আমরা ক’জন সারা দুপুর আর বিকেল
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত শরীরে
শান্ত দিঘির ধারে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ পরেই
তিনি উপস্থিত হলেন সেখানে।
তাঁর পরনে খসখসে জোব্বা, মাথায় সাদা পাগড়ি,
গালে লালন ফকিরের মতো দাড়ি,
চোখে সুফীর অনাসক্তি। তাজিম-জাগানো
সেই মানুষটিকে দেখামাত্র আমরা উঠে দাঁড়ালাম।
আমাদের উদ্দেশে তাঁর প্রগাঢ় কণ্ঠস্বর
ধ্বনিত হয় স্তোত্রের মতো, “তোমরা কে কী চাও
স্পষ্ট ভাষায় বলো আমাকে। কথা দিচ্ছি,
তোমাদের প্রত্যেকের ইচ্ছাই পূরণ হবে”।
তাঁর উচ্চারণ ফাঁকা কলসের আওয়াজ নয়,
এ-কথা বুঝতে আমাদের দেরি হয়নি।
একে-একে সবাই
নিবেদন করল নিজেদের আকাঙ্ক্ষা।
বেকার যে সে চাইল আমলাতন্ত্রের
সর্বোচ্চ চূড়ায় বসে হাওয়া খেতে পরম সুখে,
আরেকজনের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো সুরম্য
প্রাসাদপ্রতিম বাড়ি, মার্সিডিজ গাড়ি আর বিস্তর টাকার প্রার্থনা।
আমাদের মধ্যে যে ছিল রাজনৈতিক কর্মী,
সে চটজলদি মন্ত্রী হওয়ার অভিলাষ ব্যক্ত করল,
যে ছিল উস্কো-খুস্কো কবি, সে জানালো, এখন থেকে
তার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থ যেন লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়।
আমার পাশেই ছিলে তুমি, প্রিয়তমা। আমার ঈর্ষা জাগিয়ে
তোমাকে ব্যাকুল চুমো খাচ্ছিল গোধূলি। তোমাকে দেখিয়ে সেই
বুজর্গকে বললাম ‘একে ছাড়া
অন্য কিছুই কামনা করি না আমি। তুমি
দু’হাতে ঢেকে ফেললে গোধূলিরঙিন মুখ;
কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন তোমাকে দখল করেনি।
২১.৬.৯৪