আমরা এ কোন্ ভারতবর্ষে
আমরা এ কোন ভারতবর্ষে আছি উনিশ শো চুরাশিতে?
লজ্জায় আমার মাথা ঝুঁকে পড়ে
রাগে সারা গায়ে জ্বালা ধরায়
দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হয়
চিৎকার করে উঠতে চাই কর্কশ গদ্য ভাষায়
আমরা এ কোন্ ভারতবর্ষে আছি…
পরিসংখ্যানে শুনি এদেশে সকলের জন্য খাদ্য আছে
কান্কুন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বিশ্ববাসীকে বলেছিলেন
ভারত আর অন্নভিখারী নয়
তবু এ দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ দুবেলা খেতে পাওয়ার
স্বপ্নও দেখে না
বাঁধের ওপর আমরা বসে থাকতে দেখেছি
ক্ষুধার্ত শিশুর পিতাদের অসহায় আলগা শরীর
আমরা শহরের ফুটপাথ দেখেছি, গ্রামের গঞ্জ, বাজার
হাটখোলা দেখেছি
আমরা পার্ক স্ট্রিট, বড়বাজার, ওয়াটগঞ্জ দেখেছি
আমরা রাইটার্স বিল্ডিংসের পালাবদল দেখেছি
আমরা দাক্ষিণাত্য ও উত্তরাপথ জুড়ে
নপুংসকদের কষের ফেনা গড়াতে দেখেছি
এ কোন্ ভারতবর্ষে আমরা…
দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসকদের নিন্দে করার
কোনো অধিকার আমাদের নেই
কারণ, এদেশে হরিজনদের যখন তখন আমরা
পুড়িয়ে মারি
মার্কিন দেশের বর্ণবিদ্বেষ তো কিছুই না
এদেশের কালো মেয়েদের এখনো টাকার ওজনে
বিয়ে হয়
কিংবা হয় না
কিংবা, পরে তারা গায়ে কেরোসিন ঢালে
আমেরিকা রাশিয়ার পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কার চেয়েও ভয়ঙ্কর
আমাদের আত্মপ্রতারক, খালি হাতের,
লাঠি, ছুরি, বোমার গৃহযুদ্ধ
এখনো মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বারে বিকট ধ্বনি ওঠে
ধর্মের নামে রাস্তায় রাস্তায় রক্ত
আঃ, ধর্ম শব্দটি একদা কত সুন্দর ছিল, এখন
পুঁজ-রক্ত আর স্বার্থপরতায় মাখা
ধর্ম তো আফিম নয়, জাতীয়তাবাদ নয়,
ব্যক্তিগত শুদ্ধি নয়
শুধু ভেড়ার পালের পরিচালকদের উন্নত লাঠি
আমি দ্বিধাহীন ভাবে শতসহস্র নিঃশব্দ প্রতিবাদকারীর সঙ্গে
কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চায়
যে হিন্দু স্বার্থপরের মতো রোজ পুজোআর্চায় মাতে
যে মুসলমান পারিপার্শ্বিকের প্রতি চোখ বন্ধ করে রোজ পাঁচ ওক্ত নামাজ পড়ে
যে খ্রিস্টান অন্য ধর্মের মানুষদের অধঃপতিত মনে করে
যে শিখ শুধু ধর্মের দাবিতে রাজনৈতিক অধিকার চায়
তারা শুধু আত্মপ্রবঞ্চক নয়, তারা অধার্মিক, তারা খুনি
প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভাবে তারা মাতৃহত্যা, শিশুহত্যার
জন্য দায়ী
তারা যে অপরের হাতে ক্রীড়নক সেটুকু বুঝবার
ক্ষমতাও তাদের নেই
তারা মানুষের সাম্যের মাঝখানে কাঁটা তারের বেড়া তুলে দিচ্ছে
এ কোন ভারতবর্ষে আমরা…