কোনো মহামান্য আদালত নয়,
গোলাপ, বনদোয়েল, পূর্ণিমা-চাঁদ,
লালিত্যময় পদ্য, রূপসীর চোখের ঝিলিক, সুগন্ধী সাবান
আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কাঠগড়ায়।
সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে
আমার আনুগত্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি,
এই অভিযোগে ওরা আমাকে
জেরা করছে বার বার, বলছে যেতে হবে ভাসানে।
কার কাছে জানাবো ফরিয়াদ?
কী করে খণ্ডন করবো ওদের বাছা বাছা যুক্তি?
স্বীকার করি, ছিঁচকাঁদুনে পদ্য দেখলেই আমার মাথায়
ইদানীং খুন চড়ে যায়, ইচ্ছে হয় এক থাপ্পড়ে
ফেলে দিই নর্দমায় এবং
যেসব পদ্যরাশি হিজড়ের মতো অঙ্গভঙ্গী করে,
দাঁত দিয়ে আঙুল চেপে ধরে পাছা দুলিয়ে
চোখ মারে, তাদের
রঙবেরঙের ছৈলছবিলা ঢঙ দেখলে
আমার ভীষণ বিবমিষা জাগে।
যেসব পদ্য সস্তা প্রসাধনে ঝকঝকে হয়ে
অশ্লীল ইশারায় জোটায়
দু’ঘণ্টার নাগর, তাদের মুখে
থুতু ছিটোতে পারলে স্বস্তি পাই।
যখন ওরা বলে নন্দনতত্ত্বের গলায় পা রেখে
চটকাচ্ছি তাকে, যেমন
সিগারেটখোর আধপোড়া সিগারেটটাকে
পিষে ফেলে জুতোর তলায়,
তখন আমি সাক্ষী মানি রজনীগন্ধা এবং কোকিলকে।
আমি কি কখনো বন্দনা করি নি রজনীগন্ধার?
রক্তচক্ষু কোকিল বলবে নির্দ্বিধায়,-
লোকটা আমারই মতো গলায় রক্ত তুলে গান গায়’
এবং মেঘের গর্জন
আমার সপক্ষে সাক্ষ্য দেবে এই বলে,
কী করবে সে গোলাপ, বনদোয়েল আর
পূর্ণিমা চাঁদ নিয়ে যখন ক্যালেন্ডারের প্রায়
প্রত্যেকটি তারিখ থেকে বয়
হাভাতের দীর্ঘশ্বাস, সাহসী মানুষের রক্তধারা,
ঝরে এতিমের অশ্রুকণা?
এই আপাদমস্তক বাণিজ্যিক উটকো সমাজে, গোঁজামিল দেয়া
বেঢপ সাংস্কৃতিক চন্ডীমণ্ডপে
আমাকে বোঝে না কেউ। যখন হাতে
তুলে নিই বলপেন, আমার কব্জিতে
স্পন্দমান চিতাবাঘের হৃদপিণ্ড। বিগতযৌবন
সামন্ততান্ত্রিক পরিপার্শ্বে বিদুষকের মতো অনবরত
ঘুর ঘুর করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় কখনো।
আমি আমার আত্মা ছুঁড়ে দিই ডুমুরের ডালে,
মজে-যাওয়া খালে, স্বপ্নের চাতালে, শৌচাগারের
অকথ্য বুলিভর্তি দেয়ালে আর
তোমাদের অভিযোগের নাকের তলায়।