আকাশজোড়া মেঘ দেখি না দুপুরবেলা,
চৈত্রদিনে হাওয়ায় ধুলোয় পত্রঝরা,
তা-ও দেখি না।
মাঝে-মধ্যে মুক্ত পাখির-সুর বয়ে যায়,
কানে ভাসে।
আঁধার ঘরে বন্দী এখন একলা আমি
একলা থাকি সারা বেলা, রৌদ্র থেকে
জ্যোৎস্না থেকে নির্বাসিত।
প্রহরীদের বুটের শব্দ মগজ কাঁপায়,
অন্ধকারের রোমশ হাতে জব্দ হয়ে
হাঁপাই শুধু ক্লান্ত মনে
অবহেলার ঠেলে-দেয়া রুটি ছিঁড়ি
প্রহর গুণি
এবং শুনি ভবঘুরে কুকুর কাঁদে মধ্যরাতে।
কখনো এই হতচ্ছাড়া কম্বলেরই ফুটোয় ফোটে
সাতটি তারা,
কখনো ফের অপদুতের স্বপ্ন দেখে রাত্রি কাটে,
অব্দ কতো যায় চলে যায় অস্তাচলে,
কোন্ আগুনে দগ্ধ, হয়ে ভস্মমূর্তি
হচ্ছি কেবল রূপান্তরে?
আঁধারে ঘরে বন্দী এখন একলা আমি।
একলা আমি? নাকি আমার মতোই এখন
বহুজনের বন্দীদশা?
এই পাথুরে দেয়ালটাতে হাত-পা আমার
আটকে আছে-
নড়লে আমি শেকল নড়ে, শকুনেরা
আমার শরীর ঠুকরে ছেঁড়ে টুকরো টুকরো
মাংস ঝরে যখন তখন।
অট্রহাসি আমার ক্ষতে নুন ছিটিয়ে
হা-হা শব্দে নিলায় দূরে।
মাঝে মাঝে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি
ভুল পথে সেই কবে থেকে চলছি আমি?
দ্বিধায় পাথর সরিয়ে দূরে মন উড়ে যায়
যজ্ঞ ডুমুর, রাঙা শালুক দিঘির কাছে।
ঘাড়-কাটা এক মৃতদেহ ঘুরছে ঘরে অবিরত,
বসিয়ে তাকে চাইলে হতে আলাপচারী,
হাত দু’টি তার আমার দিকে
এগিয়ে আসে হুকের মতো লৌহ কঠিন।
হতাশ্বাসে কণ্ঠনালী মরা ঘাসে
ভরাট হতে থাকে কেবল। সমাধি তার কোন্ বিজনে?
থাকতে বুঝি চায় না শুয়ে মাটির নিচে
কীটের রাজ্যে অমন একা
আঁধার ঘরে দীর্ঘ সময় বন্দী থেকে
মাথার ভেতর ভাসে প্রেতের ফিস্ফিসানি,
হঠাৎ কাউকে মনে পড়ার মতোই খানিক আলোর আশায়
চার দেয়ালে চেয়ে থাকি।