আইনস্টাইন
ফ্রেডি তার সামনে বসে থাকা মানুষটিকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেন। মানুষটি আকারে ছোট, মাথার চুল হালকা হয়ে এসেছে, গোসল সেরে খুব সতর্কভাবে চুল আঁচড়ালে যে কয়টি চুল আছে সেগুলি দিয়ে মোটামুটিভাবে মাথাটা ঢাকা যায়। মানুষটির চেহারায় একটি তৈলাক্ত পিচ্ছিল ভাব রয়েছে, মুখের চামড়া এখনো কুঁচকে যায় নি বলে প্রকৃত বয়স ধরা যায় না, চোখ দুটি ধূসর এবং সেখানে কেমন জানি এক ধরনের মৃত–মানুষ মৃত–মানুষ ভাব রয়েছে। মানুষটির স্যুটটি দামি, টাইটি রুচিসম্মত, কাপড় নিউজ। চেহারা দেখে কখনো কোনো মানুষকে বিচার করা ঠিক নয়, কিন্তু তবুও ফ্রেডি মানুষটিকে অপছন্দ করে ফেললেন। তিনি অন্যমনস্কভাবে মানুষটির দিকে তাকিয়ে থেকে তার কথা শোনার ভান করতে থাকেন যদিও, তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে মানুষটির কথা বলার ভঙ্গিতে, ঠোঁট কুঁচকে ওঠায়, দাঁত বের হওয়ার মাঝে।
আপনি পৃথিবীর প্রথম দশ জন ঐশ্বর্যশালী মানুষের এক জন। মানুষটি মুখে এক ধরনের হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি জানি আপনার সাথে দেখা করার থেকে একজন মন্ত্রীর স্ত্রীর সাথে ফষ্টিনষ্টি করা সহজ–তবুও আমাকে খানিকটা সময় দিয়েছেন বলে অনেক ধন্যবাদ। তবে আমি নিশ্চিত আপনি শুধু শুধু আমার সাথে খানিকটা সময় ব্যয় করতে রাজি হন নি। আমার প্রস্তাবটা ভেবে দেখেছেন, আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন।
ফ্রেডি গ্রানাইটের কালো টেবিলে আঙুল দিয়ে শব্দ করছিল, হঠাৎ করে সেটা বন্ধ করে মানুষটিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, কাজের কথায় আসা যাক।
মানুষটি এতটুকু বিচলিত না হয়ে মাথা নেড়ে বলল, আসা যাক।
আপনি দাবি করছেন আমার টাকা বিনিয়োগের এর থেকে বড় সুযোগ আর কোথাও নেই?
না, নেই। ছোটখাটো মানুষটির গলার স্বর যে আনুনাসিক হঠাৎ করে সেটা কেমন যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল।
আপনি কেমন করে এত নিশ্চিত হলেন? আমি কোথায় কোথায় টাকা বিনিয়োগ করেছি আপনি জানেন?
মোটামুটিভাবে জানি। সেজন্যেই অন্য কারো কাছে যাবার আগে আপনার কাছে এসেছি।
ফ্রেডি ভুরু কুঁচকালেন, মানে?
পৃথিবীর সাধারণ মানুষ যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স–এর নাম শোনে নি তখন আপনি সান হোসের সবচেয়ে বড় এ. আই. ফার্মটি কিনেছেন। নিউক্লিয়ার পাওয়ার যে পৃথিবী থেকে উঠে যাবে সেটি অন্যেরা বোঝার অন্তত দশ বছর আগে আপনি বুঝেছিলেন। প্রচুর অর্থ নষ্ট করে আপনি সেখান থেকে সরে এসে কয়েক বছরের মাঝে আপনার বিশাল সম্পদকে রক্ষা করেছেন। স্পেস সায়েন্সে মোটা টাকা লোকসান দিয়ে আপনি সেটাকে দশ বছর ধরে রাখলেন–এখন সারা পৃথিবীতে আপনার একচ্ছত্র মনোপলি। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙে আপনি পৃথিবীর সবচয়ে বড় বিনিয়োগটি করতে যাচ্ছেন। জেনেভার সবচেয়ে বড় জিনেটিক ল্যাবটিতে আপনি বিড করেছেন–
ফ্রেডি সোজা হয়ে বসলেন, আপনি কেমন করে জানেন?
আমি জানি সেটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, কেমন করে জানি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ব্যাপারটা গোপন থাকার কথা।
ব্যাপারটা এখনো গোপনই আছে। আমি জানলেও তথ্য গোপন থাকে বলে আমি অনেক তথ্য জানতে পারি।
ফ্রেডি আবার তার আঙুল দিয়ে অন্যমনস্কভাবে টেবিলে টোকা দিতে শুরু করলেন, বললেন, ঠিক আছে, এখন তুমি বল আমি কিসে বিনিয়োগ করব?
মানুষে।
মানুষে!
হ্যা মানুষে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হবে মানুষে। সত্যিকার মানুষে। রক্তমাংসের মানুষে।
ফ্রেডি কোনো কথা না বলে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। মানুষটি মাথা এগিয়ে এনে ষড়যন্ত্রীদের মতো বলল, হেঁজিপেজি মানুষে নয়–পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষে।
ফ্রেডি মাথা নাড়লেন, আপনি কী বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।
ছোটখাটো তৈলাক্ত চেহারার মানুষটি একটি ম্যাগাজিন ফ্রেডির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন।
ফ্রেডি ম্যাগাজিনটি হাতে নিলেন, পুরোনো একটি নিউজউইক। যে লেখাটি দেখতে দিয়েছে সেটা লাল কালি দিয়ে বর্ডার করে রাখা। ফ্রেডি চোখে চশমা লাগিয়ে লেখাটি পড়লেন, জেনেভার একটি ল্যাবরেটরিতে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের খানিকটা টিস্যু সংরক্ষিত ছিল, সেটি খোয়া গেছে। জোর পুলিশি তদন্ত চলছে।
ফ্রেডি কিছুক্ষণ নিশ্বাস বন্ধ করে লেখাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন, তিনি বেশ কয়েক বছর আগে এই সংবাদটি পড়েছিলেন, কেন এই টিস্যু খোয়া গেছে তিনি সাথে সাথে বুঝতে পেরেছিলেন। এখন এই তৈলাক্ত পিচ্ছিল চেহারার মানুষটির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ পুরো ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার হৃৎস্পন্দন হঠাৎ দ্রুততর হয়ে যায়। তিনি খুব সতর্কভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ধীরে ধীরে বললেন, আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন?
আপনি যদি বুঝতে না পারেন আমার কিছু বলার কোনো অর্থ নেই। আর আপনি যদি বুঝতে পেরে থাকেন তাহলে আমার কিছু বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
ফ্রেডি তীক্ষ্ণ চোখে মানুষটার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, আপনি–আপনি বলতে চাইছেন আইনস্টাইনকে ক্লোন করা হয়েছে?
ছোটখাটো মানুষটির মুখে একটি তৈলাক্ত হাসি বিস্তৃত হল। মাথা নেড়ে বলল, আপনি যথার্থ অনুমান করেছেন। আইনস্টাইনকে ক্লোন করা হয়েছে।
সত্যি?
সত্যি।
তাকে মাতৃগর্ভে ঠিকভাবে বর্সানো হয়েছে?
মানুষটির মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হল, বলল, সে অনেকদিন আগের কথা।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আইনস্টাইনের ক্লোনের জন্ম হয়ে গেছে?
অবশ্যি। যদি সুস্থভাবে জন্ম না হত আমি কি আপনার কাছে আসতাম?
কোথায় জন্ম হয়েছে? কবে জন্ম হয়েছে?
এই দেশেই জন্ম হয়েছে। প্রায় বছর চারেক হল।
কোথায় আছে সেই ক্লোন?
ছোটখাটো মানুষটি খুব ধীরে ধীরে মুখের হাসি মুছে সেখানে একটি গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে বলল, সেই শিশুটি কোথায় আছে আমি বলতে পারব না। বুঝতেই পারছেন নিরাপত্তার ব্যাপার রয়েছে। যেটুকু বলতে পারি সেটা হচ্ছে সে তার সারোগেট মায়ের সাথে আছে। অনেক খুঁজে পেতে এই মা’কে বেছে নেয়া হয়েছে, অর্ধেক জার্মান এবং অর্ধেক সুইস। অত্যন্ত মায়াবতী মহিলা।
ফ্রেডি তখনো ঠিক ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, খানিকটা হতচকিতের মতো ছোটখাটো মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। মানুষটি তার বুকপকেট থেকে দুটি ছবি বের করে ফ্রেডির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই যে আইনস্টাইনের শৈশবের ছবি। একটি নিয়েছি এন্টনিয়া ভেলেন্টিনের লেখা বই থেকে। অন্যটি সপ্তাহখানেক আগে তোলা।
ফ্রেডি হতবাক হয়ে ছবি দুটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। আইনস্টাইনের শৈশবের ছবির সাথে কোনো পার্থক্য নেই, সেই ভরাট গাল, কোঁকড়া চুল, গভীর মায়াবী চোখ! পার্থক্য কেমন করে থাকবে? আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের টিস্যু থেকে একটা কোষ আলাদা করে তার ছেচল্লিশটি ক্রমোজম একটি মায়ের ডিম্বাণুতে ঢুকিয়ে সেটি মাতৃগর্ভে বসানো হয়েছে। যে ক্রমোজমগুলি একটি ডিম্বাণু থেকে আইনস্টাইনের জন্ম দিয়েছে সেই একই ক্রমোজম এই আইনস্টাইনের জন্ম দিয়েছে। যে শিশুটির জন্ম হয়েছে সে তো আইনস্টাইনের মতো একজন নয়, সে সত্যি সত্যি আইনস্টাইন।
ছোটখাটো মানুষটি ছবি দুটি নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে বলল, আপনাকে নিশ্চয়ই এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতে হবে না।
ফ্রেডি কোনো কথা না বলে স্থির দৃষ্টিতে মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলেন, খানিকক্ষণ পর চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, আটানব্বই সালে আইন করে সারা পৃথিবীতে মানুষের ক্লোন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মানুষটি মুখ নিচু করে খিকখিক করে হেসে বলল, অবশ্যই কাজটা বেআইনি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশনে অন্তর্ঘাত চালিয়ে ব্যবসা থেকে উঠিয়ে দেয়াও বেআইনি ছিল। আভ্যন্তরীণ খবর কিনে স্যাটেলাইট সিস্টেম পুরোটা দখল করে নেয়াও বেআইনি ছিল, কিন্তু আপনি সেজন্যে নিরুৎসাহিত হন নি। জেনেভার জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙের ফার্ম আপনি যেভাবে কিনতে যাচ্ছেন সেটাও পুরোপুরি বেআইনি। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী মানুষদের এক জন, আপনার তো আইনকে ভয় পাওয়ার কথা নয়–আপনার আইনকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা।
আমি আইনকে ভয় করি না, কারণ পৃথিবীর কোথাও কেউ প্রমাণ করতে পারবে না আমি আইন ভঙ্গ করেছি।
ছোটখাটো মানুষটি মুখের হাসি বিস্তৃত করে বলল, আপনাকে আমি একবারও আইন ভঙ্গ করতে বলি নি। ল্যাবরেটরি থেকে টিস্যু সরিয়ে যে আইনস্টাইনকে ক্লোন করেছে সে আইন ভেঙেছে। একবার ক্লোনের জন্ম হওয়ার পর সে পৃথিবীর মানবশিশু–কারো সাধ্যি নেই তাকে স্পর্শ করে। আপনি শুধুমাত্র তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবেন–সেটি হবে পুরোপুরি আইনের ভিতরে। তারপর তাকে আপনি কীভাবে বাজারজাত করবেন সেটি পুরোপুরি আপনার ব্যাপার! মানুষটি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, আমার ধারণা। একবিংশ শতাব্দীতে কীভাবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ একজন বিজ্ঞানীকে ব্যবহার করা যাবে সেটি আপনার চাইতে ভালো করে আর কেউ জানে না।
ফ্রেডি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। ভবিষ্যৎ–মুখী বিনিয়োগে, সারা পৃথিবীতে তার কোনো জুড়ি নেই, সত্যি সত্যি এ ব্যাপারে তার প্রায় এক ধরনের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় রয়েছে। যদিও মানুষকে ক্লোন করার ব্যাপারটি বেআইনি, কিন্তু এটি যে অসংখ্যবার ঘটেছে। সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষকে ক্লোন করে তার দ্বিতীয় তৃতীয় কিংবা অসংখ্য কপি তৈরি করে সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর কোনো লাভ–ক্ষতি হয় নি। তবে আইনস্টাইনের মতো একজন মানুষের বেলায় সেটি অন্য কথা, এটি পৃথিবীর সমস্ত ভারসাম্যের ওলটপালট করে দিতে পারে। জেনারেল রিলেটিভিটির যে সমস্ত সমস্যার এখনো সমাধান হয় নি তার বড় একটা যদি সমাধান করিয়ে নেয়া যায় তাহলে কী সাংঘাতিক একটা ব্যাপার হবে! মানুষ আইনস্টাইনকে দেখেছে পরিণত বয়সে, কৈশোরের আইনস্টাইন, যৌবনের আইস্টাইন নিয়ে সাধারণ মানুষের নিশ্চয়ই কী সাংঘাতিক কৌতূহল। ঠিকভাবে বাজারজাত করা হলে এখান থেকে কী হতে পারে তার কোনো সীমা নেই। যদি এই ক্লোন থেকে আরো ক্লোন করা যায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জন করে আইনস্টাইন দেয়া যায়–ফ্রেডি আর চিন্তা করতে পারেন না, তার ব্যবসায়ী মস্তিষ্ক হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চোখ খুলে তিনি ছোটখাটো মানুষটির দিকে তাকালেন, কত?
মানুষটির মুখে আবার তৈলাক্ত হাসিটি বিস্তৃত হল, বলল, অর্থের পরিমাণটি তো। গুরুত্বপূর্ণ নয়–আপনি রাজি আছেন কি না সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
তবু আমি শুনতে চাই। কত?
মানুষের বিনিয়োগের ব্যাপারটি কিন্তু আপনাকে দিয়েই শুরু হবে। আমি যতদূর জানি এলভিস প্রিসলি, মেরিলিন মনরো এবং উইনস্টন চার্চিলের ক্লোন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেগুলি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে, হঠাৎ করে মারা গেলে কীভাবে ইস্যুরেন্স করা হবে তার সবকিছু কিন্তু এইটি দিয়ে ঠিক করা হবে।
ফ্রেডি মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বললেন, আপনি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি। কত?
মানুষটি তার জিব বের করে ঠোঁট দুটি ভিজিয়ে বলল, আমরা খোঁজ নিয়েছি, সাদা এবং কালো মিলিয়ে আপনার সেই পরিমাণ লিকুইড ক্যাশ রয়েছে।
ফ্রেডি একটা নিশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলেন, তারপর থমথমে গলায় বললেন, ঠিক আছে, আমার এটর্নি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করার জন্যে আপনার এটর্নির সাথে যোগাযোগ করবে। তবে
তবে?
এটি যে সত্যিই আইনস্টাইনের ক্লোন এবং আন্তর্জাতিক কোনো জোচ্চুরির অংশ নয় সেটি আমি নিজেই নিশ্চিত হয়ে নেব। মাউন্ট সাইনাই হাসপাতাল থেকে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের টিস্যু সংগ্রহ করে আমি নিজে আমার নিজের জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেব।
অবশ্যি। আপনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবেন তার জন্যে এটি তো করতেই হবে। ছোটখাটো মানুষটি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে খানিকক্ষণ সময় দেয়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত আজকে এখান থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে একটা নূতন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
ফ্রেডি কোনো কথা না বলে শীতল চোখে মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
***
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইনের ক্লোনশিশুটি চুপচাপ ধরনের–ঠিক যেরকম হওয়ার কথা। শিশুটি কথা বলে মৃদু স্বরে–তার সাথে যে সারোগেট মা রয়েছেন তার কাছে জানা গেল, শিশুটি কথা বলতে শুরু করেছে অনেক দেরি করে, ঠিক সত্যিকার আইনস্টাইনের মতো।
শিশুটির নাম দেয়া হয়েছে এলবার্ট খুব সঙ্গত কারণেই। ফ্রেডি অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার পর একদিন শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলেন, বাচ্চাটি তার কাছেই এল না, দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ফ্রেডি ভাব করার খুব বেশি চেষ্টা করলেন না, তার জন্যে প্রায় পুরো জীবনটাই পড়ে রয়েছে। শিশুটির দিকে তাকিয়ে তার ভিতরে বিচিত্র এক ধরনের ভাব খেলা করতে থাকে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইনকে তিনি সংগ্রহ করেছেন। তার ছবি নয়, তার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি নয়, তার ব্যবহার্য পোশাক নয়–স্বয়ং মানুষটিকে। পৃথিবীর ইতিহাসে কি এর আগে কখনো এরকম কিছু ঘটেছে? মনে হয় না। এই আইনস্টাইনকে তিনি গড়ে তুলবেন। প্রকৃত আইনস্টাইন তাঁর জীবনের অসংখ্য ঘাত–প্রতিঘাতে যে কাজ করতে পারেন নি তিনি এই শিশুকে দিয়ে সেইসব করিয়ে নেবেন। শুধু অর্থ নয়, খ্যাতি এবং ইতিহাস সৃষ্টি করবেন এই শিশুটিকে দিয়ে।
ফ্রেডি শিশুটিকে চমৎকার একটা পরিবেশে বড় হওয়ার জন্যে যা যা প্রয়োজন তার সব ব্যবস্থা করে দিলেন। শহরতলিতে একটা ছবির মতো বাসা, পিছনে একটা ঝিল, ঝিলের পাশে পাইন গাছ। ঘরের ভিতরে ফায়ারপ্লেস, বড় লাইব্রেরি, বসার ঘরে গ্র্যান্ড পিয়ানো, চমৎকার উজ্জ্বল রঙে সাজানো শোয়ার ঘর, পায়ের কাছে খেলনার বাক্স, মাথার কাছে সুদৃশ্য কম্পিউটার।
শিশুটি চমৎকার পরিবেশে বড় হতে থাকে। তার মানসিক বিকাশলাভের প্রক্রিয়াটি খুব তীক্ষ্ণ নজরে রাখা হল। প্রকৃত আইনস্টাইনের মতোই তার পড়াশোনায় খুব মন নেই। এলজেবরা বা জ্যামিতি দুই–ই চোখে দেখতে পারে না। কম্পিউটারের নূতনত্বটুকু কেটে যাবার পর সেটিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। সঙ্গীতে অবশ্যি এক ধরনের আকর্ষণ গড়ে উঠল, একা একা দীর্ঘ সময় গ্র্যান্ড পিয়ানো টেপাটেপি করে, মনে হয় এইটুকু বাচ্চার ভিতরে প্রচণ্ড এক ধরনের সুরবোধ রয়েছে।
শিশুটির ভিতরে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা রয়েছে, স্কুলে বন্ধুবান্ধব খুব বেশি নেই। ফ্রেডি খুব মনোযোগ দিয়ে এই শিশুটিকে লক্ষ করে যাচ্ছে, খুব সাধারণ একটা শিশু হিসেবে বড় হবে সে, বয়ঃসন্ধির সময় হঠাৎ করে মানসিক বড় বড় কিছু পরিবর্তন ঘটবে। ফ্রেডি খুব ধৈর্য ধরে সেই সময়টির জন্যে অপেক্ষা করে আছেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এটি– প্রয়োজনে তার জন্যে সারা জীবন অপেক্ষা করবেন।
***
তরুণ এলবার্ট গ্র্যান্ড পিয়ানোর কাছে দাঁড়িয়ে আছে, ফ্রেডি কাছাকাছি একটা নরম চেয়ারে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে লক্ষ্য করছেন। এন্টোনিয়া ভেলেন্টাইনের বইয়ে তরুণ আইনস্টাইনের যে ছবিটি রয়েছে তার সাথে এই তরুণটির একচুল পার্থক্য নেই। সেই অবিন্যস্ত ব্যাকব্রাশ করা চুল, উঁচু কপাল, সূক্ষ্ম গোঁফের রেখা–ঠোঁটের কোনায় এক ধরনের হাসি যেটা প্রায় বিদ্রুপের কাছাকাছি। ছবিটিতে আইনস্টাইন থ্রিপিস স্যুট পরে ছিলেন–সেই যুগে যেরকম চল ছিল, এলবার্ট একটা জিন্সের প্যান্ট এবং গাঢ় নীল রঙের টি–শার্ট পরে আছে–এইটুকুই পার্থক্য।
ফ্রেডি একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললেন, এলবার্ট আমি আজকে তোমার সাথে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব। খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই কথাটি বলার জন্যে এক যুগ থেকেও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে আছি।
এলবার্ট উৎসুক দৃষ্টিতে ফ্রেডির দিকে তাকিয়ে রইল। ফ্রেডি বললেন, তুমি আমার কাছে বস।
এলবার্ট এগিয়ে এসে কাছাকাছি একটা চেয়ারে বসল, তার চোখেমুখে হঠাৎ এক ধরনের সূক্ষ্ম অসহিষ্ণুতার ছাপ পড়ে। ফ্রেডি ভুরু কুঁচকে বললেন, কোনো সমস্যা?
না, ঠিক সমস্যা নয়। তবে
তবে?
আজ বিকেলে আমার জুডিকে নিয়ে একটা কনসার্টে যাবার কথা।
কনসার্ট? কিসের কনসার্ট?
ট্রায়ো ইন দ্য ওয়াগন।
ফ্রেডি চোখ কপালে তুলে বললেন, মাই গড! তুমি ঐসব কনসার্টে যাও? আমি ভেবেছিলাম–
এলবার্ট সাথে সাথে কেমন যেন আত্মরক্ষামূলক ভঙ্গি করে বলল, কী ভেবেছিলে?
না, কিছু না।
ফ্রেডি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। খানিকক্ষণ খুব যত্ন করে নিজের নখগুলি পরীক্ষা করেন, তারপর এলবার্টের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি জান তুমি কে?
এলবার্ট অবাক হয়ে বলল, আমি?
হ্যাঁ।
আমি–আমি এলবার্ট।
তুমি অবশ্যি এলবার্ট। কিন্তু তুমি কি জান তুমি কোন এলবার্ট?
এলবার্ট অনিশ্চিতের মতো মাথা নাড়ল, দেখে মনে হল সে প্রশ্নটা বুঝতে পারে নি।
ফ্রেডি একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বললেন, তুমি এলবার্ট আইনস্টাইন।
এলবার্ট কথাটিকে একটা রসিকতা হিসেবে নিয়ে হেসে উঠতে গিয়ে ফ্রেডির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। বিভ্রান্তের মতো কিছুক্ষণ ফ্রেডির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি কী বলছ বুঝতে পারছি না।
তুমি বুঝতে পেরেছ, বিশ্বাস করতে পারছ তাই না?
না, মানে।
হ্যাঁ। তুমি ভুল শোন নি, আমিও ভুল বলি নি। তুমি সত্যি সত্যি এলবার্ট আইনস্টাইন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইন।
এলবার্ট অসহিষ্ণুভাবে মাথা নেড়ে বলল, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
ফ্রেডি একটু সামনে ঝুঁকে পড়ে বলল, বুঝতে পারবে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বুঝতে পারে না এরকম বিষয় খুব বেশি নেই। তুমি নিশ্চয়ই ক্লোন কথাটির অর্থ জান?
এলবার্টের মুখমণ্ডল হঠাৎ রক্তশূন্য হয়ে যায়, ক্লোন?
হ্যাঁ, ক্লোন। যেখানে মানুষের একটিমাত্র কোষ থেকে ছেচল্লিশটি ক্রমোজম নিয়ে পুরো মানুষটিকে হবহু জন্ম দেয়া যায়।
জানি। এলবার্ট মাথা নাড়ল, আমি ক্লোন সম্পর্কে জানি। আমাদের পড়ানো হয়।
তুমি সেরকম একটি ক্লোন। জেনেভার এক ল্যাবরেটরি থেকে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের টিস্যু চুরি করে নিয়ে তোমাকে তৈরি করা হয়েছিল। তুমি এবং মহাবিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইন একই ব্যক্তি।
মিথ্যা কথা। এলবার্ট মাথা নেড়ে বলল, বিশ্বাস করি না আমি। বিশ্বাস করি না।
ফ্রেডি শীতল গলায় বললেন, তুমি বিশ্বাস না করলেও কিছু আসে যায় না এলবার্ট। ব্যাপারটি সত্যি। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে তোমার জন্যে নিয়ে এসেছি। এই দেখ–
ফ্রেডি তার পকেট থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে এলবার্টের হাতে দিলেন, বললেন, জিনেটিক ব্যাপারগুলি বোঝা খুব সহজ নয় কিন্তু তুমি আইনস্টাইন, পৃথিবীতে তোমার মতো মস্তিষ্ক একটিও নেই। তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে। দেখ।
এলবার্ট কাঁপা হাতে কাগজগুলি নিয়ে খানিকক্ষণ দেখল, যখন মুখ তুলে তাকাল তখন তার মুখ রক্তহীন। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, অসম্ভব।
না। অসম্ভব না। তুমি সত্যিই এলবার্ট আইনস্টাইন।
না। এলবাৰ্ট চিৎকার করে বলল, আমি বিশ্বাস করি না।
তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে এলবার্ট। তুমি সত্যিই এলবার্ট আইনস্টাইন। আমি প্রায় বিলিয়ন ডলার দিয়ে তোমার অভিভাবকত্ব নিয়েছি এলবার্ট। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ? আমি বিনিয়োগ?
হ্যাঁ। আমাকে সেই বিনিয়োগের পুরোটুকু ফেরত আনতে হবে। আমাদের অনেক কাজ বাকি এলবার্ট।
এলবার্ট এক ধরনের আতংক নিয়ে ফ্রেডির দিকে তাকিয়ে রইল, কাঁপা গলায় বলল, আমাকে? আমাকে সেই ট্রিলিয়ন ডলার আনতে হবে?
ফ্রেডি হাত তুলে বললেন, না, তোমাকে আনতে হবে না, সেটা আনব আমি। তোমাকে শুধু একটা কাজ করতে হবে।
কী কাজ?
নূতন কিছুই না। তুমি যা তোমাকে তাই হতে হবে। তুমি এলবার্ট আইনস্টাইন তোমাকে এলবার্ট আইনস্টাইন–ই হতে হবে। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে হবে, গণিত নিয়ে ভাবতে হবে–গবেষণা করতে হবে, চিন্তা করতে হবে।
কিন্তু কিন্তু– এলবার্ট কাতর গলায় বলল তুমি বুঝতে পারছ না। আমি এলবার্ট আইনস্টাইনের জীবনী পড়েছি। তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান। তিনি ছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ–আমি সেরকম কিছু নই। আমি সাধারণ, খুব সাধারণ–।
না, তুমি সাধারণ নও। তোমার মস্তিষ্ক হচ্ছে এলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক। এতদিন তুমি জানতে না, তাই ভাবতে তুমি সাধারণ। এখন তুমি জান। এখন তুমি হয়ে উঠবে সত্যিকারের আইনস্টাইন। যে সমীকরণ আইনস্টাইন শেষ করতে পারেন নি তুমি সেটা শেষ করবে।
না।
ফ্রেডি অবাক হয়ে বলল, না!
না। আমার গণিত ভালো লাগে না। পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না।
ফ্রেডি প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন, পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না? তুমি আইনস্টাইন, তোমার পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না?
না। আমি সেই আইনস্টাইন নই। আমি সেই সময়ে বড় হই নি। তখন পদার্থবিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার হয়েছে, আইনস্টাইন উৎসাহ পেয়েছেন। এখন পদার্থবিজ্ঞানে কোনো বড় আবিষ্কার হচ্ছে না, পুরো ব্যাপারটা একটা বদ্ধঘরের মতো।
কী বলছ তুমি?
আমি ঠিকই বলছি। আমি গণিতেও কোনো মজা পাই না। যখন গণিতের কোনো সমস্যা দেয়া হয় আমি সেটা কম্পিউটারে করে ফেলি। তুমি জান, গণিতের সমস্যা সমাধানের জন্যে কত মজার মজার সফটওয়ার প্যাকেজ আছে? এলজেবরা করতে পারে, ক্যালকুলাস করতে পারে, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশান সমাধান করতে পারে। অঙ্ক করার জন্যে আজকাল কিছু করতে হয় না। চিন্তা করতে হয় না, ভাবতে হয় না!
চিন্তা করতে হয় না? ভাবতে হয় না?
না। সত্যিকারের আইনস্টাইনের তো কম্পিউটার ছিল না, তার সবকিছু ভাবতে হত। ভেবে ভেবে অঙ্ক করতে করতে তার গণিতে উৎসাহ হয়েছিল, তাই তিনি গণিতে এত আনন্দ পেতেন, পদার্থবিজ্ঞানে আনন্দ পেতেন। আমি তো পাই না।
কী বলছ তুমি?
আমি ঠিকই বলছি। আইনস্টাইনের ক্লোন হলেই আইনস্টাইন হওয়া যায় না। আইনস্টাইনের মতো ভাবতে হয়!
ফ্রেডি প্রায় ভাঙা গলায় বলল, তুমি আইনস্টাইনের মতো ভাবতে পার না?
না। আমার ভালো লাগে না। আমি ওসব ভেবে আনন্দ পাই না।
তুমি কিসে আনন্দ পাও?
এলবার্টের চোখেমুখে এক ধরনের উজ্জ্বলতা এসে ভর করে। সে চোখ বড় বড় করে বলল, সঙ্গীতে।
সঙ্গীতে?
হ্যাঁ। হাইস্কুলে আমি সঙ্গীতের ওপর মেজর করেছি। আমি সঙ্গীতের ওপর পড়াশোনা করতে চাই।
সঙ্গীতের ওপর? ফ্রেডি মুখ হাঁ করে বলল, সঙ্গীতে?
হ্যাঁ। এলবার্ট হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি এত অবাক হচ্ছ কেন? তুমি জান না আসল আইনস্টাইনও খুব বেহালা বাজাতে পছন্দ করতেন? বেলজিয়ামের রানীর সাথে তিনি সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করেছেন।
কিন্তু–
আজকাল কী চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে, ডিজিটাল সাউন্ড, কী চমৎকার তার সুর! আমি নিশ্চিত, আইনস্টাইনের যদি ওরকম একটা সাউন্ড সিস্টেম থাকত তাহলে তিনি দিনরাত সেটা কানে লাগিয়ে বসে থাকতেন! গণিত আর পদার্থবিজ্ঞান থেকে সঙ্গীত অনেক বেশি আনন্দের।
কিন্তু পৃথিবীর মানুষ তো সঙ্গীতজ্ঞ আইনস্টাইন চায় না। তারা চায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে।
পৃথিবীর মানুষ চাইলে তো হবে না। আমাকেও চাইতে হবে। আইনস্টাইনের জন্ম হয়েছিল, তার কাজ করে গেছেন, এখন দ্বিতীয়বার আর তার জন্ম হবে না। আমি আইনস্টাইনের ক্লোন হতে পারি কিন্তু আমি আইনস্টাইন না। আমি বড় হয়েছি অন্যভাবে, আমার শখ ভিন্ন, আমার স্বপ্ন ভিন্ন। আমি কেন আইনস্টাইন হওয়ার এত বড় দায়িত্ব নিতে যাব? আমি সাধারণ মানুষের মতো থাকতে চাই!
ফ্রেডি উঠে দাঁড়িয়ে এলবার্টের কাছে গিয়ে বললেন, কিন্তু তুমি তো সাধারণ মানুষ নও। তুমি সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে খ্যাতিমান মানুষ। মানুষ খ্যাতির পিছনে ছোটে কিন্তু খ্যাতি খুঁজে পায় না। অর্থ হয় বিত্ত হয় ক্ষমতা হয় প্রতিপত্তি হয়–কিন্তু খ্যাতি এত সহজে কাউকে ধরা দেয় না। তুমি সেই খ্যাতি নিয়ে জন্মেছ। মানুষ যখন জানবে তুমি আসলে আইনস্টাইন_
না! এলবার্ট চিৎকার করে বলল, মানুষ জানবে না!
ফ্রেডি অবাক হয়ে বলল, কেন জানবে না? আমি বিলিয়ন ডলার খরচ করে তোমাকে এনেছি, তোমাকে মানুষের সামনে–
না, আমি চাই না।
চাও না?
না। আমার কথা তুমি কাউকে বলতে পারবে না।
ফ্রেডি কাঁপা গলায় বলল, বলতে পারব না?
না।
ফ্রেডি কাঁপা গলায় বলল, যদি বলি?
তাহলে আমি বলব সব জাল–জুয়াচুরি! কেউ তোমার কথা বিশ্বাস করবে না।
বিশ্বাস করবে না? ফ্রেডি হঠাৎ তার বুক চেপে সাবধানে চেয়ারে বসে পড়লেন, তার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে, বাম পাশে কেমন যেন ভোঁতা এক ধরনের ব্যথা দানা বেঁধে উঠছে। ফ্যাকাসে মুখে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বললেন, ঠিকই বলেছ এলবার্ট। তোমার কথা কেউ অবিশ্বাস করবে না। আইনস্টাইনকে কে অবিশ্বাস করবে?
***
মন্টানার একটি কমিউনিটি কলেজে এলবার্ট নামের যে সঙ্গীতশিক্ষক ছিলেন তাকে যে–ই দেখত সে–ই বলত, আপনাকে কোথায় জানি দেখেছি বলতে পারেন?
এলবার্ট নামের সেই সঙ্গীতশিক্ষক হেসে বলতেন, কারো কারো চেহারাই এরকম দেখলেই মনে হয় চেনা চেনা!
যদি সঙ্গীতশিক্ষক তার চুল এবং গোঁফকে অবিন্যস্তভাবে বড় হতে দিতেন তাহলে কেন তাকে চেনা মনে হত ব্যাপারটি কারো বুঝতে বাকি থাকত না। কিন্তু তিনি কখনোই সেটা করেন নি।