আট । শয়তানি ফুর্তি
কিন্তু খবর পেয়েও কালোদেড়ে কিছুমাত্র দমল না বা ভীত হল না। নিজের দলের সবাইকে ডেকে অবহেলা ভরে বললে, ‘ওহে শুনেছ? টোরিয়াস চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, রাজার সৈন্যরা নাকি আমাদের শাস্তি দিতে আসছে। জাহান্নমে যাক রাজা! যারা আসতে চায় আসুক তারা! আমি তো জাঁকিয়ে বসে আছি নিজের আড্ডায়—সিংহের গহ্বরে ঢুকে ফেরুপাল কী করতে পারে?’
তখন সন্ধ্যাকাল। হ্যান্ডস ও আরও দুইজন বোম্বেটেকে নিয়ে কালোদেড়ে নিজের কামরার ভিতরে প্রবেশ করে খুব খুশিমুখে বললে, ‘আবার লড়াই হবে—কী মজা রে, কী মজা! ঢালো মদ, প্রাণ ভরে পান করো—আজ আমাদের আনন্দের দিন! দেখা যাক, কে কত বেশি মদ খেতে পারে!’
একটা টেবিলের চারিদিক ঘিরে বসে চারজনে মিলে মদ্যপান শুরু করে দিলে। বাতির আলোতে খালি কালোদেড়ের গলার হার ও আঙুলের আংটিগুলো নয়, মুখের দাড়ি-গোঁফের ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে তার খুদে খুদে চোখদুটো জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল—এবং জাহির করছিল যেন কোনও নির্দয় কৌতুকের রহস্যময় ইশারা!
শয়তানের কাছে গিয়ে শয়তানি ছাড়া আর কী আশা করা যায়? বোধ করি সেই কারণেই প্রচুর মদ্যপান করেও জনৈক চালাক বোম্বেটে নেশায় ঝিমিয়ে পড়েনি—নিজের দৃষ্টিকে রেখেছিল অত্যন্ত জাগ্রত!
হঠাৎ সে দেখলে, কালোদেড়ের দুটো পিস্তলসুদ্ধ দুখানা হাত ধীরে ধীরে টেবিলের তলায় গিয়ে ঢুকল। সে চটপট উঠে দাঁড়িয়ে একটা ওজর দেখিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল উদভ্রান্তের মতো।
অকস্মাৎ বিকট চিৎকার করে কালোদেড়ে এক ফুঁয়ে নিবিয়ে দিলে বাতিটা এবং অন্ধকারের সঙ্গে সঙ্গে ছুড়লে তার পিস্তলদুটো! তারপরেই আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জন ও ভয়াবহ আর্তনাদ এবং একটা ভারী দেহপতনের শব্দ!
তাড়াতাড়ি আলো জ্বেলে দেখা গেল, হ্যান্ডস দুই হাতে হাঁটু চেপে যন্ত্রণায় ছটফট করছে এবং তার আহত হাঁটু থেকে হুহু করে বেরুচ্ছে রক্তের ধারা!
একজন বোম্বেটে জিজ্ঞাসা করল, ‘এর অর্থ কী?’
হা হা করে হাসতে হাসতে কালোদেড়ে বললে, ‘এর অর্থ হচ্ছে, মাঝে মাঝে এক-একজনকে শাস্তি না দিলে সবাই ভুলে যাবে যে, এ জাহাজের আসল কর্তা কে?’ তারপর সে হেঁট হয়ে পড়ে বললে, চলো এসো হ্যান্ডস, চলে এসো—তোমার বিশেষ কিছু হয়নি বাপু! হাঁটুর উপরে একটা ছোট ছ্যাঁদা বই তো নয়, শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখালেই দু-দিনে সেরে যাবে—কী বলো হ্যান্ডস?’
কিন্তু হ্যান্ডস কিছুই বললে না, পরদিন সকালেই তাকে দোলায় তুলে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হল।