আইন

আইন

আইন আমাদের মতোই রক্ত-মাংসের প্রাণী। তারও শরীর আছে, এবং টিকে থাকার জন্য তারও প্রয়োজন হয় খাবার। তার খাবারের নাম মানুষ। যে-জনপদে মানুষ নেই, সে-জনপদে আইন টিকে থাকতে পারে না।

জনপদের রাজা যতো শয়তান হয়, আইনের শরীরও ততো মোটাতাজা হয়। একুশ শতকে আইনভক্ত শয়তান রাজার সংখ্যা পৃথিবীতে বেড়ে গেছে। নানা অঞ্চলে আইন এখন যে-হারে মানুষ খাচ্ছে, তাতে আইনকে আমার জন্মনিরোধক বড়ি মনে হচ্ছে।

বলা হয়ে থাকে, আইনের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু আমি দেখেছি, আইনের কোনো হাতই নেই। রাজার হাতই আইনের হাত। রাজা যাকে ইচ্ছা তাকে নিজ হাতে আইনের মুখে তুলে দেন, আর প্রয়োজন অনুযায়ী, নিজ হাতে আইনের মুখ থেকে কেড়ে নেন।

অনেক দেশেই আইন এখন পালন করছে চাবুকের ভূমিকা। আগের দিনে রাজারা উজিরকে ডেকে বলতেন— ওকে এক ঘা চাবুক মেরে দাও; আর আধুনিক দিনে রাজারা পুলিশকে ডেকে বলছেন— ওকে এক ঘা আইন মেরে দাও। আইনের ঘা খেয়ে অনেকের কানের পর্দা ফেটে গেছে, কেউ কেউ খুঁড়িয়ে হাঁটছে, কেউ বা মুক্তি নিয়ে চলে গেছে আল্লাহর কাছে।

আইন একসময় আদালতে বাস করলেও, এখন বাস করছে শয়তানের পকেটে। শয়তান প্রায়ই জাদুকরের রুমালের মতো পকেট থেকে আইন বের করে আদালতকে দেখাচ্ছে। আইনের ধুলো খেয়ে বিচারকেরা অন্ধের মতো পথ হাতড়াচ্ছেন সূর্যালোকে।

আইন ছদ্মবেশ পছন্দ করে। সে হরিণের কাছে যায় হরিণ হয়ে, গরুর কাছে যায় গরু হয়ে। ভেড়া ভাবে, আইনও ভেড়া। কিন্তু যেদিন আইন স্বরূপে দাঁত বের করে, সেদিন হরিণ দেখে— তার গলায় বাঘের কামড়, ভেড়া দেখে— তার পেটে নেকড়ের কামড়।

আইন চলবে তার নিজের গতিতে, এ কথাটি ঠিক নয়। আইনের নিজস্ব কোনো গতি নেই। রাজার গতিই আইনের গতি। আইনের গলা ধরে রাজা যেদিকে টান দেবেন, আইন সেদিকেই চলবে।

সাপ হিশেবেও আইন অতুলনীয়। আইনের কুণ্ডলীর সাথে সাপের কুণ্ডলীর বিশেষ পার্থক্য নেই। আইন যখন কাউকে ছোবল মারে, তখন তার বিষদাঁতে রাজা নিজ মুখে বিষ সরবরাহ করেন। পৃথিবীতে সাপের বিষের চিকিৎসা থাকলেও রাজার বিষের কোনো চিকিৎসা নেই। এ জন্য আইনের নাম দিয়েছি আমি ‘রাজার মুখের বিষ’। পৃথিবীকে রাজার মুখের বিষ থেকে সাবধান থাকতে হবে।