আমি এক ভদ্রলোককে

আমি এক ভদ্রলোককে রোজ
দেখি। তিনি কখনো বসে থাকেন চুপচাপ
কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে, কখনো বারান্দায়
দাঁড়িয়ে কয়েকটি জালালী কবুতরের
আসা-যাওয়া দেখেন,
কখনোবা থাকেন ঘুমিয়ে।

এই যে ভদ্রলোককে দেখি, দেখে আসছি
দীর্ঘকাল থেকে, এর মধ্যে সত্যি বলতে কি
কোনো ঝলমলে
চমৎকারিত্ব নেই।যদি তাকে না দেখতাম,
তাহলে
ক্ষতির বান ডাকত বলে মনে হয় না।
ভদ্রলোক কী করেন,
কেমন করে তার সংসার চলে কিংবা
আদৌ তার কোনো সংসার আছে কিনা, এ বিষয়ে
আজ অব্দি আমি কোনো চড়ুই-চঞ্চল
ঔৎসুক্য দেখাইনি। তবে এই ভদ্রলোকটিকে নিয়ে
আমি যে একেবারেই
মাথা ঘামাইনি, এমন নয়। এমনও হয়েছে
ভদ্রলোকের কথা ভাবতে গিয়ে
তার মুখের রেখাগুলিকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।
আর যে কথাটা বলতে গিয়েও
এখনও বলা হয়নি তার সারাৎসার হলো
ভদ্রলোককে দেখলে
আমার ভারি ভয় হয়। তিনি যখন হাওয়ার দিকে
মুখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন, অথবা
হাতে তুলে নেন রক্তজবা, তখন আমি ভয় পাই।

কেন এই ভয়, এই প্রশ্নের
কোনো সদত্তর আমার জানা নেই।

তাকে আমি কোনোদিন কোনো মাহফিলে,
গানের জলসায় দেখিনি। কখনো
সানাই-গুঞ্জরিত বিবাহ মন্ডপে কিংবা
কোনো শবানুগমনে তিনি শামিল হয়েছেন বলে মনে পড়ে না।

একদিন চোখে পড়ল,
রোজ যেখানে
ভদ্রলোককে ব’সে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম,
সেই নির্দিষ্ট জায়গাটা ভীষণ সান্নাটা এবং
ধৃতরাষ্ট্র শূন্যতা আলিঙ্গন করল আমাকে।
এতদিন ভাবতাম, সেখানে সেই ভদ্রলোককে।
দেখতে না পেলেই
আমার ভয় কেটে যাবে। অথচ এখন
কাকতাড়ুয়ার মতো ভয় আরও বেশি ভয়
দেখাতে শুরু করল আমাকে, আমার নিজেরই জন্যে।