম ঠিক৷ ‘কুবলাশ্ব’ কোনো ব্যাটা নয়, বেটিই৷ আর…মানে…৷’ সে একটু লজ্জিত ভাবে বলে…‘আমরা দিন পনেরো আগেই বিয়ে করে ফেলেছি৷ তাই যদি অনুমতি দেন তবে ওকেও…৷’
—‘কুবলাশ্ব আর রামহনু!’ এবার অট্টহাসির শব্দ—‘চমৎকার জুটি৷ সস্ত্রীক চলে এসো৷ চায়ের নেমন্তন্ন রইল৷’
ফোনটা কেটেই ঊর্মির নম্বর ডায়াল করে মন্দার৷ ঊর্মি তখন খুব মন দিয়ে কপালে সিঁদুরের টিপ পরছিল৷ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই চমকে উঠেছে৷ ফলস্বরূপ টিপটা ধেবড়ে গেল৷
হাতের শাঁখা-পলা, সোনার চুড়ি ঝনঝনিয়ে ফোনটা ধরল সে—‘বলো৷’
—‘তুমি এখনই তৈরি হয়ে নাও৷’ ও-প্রান্তে মন্দার উত্তেজিত—‘আমি দশ মিনিটের মধ্যেই বাড়ি আসছি৷ তারপর তোমায় নিয়ে একজনের বাড়ি যাব৷’
—‘কার বাড়ি?’
—‘এখন অত এক্সপ্লেইন করার সময় নেই৷ তাড়াতাড়ি রেডি হও৷ যেতে যেতে সব বলব৷ এখন সব কথা বলার সময় নেই সোনা৷’ মন্দার ফোন রাখার আগে ফোনেই একটা চুমু ছুড়ে দেয়—‘ভালোবাসি৷’
ঊর্মি লাজুক হয়ে বলে—‘আমিও৷’
‘গহন দত্তগুপ্তের নতুন বই ‘একা মেঘ’ ও ‘বারিশকর’ সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই৷ কবির স্বেচ্ছা-অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল৷ অন্তত সেক্ষেত্রে তাঁকে কবি হিসাবে লোকে মনে রাখত!’
—দৈনিক খবর
‘একা মেঘ’ ও ‘বারিশকর’ বইটি পড়ে অবাক হলাম৷ কবি গহন দত্তগুপ্ত প্রায় পাঁচ বছরের স্বেচ্ছা-অবসর ভেঙে এই জাতীয় কবিতা লিখতে কেন ফিরে এলেন বুঝলাম না! তাঁর কবিতায় চিরকালই অদ্ভুত এক বিমূর্ত রোমান্টিসিজম থাকত৷ কিন্তু ‘একা মেঘ’ ও ‘বারিশকরের’ প্রত্যেকটি কবিতাই যেন ঝান্ডা তুলে চলেছে! কবি কি সম্প্রতি কোনো রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন?
—ভোরের কাগজ
‘‘একা মেঘ’ ও ‘বারিশকরের’ প্রতিটি কবিতাই প্রায় আখ্যানধর্মী৷ গহন দত্তগুপ্ত-র কলমে যেমন আতুর, নরম শব্দ গুচ্ছ পাওয়া যায়, এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি সম্পূর্ণ তার বিপরীত৷ কবিতাগুলিকে কবিতার চেয়ে স্লোগান বলেই বেশি মনে হয়৷’
—তাজা সংবাদ
‘‘একা মেঘ’ ‘বারিশকর’ কাব্যগ্রন্থের কোনো কবিতাতেই গহন দত্তগুপ্ত তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করেননি৷ বরং কবিতার রহস্যময়তার সর্বনাশ করেছেন৷
—পাক্ষিক কুরুক্ষেত্র
আজও বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল৷ এই কয়েক মাসে বৃষ্টির চেহারায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ শুধু প্রথমদিকে বেশ ছিপছিপে তরুণীর মতো সুললিত পায়ে আসত৷ টুপুর-টাপুর শব্দে সলজ্জ ভঙ্গিতে ঝরে পড়ত৷ আর এখন যেন ঘুসি পাকিয়ে পালোয়ানের মতো হুড়মুড়-দুড়দাড় করতে করতে আসে৷
কণার বিছানার পাশের জানলা আজও খোলা ছিল৷ কিন্তু তিনি আজ বৃষ্টি দেখছেন না৷ বরং মেজাজটা বেশ বিগড়ে আছে৷ মুখ থমথমে৷ একপাশে খবরের কাগজ ও পত্রিকাগুলো অযত্নে পড়ে৷ এইমাত্রই ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন৷
—‘কী হল?’ গহন নম্রপায়ে এসে বসলেন বিছানার ওপরে৷ কণার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে বললেন—‘গোটা আকাশটাকেই নিজের মুখে টেনে এনেছ যে!’
কণা উত্তর দিলেন না৷ রাগের আঁচ তাঁর মুখে৷ নাকের পাটা ফুলছে৷ গহন কাগজপত্রগুলো সযত্নে গুছোতে শুরু করেছেন দেখে রাগত স্বরে বললেন—‘ওগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে দাও!’ তাঁর গলায় বিরক্তি ফুটে ওঠে— ‘এই সমালোচকগুলো নিজেদের কি ভগবান ভাবে! যা খুশি তাই বলবে! কবিতার কী বোঝে ওরা?’
গহনের মুখে স্মিত হাসি—‘অন্যায় কী বলেছে?’
—‘তোমার কবিতাকে স্লোগান বলে গাল দিয়েছে!’ কণা অবাক—‘আর তুমি হাসছ?’
—‘শুধু স্লোগানই তো বলেছে৷’ তিনি হাসতে হাসতেই বললেন—‘‘ঝুলস্য ঝুল’ বলেনি৷ কবিতার ভয়ংকর প্যারোডিও বানায়নি৷’
কণা রাগতে গিয়েও পারলেন না৷ বরং উলটে তাঁর মুখেও হাসির রেখা ভেসে ওঠে৷
—‘ওই দুটো বদমাশ আজ আমাদের বাড়ি আসছে৷’ গহন বলেন—‘কুবলাশ্ব আর রামহনু৷ ওদের জন্য তোমার স্পেশাল পকোড়া বানিয়ে দেবে প্লিজ?’
—‘কথা ঘুরিয়ো না৷’ কণা তীব্রদৃষ্টিতে মাপছেন কবিবরকে—‘এতদিন ধরে কবিতা লিখে এলে৷ এতদিন ধরে জেনে এলাম তুমি কবিতা লেখো৷ আর ওই লোকগুলো তোমার লেখাকে স্লোগান বলছে…৷’
—‘বেশ করেছে৷’ কবি শান্ত দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকালেন—‘হয়তো সত্যিই আমি স্লোগান লিখেছি৷ অথবা লিখিনি৷ এতদিন ধরে কবিতা লিখে এলাম৷ এবার না হয় স্লোগানই লিখি৷’ তাঁর চোখজুড়ে স্বপ্ন পাখা মেলে দিয়েছে, নতুন কোনো স্বপ্ন—‘স্লোগান লিখতে লিখতে একদিন স্লোগানকেই গান করে দেব, কবিতা করে দেব৷ দেখো কণা, আমি আরও লিখব৷ স্লোগানই একদিন কবিতা হবে৷ শুধু লিখেই যাব…যতদিন না এই লোকগুলোই ‘সাধু সাধু’ করে উঠবে৷ দেখো…আমি পারব…আমি লিখব…আরও লিখব…৷’
বলতে বলতেই হো হো করে হেসে উঠেছেন তিনি৷ কণার দিকে তাকিয়ে বললেন—‘এ তোমার কবিবরের নতুন লড়াই!’
কণা গর্বমাখা দৃষ্টি ছুড়ে দিলেন স্বামীর দিকে৷ গহন তখন বেডরুম থেকে বেরিয়ে হলঘরে যাচ্ছিলেন৷ চোখে পড়ল গোপাল হলঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে দু-হাতে বৃষ্টির জল ধরছে৷ তার চোখেমুখে উপচে পড়ছে কৈশোরের আনন্দ৷
গহন তার পাশে এসে হাঁটুগেড়ে বসলেন৷ স্নেহসিক্ত কণ্ঠে বললেন— ‘ভিজবি গোপাল?’
কণার ঘরের জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল৷ তিনি স্তম্ভিত হয়ে দেখলেন বাচ্চা ছেলেটার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভিজছেন গহন! যে মানুষটা কিছুদিন আগেও বৃষ্টিকে ঘৃণা করত সেই মানুষটাই আজ জলে ভিজছে! কবি ভিজে ঘাস পায়ে মাড়িয়ে ছেলেমানুষের মতো ছুটোছুটি করছেন গোপালের পিছন পিছন৷ দু-হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছেন৷ তাঁর মুখ, মাথা, চিবুক চুঁইয়ে হাজার হাজার জলবিন্দু ঝাঁপিয়ে পড়ছে পরম আনন্দে৷
.
‘আরো বেদনা আরো বেদনা,
প্রভু, দাও মোরে আরো চেতনা৷
দ্বার ছুটায়ে বাধা টুটায়ে
মোরে করো ত্রাণ মোরে করো ত্রাণ৷
আরো প্রেমে আরো প্রেমে
মোর আমি ডুবে যাক নেমে
সুধাধারে আপনারে
তুমি আরো আরো আরো করো দান৷৷
প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে…৷’
ঠিক তখনই বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকছিল মন্দার আর ঊর্মি৷ তারাও দেখল কবি ভিজছেন….! কবি ভিজছেন!…কবি ভিজছেন…’!
—