বড়ো ত্রাস, সদর দরোজা ভেঙে
যেন হুহু করে মধ্যরাতে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসের ট্রাক
অকস্মাৎ ভেঙে দেয় নিসর্গের রম্য খেলা
জ্যোৎস্নাময় এ-রাত্রি, কাঁঠালীচাঁপার বন,
বনচারী পাখিদের শান্ত ঘুম, অবকাশ
ত্রাস, শুধু ত্রাস
ত্রাস, শুধু কি আমার
এখন এ-মধ্যযামে নিদ্রামগ্ন রয়েছেন পিতা
অগ্রজ ঘুমান, কে নেবে তল্লাস কার
গৃহের কুকুর সেও গভীর নিদ্রায়,
নিদ্রিত সমস্ত বাড়ি অন্ধকারে কেঁপে কেঁপে ওঠে
এই কোলাহলহীন রাত্রি চোখে নিয়ে
আমি শুধু জেগে আছি, পিতা।
এ বাড়িতে, এই জনশূন্য মধ্যরাত্রিত্রাসিত বাড়িতে
আমার পিতার আগে
আর কোনোদিন কেউ বংশধর ছিলো,
আমাদের আগে এ শহরে ছিলো কোনো
সপ্রতিভ নারী ও পুরুষ অধিবাসী?
এই যুদ্ধোত্তর নগরের মধ্যরাত্রে আর কেউ
অধিবাসী নেই, নগরকোটাল গেছে ফিরে,
একে একে দিবসের দীপ্ত প্রদর্শনী শেষ
জনসমাগমহীন ধূসর চৌরাস্তা,
গোরস্থানে নেই শববাহী কেউ, এমনকি
রাত্রি পতনের শব্দে পালিয়েছে নগরের ঝানু গুণ্ডা,
মাতাল লম্পট,
নাগরিক নরনারী, এই ভয়াবহ মধ্যরাত্রে আমি শুধু
জেগে আছি তোমাদের সর্বশেষ প্রতিনিধি।
যেখানে আমার পিতা একদিন দাঁড়াতেন
হাতে মৌনতার মালা গেঁথে
এ বাড়ির সেই ছাদ ভগ্ন, বোমাবিদ্ধ কঠিন কার্নিশ,
আমার রোমাঞ্চকর শৈশবের সঙ্গীজন
দেখি তার সবুজ কবর
শহরের উচ্চতম টাওয়ার ছুঁয়ে যুদ্ধ তার রেখে গেছে
ভয়ঙ্কর মজ্জাগত প্রেম
এ-রাত্রিতে, এই মধ্যরাত্রে শহরের প্রধান দরোজা ভেঙে
যুদ্ধের পোশাকধারী কারা ছুটে আসে
ত্রাস, যুদ্ধের সন্ত্রাস?
এই মধ্যরাত্রে নিদ্রামগ্ন পিতা, আশ্রিত আলয় কম্পমান,
নিদ্রিত শহর
যুদ্ধোত্তর রাত্রির সন্ত্রাস বুকে
এই রাত্রে, এই ভয়াবহ মধ্যরাত্রে আমি শুধু
জেগে আছি তোমাদের সর্বশেষ প্রতিনিধি।