দশ
পাঁচটার সময় দুইজনে বাহির হইলাম।
পুঁটিরামকে তালিম দেওয়া হইয়াছে। বসিবার ঘরে টেবিলের উপর বোতল কর্ক-স্ক্রু ও কাচের গেলাস রাখা হইয়াছে। বাহিরের দ্বারে কড়া নাড়িলে পুঁটিরাম আসিয়া দ্বার খুলিয়া দিবে এবং ভেটকি মাছের মত মুখ দেখিলে বলিবে—‘আসুন বাবু, কর্তারা বেরিয়েছেন, এখুনি ফিরবেন।’ ভেটকি মাছকে টেবিলের নিকট বসাইয়া পুঁটিরাম ডিম ভাজিয়া আনিয়া দিবে এবং নিজে গা-ঢাকা দিবে। তারপর—
ফুটপাথে নামিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কোথায় চলেছি আমরা?’
ব্যোমকেশ হাসিয়া বলিল, ‘কোনও নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান নেই। কেষ্ট দাস এসে বোতল সাবাড় করবে তারপর আমরা ফিরব।’
‘তা বুঝেছি। কিন্তু ততক্ষণ করব কী?’
‘ততক্ষণ চল গোলদীঘিতে বায়ু সেবন করা যাক।’
গোলদীঘিতে গিয়া পাক খাইতে লাগিলাম। বেশি কথাবার্তা হইল না; ব্যোমকেশ একবার বলিল, ‘কেষ্ট দাস গলিতে চাবি ফেলেনি।’
এক সময় চোখে পড়িল য়্যুনিভারসিটি ইনস্টিট্যুটে অনেক লোক প্রবেশ করিতেছে, বোধহয় কোনও অনুষ্ঠান আছে। ঘুরপাক খাইয়া খাইয়া ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম, ব্যোমকেশকে বলিলাম, ‘চল না, দেখা যাক ওখানে কি হচ্ছে।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘চল। সম্ভবত কোনও বিখ্যাত লোকের মৃত্যু উপলক্ষে উৎসবসভা বসেছে।’
য়্যুনিভারসিটি ইনস্টিট্যুটে প্রবেশ করিতে গিয়া ইন্দুবাবুর সহিত দেখা হইয়া গেল। তিনি সিনেমার লোক, তার উপর সঙ্গীতজ্ঞ, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসিয়াছেন। ব্যোমকেশের অনুমান মিথ্যা নয়, সিনেমার এক দিক্পালের মৃত্যুবাসরে তাঁহার সহধর্মীরা নৃত্য গীত দ্বারা শোক প্রকাশ করিতেছেন। ইন্দুবাবুর সহিত ব্যোমকেশের পরিচয় করাইয়া দিলাম। তিনি আমাদের লইয়া গিয়া সামনের দিকের একটা সারিতে বসাইয়া দিলেন, নিজেও পাশে বসিলেন।
মঞ্চের উপর কয়েকটা পর্দায়-দেখা মুখ চোখে পড়িল, অন্য মুখও আছে। সভাপতি একজন পলিতকেশ চিত্রাভিনেতা।
মঞ্চস্থ লোকগুলির মধ্যে একটি মেয়ের মুখ বিশেষ করিয়া আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। অপরিচিত মুখ; সুন্দর নয়, কিন্তু চিত্তাকর্ষক। তন্বী নয়, পূর্ণাঙ্গী, রঙ ফর্সা বলা চলে, একরাশ চুল ঘাড়ের কাছে কুণ্ডলিত হইয়া লুটাইতেছে। যাহাকে যৌন আবেদন বলা হয়, যুবতীর তাহা প্রচুর পরিমাণে আছে। একটি ষণ্ডা গোছের যুবক তাহার গা ঘেঁষিয়া বসিয়া আছে এবং মাঝে মাঝে তাহার কানে কানে কথা বলিতেছে।
যে গানটা চলিতেছিল তাহা শেষ হইল। সভাপতি একটি চিরকুট হাতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, ‘এবার কুমারী শিউলী মজুমদার গাইবেন—কোথা যাও ফিরে চাও দূরের পথিক।’
যে যুবতীকে আমি লক্ষ্য করিয়াছিলাম তাহারই নাম শিউলী মজুমদার। সে সংযত মন্থরপদে সম্মুখে আসিয়া উপবেশন করিল, ষণ্ডা যুবক বাঁয়াতবলা লইয়া বসিল। গান আরম্ভ হইল।
গলাটি মিষ্ট, নিটোল, কুহক-কলিত। চোখ বুজিয়া শুনিতে লাগিলাম। তারপর ব্যোমকেশের কনুইয়ের গুঁতা খাইয়া চমক ভাঙিল। ব্যোমকেশ কানে কানে বলিল, ‘ওহে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখ।’
বাঁ দিকে সন্তর্পণে চক্ষু ফিরাইলাম। কয়েকখানা চেয়ার বাদে প্রথম সারিতে প্রভাত বসিয়া আছে। তন্ময় সমাহিত মুখের ভাব, একাগ্র দৃষ্টি গায়িকার উপর বিন্যস্ত। প্রভাত বোধহয় আমাদের দেখিতে পায় নাই, পাইলে এতটা একাগ্র হইতে পারিত না। ব্যোমকেশের দিকে ঘাড় ফিরাইয়া দেখিলাম মুখে একটু বাঁকা হাসি লইয়া সে গান শুনিতেছে।
আমার মাথার মধ্য দিয়া বিদ্যুৎ চমকিয়া গেল। শিউলী মজুমদার, যাহাকে প্রভাত বিবাহ। করিতে চাহিয়াছিল, এ কি সেই?…
শিউলী মজুমদারের গান শেষ হইল। তারপর আরও কয়েকজন গাহিলেন। লক্ষ্য করিলাম, শিউলী মজুমদারের গান শেষ হইবার পর প্রভাত অলক্ষিতে উঠিয়া গেল।
সভা শেষ হইবার পূর্বে আমরাও উঠিলাম। ইন্দুবাবু আমাদের সঙ্গে দ্বার পর্যন্ত আসিলেন।
ব্যোমকেশ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘ওই শিউলী মজুমদার নামে মেয়েটি—খাসা গায়। ও কি সিনেমার মেয়ে?’
ইন্দুবাবু বলিলেন, ‘না, এখনও ঢোকেনি। তবে গদানন্দ যখন জুটেছে তখন আর দেরি নেই।
‘গদানন্দ?’
‘ওই যে তবলা বাজাচ্ছিল। লোকটা সিনেমার দালাল। ভদ্রঘরের মেয়েদের গান বাজনা শেখানো ওর পেশা, কিন্তু জুৎসই মেয়ে পেলে সিনেমায় টেনে নিয়ে যায়।’
‘তাই নাকি! ওর সত্যি নাম গদানন্দ?’
‘নাম জগদানন্দ। সিনেমায় সবাই গদানন্দ বলে। অনেক মেয়ের মাথা খেয়েছে।’
‘শিউলীর বাপের নাম আপনি জানেন?’
‘নামট যেন শুনেছিলাম, হ্যাঁ, দয়ালহরি মজুমদার। সম্প্রতি পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছে।’
বাসায় ফিরিলাম সাতটার সময়।
দরজা ভেজানো ছিল, প্রবেশ করিয়া দেখিলাম কেষ্টবাবু তক্তপোশের উপর হাঁটু গাড়িয়া বসিয়াছেন, ডান হাতের তর্জনীকে বন্দুকে পরিণত করিয়া ঘরের কোণে লক্ষ্য স্থির করিতেছেন। মদের বোতলটা শূন্য উদরে এক পাশে পড়িয়া আছে। কেষ্টবাবু আমাদের প্রবেশ জানিতে পারিলেন না, ঘরের ঊর্ধ কোণ তাক করিয়া বন্দুক ছুঁড়িলেন—‘গুড়ুম—ফিস্।’
আওয়াজটা অবশ্য তিনি মুখেই উচ্চারণ করিলেন।
ব্যোমকেশ প্রশ্ন করিল, ‘কেষ্টবাবু, কি হচ্ছে?’
কেষ্টবাবু বলিলেন, ‘চুপ, পাখি উড়ে যাবে।—গুড়ুম—ফিস্।’
ব্যোমকেশ হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল, ‘ও, পাখি শিকার করছেন। তা ক’টা পাখি মারলেন?’
কেষ্টবাবু বন্দুক নামাইয়া সহজভাবে বলিলেন, ‘তিনটে হর্তেল ঘুঘু মেরেছি।’ তাঁহার শিথিল মুখমণ্ডলে একটু তৃপ্তির হাসি খেলিয়া গেল।
ব্যোমকেশ বলিল, ‘বেশ বেশ। কিন্তু গুড়ুম—ফিস্ কেন? গুড়ুম না হয় বুঝলাম, ফিস্ কী?’
কেষ্টবাবু বলিলেন, ‘ফিস্ বুঝলেন না? গুড়ুম করে বন্দুকের আওয়াজ হল, আর ফিস্ করে পাখির প্রাণ বেরিয়ে গেল।’
কেষ্টবাবু শয়ন করিলেন। দেখিলাম তিনি ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন।
ঘণ্টা দেড়েক পরে তাঁহার ঘুম ভাঙাইলাম, তারপর আবার শেষ করিয়া আবার তক্তপোশে আসিয়া বসিলাম। কেষ্টবাবুর অবস্থা এখন অনেকটা ধাতস্থ, পক্ষী শিকারের আগ্রহ আর নাই।
কেষ্টবাবুকে সিগারেট দিয়া ব্যোমকেশ সিগারেট ধরাইল, ধোঁয়া ছাড়িতে ছাড়িতে বলিল, কেষ্টবাবু, আপনাকে দেখে মনে হয় বয়সকালে আপনি ভারি জোয়ান ছিলেন।’
কেষ্টবাবু মাথাটি নাড়িতে নাড়িতে বলিলেন, ‘কী শরীর যে ছিল ব্যোমকেশবাবু, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। ইয়া ছাতি, ইয়া হাতের গুলি; একটা আস্ত পাঁঠা একলা খেয়ে ফেলতে পারতাম। লোকে ডাকতে—ভীম কেষ্ট।’
‘নিশ্চয় খুব মারামারি করতেন? অনেক সায়েব ঠেঙিয়েছেন?’
‘সায়েব কি বলছেন, জাহাজী গোরা পর্যন্ত ঠেঙিয়েছি। ব্যাটারা মদ খাবার জন্যে জাহাজ থেকে নামত। গলিঘুঁজিতে ঘুরে বেড়াত। আমি ওৎ পেতে থাকতাম, কাউকে একলা পেলে দু’ চার ঘা দিয়েই লম্বা। হ্যা হ্যা।’
‘আপনি দেখছি আমার মনের মতন মানুষ। —আচ্ছা, কখনও মানুষ খুন করেছেন? ব্যোমকেশ অন্তরঙ্গভাবে তাঁহার পাশ ঘেঁষিয়া বসিল।
‘মানুষ খুন—!’ কেষ্টবাবু ঈষৎ সন্দিগ্ধভাবে তাকাইলেন।
‘আরে মশাই, ভয় কিসের? ইয়ার বন্ধুর কাছে বলতে দোষ কি? এই তো আমি তিনটে মানুষ খুন করেছি। অজিত জানে, ওকে জিজ্ঞেস করুন।’
কেষ্টবাবু আশ্বস্ত হইলেন—‘ঠিক নিজের হাতে খুন করিনি, তবে দলে ছিলাম। ওই অনাদিটা—’
‘অনাদি হালদারের সঙ্গে বুঝি আপনার অনেক দিনের পরিচয়?’
‘ইস্কুল থেকে। অনাদিটা ছিল পগেয়া শয়তান। কিন্তু গায়ে জোর ছিল না, তাই আমাকে দলে টানত। আমি ইস্কুলে ভাল ছেলে ছিলাম মশাই, ওই অনাদির পাল্লায় পড়ে বিগড়ে গেলাম।’
‘তারপর?’
‘একটা ডেপুটির ছেলে সাইকেল চড়ে ইস্কুলে আসত। একদিন আমি আর অনাদি সাইকেল নিয়ে সটকান্ দিলাম, চোরাবাজারে দিলাম বেচে। কিন্তু ডেপুটির ছেলের সাইকেল, পুলিস লাগল। ধরা পড়ে গেলাম। হেডমাস্টার দু’জনকে রাস্টিকেট করে দিলে।’
‘ঐ তো। হেডমাস্টারগুলো বড় পাজি হয়।—তারপর কি হল?’
‘তারপর আর কি! নাম কাটা সেপাই! বছর দুই পরে প্রথম মহাযুদ্ধ আরম্ভ হল। আর আমাদের পায় কে? একেবারে মেসোপটেমিয়া। বাসরা..কুট্ এল্-আমারা—ভারি ফুর্তিতে কেটেছিল ক’টা বছর!’
‘সেই সময় বুঝি রাইফেল চালাতে শিখেছিলেন?’
‘হ্যাঁ। অব্যর্থ টিপ্ ছিল। কুট-এল্-আমারায় যখন আটকা পড়েছিলাম তখন আমাদের রসদে টান পড়েছিল, ঘোড়ার মাংস খেতে হয়েছিল। তখন আমি রাইফেল দিয়ে উড়ন্ত পাখি শিকার করতাম। ক্যাপ্টেন আমার নাম দিয়েছিল—উইলিয়াম টেল্! সে একদিন ছিল।’ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, ‘যুদ্ধের পর দেশে ফিরে এলাম। আবার পুনর্মূষিক…তার কিছুদিন পরে অনাদি এক কাণ্ড করে বসল। বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে বাপকে ঠেঙিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাল। এমন ঠেঙিয়েছিল যে বাপটা পরের দিনই টেঁসে গেল। বাড়ির লোকেরা অবশ্য ব্যাপারটা চাপাচুপি দিয়ে দিল কিন্তু অনাদি সেই যে পালাল, পাঁচ বছর আর তার দেখা নেই।
‘পাঁচ বছর পরে একদিন গভীর রাত্রে অনাদি চুপিচুপি আমার কাছে এসে হাজির। বললে—ব্যবসা করবি তো চল্ আমার সঙ্গে, খুব লাভের ব্যবসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম—কিসের ব্যবসা? কোথায় যেতে হবে? সে বললে—বেহারের একটা ছোট্ট শহরে। মারোয়াড়ীর সঙ্গে ব্যবসা। একলা সে ব্যবসা হয় না তাই তোকে নিতে এসেছি। রাতারাতি বরাত ফিরে যাবে। যাবি তো চল্।—আমার তখন সময়টা খারাপ যাচ্ছে, রাজী হয়ে গেলাম।
‘বেহারের নগণ্য একটা জায়গা, নাম লালনিয়া। সামনে দিয়ে রেলের লাইন গেছে। পিছনদিকে পাহাড় আর জঙ্গল। আমরা ইস্টিশানে নেমে শহরে গেলাম না, দিনের বেলায় জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রইলাম। সেখানে অনাদি আসল কথা খুলে বলল—শহরের একটেরে জঙ্গলের গা ঘেঁষে এক মারোয়াড়ীর গদি আছে, বুড়ো মারোয়াড়ীটা রাত্তিরে একলা থাকে। বুড়োর অনেক টাকা, গদিতে ডাকাতি করতে হবে।
‘দুপুর রাত্রে মারোয়াড়ীর গদিতে গেলাম। আমার হাতে লোহার ডাণ্ডা; অনাদির হাতে ইলেকট্রিক টর্চ, কোমরে ভোজালি। মারোয়াড়ীটা চোরাই মালের কারবার করত, রাত্রে চোরেরা তার কাছে আসত। অনাদি দরজায় টোকা দিতেই সে দরজা খুলে দিলে, আমি লাগালাম তার মাথায় এক ডাণ্ডা। বুড়োটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
‘গদি লুঠ করলাম। বেশি কিছু পাওয়া গেল না, হাজার তিনেক নগদ আর কিছু সোনার গয়না। তাই নিয়ে বেরুচ্ছি, মারোয়াড়ীটা দোরগোড়ায় পড়েছিল, হঠাৎ অনাদির ঠ্যাং জড়িয়ে ধরল। অনেক ধস্তাধস্তি করেও অনাদি ঠ্যাং ছাড়াতে পারল না, মারোয়াড়ী মরণকামড়ে কামড়ে ধরেছে। তখন সে কোমর থেকে ভোজালি বার করে মারল বুড়োর ঘাড়ে এক কোপ। বুড়োটা ক্যাঁক্ করে মরে গেল।
‘রক্তমাখা ভোজালি সেইখানে ফেলে আমরা পালালাম। শেষরাত্রে ইস্টিশানে গিয়ে ট্রেন ধরলাম। লুঠের মাল অনাদির কাছে ছিল; সে বলল—তুই এক গাড়িতে ওঠ, আমি অন্য গাড়িতে উঠি। দু’জনে এক কামরায় উঠলে কেউ সন্দেহ করতে পারে। উঠে পড়্, উঠে পড়্, পরের স্টেশনে আবার দেখা হবে। আমি একটা কামরায় উঠে পড়লাম, অনাদি পাশের কামরায় উঠল।
‘ব্যাস্, সেই যে অনাদি লোপাট হল, বিশ বছরের মধ্যে আর তার টিকি দেখতে পেলাম না—বেইমান! বিশ্বাসঘাতক!’
পুরাতন টাকার শোকে কেষ্টবাবু ফুঁসিতে লাগিলেন। ব্যোমকেশ তাঁহাকে আর একটি সিগারেট দিয়া বলিল, ‘অনাদি হালদার বেইমান ছিল তাই তো তার আজ এই দুরবস্থা। কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন ইচ্ছে করলে অনাদিকে ফাঁসিকাঠে লটকাতে পারেন তার মানে কি? তাকে ফাঁসাতে গেলে আপনি নিজেও যে ফেঁসে যেতেন।’
কেষ্টবাবু বলিলেন, ‘মারোয়াড়ী-খুনের ব্যাপারে খুব হৈ চৈ হয়েছিল, কাগজে লেখালেখি হয়েছিল। পুলিস ভোজালির গায়ে অনাদির আঙুলের ছাপ পেয়েছিল কিন্তু অনাদিকে তো তারা চেনে না, তাকে ধরবে কি করে? একমাত্র আমি জানতাম। আমি যদি পুলিসকে একটি বেনামী চিঠি ছাড়তাম—লালনিয়ার খুনীর নাম অনাদি হালদার, সে অমুক ঠিকানায় থাকে, আঙুলের ছাপ মিলিয়ে নাও—তাহলে কী হত?’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘বুঝেছি। তারপর আবার কবে অনাদি হালদারকে পেলেন?’
কেষ্টবাবু দন্তপংক্তি কোষমুক্ত করিলেন—‘বছর দুই আগে, এই কলকাতা শহরে। ফুটপাথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি অনাদি বৌবাজারের বাসায় ঢুকেছে। আর যাবে কোথায়? খোঁজখবর নিয়ে জানলাম অনাদি পয়সা করেছে, দুধে-ভাতে আছে। একবার ভাবলাম, দিই পুলিসকে বেনামী চিঠি। কিন্তু আমার সময়টা তখন খারাপ যাচ্ছে—একদিন গিয়ে দেখা করলাম। অনাদি ভূত দেখার মত আঁৎকে উঠল। আমি বললাম—আজ থেকে আমাকেও দুধে-ভাতে রাখতে হবে, নইলে লালনিয়ার মারোয়াড়ীকে কে খুন করেছে পুলিস জানতে পারবে। খুনের মামলা তামাদি হয় না।’…
রাত হইয়া গিয়াছিল, কেষ্টবাবু আমাদের তক্তপোশেই রাত্রি কাটাইলেন।