৪
পরের দিন সকালে একটা নতুন তথ্য জানা গেল। কেরোসিন স্পেস হিটার, যেটা রঞ্জনবাবু বলেছিলেন চমৎকার চলছিল, সত্যিই কিন্তু চলছিল না। বার্নার টিপ অপরিচ্ছন্ন, যেখানে দিয়ে বাতাস ঢোকে সেই ফিল্টারেও প্রচুর ধুলোবালি, পুরোনো কেরোসিনে জলও কিছুটা ছিল। সব কিছু মিলে খুব বেশি পরিমাণেই কার্বন মনোক্সাইড বেরিয়েছিল। প্রশ্ন, এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করা, না অকেজো অবস্থায় থাকার দরুন ঘটেছে? তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন এটা সেদিন চালাল কে? ডঃ রায় না অন্য কেউ!
বিকেলে দীপকবাবু হস্তদন্ত হয়ে এসে একটা চমকপ্রদ খবর দিলেন, ডঃ রায়ের কেসটাতে নাকি ডিএসপি সাহেব নিজেও একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে অজ্ঞাতসূত্রে পাওয়া একটা খবর থেকে পুলিশ রঞ্জনবাবুর বাড়ি থেকে প্যাক করা অবস্থায় দুটো ছবি উদ্ধার করেছে। রঞ্জনবাবু আর ওঁর স্ত্রী অনুরাধা অবশ্য বলেছেন যে ছবি দুটো যে বাড়িতে আছে ওঁরা জানতেনই না। রঞ্জনবাবুদের কাজের মেয়েটি সকালে ঝাঁট দেবার সময় দেখেনি বা খেয়াল করেনি। দুটো ছবিই ছিল রঞ্জনবাবুদের শোবার ঘরের আলমারির পেছনে- একটু আড়ালে লুকোনো। ডিএসপি সাহেবই ইতিমধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টদের দিয়ে প্যাকেজের মধ্যে থেকে কয়েকটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বার করেছেন। ডিএসপি সাহেবের হুকুমে ইতিমধ্যেই অজিতবাবু পুলিশের সঙ্গে ডঃ রায়ের বাড়িতে গিয়ে সেখানকার ছবিগুলো গুনতি করে এসেছেন। ছবি গুনতি করে ধরা পড়েছে যে দুটো ছবি ওখান থেকে মিসিং! ফিঙ্গারপ্রিন্টগুলো বাঁচিয়ে প্যাক খুলে যে দুটো ছবি পাওয়া গেছে, সে দুটো ডঃ রায়েরই। অজিতবাবুই ছবি দুটো ডঃ রায়কে দিয়ে কিনিয়েছিলেন গত বছর— একটা দশ লক্ষ, আরেকটা সাত লক্ষ টাকা দিয়ে। রঞ্জনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিএসপি সাহেব স্বয়ং ইন্টারোগেশনের কাজটা করবেন। খবরগুলো দিয়ে দীপকবাবু অবশ্য খুব লজ্জিতভাবে বললেন, “দেখুন স্যার, আমি জানতামও না এর মধ্যে ডিএসপি সাহেব জড়াবেন। উনি আমাদের বস, ওঁকে তো কিছু বলতে পারি না।”
“না, তা পারো না। তবে উনি যদি এই কেসটার ভার নেন, তাহলে তো ভালোই।” তারপর আমাদের দেখিয়ে বললেন, “আমি এই দুই স্যারকে ওঁদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও টেনে নিয়ে এসেছি। তুমি বরং এসপি সাহেবকে ব্যাপারটা জানিয়ে বলো, আমাদের মুক্তি দিতে।”
“আপনারা প্লিজ চলে যাবেন না স্যার। আমাদের এই ডিএসপি সাহেব মাঝেমধ্যেই বেশি উদ্যোগী হয়ে যান। তারপর সব কিছু গোলমেলে অবস্থায় রেখে অদৃশ্য হন, সেই হ্যাপা পরে আমাদের সামলাতে হয়। আমি জানি স্যার, ব্যাপারটা এসপি সাহেবের কানে উঠলে তিনিই ওঁকে আপনার কাজে নাক গলাতে বারণ করবেন।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই একেনবাবুর মোবাইল বেজে উঠল। এসপি সাহেবের ফোন। ঠিক কী বলছেন বুঝতে পারছিলাম না, তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম, এসপি সাহেবের কানে বোধহয় ওঁর ডেপুটির কার্যকলাপ ইতিমধ্যেই উঠেছে। একেনবাবু দেখলাম বলছেন, “না, না স্যার, তাতে কী হয়েছে… আর আপনার সঙ্গে কথা না বলে কখনোই আমরা চলে যাব না। ঠিক আছে স্যার, ঠিক আছে। চিন্তা করবেন না… হ্যাঁ স্যার, আমরা যাচ্ছি, গিয়ে দেখছি কী অবস্থা।”
কথা শেষ করে, দীপকবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “ফিঙ্গারপ্রিন্ট দুটো কার সেটা দেখেছ?”
“না। তবে আপনি চলুন স্যার, রঞ্জনবাবুকে ইতিমধ্যে নিশ্চয় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
.
খানিক বাদে থানায় পৌঁছে দেখলাম দীপকবাবু ভুল বলেননি, রঞ্জনবাবু খুব শুকনো মুখে থানায় বসে আছেন। উলটো দিকের চেয়ারে যিনি বসে আছেন তিনি আমাদের দেখে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন।
দীপকবাবু একেনবাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই বললেন, “আপনাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতামও না যে, আপনি এটার দায়িত্ব নিয়েছেন। যাই হোক, একটু আগেই এসপি সাহেব ফোন করে আপনার খবরটা দিলেন। এমনিতেই এতগুলো কাজ নিয়ে আমি ব্যস্ত… যাই হোক, এখানে যা যা হয়েছে, দীপক আপনাকে জানিয়ে দেবে।”
দীপকবাবু বললেন, “আমি স্যার জানিয়ে দিয়েছি।”
“ব্যস, তবে তো হয়েই গেল… আমি তাহলে চলি।” বলে নমস্কার করে যেরকম তড়িঘড়ি করে বিদায় নিলেন, বোঝা গেল বেশ ভালো ধমকই খেয়েছেন এসপি সাহেবের কাছ থেকে।
ডিএসপি সাহেব চলে যেতেই একেনবাবু রঞ্জনবাবুকে বললেন, “আপনাকে স্যার, শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করার আছে আমার। আপনারা কি কাল সারাদিন বাড়িতে ছিলেন?”
“না, বিকেলে একটু বেরিয়েছিলাম আমাদের এক সহকর্মীর বাড়িতে চা খেতে।”
“কতক্ষণ বাইরে ছিলেন স্যার?”
“এক ঘণ্টার মতো।”
“সহকর্মীর বাড়িটা কোথায়?”
“কাছেই, অবনপল্লিতে। “
“তাঁর নামটা?”
“বিনয়, বিনয় চ্যাটার্জী।”
“আপনার একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে আপত্তি আছে?”
“ফিঙ্গারপ্রিন্ট! আপত্তি কেন থাকবে, নিন।”
ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিট এনে রঞ্জনবাবুর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হল।
একেনবাবু বললেন, “আপনি স্যার এখন যেতে পারেন। শান্তিনিকেতনের বাইরে কিন্তু দীপকবাবুর অনুমতি না নিয়ে যাবেন না।”
.
রঞ্জনবাবু চলে যাবার পর একেনবাবু দীপকবাবুকে বললেন, “এটা আর নিতাইয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখতে বলো তো ফ্রেমের প্যাকেজে পাওয়া ছাপের সঙ্গে? নিতাইয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে তো?”
“হ্যাঁ, আছে। যখন বেডরুমে পাওয়া ছাপগুলো মেলানো হচ্ছিল তখনই নেওয়া হয়েছিল।”
যাঁকে কাজটা করতে বলা হল, তিনি একটু বাদেই এসে খবর দিলেন, “দুটোই নেগেটিভ, মিলছে না।”
“আমি কিন্তু এতটুকু অবাক হচ্ছি না,” প্রমথ বলল। “যে এই কাজ করেছে, সে গ্লাভস পরেই করেছে। যেমন, খুনির কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডঃ রায়ের ঘরে মেলেনি।”
“এটা ভালো বলেছেন স্যার।” বলে একটা কাগজে খসখস করে কিছু লিখে দীপকবাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে একেনবাবু বললেন, “দীপক, আমাদের একটু চা খাওয়াও তো, মাথাটা সবারই স্টিমুলেট করা দরকার… গোলমেলে এক খুনির সঙ্গে আমরা ডিল করছি।”
একেনবাবুর নোটটা পড়তে পড়তে বিস্মিত মুখে দীপকবাবু আমাদের জন্য চায়ের হুকুম করলেন। তারপর ভেতরে গিয়ে একজন অফিসারকে কিছু একটা বলে ফিরে আসতে আসতেই চা এসে গেল।
একেনবাবু শুরু করলেন, “আসুন স্যার, চা খেতে খেতে সবাই মিলে একটু আলোচনা করা যাক… আমার মনে হচ্ছে এটা মোটেই আত্মহত্যা নয়, ডঃ রায় নিজে জানলা না খুলে কেরোসিন হিটার চালু করেননি, চালু করেছে আততায়ী। ডঃ রায় ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘরে ঢুকে কাজটা সে করেছে- কেরোসিন হিটার চালু করা, সেইসঙ্গে ইলেকট্রিক হিটারটাকে বন্ধ করে দেওয়া। আর কেরোসিন হিটারটাকে ট্যাম্পার করা, মানে, কেরোসিনে জল মেশানো, ফিল্টার ইত্যাদি নোংরা করা, বার্নার টিপ ড্যামেজ করা— এগুলোও সে আগেই করেছে। এই হিটার জ্বালালে যে অনেক কার্বন মনোক্সাইড বেরোবে সে জানত।”
“ঠিক আছে, এটা মানলাম স্যার, কিন্তু সেই লোকটি কে?” দীপকবাবু বললেন।
“সেটাই প্রশ্ন দীপক, ওঁর মৃত্যুতে সবচেয়ে লাভবান কে হবেন?”
“রঞ্জনবাবু, কিন্তু তার জন্য খুন করার দরকারটা কী ছিল? এমনিতেও তো উনি ছিলেন উত্তরাধিকারী।”
“ঠিকই, যদি না কোনো কারণে রঞ্জনবাবুর খুব জরুরি টাকার প্রয়োজন না হয়।” একেনবাবু বললেন।
“সেটাই। ওঁর বাবার ক্যানসার ধরা পড়েছে… সার্জারি, রেডিয়েশন আর কেমোর জন্য প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা লাগবে। ওঁর পক্ষে সেটা জোগাড় করা অসম্ভব।” দীপকবাবু ইতিমধ্যেই খোঁজখবর কিছু নিয়েছেন বোঝা গেল।
“ঠিক কথা। সেটা চট করে জোগাড় করা সম্ভব যদি দামি কোনো ছবি চুরি করতে পারেন। ধরে নেওয়া যাক, সেটাই তিনি করেছেন, কিন্তু সেক্ষেত্রেও মামাকে খুন করার প্রয়োজনটা তো দেখছি না। জরুরি প্রয়োজন মিটে যাবার পর মামার সম্পত্তিটা তো তিনিই পেতেন।” একেনবাবু বললেন।
“দাঁড়ান, দাঁড়ান, একটা ইম্পর্টেন্ট পয়েন্ট আপনি মিস করছেন।” প্ৰমথ বলল, “ডঃ রায় সন্দেহ করছিলেন না, যে ওঁর ছবি চুরি হচ্ছে! রঞ্জনবাবু কোনো ছবি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন জানলেই তিনি ব্যাপারটা ধরে ফেলতেন, ফলে নতুন উইল করে রঞ্জনবাবুকে উইল থেকে বাদ দিতেন। সেটা আটকাবার একমাত্র উপায় হল, উইল বদল করার আগেই ডঃ রায়কে খুন করা।”
“ঠিক ধরেছিস, প্রমথ।” আমি সায় দিলাম। “ইট মেকস সেন্স, রঞ্জনবাবু ইচ্ছে করেই একটা ডিফেক্টিভ কেরোসিন স্পেস হিটার ডঃ রায়কে দিয়েছিলেন। আর রাত্রে ডঃ রায় ঘুমিয়ে পড়লে ইলেকট্রিক হিটার বন্ধ করে সেটাকে চালু করেছিলেন।”
.
পুলিশ স্টেশনের প্লাস্টিকের ছোট্ট কাপের চা… দু-চুমুকেই শেষ হয়ে যায়। দীপকবাবুর অফিসের একজন এসে কাপগুলো নিয়ে গেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তেজিত অজিতবাবুকে নিয়ে একজন অফিসার ঢুকলেন।
অজিতবাবু রাগে ফুঁসছেন। দীপকবাবুকে বললেন, “আপনার কথা শুনে আমাকে এরা নিয়ে এসেছে। আপনি কী ভেবেছেন, আমি কাকাকে খুন করেছি?
দীপকবাবু একেনবাবুকে দেখালেন। একেনবাবু বললেন, “বসুন স্যার, বসুন, উত্তেজিত হবেন না। খুনের প্রশ্নই নয়, আমরা চেষ্টা করছি বার করতে চুরিটা কে করেছে।”
“আপনি আমাকে ছবি-চোর সন্দেহ করছেন! আমি তো চাইলে অজস্র ছবি লোপাট করে ফেলতে পারতাম। শুধু এই দুটো কেন?”
“তা ঠিক, স্যার। কিন্তু সেটা প্রমাণিত হবে ফ্রেমের কাগজের মোড়কে আপনার আঙুলের ছাপ আছে কিনা পরীক্ষা করে।”
“ডোন্ট বি এ ফুল! আমার আঙুলের ছাপ তো থাকবেই, ফ্রেমগুলো তো সব আমিই প্যাক করেছি!”
“তাই তো স্যার, এটা তো আমি ভাবিনি!”
অজিতবাবু এমনভাবে একেনবাবুর দিকে তাকালেন, মনে হল একটা গর্দভকে দেখছেন।
“তাহলে?”
“এক সেকেন্ড স্যার, একটা কনফার্মেশন পেলেই আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি।”
“কীসের কনফার্মেশন?”
“বসুন না স্যার, একটু চা খান! তার আগে আপনার আঙুলের ছাপটা দীপকের লোকদের একটু নিতে দিন।”
“তা দিচ্ছি, কিন্তু তাতে কিছুই প্রমাণ হবে না— বলে রাখছি।”
“ঠিক স্যার, সেটা তো আপনি বুঝিয়েই দিলেন।”
.
ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিট নিয়ে যিনি এলেন, তিনি বেশ ধীরজ। আস্তে আস্তে সবগুলো আঙুলের প্রিন্ট নিতে বেশ খানিকটা সময় লাগিয়ে দিলেন। কাজ শেষ হবার একটু পরেই একজন অফিসার এসে বললেন, “দুটোই ম্যাচ করেছে।”
“বাঃ!” একেনবাবু মনে হল খুব সন্তুষ্ট হয়েছেন উত্তরটা শুনে।
একেনবাবু অজিতবাবুকে বললেন, “আপনি তো আজ সকালে গিয়ে গুনতি করে এলেন, ঠিক?”
“হ্যাঁ।”
“যে দুটো গতকাল নিয়ে এলেন, সে দুটো গুনতিতে ধরেছেন?”
“নিশ্চয়, সে দুটো এখনও আমার কাছে আছে… ফ্রেম করা হয়নি।”
“তাহলে তো মুশকিল হল স্যার, এর মধ্যে তো আর কেউ ওখান থেকে ছবি সরায়নি।“
“কী বলছেন আপনি, কাকা তো আগেই সন্দেহ করেছিলেন, ছবি কেউ সরাচ্ছে।”
“ঠিক স্যার, কিন্তু এই চুরিটা তো গতকাল ঘটেছে!”
“কী করে জানলেন আপনি?”
“ন্যায্য প্রশ্ন স্যার। উত্তর হল, রঞ্জনবাবুর বাড়িতে পাওয়া ছবির প্যাকিং-এ আঙুলের একটা ছাপ এই বাপিবাবুর। আপনার কি মনে আছে স্যার, গতকাল প্যাক করা ফ্রেমে বাপিবাবু আঙুল দিয়েছিলেন, আপনি হাঁ হাঁ করে উঠেছিলেন?”
এটা শোনামাত্র, অজিতবাবু কেমন জানি মিইয়ে গেলেন!
“আমি কী ভাবছি জানেন স্যার? সেদিনের সেই প্যাক করা ফ্লেম দুটো কাল বিকেলে রঞ্জনবাবুরা বাড়ি থেকে বেরোতেই আপনি ওঁদের শোবার ঘরের আলমারির পেছনে রেখে দিয়েছিলেন… নিতাই বা আর কেউ করলে আঙুলের ছাপ পাওয়া যেত। ঠিক কিনা?”
অজিতবাবু নির্বাক।
.
কাহিনিটাকে আর প্রলম্বিত করতে চাই না। কলকাতায় ফেরার পথে আমি একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কী করে সন্দেহ করলেন অজিতবাবু চুরিটার সঙ্গে যুক্ত?”
“আসলে স্যার, যে দুটো ছবি চুরি গেছে দুটোই খুব দামি। রঞ্জনবাবু আর্ট সম্পর্কে তেমন খোঁজখবর রাখেন বলে তো মনে হল না। তখনই আমার সন্দেহ হল অজিতবাবুর ওপর। তার আগেও একটু খটকা লাগছিল, ওঁর প্যাক করা ছবি কেউ ছুঁলে এত উত্তেজিত হচ্ছিলেন কেন! তারপর যখন শুনলাম একটা ছাপ কারোর সঙ্গে মিলছে না, মনে পড়ে গেল আপনি একটা ছবি ছুঁয়েছিলেন। দীপককে একটা নোট লিখলাম, চায়ের কাপ থেকে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্টটা তুলে ম্যাচ করানোর জন্যে। দেখুন, কীরকম মিলে গেল!”
“আপনি একটা জিনিয়াস মশাই!”
“কী যে বলেন স্যার, ঠিক এইরকমই একটা কেস কোথায় জানি পড়েওছিলাম। যাই হোক, চুরির দায় থেকে রঞ্জনবাবু এখন মুক্তি পেলেন। তার থেকেও বড়ো কথা, অজিতবাবু যেভাবে দাবার ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন, তাতে শেষমেশ ডঃ রায়ের খুনের দায়ও রঞ্জনবাবুর ওপরই বর্তাত। কেন? তার সুন্দর যুক্তিগুলো তো আপনারাই সাজিয়েছিলেন। আর সেটা হলে, পুরো সম্পত্তির মালিক হতেন অজিতবাবু।”
“মাই গড!”
“খুনটা কি অজিতবাবু করেছেন?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।
“আমার তো তাই ধারণা স্যার। সেদিন অজিতবাবুর দোকানে আপনারা যখন চা খাচ্ছিলেন, আমি ওঁর কম্পিউটারে ব্রাউজার হিস্ট্রি সার্চ করে দেখলাম অনেক সাইটে গেছেন কেরোসিন হিটার ব্যবহারের ওয়ার্নিং দেখতে। ওই হিস্ট্রিটা ওঁর মুছে ফেলা উচিত ছিল। আমি অবশ্য সব কিছু দীপককে জানিয়ে এসেছি। তবে কিনা, এগুলো সব পরোক্ষ প্রমাণ স্যার, প্রত্যক্ষ নয়। প্রমাণটা জোরদার হত, যদি ডঃ রায়ের দুধে ঘুমের ওষুধ পাওয়া যেত। দ্রুত ঘুম পাড়িয়ে কেরোসিন হিটার চালু করে দেওয়া… সে অপরচুনিটিও তো অজিতবাবুর ছিল যখন গরম দুধ রেখে ডঃ রায় বাথরুমে গিয়েছিলেন। সেই দুধ তো আর পরীক্ষা করা হয়নি। তাও যা আছে মনে হয় ধোপে টিকে যাবে। পুলিশি জেরাতেই হয়তো দোষও স্বীকার করবেন উনি।”
“তা আপনি জেরাটা করলেন না কেন?”
“কী মুশকিল স্যার, আমি তো আর পুলিশ নই।”
“আপনি পুলিশের বাপ!” প্ৰমথ বলল।
“কী যে বলেন স্যার!”