আমার নিজস্ব কিছু সঙ্গী আছে যারা কস্মিনকালেও ভুলে
টেপে না কলিংবেল, দরজা খোলার
অপেক্ষায় থাকে না কখনো, নিজেদের
খেয়ালখুশিতে আসে যায়
বিনা এত্তেলায়, এই সব সঙ্গীর অদ্ভুত আচরণে আমি,
বলা যায়, উঠেছি অভ্যস্ত হয়ে রীতিমতো কয়েক বছরে।
একজন, অমাবস্যা রাত্রির রঙের
মতো শাল মুড়ি দিয়ে দাঁড়ায় আমার পাশে হাতে
নিয়ে গ্লাস, বলে ‘দাও তিনটি চুমুক’। হতাশার
ঘ্রাণময় পানীয় আমার
কণ্ঠনালি বেয়ে নামে, আমি তার দিকে বিস্মিত তাকিয়ে থাকি
থমথমে স্তব্ধতায় নিরুপায়, গৌরববিহীন।
অন্যজন এসেই বাধিয়ে দ্যায় খুব
হুলস্থুল; টেবিলে চায়ের কাপ, পেলিক্যান কালির দোয়াত
যায় গড়াগড়ি
আহত যোদ্ধার মতো, জানালার কাচ
গুঁড়ো হয়, পর্দা ফালা ফালা, পলস্তারা খসে পড়ে
দেয়ালের, রেডিও হঠাৎ
উন্মাদের মতো কোলাহল করে ভয়ানক বোবা
বনে যায়, লণ্ড সবকিছু, যেমন দাংগায়
হিংসার তাণ্ডবে
তছনছ বাগান, বসতবাড়ি, দেখি শুধু দেখি।
আরও একজন আছে, যার যাতায়াত এই ফ্ল্যাটবাড়িটায়
বেড়ে গ্যাছে ইদানীং। আমার শোবার ঘরে ঢুকে
রাগে গর গর করে সারাক্ষণ ডালকুত্তার ধরনে, দ্রুত
টুঁটি চেপে ধরবার নিখুঁত কৌশল,
তার ভঙ্গি দেখে মনে হয়, যেন
জানা আছে, আমার রক্তের স্বাদ পেলে শান্ত হবে। ভয়ে ভয়ে
থাকি, পাছে আমাকে সে ন্যাকড়ার ফালির মতন
করে ফেলে। তার প্রতি আনুগত্য জানাতে ভুলি না।
কায়ক্লেশে হেঁটে আসে অপর একটি লোক, যেন
বহুদূর থেকে
তার আসা; বলা-কওয়া নেই সটান সে ধুলো পায়ে
লম্বা হয় আমার শয্যায়, চোখ বুজে
আকাশ-পাতাল ভাবে, বিষাদের কামড়ের সুতীব্র চিৎকার
সারা মুখে। সে আমাকে তার
কাছে ডেকে নিয়ে
পাশে শুতে বলে, লীন হতে চায় আমার ভেতরে।
বাকি একজন, চটপটে, সর্বদাই হাসির ঝিলিক চোখে,
জ্যোৎস্নাময় কলাপাতা বিছায় আমার
সমুখে সযত্নে
শিল্পের আঙ্গিকে, যেন পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে খুব
নিরিবিলি করাবে ভোজন
এবং আমার চার দেয়ালে নিমেষে
নিপুণ টাঙিয়ে দেয় কেমন আলাদা সূর্যোদয়,
আমার চলার পথে পাতে স্বপ্নখচিত উদার
রঙিন গালিচা।
আমার সঙ্গিরা যার
যখন যেমন খুশি আসে আর যায়, যায় আর
আসে, আমি শুধু
অভ্যর্থনাকারীর ধরনে বসে থাকি গৃহকোণে বড় একা।