অস্ট্রেলিয়ার লাল আতঙ্ক
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ওয়ারুনা উপত্যকার বুকে একদিন প্রভাতের শান্ত নীরবতা ভঙ্গ করে জেগে উঠল মেষশাবকের করুণ আর্তস্বর!
পূর্ব দিগন্তে সবেমাত্র আত্মপ্রকাশ করেছে প্রভাতসূর্য, এমন সময়ে পূর্বোক্ত মেষশাবকের আর্তনাদ লক্ষ করে এগিয়ে এল এক অশ্বারোহী মেষরক্ষক।
এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে মেষরক্ষক চতুর্দিক নিরীক্ষণ করল, তারপর ঘোড়া থামিয়ে সে অবতীর্ণ হল মাটির ওপর।
একটি মেষশাবক কাতর স্বরে আর্তনাদ করতে করতে তার দিকে এগিয়ে এল, কিন্তু অশ্বারোহী তার দিকে নজর দিল না–
চতুর্দিকে অবস্থিত মেষপালের দিকেই নিবদ্ধ হয়েছে অশ্বারোহীর দৃষ্টি।
হ্যাঁ, ভেড়ার দলটা সেখানেই ছিল। যে বিস্তীর্ণ তৃণভূমিকে লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে তারই মধ্যে এককোণে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছে একদল ভেড়া; হঠাৎ দেখলে মনে হয় কোনো অদৃশ্য মেষপালক জন্তুগুলিকে ওইভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
পূর্বোক্ত তৃণভূমির উপর আরও যে ভেড়াগুলির দিকে অশ্বারোহীর দৃষ্টি পড়েছে তারা কিন্তু এক জায়গায় দণ্ডায়মান নয়! ঘাসজমির উপর এখানে-ওখানে ছড়িয়ে থাকা কুড়িটা ভেড়ার মধ্যে অধিকাংশের দেহেই প্রাণের চিহ্ন নেই, দু-একটা জন্তু কেবল মৃত্যুযাতনায় ছটফট করছে! চারদিকে খালি রক্ত আর রক্ত–অদৃশ্য আততায়ী রাতের অন্ধকারে হত্যালীলা চালিয়ে আবার অন্ধকারেই আত্মগোপন করেছে।
এই রক্তাক্ত ও ভয়াবহ দৃশ্যের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে অশ্বারোহী ঘোড়া ছুটিয়ে চলল তার আস্তানার দিকে…।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে একটু পরেই সদলবলে অকুস্থলে উপস্থিত হলেন ওয়ারুনার মেষপালের মালিক। তাঁর নির্দেশে মৃত জন্তুগুলির রোমশ চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে মাংসপিণ্ডগুলিকে অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে সমর্পণ করা হল। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কে বা কারা দায়ী সে-কথা বুঝতে অবশ্য কারো অসুবিধা হয়নি; কারণ অস্ট্রেলিয়ার অরণ্যে একমাত্র বিভীষিকা হচ্ছে ডিংগো (Dingo) নামক একধরনের বুনো কুকুর–বাঘ, ভালুক, সিংহ প্রভৃতি শ্বাপদ এখানে অনুপস্থিত। ডিংগোর আক্রমণে প্রতি বৎসরই বহুসংখ্যক মূল্যবান ভেড়া প্রাণ হারায়, তাই অস্ট্রেলিয়ার মেষপালকরা বাধ্য হয়ে বিস্তীর্ণ তৃণভূমির চারদিক লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ভেড়াগুলিকে ওই আবেষ্টনের ভিতর ছেড়ে দেয়। ওয়ারুনার মালিকও ভেড়াগুলিকে লোহার জাল দিয়ে ঘিরে নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু পূর্বোক্ত আবেষ্টনের ভিতর যে ষাঁড়টা ছিল সে একদিন তো মেরে লোহার জালের একস্থানে ছিদ্রের সৃষ্টি করল। ডিংগোটা সেই ফাঁক দিয়ে ভিতরে এসে এক রাতের মধ্যেই তেইশটা স্ত্রীজাতীয় মেষ ও মেষশাবকের প্রাণ হরণ করে। নিহত মেষগুলির দেহ পরীক্ষা করে দেখা গেছে মাত্র চারটি ভেড়ার কিডনি ভক্ষণ করেছে জন্তুটা, অন্য ভেড়াগুলিকে সে হত্যা করেছে কেবল হত্যার আনন্দ চরিতার্থ করার জন্যে।
যে-ষাঁড়টা লোহার জালে ঢুঁ মেরে বেড়া ভেঙে ফেলেছিল এবং যার জন্য এতগুলো মূল্যবান ভেড়ার প্রাণহানি ঘটল, সেই হতভাগা ষাঁড়টাকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হল। তারপর ছিদ্রটাকে ভালো করে মেরামত করিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন ওয়ারুনার মেষপালের মালিক।
কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরেই একদিন সকালে জনৈক অশ্বারোহী মেষরক্ষক লোহার জালের গায়ে একটা ফুটো দেখতে পায়। পরীক্ষা করে দেখা গেল ধারালো দাঁতের সাহায্যে লোহার জাল কেটে ওই ছিদ্র সৃষ্টি করা হয়েছে!
অকুস্থলে এসে ছাদাটা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন ওয়ারুনার মালিক। ওই শক্ত লোহার জাল দাঁত দিয়ে কেটে ফেলা ডিংগোর পক্ষে প্রায় অসম্ভব, কিন্তু এই শয়তান ডিংগোটা অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলেছে!
যে-ডিংগোটা জাল ফুটো করেছে পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডের জন্য যে সেই জন্তুটাই দায়ী এ-বিষয়ে মালিকের সন্দেহ ছিল না; কারণ ডিংগো-চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেখানে একবার সে শিকার সংগ্রহ করে সেখানে আবার সে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ফিরে আসবেই আসবে। এখানেও দ্বিতীয়বার জন্তুটার আবির্ভাব ঘটেছিল ছয় সপ্তাহের মধ্যে এবং ভিতরে প্রবেশ করার জন্য সে একই উপায় অবলম্বন করেছিল। অতএব অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই অনুমান করতে পারবেন যে একটা জানোয়ার বার বার এখানে হামলা করতে আসছে এবং এই ভয়ানক ডিংগোটার কাছে লোহার জালও দুর্ভেদ্য নয়!
মালিক বুঝলেন, জন্তুটা ভয়ংকর শক্তিশালী, অবিলম্বে এই খুনিটাকে শেষ করতে না-পারলে তাঁর পোষা ভেড়াগুলিকে তিনি রক্ষা করতে পারবেন না।
জালের ফুটো মেরামত না-করে ওয়ারুনার মালিক ফুটোর মুখে একটা ইস্পাতের ফাঁদ সাজিয়ে রাখলেন। শুধু তাই নয়, কয়েকটা নিহত ভেড়ার কিডনিতে বিষ মাখিয়ে সেই বিষাক্ত কিডনিগুলোকে আশেপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হল। মালিক সেই রাত্রে নিশ্চিন্ত হয়েই শয্যা আশ্রয় করেছিলেন, পরের দিন সকালে উঠে তিনি যে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ডিংগোটাকে দেখতে পাবেন এ-বিষয়ে তার একটুও সন্দেহ ছিল না।
কিন্তু পরের দিন সকালে ফাঁদের কাছে এসে ওয়ারুনার মালিক হয়ে গেলেন হতভম্ব!
বিষাক্ত কিডনিগুলোকে স্পর্শও করেনি জন্তুটা, কিন্তু ফাঁদের মধ্যে আটকে রয়েছে লালচে-বাদামি রং-এর একটা কুকুরের ঠ্যাং!
ব্যাপারটা কী হয়েছিল খুব সহজেই অনুমান করা যায়–ফাঁদের মধ্যে আটকে গিয়েছিল ডিংগোর একটা পা এবং প্রাণপণ চেষ্টাতেও শ্রীচরণকে ফাঁদের করাল দংশন থেকে মুক্ত করতে না-পেরে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে পা-টিকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে পলায়ন করেছে ডিংগো!
ফাঁদের মধ্যে আটকানো কাটা ঠ্যাংটার লালচে বাদামি রং দেখে স্থানীয় অধিবাসীরা জন্তুটার নাম রাখল রেড কিলার বা লাল খুনি!
কিছুদিন ধরে স্থানীয় মানুষ জন্তুটাকে নিয়ে মাথা ঘামাল; ওই লাল রং-এর খুনি জানোয়ার আবার ভেড়ার দলের উপর হানা দেবে কি না এই নিয়ে মেষরক্ষকদের মধ্যে চলল তুমুল তর্ক ও আলোচনা কিন্তু পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেও যখন কুকুরটা আর আত্মপ্রকাশ করল না তখন সকলে তার কথা ভুলে গেল…
কিন্তু হঠাৎ একদিন স্থানীয় পশুপালক ও মেষরক্ষকদের গতানুগতিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে ওয়ারুনা উপত্যকার বুকে আবার হানা দিল মূর্তিমান অভিশাপের মতো রেড কিলার!
..প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী এক ব্যক্তি তার গোরুটাকে দোহন করে দুগ্ধ সংগ্রহ করতে এসেছিল। দুধের বালতি হাতে নিয়ে গোয়ালের দরজাটা সে খুলে ফেলল, সঙ্গেসঙ্গে স্তম্ভিত বিস্ময়ে সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল–তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে এক ভয়াবহ দৃশ্য!
রক্তাক্ত দেহে জিভ বার করে অতিকষ্টে নিশ্বাস ফেলছে গোরুটা এবং তার সামনেই প্রাণহীন অবস্থায় পড়ে আছে একটা ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত গো-বৎস!
জমি পরীক্ষা করে দেখা গেল একটা ভীষণ লড়াই হয়েছে। আক্রমণকারীর কবল থেকে গোরুটা তার বাছুরকে রক্ষা করার জন্য খুবই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তার চেষ্টা সফল হয়নি। আক্রমণকারী জীবটি গোরুটার পিছনের পায়ের একটি শিরা কেটে তাকে অকর্মণ্য করে অসহায় বাছুরটাকে হত্যা করেছে। গোরুটা যে শুধু খোঁড়া হয়ে চলৎশক্তি হারিয়েছে তাই নয়, উপরন্তু তীক্ষ্ণ দন্তাঘাতে তার সর্বাঙ্গ হয়েছে রক্তাক্ত এবং লাঙ্গুলের অর্ধ-অংশ হয়েছে বিচ্ছিন্ন! হত্যাকারী বাছুরটার মাংস ভক্ষণ করেনি, কিন্তু নিহত গো-শাবকের হৃৎপিণ্ড উপড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে।
দরজা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও গোয়ালের ভিতর হত্যাকারীর প্রবেশ ঘটল কীভাবে?
অনুসন্ধানের ফলে জানা গেল বেড়ার গায়ে ফুটো করে হত্যাকারী ভিতরে ঢুকেছিল এবং জমির উপর পদচিহ্ন পরীক্ষা করে সকলেই বুঝল, যে হিংস্র শ্বাপদ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সে মাত্র তিনটি পা-র অধিকারী; অর্থাৎ এবারের হত্যালীলার জন্যও দায়ী হচ্ছে রেড কিলার!
তিনটি মাত্র ঠ্যাং-এর ওপর ভর দিয়েই খুনি জানোয়ারটা আবার হত্যার আসরে আবির্ভূত হয়েছে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় পশুপালক ও মেষরক্ষকরা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ল।
অস্ট্রেলিয়ার গভর্নমেন্ট হঠাৎ ডিংগো সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠলেন। এই বুনো কুকুরগুলো প্রতি বৎসরই বহু মূল্যবান মেষ হত্যা করে, ফলে পশম রপ্তানি হয় অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এবং গভর্নমেন্টকেও বেশ কিছুটা আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে নিতে হয়।
–অস্ট্রেলিয়ার গভর্নমেন্ট এই সময়ে প্রতি ডিংগোর মাথা পিছু তিন পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করলেন। সরকারের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্বে উল্লিখিত ওয়ারুনার পশুপালকও রেড কিলার-এর মাথার উপর পাঁচ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করলেন। উক্ত পশুপালকের দুই প্রতিবেশীও জানালেন জন্তুটাকে যে হত্যা করতে পারবে তাকে পুরস্কার দিতে তারাও রাজি আছেন।
সব নিয়ে মোট পুরস্কারের অঙ্ক হল পনেরো পাউন্ড। টাকার অঙ্কটা খুব কম নয়।
টাকার লোভে পেশাদার শিকারিরা ডিংগোটাকে হত্যা করতে সচেষ্ট হল। কিন্তু শিকারির ফাঁদ এবং বন্দুকের গুলিকে ফাঁকি দিয়ে অদ্ভুত চাতুর্যের সঙ্গে বুনো কুকুরটা গৃহপালিত পশুদের উপর হামলা চালাতে লাগল, কিছুতেই তাকে জব্দ করা গেল না। বিষাক্ত মাংসের টোপ দিয়েও তাকে প্রলুব্ধ করা যায়নি; রাতের পর রাত জেগে গাছের উপর পাহারা দিয়েছে বন্দুক হাতে শিকারির দল, কিন্তু কুরকুরটা তাদের অনায়াসে ফাঁকি দিয়েছে বারংবার!
রেড কিলার-এর উদ্দেশে পাতা ফাঁদের মধ্যে ধরা পড়ল ক্যাঙারু, ওয়ালবি প্রভৃতি জানোয়ার, এমনকী কয়েকটা ডিংগোও শিকারিদের ফঁদে ধরা পড়েছিল কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন সেই তিন-পা-ওয়ালা শয়তানটা কোনো ফাঁদের আলিঙ্গনে বন্দি হল না, একটা পা হারিয়ে জন্তুটা অসম্ভব সতর্ক হয়ে গেছে।
হঠাৎ একদিন গা-ঢাকা দিল অস্ট্রেলিয়ার লাল আতঙ্ক। দীর্ঘদিন ধরে জন্তুটার কোনো খোঁজখবর না-পেয়ে পশুপালকরাও নিশ্চিন্ত হলেন–গোরুভেড়ার অকালমৃত্যুতে তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর রইল না।রেড কিলার নামক জন্তুটার কথা লোকে প্রায় ভুলেই গেল…
খুনি জন্তুটা আবার যেদিন নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করল সেই ভয়াবহ দিনটির কথা একটি মানুষের স্মৃতির কোঠায় চিরদিনই বিরাজ করবে ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্নের মতো।
ওয়ারুনার জনৈক অশ্বচালক একদিন ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে একটা মেষ-চারণভূমিতে এসে থামল এবং গাড়ি থেকে নেমে উক্ত ঘাসজমির আগাছা পরিষ্কার করতে শুরু করল।
ঘোড়ায়-টানা গাড়িটার পিছন পিছন লোকটিকে অনুসরণ করে পোষা টেরিয়ার কুকুরটিও সেখানে এসে উপস্থিত হল। কুকুরটাকে তার প্রভু খুবই ভালোবাসত, তাই জন্তুটাও সহজে প্রভুর সান্নিধ্য ত্যাগ করতে চাইত না।
হঠাৎ টেরিয়ার কুকুরটার হিংস্র গর্জন শুনে তার মালিক চমকে উঠল। লোকটি অবাক হয়ে দেখল কুকুরটার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠেছে এবং তার সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে নিকটবর্তী ঝোপটার দিকে। লোকটি উঠে গিয়ে ঝোপের ভিতরটা দেখে এল, কিন্তু একটা গিরগিটি ছাড়া কুকুরটার ক্রোধের উদ্রেক করতে পারে এমন কোনো জীবের সাক্ষাৎ পেল না। ফিরে এসে লোকটি আবার নিজের কাজে মনোনিবেশ করল।
একটু পরেই আবার টেরিয়ার কুকুরটা সশব্দে মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এবার কিন্তু তার কণ্ঠস্বরে ক্রোধ বা বিরক্তির আভাস ছিল না, দারুণ আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে কুকুরটা আর্তনাদ করছিল রুদ্ধস্বরে!
লোকটি অবাক হয়ে ভাবল ঝোপের ভিতর তো কিছুই নেই, তবে জন্তুটা এত ভয় পেল কেন? একবার ঝোপের ভিতর পর্যবেক্ষণ করে লোকটি কিছুই দেখতে পায়নি, তাই এবার সে কাজ ছেড়ে টেরিয়ার কুকুরটার আতঙ্কের কারণ অনুসন্ধান করতে এগিয়ে গেল না। একটু পরে কাজ শেষ করে সে ঘোড়াগুলোর মুখ ঘুরিয়ে গাড়িটাকে ঘাসজমির অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার উদযোগ করল আর ঠিক তখনই ঝোপটার দিকে হঠাৎ নজর পড়তেই সে টেরিয়ার কুকুরটার আতঙ্কের কারণটা বুঝতে পারল।
ঝোপের ভিতর থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে একটা অতিকায় ডিংগো! লালচে-বাদামি রং-এর ডিংগোটার জ্বলন্ত দুই চক্ষুর হিংস্র দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে টেরিয়ার কুকুরটার দিকে।
এমন বৃহৎ বপু ডিংগো-কুকুর ইতিপূর্বে অশ্বচালকের দৃষ্টিগোচর হয়নি। প্রায় তিন ফুট উঁচু এই সারমেয়-দানবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি ডিংগোর মতোই বটে কিন্তু ক্যাঙারু-হাউন্ড নামক অতি বৃহৎ শিকারি কুকুরের সঙ্গেও তার যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে।
অশ্বচালক বুঝল এই বর্ণ সংকর ভয়াবহ জন্তুটার জন্ম হয়েছে ক্যাঙারু-হাউন্ড ও ডিংগোর সংমিশ্রণে!
জন্তুটা তিন পায়ে ভর দিয়ে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে এল টেরিয়ারের দিকে। লোকটি দেখল কুকুরটার বাঁ-দিকের পা নেই। কনুই থেকে কাটা ছিন্ন অংশটা এই সারমেয়-দানবের ভয়ানক চেহারাটাকে করে তুলেছে আরও ভয়ানক!
মানুষের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে অতিকায় ডিংগোটা টেরিয়ার কুকুরটার কাছে এসে দাঁড়াল এবং ছোটো জন্তুটার দেহের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে করতে অকস্মাৎ কামড়ে ধরল তার কণ্ঠদেশ–
পরক্ষণেই ঝাঁকুনির পর ঝাঁকুনি!
কুকুরের মনিব এতক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, এইবার তার সংবিৎ ফিরে এল। লোকটির কাছে স্প্যানার নামক লোহার যন্ত্র ছাড়া কোনো অস্ত্র ছিল না। পোষা কুকুরটাকে বাঁচানোর জন্য এই স্প্যানারটা নিয়েই সে ছুটে এল এবং যন্ত্রটা দিয়ে বারংবার আঘাত হানতে লাগল ডিংগোর মাথার উপর।
স্প্যানারের আঘাতে শয়তান ডিংগোটা কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না, বরং দ্বিগুণ উৎসাহে কামড়াতে কামড়াতে টেরিয়ার কুকুরটাকে সে টুকরা টুকরো করে ফেলল।
হঠাৎ ডিংগোটা যেন মানুষটির অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠল। টেরিয়ারের মৃতদেহটা ফেলে দিয়ে সে লোকটির কণ্ঠদেশ লক্ষ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অশ্বচালক একহাত দিয়ে নিজের গলাটাকে বাঁচাতে লাগল এবং অন্য হাত দিয়ে স্প্যানারটা বাগিয়ে ধরে অনবরত আঘাত হানতে লাগল বুনো কুকুরটার মাথার উপর। অবশেষে ডিংগো পরাজয় স্বীকার করল, লৌহময় স্প্যানারের সুকঠিন অভ্যর্থনা আর সহ্য করতে না-পেরে জন্তুটা ঝোপের ভিতর ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
লোকটির অবস্থাও খুব ভালো ছিল না, ডিংগোর দন্তাঘাতে তার হাত ও মুখের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছিল অনেকগুলো ক্ষতচিহ্ন। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেই ক্ষতস্থানগুলো সেলাই করিয়ে লোকটি সেযাত্রা রেহাই পায়।
এই ঘটনার ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল তীব্র উত্তেজনা। দলে দলে অশ্বারোহী মানুষ রাইফেল হাতে বেরিয়ে পড়ল খুনি জানোয়ারটার সন্ধানে, তাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে ছিল ক্যাঙারু হাউন্ড নামক শক্তিশালী শিকারি-কুকুর। কিন্তু মানুষ ও সারমেয় বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি ডিংগোটাকে আবিষ্কার করতে পারল না, সে হঠাৎ ওয়ারুনা উপত্যকার বুক থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল যেন।
কিছুদিন পরেই আবার একটা ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হল। উক্ত হত্যাকাণ্ডের বিবরণী থেকে জানা গেল শয়তানটা একেবারে নিঃসঙ্গ নয়, কখনো কখনো সে একাজে সঙ্গীর সাহায্য নিয়ে থাকে। ঘটনার বিবরণ নিম্নে বর্ণিত হল।
ভেড়াগুলিকে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য একটা কূপ নির্মাণের কাজ চলছিল। ওই কাজের পরিদর্শন ও পরিচালনার ভার নিয়েছিলেন গেমেস এম ডাউনি নামক জনৈক শ্বেতাঙ্গ। একদিন সকাল বেলা ডাউনি সাহেব ঘোড়ার পিঠে চড়ে তার কর্তব্য করছিলেন, হঠাৎ তার চোখে পড়ল তৃণভূমির উপর অবস্থিত মেষপালের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে অস্বাভাবিক চাঞ্চল্য!
যে ভেড়াগুলো মাঠের উপর চরে বেড়াচ্ছিল সেই জন্তুগুলো হঠাৎ পাগলের মতো ছুটতে শুরু করল এবং মাঠের উপর শুয়ে যে ভেড়াগুলো বিশ্রাম সুখ উপভোগ করছিল তারাও যোগ দিল ধাবমান সঙ্গীদের সাথে!
তাদের উত্তেজনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রায় আধমাইল দূরে দুটো ডিংগোকে দেখতে পেলেন মি. ডাউনি। জন্তু দুটি লৌহজালের আবেষ্টনের বাইরে ঘোরাঘুরি করছিল। মি. ডাউনি বুঝলেন জালের গায়ে একটা ফুটোফাটা প্রবেশপথ আবিষ্কার করার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে ঘোড়া চালিয়ে জন্তু দুটোর দৃষ্টিসীমার বাইরে এসেই তিরবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন মি. ডাউনি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে উপস্থিত হলেন ওয়ারুনার সেই মালিকের কাছে, যাঁর জমির উপর প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল রেড কিলার।
মি. ডাউনির কাছে সব কথা শুনলেন ওয়ারুনার মালিক, তারপর দুজনে দুটি রাইফেল নিয়ে একটা মোটরে উঠে ঝড়ের বেগে গাড়ি ছুটিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অকুস্থলে এসে তারা দেখলেন ডিংগো দুটো কোন ফাঁকে ভিতরে ঢুকে পড়েছে এবং মিলিতভাবে একটা ভেড়াকে আক্রমণ করে তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে।
মি. ডাউনি গুলি চালালেন। দুটো জন্তুর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড়ো কুকুরটা তিনটি মাত্র পা নিয়েই অবিশ্বাস্য দ্রুতবেগে ছুটল লোহার জালের গায়ে অবস্থিত একটা ফোকর লক্ষ করে এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ফুটোটার ভিতর দিয়ে শরীরটা গলিয়ে দিয়ে অপর দিকে লাফিয়ে পড়ল। তবে এই যাত্রা তাকে কিছুটা শাস্তিগ্রহণ করতে হল, ডাউনির রাইফেলের গুলি তাকে মাটির উপর শুইয়ে দিল। মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য জন্তুটার চৈতন্য লোপ পেয়েছিল, তারপরই সে ভূমিশয্যা ছেড়ে তিন পায়ের উপর ভর দিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুতবেগে শিকারিদের দৃষ্টিসীমার বাইরে অদৃশ্য হয়ে গেল। আসল আসামি হাতছাড়া হয়ে গেল দেখে শিকারিরা এইবার দুনম্বর কুকুরটার দিকে নজর দিলেন।
কুকুরটা তখন তার সঙ্গী যেদিকে গেছে তার বিপরীত দিকে ছুটছে।
দুই নম্বর কুকুরটাকে লক্ষ করে ডাউনির রাইফেল অগ্নিবৃষ্টি করল, কিন্তু অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এঁকেবেঁকে ছুটে জন্তুটা বুলেটের দংশন থেকে আত্মরক্ষা করতে লাগল।
ওয়ারুনার মালিক কিন্তু অন্য উপায় অবলম্বন করেছিলেন। গাড়িটাকে তিনি ধাবমান জন্তুটার গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর তার চেষ্টা সফল হল–গাড়ির দুটো চাকাই সশব্দে ডিংগোটার দেহের উপর দিয়ে গড়িয়ে গেল। আহত জন্তুটা এইবার হিংস্র আক্রোশে গাড়ির আরোহীদের আক্রমণ করতে উদ্যত হল।
অব্যর্থ নিশানায় গুলি চালিয়ে মি. ডাউনি জন্তুটাকে ভবযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে দিলেন।
কাছে গিয়ে দেখা গেল সদ্যমৃত ডিংগোটা স্ত্রীজাতীয় পশু। এইমাত্র যে তিন-পা-ওয়ালা কুকুরটা শিকারিদের ফাঁকি দিয়েছে মৃত ডিংগোটা যে সেই শয়তান রেড কিলার-এর সঙ্গিনী এ-বিষয়ে কারো সন্দেহ ছিল না কিছুমাত্র।
পরবর্তী ঘটনা থেকে জানা যায় সেইদিনই আর একবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল রেড কিলার, কিন্তু প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বারও সে বিপদকে ফাঁকি দিয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ যে, খুনি জানোয়ারটা যখন মি. ডাউনির গুলি খেয়ে আহত অবস্থায় একটা ঝোপের মধ্যে শুয়ে বিশ্রাম করছিল, সেই সময় হঠাৎ সে একটি কৃষকের নজরে পড়ে যায়। এক-ঘোড়ায়-টানা একটি গাড়ি চালিয়ে চলেছিল পূর্বোক্ত কৃষক এবং ধাবমান গাড়িটিকে অনুসরণ করে ছুটছিল কৃষকের পোষা কুকুর।
ঝোপের ভিতর শায়িত ডিংগোটাকে দেখেই কৃষক গাড়ি থামিয়ে দিল।রেড কিলার অবশ্য তৎক্ষণাৎ সরে পড়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কৃষক তাকে এত সহজে ছাড়ল না–পোষা কুকুরটাকে সে লেলিয়ে দিল তিন-পা-ওয়ালা ডিংগোটার দিকে।
কৃষকের পোষা কুকুরটা ছিল শক্তিশালী ক্যাঙারু হাউন্ড, বনচারী ডিংগোর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রভুর নির্দেশে কুকুরটা ডিংগোকে আক্রমণ করল…
লড়াই চলল কিছুক্ষণ ধরে, তারপর অরণ্যের বন্য বিক্রমের কাছে পরাজয় স্বীকার করল মানুষের গৃহপালিত জীব–কণ্ঠদেশের ওপর সুগভীর দণ্ডাঘাতের চিহ্ন নিয়ে পিছিয়ে এল কৃষকের কুকুর। কৃষক এইবার গাড়িতে-জোতা ঘোড়াটাকে খুলে নিয়ে তার পিঠে উঠে বসল এবং ঘোড়া ছুটিয়ে তেড়ে গেল ডিংগোটার দিকে। কিন্তু ঘন সন্নিবিষ্ট গাছের সারির ভিতর দিয়ে ডিংগোটা কৃষকের ঘোড়াকে ফাঁকি দিয়ে পলায়ন করল…
বেশ কয়েকমাস কাটল নির্বিঘ্নে।
সকলেই নিশ্চিন্ত হল এই ভেবে যে অস্ট্রেলিয়ার লাল আতঙ্ক নিশ্চয়ই পটল তুলেছে।
কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের এই আনন্দ স্থায়ী হল না, আচম্বিতে এক শরীরী দুঃস্বপ্নের মতো আত্মপ্রকাশ করল রেড কিলার–কয়েকদিনের মধ্যেই খুনি ডিংগোটার কবলে প্রাণ হারাল অনেকগুলো মেষ।
শিকারিরা দলে দলে এসে ভিড় করল, কিন্তু তাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ভেড়ার দলের উপর হামলা চালাতে লাগল তিন-পা-ওয়ালা খুনি জন্তুটা। রাতের পর রাত চলল এই হত্যাকাণ্ড আর রেড কিলার নামধারী জন্তুটার মাথার উপর পুরস্কারের অঙ্কটাও বেড়ে চলল অবিশ্বাস্যভাবে। পুরস্কারের লোভে আরও অনেক শিকারি এসে জুটল। কিন্তু ওই লাল রং-এর শয়তান জন্তুটার অসাধারণ ধূর্ত স্বভাব ও ক্ষিপ্রতার কাছে সকলেই হার মানতে বাধ্য হল।
ওয়ারুনার মালিক যখন হতাশ হয়ে পড়েছেন, তখন হঠাৎ একদিন অকুস্থলে আবির্ভূত হল এক ওস্তাদ শিকারি। এই লোকটি সাদা-চামড়ার মানুষ নয়, অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসী এক বর্ণসংকর। স্থানীয় শিকারিটির নামডাক ছিল যথেষ্ট, কিন্তু ওয়ারুনার মালিক তখন প্রায় সকলের উপরই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তবু স্থানীয় শিকারিটি যখন মালিকের কাছে এসে খুনি কুকুরটাকে মারার প্রস্তাব করল, তখন ওয়ারুনার মালিক তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন না।
মালিককে একটিমাত্র প্রশ্ন করলে স্থানীয় শিকারি গুড় আছে?
মালিক বললেন, আছে।
শিকারি গম্ভীরভাবে বলল, তাহলে আর ভাবনা নেই।রেড কিলার এইবার নির্ঘাত মারা পড়বে।
শিকারির নির্দেশ অনুসারে সেই রাত্রে ভেড়াগুলোকে খোঁয়াড়ের ভিতর না-রেখে প্রান্তরের। উপরই ছেড়ে দেওয়া হল। ওই প্রান্তর বা মেষচারণ ভূমির চারপাশে অবশ্য লৌহজালের বেষ্টনী ছিল, কিন্তু ওই জাল কেটে ভেড়া মারতে রেড কিলার কোনোদিনই অসুবিধা ভোগ করেনি। সেই রাতেও ভেড়াগুলোকে প্রান্তরের উপর রেখে শয্যা আশ্রয় করার আগে ওয়ারুনার মালিক ভেবেছিলেন পরের দিন সকালে উঠে নিশ্চয়ই তিনি কয়েকটা ভেড়ার মৃতদেহ দেখতে পাবেন।
হ্যাঁ, মৃতদেহ তিনি দেখেছিলেন বটে, তবে সেটা ভেড়ার মৃতদেহ নয়।
খুব ভোরেই উঠেছিলেন তিনি।
অনুসন্ধান করতে করতে লোহার-জালে-ঘেরা বেষ্টনীর বাইরে এক জায়গায় একটা ডিংগোর মৃতদেহ তার এবং অন্যান্য অনুসন্ধানকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
কাছে এগিয়ে গিয়ে তারা দেখলেন জন্তুটা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জান্তব বিভীষিকা রেড কিলার!
শিকারি তার কথা রেখেছে!
বহু শিকারি বহুদিন ধরে চেষ্টা করেও যা করতে পারেনি, স্থানীয় মানুষটি সেই অসাধ্য সাধন করেছে–ওয়ারুনা উপত্যকার বুক থেকে তার চেষ্টাতেই বিদায় নিয়েছে শরীরী মৃত্যুর এক জান্তব অভিশাপ!
স্থানীয় শিকারির কৌশলটিও ছিল অপূর্ব।
লোহার জাল-ঘেরা বেষ্টনীর আশেপাশে অনেকখানি জায়গার উপর সে ছড়িয়ে দিয়েছিল গুড়! এমনভাবে ওই জিনিসটা সে বৃত্তাকারে ছড়িয়েছিল যে ডিংগোটার পক্ষে গুড়ের উপর পদার্পণ না-করে ভেড়ার কাছাকাছি আসার উপায় ছিল না। গুড়ের উপর পা পড়তেই চটচটে গুড় কুকুরটার পায়ে আটকে যায়। কুকুর জাতীয় জীবের স্বভাব-অনুসারে ডিংগোটা জিভ দিয়ে চেটে চেটে ওই বিরক্তিকর পদার্থটিকে পা থেকে তুলে ফেলার চেষ্টা করে। গুড়ের স্বাদ ডিংগোর ভালো লাগে, এবার সে বেশ ভালো করেই চেটে চেটে গুড়ের মিষ্ট স্বাদ গ্রহণ করতে থাকে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুযাতনায় তার চোখ-মুখ হয়ে যায় বিকৃত!
মৃত্যুর পরেও সেই বিকৃতির চিহ্ন তার মুখ থেকে মিলিয়ে যায়নি!
ওহ হো! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি : গুড়ের সঙ্গে শিকারি আর একটি বস্তু মিশিয়ে দিয়েছিল–গ্রাউন্ড সায়ানাইড–তীব্র বিষ!
[জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৯]