আতার পায়েস
চুরির জন্যই যে চুরি তাতে একটা অনিবর্চনীয় আনন্দ পাওয়া যায়। দেশের কাজে চুরি, সরকারি কনট্রাক্টে চুরি, তহবিল তসরুফ, পকেট মারা, ইত্যাদির উদ্দেশ্য যতই মহৎ হক, তাতে আনন্দ নেই, শুধু স্থূল স্বার্থসিদ্ধি। গীতায় যাকে কাম্যকর্ম বলা হয়েছে, এসব চুরি তারই অন্তর্গত। কিন্তু যে চুরি অহেতুক, যা শুধু অকারণ পুলকে করা হয়, তা নিষ্কাম ও সাত্ত্বিক, অনাবিল আনন্দ তাতেই মেলে। যশোদাদুলাল শ্রীকৃষ্ণ ভালই খেতেন, কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট কিছুরই তাঁর অভাব ছিল না, তথাপি তিনি ননি চুরি করতেন। তাঁর কটিতটের রঙিন ধটী যথেষ্ট ছিল, বস্ত্রাভাব কখনও হয় নি, তথাপি তিনি বস্ত্রহরণ করেছিলেন। এই হল নিষ্কাম সাত্ত্বিক চুরির ভগবৎপ্রদর্শিত নিদর্শন। রামগোপাল হাইস্কুলের মাস্টার প্রবোধ ভটাচায একবার এইরকম চুরিতে জড়িয়ে পড়েছিল।
প্রবোধ মাস্টারের বয়স ত্রিশ, আমুদে লোক, ছাত্ররা তাকে খুব ভালবাসে। পূজোর বন্ধর দিন কতক আগে পাঁচটি ছেলে তার কাছে এল। তাদের মুখপাত্র সুধীর বললেন, সার, মহা মুশকিলে পড়েছি।
প্রবোধ জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপারটা কি?
—গেল বছর আমার বড়—দার বিয়ে হয়ে গেল জানেন তো? তার শ্বশুর ভৈরববাবু খুব বড়লোক, দেওঘরের কাছে গণেশমুণ্ডায় তাঁর একটি চমৎকার বাড়ি আছে। বউ—দি বলেছে, সে বাড়ি এখন খালি, পুজোর ছুটিতে আমরা জনকতক স্বচ্ছন্দে কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আসতে পারি।
—এ তো ভাল খবর, মুশকিল কি হল?
—ভৈরববাবু বলেছেন, আমাদের সঙ্গে যদি একজন অভিভাবক যান তবেই আমাদের সেখানে থাকতে দেবেন।
—তোমার বড়—দা আর বউ—দিকে নিয়ে যাও না।
—তা হবার জো নেই, ওরা মাইসোর যাচ্ছে। আপনিই আমাদের সঙ্গে চলুন সার। ক্লাস টেনের আমি, ক্লাস নাইনের নিমাই নরেন সুরেন আর ক্লাস এইটের পিণ্টু আমরা এই পাঁচ জন যাব, আপনার কোনো অসুবিধে হবে না।
—সঙ্গে চাকর যাবে তো?
—কোনও দরকার নেই। সেখানে দারোয়ান আর মালী আছে, তারাই সব কাজ করে দেবে। খাবার জন্যে ভাববেন না সার। আমরা সঙ্গে স্টোভ নেব, কারি পাউডার নেব, চা চিনি গুঁড়ো দুধ আর বিস্কুটও দেদার নেব। ওখানে সস্তায় মুরগি পাওয়া যায়, বউ—দি কারি রান্না শিখিয়ে দিয়েছে। ওখানকার দারোয়ান পাঁড়েজী ভাত রুটি যা হয় বানিয়ে দেবে, আমরা নিজেরা দু বেলা ফাউল কারি রাঁধব। তাতেই হবে না?
প্রবোধ বললে, সব তো বুঝলুম, কিন্তু আমাকে নিয়ে যেতে চাও কেন? মাস্টার সঙ্গে থাকলে তোমাদের ফুর্তির ব্যাঘাত হবে না?
সজোরে মাথা নেড়ে সুধীর বললে, মোটেই একদম একটুও কিচ্ছু ব্যাঘাত হবে না, আপনি সে রকম মানুষই নন স্যার। আপনি সঙ্গে থাকলে আমাদের তিন ডবলফুর্তি হবে।
নিমাই নরেন সুরেন সমস্বরে বললে, নিশ্চয় নিশ্চয়।
পিণ্টু বললে, সার, কোনান ডয়েলের সেই লস্ট ওয়ার্ল্ড গল্পটা ওখানে গিয়ে বলতে হবে কিন্তু।
প্রবোধ যেতে রাজী হল।
দেওঘর আর জসিডির মাঝামাঝি গণেশমুণ্ডা পল্লীটি সম্প্রতি গড়ে উঠেছে। বিস্তর সুদৃশ্য বাড়ি, পরিচ্ছন্ন রাস্তা, প্রাকৃতিক দৃশ্যও ভাল। ভৈরববাবুর অট্টালিকা ভৈরব কুটীর আর তার প্রকাণ্ড বাগান দেখে ছেলেরা আনন্দে উৎফুল্ল হল এবং ঘুরে ঘুরে চার দিক দেখতে লাগল। বাগানে অনেক রকম ফলের গাছ। গোটা কতক আতা গাছে বড় বড় ফল ধরেছে, অনেকগুলো একেবারে তৈরি, পেড়ে খেলেই হয়।
প্রবোধ বললে, ভারী আশ্চর্য তো, ভৈরববাবুর দারোয়ান আর মালী দেখছি অতি সাধু পুরুষ।
সুধীর বললে, মনেও ভাববেন না তা, আমি এখানে এসেই সব খবর নিয়েছি সার। দারোয়ান মেহী পাঁড়ে আর মালী ছেদী মাহাতো এদের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া। দুজনে দুজনের ওপর কড়া নজর রাখে তাই এ পর্যন্ত কেউ চুরি করবার সুবিধে পায় নি।
প্রবোধ বললে, আত্মকলহের ফলই এই। পাঁড়ে আর মাহাতো যদি একমত হত তবে স্বচ্ছন্দে আতা বেচে দিয়ে লাভটা ভাগাভাগি করে নিতে পারত।
নিমাই বললে, আচ্ছা স্যার, আমাদের দেশনেতাদের মধ্যে তো ভীষণ ঝগড়া তবুও চুরি হচ্ছে কেন?
সুধীর বললে, যা যাঃ, জেঠামি করিস নি। আগে বড় হ, তারপর পলিটিক্স বুঝবি।
নিমাই বললে, যদি দু—তিন সের দুধ যোগাড় করা যায় তবে চমৎকার আতার পায়েস হতে পারবে। আমি তৈরি করা দেখেছি, খুব সহজ।
সুধীর বললে, বেশ তো, তুই তৈরি করে দিস। ও পাঁড়েজী, তুমি কাল সকালে তিন সের খাঁটী দুধ আনতে পারবে?
পাঁড়ে বললে, জরুর পারব হুজুর।
নাওয়া খাওয়া আর বিশ্রাম চুকে গেল। বিকেল বেলা সকলে বেড়াতে বেরুল। ঘণ্টা খানিক বেড়াবার পর ফেরবার পথে সুধীর বললে, দেখুন সার এই বাড়িটি কি সুন্দর, ভীমসেন ভিলা। গেটের ওপর কি চমৎকার থোকা থোকা হলদে ফুল ফুটেছে!
আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে পিণ্টু চেঁচিয়ে উঠল— ওই ওই একটা নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গেল।
নিমাই বললে, এদিকে দেখুন স্যার, উঃ কি ভয়ানক পেয়ারা ফলেছে, কাশীর পেয়ারার চাইতে বড় বড়। নিশ্চয় এ বাড়িরও দারোয়ান আর মালীর মধ্যে ঝগড়া আছে তাই চুরি যায় নি।
ফটকে তালা নেই। সুধীর ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক উঁকি মেরে বললে, কাকেও তো কোথাও দেখছি না, কিন্তু ঘরের জানালা খোলা, মশারি টাঙানো রয়েছে। বোধ হয় সবাই বেড়াতে গেছে। দারোয়ান, ও দারোয়ানজী, ও মালী!
কোনও সাড়া পাওয়া গেল না। তখন সকলে ভিতরে এসে ফটকের পাল্লা ভেজিয়ে দিল।
নিমাই বললে, একটা পেয়ারা পাড়ব সার?
প্রবোধ বললে, বাজারে প্রচুর পেয়ারা দেখেছি, নিশ্চয় খুব সস্তা, খেতে চাও তো কিনে খেয়ো। বিনা অনুমতিতে পরের দ্রব্য নিলে চুরি করা হয় তা জানো না?
—জানি সার। চুরি করব না, শুধু একটা চেখে দেখব কাশীর পেয়ারার চাইতে ভাল কি মন্দ।
প্রবোধ পিছন ফিরে গম্ভীর ভাবে একটা তালগাছের মাথা নিরীক্ষণ করতে লাগল। মৌনং সম্মতিলক্ষণম ধরে নিমাই গাছে উঠল। পেয়ারা পেড়ে কামড় দিয়ে বললে, বোম্বাই আমের চাইতে মিষ্টি!
সুধীর বললে, এই নিমে, স্যারকে একটা দে।
নিমাই একটা বড় পেয়ারা নিয়ে হাত ঝুলিয়ে বললে, এইটে ধরুন স্যার, একটু চেখে দেখুন, চমৎকার।
পেয়ারায় কামড় দিয়ে প্রবোধ বললে, সত্যিই খুব ভাল পেয়ারা। আর বেশী পেড়ো না, তা হলে ভারী অন্যায় হবে কিন্তু। লোভ সংবরণ করতে শেখ।
ততক্ষণ নিমাই—এর সব পকেট বোঝাই হয়ে গেছে, তার সঙ্গীরাও প্রত্যেকে দু তিনটে করে পেয়েছে। সুধীর বললে, এই নিমে, শুনতে পাচ্ছিস না বুঝি? সার রাগ করছেন, নেমে আয় চট করে, এক্ষুনি হয়তো কেউ এসে পড়বে।
হঠাৎ ক্যাঁচ করে গেটটা খুলে গেল, একজন মোটা বৃদ্ধ ভদ্রলোক আর একটি রোগা মহিলা প্রবেশ করলেন। দুজনের হাতে গামছায় বাঁধা বড় বড় দুটি পোঁটলা। নিমাই গাছের ডাল ধরে ঝুলে ধুপ করে নেমে পড়ল।
বৃদ্ধ চেঁচিয়ে বললেন, অ্যাঁ, এসব কি, দল বেঁধে আমার বাড়ি ডাকাতি করতে এসেছ! ভদ্রলোকের ছেলেরএই কাজ? ঝব্বু সিং, এই ঝব্বু সিং—বেটা গেল কোথায়!
পোঁটলা দুটি নিয়ে মহিলা বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন। ঝব্বু সিং এক লোটা বৈকালিক ভাঙ খেয়ে তার ঘরে ঘুমুচ্ছিল, এখন মনিবের চিৎকারে উঠে গাঢ় চোখ রগড়াতে রগড়াতে বেরিয়ে এল। সে হুঁশিয়ার লোক, গেটে তাড়াতাড়ি তালা বন্ধ করে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে বললেন, হুজুর, হুকুম দেন তো থানে মে খবর দিয়ে আসি। হো বৈজনাথজী, ছিয়া ছিয়া, ভদ্দর আদমীর ছেলিয়ার এহি কাম!
হুজুর বললেন, খুব হয়েছে, ডাকাতরা চোখের সামনে লুটে নিলে আর তুমি বেহুঁশ হয়ে ঘুমুচ্ছিলে। তারপর, মশায়দের কোত্থেকে আগমন হল? এরা তো দেখছি ছোকরা, বজ্জাতি করবারই বয়েস, কিন্তু তুমি তো বাপু খোকা নও, তুমিই বুঝি দলের সদ্দার?
প্রবোধ হাত জোড় করে বললে, মহা অপরাধ হয়ে গেছে স্যর। এই নিমাই, সব পেয়ারা দারোয়ানজীর জিম্মা করে দাও। আমরা বেশী খাই নি স্যার, মাত্র দু—তিনটে চেখে দেখেছি। অতি উৎকৃষ্ট পেয়ারা।
—কৃতার্থ হলুম শুনে। এরা বোধ হয় স্কুলের ছেলে। তোমার কি করা হয়? নাম কি?
—আজ্ঞে, আমার নাম প্রবোধচন্দ্র ভট্টাচার্য, মানিকতলার রামগোপাল হাই স্কুলের মাস্টার। এরা সব আমার ছাত্র, পুজোর ছুটিতে আমার সঙ্গে বেড়াতে এসেছে।
—খাসা অভিভাবকটি পেয়েছে, খুব নীতিশিক্ষা হচ্ছে! আমাকে চেন? ভীমচন্দ্র সেন, রিটায়ার্ড ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। রায়বাহাদুর খেতাবও আছে, কিন্তু এই স্বাধীন ভারতে সেটার আর কদর নেই। বিস্তর চোরকে আমি জেলে পাঠিয়েছি। তোমার স্কুলের সেক্রেটারিকে যদি লিখি—আপনাদের প্রবোধ মাস্টার এখানে এসে তার ছাত্রদের চুরিবিদ্যে শেখাচ্ছে, তা হলে কেমন হয়?
—যদি কর্তব্য মনে করেন তবে আপনি তাই লিখুন সার, আমি আমার কৃতকর্মের ফল ভোগ করব। তবে একটা কথা নিবেদন করছি। কেউ অভাবে পড়ে চুরি করে, কেউ বিলাসিতার লোভে করে, কেউ বড়লোক হবার জন্যে করে। কিন্তু কেউ কেউ, বিশেষত যাদের বয়েস কম, নিছক ফুর্তির জন্যেই করে। আমি অবশ্য ছেলেমানুষ নই, কিন্তু এই ছেলেদের সঙ্গে মিশে, এই শরৎ ঋতুর প্রভাবে, আর আপনার এই সুন্দর বাগানটির শোভায় মুগ্ধ হয়ে আমারও একটু বালকত্ব এসে পড়েছে। এই যে পেয়ারা চুরি দেখছেন এ ঠিক মামুলী কুকর্ম নয়, এ হচ্ছে শুধু নবীন প্রাণরসের একটু উচ্ছলতা।
—হুঁ। ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা, পুচ্ছটি তোর উচ্চেচ তুলে নাচা। রবি ঠাকুর তোমাদের মাথা খেয়েছেন। বিয়ে করেছ?
—করেছি স্যার।
—তবে পুজোর ছুটিতে বউকে ফেলে এখানে এসেছ কি করতে? বনে না বুঝি?
—আজ্ঞে, খুবই বনে। কিন্তু তিনি তাঁর বড়লোক দিদি আর জামাইবাবুর সঙ্গে শিলং গেলেন, আমি এই ছেলেদের আবদার ঠেলতে পারলুম না তাই এখানে এসেছি! সার, যে কুকর্ম করে ফেলেছি তার বিচার একটু উদারভাবে করুন। আপনি ধীর স্থির প্রবীণ বিচক্ষণ ব্যক্তি, ছেলেমানুষী ফুর্তির বহু ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন—
—কে বললে ঊর্ধ্বে উঠে গেছি? আমাকে জরদগব গিধড় ঠাউরেছ নাকি?
—তাহলে আশা করতে পারি কি যে আমাদের ক্ষমা করলেন? আমরা যেতে পারি কি?
—পেয়ারাগুলো নিয়ে যাও, চোরাই মাল আমি স্পর্শ করি না। আচ্ছা, এখন যেতে পার, এবারকার মতন মাপ করা গেল।
এমন সময় মহিলাটি বাইরে এসে বললেন, কি বেআক্কেল মানুষ তুমি, এরা তোমার এজলাসের আসামী নাকি? তুমি এদের মাপ করবার কে? তোমাকে মাপ করবে কে শুনি? এখন যেয়ো না বাবারা, এই বারান্দায় এসে একটু ব’স।
ভীমবাবু বললেন, এদের খাওয়াবে নাকি? তোমার ভাঁড়ার তো ঢু ঢু, চা পর্যন্ত ফুরিয়ে গেছে, হরি সরকার বাজার থেকে ফিরলে তবে হাঁড়ি চড়বে।
—সে তোমাকে ভাবতে হবে না, যা আছে তাই দেব। মিনিট দশ সবুর করতে হবে বাবারা।
গৃহিণী ভিতরে গেলে ভীমবাবু বললেন, উনি ভীষণ চটে গেছেন, না খাইয়ে ছাড়বেন না, অগত্যা ততক্ষণ এই এজলাসেই তোমরা আটক থাক। এখানে উঠেছ কোথায়?
প্রবোধ বললে, ভৈরব কুটীরে, স্টেশনের দিকে যে রাস্তা গেছে তারই ওপর।
ভীমবাবু বললেন, কি সর্বনাশ। যার ফটকের পাশে বেগনী বুগনভিলিয়ার ঝাড় আছে সেই বাড়ি?
—আজ্ঞে হ্যাঁ। বাড়িটার কোন দোষ আছে?
—নাঃ, দোষ তেমন কিছু নেই। তোমরা ওখানে উঠেছ তা ভাবি নি।
নিমাই বললে, ভূতে পাওয়া বাড়ি নাকি?
—ভূত কোন বাড়িতে নেই? এ বাড়িতেও আছে। ও পাড়াটায় বড্ড চোরের উপদ্রব, এ পাড়ার চাইতে বেশী।
একটু পরে ভীমবাবুর পত্নী একটা বড় ট্রেতে বসিয়ে একটি ধূমায়মান গামলা এবং গোটাকতক বাটি আর চামচ নিয়ে এলেন। ভীমবাবু একটি টেবিল এগিয়ে দিয়ে বললেন, এ কি এনেছ, আতার পায়েস যে! এর মধ্যেই তৈরি করে ফেললে?
গৃহিণী বললেন, আর তো কিছু নেই, এই দিয়েই একটু মিষ্টিমুখ করুক।
ভীমবাবু বললেন, সবটাই এনেছ নাকি?
—হ্যাঁ গো হ্যাঁ, আর লোভ ক’রো না বাপু। ছেলেরা যে পেয়ারা পেড়েছে তাই না হয় একটা খেয়ো। চিবুতে না পার তো সেদ্ধ করে দেব।
সুধীর সহাস্যে বলল, স্যার, আমাদের ওখানে বিস্তর আতা ফলেছে, ইয়া বড় বড়। কাল সকালে পায়েস বানিয়ে আপনাদের দিয়ে যাব।
ভীমবাবু বললেন, না, না, অমন কাজটি ক’রো না। আতা আমার সয় না।
ভৈরব কুটীরে ফিরে এসে নিমাই বললে, একি, গাছের বড় বড় আতাগুলো গেল কোথায়?
সুধীর বললে, বোধহয় পাঁড়েজী সদ্দারি করে পেড়ে রেখেছে। ও পাঁড়ে, আতা কি হল?
পাঁড়ে ব্যস্ত হয়ে এসে মাথায় একটু চাপড় মেরে করুণ কণ্ঠে বললে, কি কহবো হুজুর, বহুত ঝামেলা হয়ে গেছে! এক মোটা—সা বুঢ়াবাবু আর এক দুবলা—সা বু ঈ মাঈ এসেছিল। বাবু পটপট সব আতা ছিঁড়ে লিলে। হামি মানা করলে খাফা হয়ে বললে, চোপ রহো উল্লু! আমার ডর লাগল, শায়দ কোই বড়া অপসর উপসরকা বাবা উবা হোবে—
সুধীর বললে, হাতে লাল গামছা ছিল?
—জী হাঁ, উসি মে তো বাঁধ কে লিয়ে গেল।
হাসির প্রকোপ একটু কমলে নিমাই বললে, হলধর দত্তর ‘চোরে চোরে’ গল্পের চাইতে মজার।
প্রবোধ বললে, যাক, আমরা ঠকি নি, আতার পায়েস খেয়েছি, পেয়ারাও পেয়েছি। কিন্তু ভীমচন্দ্র সেন মশায়ের জন্য দুঃখ হচ্ছে, তাঁর গিন্নী তাঁকে বঞ্চিত করেছেন।
নিমাই বললে, ভাববেন না স্যার, দিন দুই পরেই আবার বিস্তর আতা পাকবে, তখন পায়েস করে ভীমসেন মশায় আর তাঁর গিন্নীকে খাওয়াব।
১৩৬০ (১৯৫৩)