আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, যাহা সঙ্কল্প করা যায়, তাহা সকল সময়ে সম্পন্ন হয় না। যখন প্রচার প্রথম প্রকাশ হয়, তখন আমাদের এমন অভিপ্রায় ছিল না যে, প্রচার কেবল ধর্মবিষয়ক পত্র হইবে। কিন্তু প্রচারের লেখকদিগের রুচির গতিকে, বিশেষতঃ প্রধান লেখকের অভিপ্রায় অনুসারে, ইহাতে এক্ষণে ধর্মবিষয়ক প্রবন্ধ ভিন্ন আর কিছু থাকে না।
ইহাতে প্রচারের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবার সম্ভাবনা নাই। জ্ঞানের মধ্যে ধর্মজ্ঞানই সর্বশ্রেষ্ঠ বটে, কিন্তু অন্যান্য জ্ঞান ভিন্ন ধর্মজ্ঞানের সম্যক্ স্ফূর্তি হয় না। বিশেষ মনুষ্যজীবন বিচিত্র ও বহুবিষয়ক; এজন্য জ্ঞানেরও বৈচিত্র্য ও বহুবিষয়কতা চাই। যাহা বিচিত্র ও বহুবিষয়ক নহে, তাহা সাধারণের নিকট আদরণীয় হইতে পারে না। সাধারণের নিকট আদরণীয় না হইলে ধর্মবিষয়ক প্রবন্ধেও সফলতা ঘটে না। অতএব আগামী বৎসরে যাহাতে প্রচার বিচিত্র ও বহুবিষয়ক হয়, আমরা তাহা করিবার উদ্যোগী হইয়াছি। প্রচারের প্রধান লেখকেরাও এ বিষয়ে অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।
কিন্তু প্রচারের বর্তমান ক্ষুদ্রাকার থাকিলে, সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইতে পারে না। আমরা ধর্মালোচনা পরিত্যাগ করিতে পারি না, অথবা তাহার অল্পতা করিতে পারি না। কাজেই প্রচারের কলেবর বৃদ্ধি করিতে হইবে। কলেবর বৃদ্ধি করিয়া, আমরা নিম্নলিখিত নিয়মানুসারে প্রচার সম্পাদিত করিতে পারিব।
১। ধর্মবিষয়ক এক্ষণে যেরূপ প্রকাশিত হইতেছে সেইরূপ হইতে থাকিবে। এখন যাঁহারা তাহা লিখিতেছেন, তাঁহারাই তাহা লিখিবেন।
২। স্থানাভাবপ্রযুক্ত আমরা উপন্যাস বন্ধ করিতে বাধ্য হইয়াছিলাম। এক্ষণে স্থানাভাব থাকিবে না। অতএব উপন্যাস পুনঃ প্রকাশিত হইতে আরম্ভ হইবে। “সীতারাম” বন্ধ হওয়ায়, অনেক পাঠক দুঃখ বা অসন্তোষ প্রকাশ করিয়াছেন। অতএব আগামী শ্রাবণ মাস হইতে “সীতারাম” পুনঃ প্রকাশিত হইতে থাকিবে।
৩। এতদ্ভিন্ন সামাজিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক, এবং অন্যান্য প্রবন্ধ ও রহস্য প্রকাশিত হইবে।
এই সঙ্কল্প পাঠকদিগের অনুমোদিত না হইলে, সিদ্ধ হইবে না। কেন না পত্রের কলেবর বৃদ্ধি করিলে কাজেই মূল্য বৃদ্ধি হইবে। এই জন্য দুই মাস অগ্রে পাঠকদিগকে সম্বাদ দিলাম। পত্রের কলেবর এবং মূল্য কি পরিমাণে বৃদ্ধি পাইবে, তাহা পাঠকেরা বিজ্ঞাপনে দৃষ্টি করিবেন।
—‘প্রচার’, জ্যৈষ্ঠ ১২৯১, পৃ. ৩৬১-৬২।